২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

ইসরাইলে নেতানিয়াহুর হাত ধরে ক্ষমতায় ধর্মীয় উগ্রপন্থীরা

আরববিদ্বেষী রাজনীতিক বেন-গাভিরের সমর্থকদের উল্লাস - ছবি : সংগৃহীত

ইসরাইলে মঙ্গলবারের নির্বাচনের সরকারি ফলাফল এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র, কিন্তু সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যে জিতেছেন এবং এক বছরের মাথায় মাথায় আবারো ক্ষমতায় ফিরছেন তা নিয়ে কারো কোনো সন্দেহ নেই।

তবে কিন্তু এই নির্বাচনের সবচেয়ে লক্ষণীয় যে বিষয় তা হলো, প্রকাশ্য আরববিদ্বেষী ধর্মীয় কট্টরপন্থীদের বিরাট সাফল্য।

'এখন দেশের অবস্থা ভালো হবে। তিনি জন-নিরাপত্তা মন্ত্রী হলে অবস্থা বদলাবে,' কট্টর আরববিদ্বেষী রাজনীতিক ইতামার বেন-গাভিরের নির্বাচনী প্রচারণা কার্যালয়ে ভেতর দাঁড়িয়ে বিবিসিকে বলছিলেন তার সমর্থক জুলিয়ান।

'তিনি (বেন-গাভির) ইসরাইলের ভালো চান। তিনি সন্ত্রাসীদের তাড়াতে চান,' বলছিলেন অধিকৃত পশ্চিম তীরের একটি ইহুদি বসতির বাসিন্দা নোয়াম। 'আমরা এদেশে আরবদের চাই না। তারা আমাদের দিকে পাথর ছোঁড়ে। ইসরাইলের জায়গা দখল করছে।'

নোয়াম যখন এসব কথা বলছিলেন, ওই সময় দলীয় একজন কর্মী তাকে দ্রুত টেনে নিয়ে যায়। এর কারণ হয়তো তাদের নেতা বেন-গাভির- যিনি এর আগে বর্ণবাদী আচরণের জন্য আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন, - নিজের ভাবমূর্তি কিছুটা বদলাতে চাইছেন। মূলধারার রাজনীতিবিদ হতে চাইছেন যদিও তার আরববিদ্বেষী কথাবার্তা বন্ধ করেননি তিনি।

বেন-গাভির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি 'সব ইসরাইলি নাগরিকের স্বার্থে কাজ করবেন, এমনকি যারা আমাকে ঘেন্না করে।'

'আবারো সময় এসেছে এদেশের ভূমির মালিকানা হাতে নেয়ার,' মঙ্গলবার রাতে এক্সিট পোলের ফলাফল ঘোষণার পরপরই মন্তব্য করেন এই কট্টর আরববিদ্বেষী রাজনীতিক।

তারা জিতছেন তা বোঝার পর থেকেই জেরুসালেমে তার সমর্থকদের স্লোগান ছিল - 'সন্ত্রাসীদের মৃত্যু চাই।' এর আগে তাদের কণ্ঠে সবসময় শোনা যেত- 'আরবদের মৃত্যু চাই।'

দল ক্ষমতার কেন্দ্রে ঢুকবে এবং বেন-গাভির বড় কোনো মন্ত্রী হবেন এই সম্ভাবনায় হয়তো আরব শব্দটির বদলে স্লোগানে সন্ত্রাসী শব্দটি জোড়া হয়েছে।

পূর্ব জেরুসালেমে বেন-গাভিরের উসকানিমূলক বক্তব্য এবং আচরণ আমার মতো সব সাংবাদিকেরই জানা। বিভিন্ন সময়ে আমরা সবাই তা দেখেছি।

ইসরাইলের 'জেরুসালেম দিবসে' তাকে একাধিকবার পুরনো শহরের স্পর্শকাতর ফিলিস্তিনি এলাকার ভেতর দিয়ে কট্টর ইহুদি জাতীয়তাবাদীদের মিছিলে নেতৃত্ব দিতে দেখেছি আমি।

গত মাসেই পূর্ব জেরুসালেমের ফিলিস্তিনি অধ্যুষিত শেখ জারাহ এলাকায় ফিলিস্তিনিদের দিকে প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে চিৎকার করে হুমকি দিতে দেখা গেছে তাকে।

