২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সিন্ডিকেটের কবলে আলুর বাজার

গুদামে থাকলেও বাজার থেকে উধাও; পরিচিত ছাড়া বিক্রি করছেন না দোকানিরা; অভিযানের প্রভাব পড়ছে না বাজারে
-

সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছে আলুর বাজার। গুদামে হাজার হাজার বস্তা আলু, অপর দিকে দোকান থেকে উধাও। যেসব দোকানে আছে তারাও সরকারি নির্দেশনা মানছে না। কোনো কোনো দোকানি অতি পরিচিতজন ছাড়া আলু বিক্রি করছেন না। চলতি মাসে আলুর বাজারে চরম অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। এমনকি নিত্যব্যবহার্য এই পণ্যটির কেজি ৫৫-৬০ টাকায় উঠে যায়। এই পরিস্থিতিতে গত বুধবার আলুর দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার। নির্ধারিত দামে কেজিপ্রতি খুচরা পর্যায়ে ৩০, পাইকারিতে ২৫ ও হিমাগার থেকে ২৩ টাকায় বিক্রির নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু গতকাল রাজধানীর বাজারগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, এই নির্দেশ কেউ মানছে না। গতকালও বিভিন্ন দোকানে ৫০-৫৫ টাকায় আলু বিক্রি হতে দেখা গেছে।
কমলাপুরের বাসিন্দা সবুজ গতকাল বলেন, তিনি অন্তত ৮টি দোকানে আলুর দাম জিজ্ঞেস করেছেন। এর মধ্যে ৫টি দোকান থেকে বলা হয়েছে আলু নেই। বাকি প্রতিটি দোকানেই গতকালও আলু ৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখেছেন। রাজধানীর গোপীবাগ বাজারে গিয়ে গতকাল দুপুরের দিকে দেখা যায় অধিকাংশ দোকানেই আলু নেই। জিজ্ঞেস করতে দোকানি বলেন, ‘আলু শেষ হয়ে গেছে’। তবে স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেছেন, পরিচিত লোক ছাড়া কেউ আলু বিক্রি করছেন না। সরকারি লোক দোকানে অভিযান চালাতে পারে এই শঙ্কায় তারা আলু থাকলেও অস্বীকার করছেন। আবার পরিচিত লোকের কাছে ঠিকই বিক্রি করছেন।
মানিকনগর বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, দোকানগুলোতে বস্তায় বস্তায় আলু আছে। কিন্তু ক্রেতাদের কাছে কেউ বিক্রি করতে চাচ্ছে না। পরিচিত লোকদের কাছে বিক্রি করলেও তারা অজুহাত দেখাচ্ছে পাইকারিতে বেশি দামে কেনা। যে কারণে তাদেরকে ৫০ টাকার উপরে আলু বিক্রি করতে হচ্ছে। মানিকনগর বাজারের সাধারণ ক্রেতা ফয়সাল, জসিমসহ অনেকেই বলেছেন, বিক্রি না করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও এভাবে আলু সংরক্ষণ করছে। আর যাদের জরুরিভাবে প্রয়োজন পড়ছে তারা ঠিকই বেশি দাম দিয়ে কিনছেন।
গতকাল বিকেলের দিকে মতিঝিল সোনালীব্যাংক সংলগ্ন ফুটপাথের বাজারে গিয়ে দেখা যায় প্রকাশ্যেই দোকানিরা ৫০ টাকায় আলুর কেজি বিক্রি করছে। এ সময় অনেক ক্রেতা সেখানে টহলরত পুলিশ সদস্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও পুলিশের কোনো কর্ণপাত নেই। টহলরত পুলিশ জানিয়ে দেয় আলুর দাম কত টাকা তা দেখার দায়িত্ব তাদের নয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ত্রাণ ও বন্যায় আলুর অধিক ব্যবহারের অজুহাতে বাজারে সঙ্কট দেখিয়ে একটি সিন্ডিকেট হাজার হাজার বস্তা আলু গুদামজাত করেছে। তারাই মূলত আলুর দাম বাড়িয়েছে। সূত্র জানায়, মুন্সীগঞ্জের আবুল হাজী মুন্সীগঞ্জ, বগুড়া ও ঠাকুরগাঁওয়ে কম হলেও ৪০ হাজার বস্তা আলু সংরক্ষণ করেছেন। মুন্সীগঞ্জের জলিল শিকদারের গুদামে রয়েছে ২০ হাজার বস্তার মতো। আর মুন্সীগঞ্জের মনির মোল্লার গুদামেও ২০ হাজার বস্তার মতো রয়েছে। এরূপ অনেক আড়তদারের গুদামেই এখন হাজার হাজার বস্তা আলু রয়েছে। যেসব অঞ্চলে আলুর ফলন হয় ওই সব অঞ্চলে অনেক আড়তদারই রয়েছেন যারা আলু গুদামজাত করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন।
এ দিকে গতকালও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আলুসহ নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো অভিযান চালায়। কিন্তু এতে তেমন কোনো প্রভাব পড়ছে না বলে জানিয়েছেন সাধারণ ক্রেতারা।


আরো সংবাদ



premium cement