কিন্তু ওই ঘটনার এক মাস পরই তার কট্টরপন্থী ওতজ্‌মা ইয়াহুদি (ইহুদি ক্ষমতা) পার্টি দেশের তৃতীয় বৃহত্তম দল হয়ে গেছে। দলের নেতা হিসাবে তিনি আসন্ন মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ পদ আশা করছেন। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্ব চাইছেন তিনি, এবং তা পেলে পুলিশ বিভাগ নিয়ন্ত্রণ করবেন বেন-গাভির।

তার ১৭ বছর বয়সী একজন নারী সমর্থক জোরি এলমাকিয়েজ তার নেতাকে নিয়ে উদ্বেগকে পাত্তাই দিলেন না। বরঞ্চ তিনি মনে করেন নির্বাচনের এই ফলাফল খুবই সন্তোষজনক ।

আমি মনে করি, ওতজ্‌মা ইয়াহুদি পার্টির বিরোধীদের উদ্বেগের কিছু নেই। কারণ শেষ পর্যন্ত এই দলের আসল লক্ষ্য ইসরাইল এবং এদেশের মানুষের স্বার্থ রক্ষা।

অচলাবস্থার অবসান
বুধবার তার লিকুদ পার্টির সমর্থকদের উদ্দেশে এক বক্তব্য দেয়ার সময় নেতানিয়াহুকে খুবই উল্লসিত দেখায়। লম্বা-চওড়া হাসি ছিল তার মুখে।

নাটকীয় কায়দায় এক বছর আগে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হলেও তিনি যেন জানতেনই যে এ নির্বাচনে তার বিজয় নিশ্চিত।

তিনি বলেন, মানুষ এমন সরকার চায় যারা 'দুর্বলতা না দেখিয়ে ক্ষমতা ও শক্তি দেখায়।' সেসময় তার সমর্থকদের গলায় স্লোগান উঠে 'কিং বিবি, কিং বিবি।' সমর্থকরা নেতানিয়াহুকে বিবি বলে সম্বোধন করে।

নির্বাচনের ফলাফল কী হতে চলেছে তা নিয়ে এখন মোটামুটি সবাই নিশ্চিত। অলৌকিক কিছু না ঘটলে নেতানিয়াহু তার কট্টর জাতীয়তাবাদী এবং কট্টর ইহুদিবাদী শরিকদের নিয়ে একটি সরকার গঠন করতে পারবেন। তিনি তা পারলে ইসরাইলে গত চার বছর ধরে চলা অচলাবস্থা-অনিশ্চয়তা দূর হবে।

দুর্নীতির দায়ে তার বিরুদ্ধে চলা মামলা নিয়ে ইসরাইলের সমাজ দ্বিধাবিভক্ত। তিনি সবসময় বলেছেন, তিনি নিরপরাধ এবং তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীরা তান সুনাম ক্ষুণ্ণ করতে বদ্ধপরিকর।

'তিনি এমন একজন মানুষ যিনি কখনই হার মানেন না, হাল ছাড়েন না। যে গুরুতর অভিযোগ নিয়ে তাকে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হয়েছে তা যেন তিনি গায়েই মাখেননি,' বলেন নির্বাচনী বিশ্লেষক মিচেল বারাক।

'যারা তাকে শাস্তি দিতে চেয়েছিল, তারা তা দিয়েছে, কিন্তু তারা স্থিতিশীলতা দিতে পারেনি। নেতানিয়াহু বিশ্বাস করেন তিনিই সেই স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার ক্ষমতা রাখেন।'

ইসরাইলের ভোটরাও হয়তো সেটাই মনে করেছেন।

বাম রাজনীতির দুর্দিন
ইসরাইলে এখনো অনেক মানুষ রয়েছেন যারা দেশের ভাবমূর্তি এবং ভবিষ্যৎ গন্তব্যকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখতে চান।

বুধবার তেল আবিবে বর্তমান অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী ইয়াইর লাপিদ তার দল ইয়েশ আতিদ দলের সমর্থকদের উদ্দেশ্যে এক ভাষণে যখন বলছিলেন ইসরাইলিরা 'উসকানি এবং ঘৃণার রাজনীতির' অবসান চায়, তার সমর্থকদের বিমর্ষ দেখাচ্ছিল।

বামপন্থী, ডানপন্থী, আরবসহ বিভিন্ন মত-পথের দল নিয়ে তৈরি তার কোয়ালিশন সরকার খুব কম দিনই টিকল।

তার এই স্বল্প সময়ের শাসনকালে ইসরাইলি এবং ফিলিস্তিনিদের মধ্যে যে সংঘাত হয়েছে তা ২০১৫ সালের পর সবচেয়ে বেশি। সহিংসতার ঘটনা বেড়েছে, এবং তার সরকার ইসরাইলি-ফিলিস্তিনি সংঘাত নিরসনের পথ খোঁজার তেমন কোনো চেষ্টা করেনি।

প্রগতিশীল মিডিয়া বলে পরিচিত প্লাস৯৭২ ম্যাগাজিনের সম্পাদক হাগাল মাত্তার মনে করেন লাপি;ের সরকার সংঘাত নিরসনে কোনো সাফল্য দেখাতে পারেনি।

তিনি মনে করেন, নির্বাচনে বামপন্থীদের সমর্থন কমার পেছনে ওই ব্যর্থতা অনেকটাই দায়ী।

'ইসরাইলের বামপন্থীদের এখন বসে ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করতে হবে কীভাবে আমরা এই অবস্থায় পৌছুলাম,' বলেন মাত্তার। তার গলায় হতাশা ছিল স্পষ্ট।

'বামপন্থীদের নতুন চিন্তাভাবনা প্রয়োজন। তবে যে আঘাত এসেছে, তাতে এ থেকে উত্তরণে আমদের হয়তো অনেক সময় লাগবে।'

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিক ফলাফলের জন্য ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে ইসরাইলি দৈনিক হারেতজের সাংবাদিক অ্যানশেল ফিফার বলেন, যা ধারনা করা হচ্ছিল ফলাফল সেটাই হয়েছে।

'আত্মপরিচয় নিয়ে ইসরাইলের ভেতর একটি সাংস্কৃতিক লড়াই চলছে। অনেকে মনে করেন এই লড়াইয়ের একদিকে রয়েছে ইসরাইলি সমাজের প্রগতিশীল মুক্তমনা অংশ, এবং তার বিপরীতে রয়েছে কট্টর জাতীয়তাবাদী এবং কট্টর ধর্মীয় একটি অংশ।'

তিনি বলেন, 'এই দ্বন্দ্ব অবশ্য নতুন কিছু নয়, কিন্তু নেতানিয়াহু এই দ্বন্দ্বকে তার রাজনৈতিক সুবিধার জন্য ভালোভাবেই ব্যবহার করেছেন।'

গত ১০ বছর ধরে ইসরাইলি রাজনীতি পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে আমি দেখেছি নেতানিয়াহু কিভাবে ক্রমাগত ডানপন্থার দিকে ঝুঁকেছেন, এবং তার বদৌলতেই তিনি তিনি আরেক দফা ক্ষমতায় ফিরছেন।

তবে উগ্র জাতীয়তাবাদীদের গ্রহণযোগ্যতা এবং ক্ষমতা যেভাবে বেড়েছে, তাতে এই সব শরিকের নিয়ন্ত্রণ এখন তার জন্য আরো কঠিন হবে।
সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
ড. ইউনূসের ইউনেস্কো পুরস্কার নিয়ে যা বললেন তার আইনজীবী একনেকে ৮৪২৫ কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন সান্তাহারে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে যুবক নিহত জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেয়া হবে : আব্দুর রহমান যুক্তরাষ্ট্রের সেতু ভাঙ্গার প্রভাব পড়বে বিশ্বজুড়ে! নাশকতার মামলায় চুয়াডাঙ্গা বিএনপি-জামায়াতের ৪৭ নেতাকর্মী কারাগারে হারল্যানের পণ্য কিনে লাখপতি হলেন ফাহিম-উর্বানা দম্পতি যাদের ফিতরা দেয়া যায় না ১৭ দিনের ছুটি পাচ্ছে জবি শিক্ষার্থীরা বেলাবতে অটোরিকশা উল্টে কাঠমিস্ত্রি নিহত রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদন

সকল