২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সুলভ ঋণের সুফল দুর্লভ

-

ব্যাংক ঋণের সুদহার কমিয়ে আনা হয়েছে। কমানো হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার নেয়ার (রেপো) সুদ। আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারের সুদহার (কলমানি রেট) এ যাবৎকালের সর্বনি¤œ পর্যায়ে নেমে এসেছে। আমানতকারীদের সুদহারও কমিয়ে আনা হয়েছে। বলা যায়, ব্যাংকের তহবিল সংগ্রহের ব্যয় অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন কম। কিন্তু সুফল পাচ্ছেন না শুধু বিনিয়োগকারীরা। অতি ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা কাক্সিক্ষত হারে ঋণ পাচ্ছেন না। অথচ সরকারকে ঋণ দিতে ব্যাংকগুলো অতিউৎসাহী হয়ে পড়েছে। বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, ব্যাংকগুলো নতুন কোনো ঋণ না দিলেও ঋণের যে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে তা বিদ্যমান ঋণের সুদ যুক্ত হয়ে স্ফীত হচ্ছে। এতে প্রকৃত বিনিয়োগ বাড়ছে না। ব্যাংকগুলোকে ঋণ বিতরণ বাড়াতে নানাভাবে তাগিদ দেয়ার পরেও অবস্থার কোনো উন্নতি হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রায় দুই ডজন ব্যাংককে শোকজও করা হয়। ঋণ না দেয়ার তেমন কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি ব্যাংকগুলো।
ঋণ দেয়ায় অনীহার বিষয়ে ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ঋণ দিলে খেলাপি হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকবে। অথচ ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। উপরন্তু তাদের নানাভাবে ছাড় দেয়া হয়। এতে ব্যাংকের পুঞ্জীভূত খেলাপি ঋণ বাড়ছে। এটা চলতে থাকলে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেয়া ব্যাংকের জন্য কষ্টকর হবে। এ কারণে বর্তমান পরিস্থিতিতে সাধারণ উদ্যোক্তাকে ঋণ দেয়ার পরিবর্তে সরকারকেই ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে আগ্রহী হয়ে পড়েছে। সরকারের ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ থেকে আয় কম হলেও মেয়াদ শেষে সুদে-আসলে তা ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা রয়েছে। এ কারণে বর্তমানে দেখেশুনে খুব ভালো গ্রাহক ছাড়া ঋণ দেয়া হচ্ছে না। ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা যাচাই করেই ঋণ দেয়া হচ্ছে।
ব্যাংকারদের এ বক্তব্যের প্রমাণও পাওয়া যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে। যেমন, গত ৬ অক্টোবর দুই বছর মেয়াদি বন্ডের মাধ্যমে সরকারকে ২ হাজার কোটি টাকা তুলে দেয়ার জন্য নিলামের আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই দিন ২ হাজার কোটি টাকার বিপরীতে ৮ হাজার ৪২৩ কোটি টাকা নিয়ে হাজির হয় ব্যাংকগুলো। বিনিয়োগ চাহিদা বেশি থাকায় সুদহারও কমিয়ে দেয়া হয়। ওই দিন মাত্র ৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ সুদে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ২ হাজার কোটি টাকার দরপত্র গ্রহণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১১ অক্টোবর ৯১ দিন ও ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিল নিলামের আয়োজন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই দিন ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকার বিপরীতে ৭ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা নিয়ে হাজির হয় ব্যাংকগুলো। এর মধ্যে ৯১ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের ৯০০ কোটি টাকার বিপরীতে ৩ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকার দরপত্র দাখিল করে ব্যাংকগুলো। আর ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের ৮০০ কোটি টাকার বিপরীতে ৩ হাজার ৯৬৮ কোটি ৫০ লাখ টাকার দরপত্র দাখিল করা হয়। এর মধ্যে দুই মেয়াদি ট্রেজারি বিল থেকে ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকার দরপত্র গ্রহণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সুদহার সর্বনিম্ন ১ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ ছিল।
উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, তারা টাকার সঙ্কটে ভুগছেন। ব্যাংকগুলো থেকে কোনো সহযোগিতা পাচ্ছেন না। এমন একজন উদ্যোক্তা জানান, গত বছর তিনি একটি বেসরকারি ব্যাংককে শুধু ঋণের মুনাফাই পরিশোধ করেছেন ২৩ কোটি টাকা। তিনি কখনো খেলাপি ছিলেন না। কিন্তু করোনার কারণে তিনি ব্যাংকের ঋণ এখন ঠিকমতো পরিশোধ করতে পারছেন না। কিন্তু তাদের এই দুর্দিনে ব্যাংক থেকে তেমন কোনো সহযোগিতা পাচ্ছেন না। উপরন্তু তাদের নানাভাবে নাজেহাল হতে হচ্ছে। এখন ব্যাংকই পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে ওই ব্যবসায়ীর মতো বেশির ভাগ উদ্যোক্তারই একই সমস্যা। ব্যাংক থেকে কাক্সিক্ষত সহযোগিতা পাচ্ছেন না।
অন্য দিকে ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, তাদের পরিচালন ব্যয় বেশি। গত জানুয়ারি থেকে ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৯ শতাংশ বেঁধে দেয়া হয়েছে। এটাই নতুন বিনিয়োগে প্রধান অন্তরায় বলে তারা মনে করছেন। তারা জানান, ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। বরং কখনো ঋণ পুনর্গঠন, কখনো সুদ মওকুফ, কখনোবা নামমাত্র ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণখেলাপিদের ছাড় দেয়া হচ্ছে। এতে ব্যাংকের পুঞ্জীভূত খেলাপি ঋণ বেড়ে যাচ্ছে। দৃশ্যমান খেলাপি ঋণের চেয়ে অদৃশ্য খেলাপি ঋণ প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। আমানতকারীদের অর্থে ঋণ দেয়া হয়। ঋণগ্রহীতারা ঋণ ফেরত না দিলে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে। এতে আস্থার সঙ্কটে পড়ে যাবে দেশের ব্যাংকিং খাত। বাধ্য হয়েই তারা বর্তমান পরিস্থিতিতে ঋণবিতরণে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করছেন।
তবে বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি প্রায় ৯ শতাংশ দেখানো হচ্ছে। এ প্রবৃদ্ধি নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। কারণ নতুন ঋণ না দিলেও বিদ্যমান ঋণের সাথে ৯ শতাংশ সুদ যুক্ত হলে সার্বিক ঋণ স্ফীত আপনা আপনিই হবে। তবে নতুন বিনিয়োগ না করা অর্থনীতির জন্য মোটেও ভালো লক্ষণ নয়। কারণ প্রতি বছর ২০ থেকে ২৫ লাখ মানুষ শ্রমক্ষেত্রে প্রবেশ করছে। তাদের জন্য বর্ধিত হারে কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হলে বেকারত্ব বেড়ে যাবে। এতে বেড়ে যাবে সামাজিক অস্থিরতাও। এটা ঠেকাতেই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রয়োজনে ইচ্ছেকৃত রাঘব বোয়াল ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে ঋণ আদায় বাড়াতে হবে। অন্যথায় পরিস্থিতি অর্থনীতির জন্য মোটেও সুখকর হবে না।


আরো সংবাদ



premium cement
দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা : আমিনুল লিবিয়ায় নিয়ে সালথার যুবককে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা, গ্রেফতার ১ মনুষ্য চামড়ায় তৈরি বইয়ের মলাট সরানো হলো হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আওয়ামী লীগকে বর্জন করতে হবে : ডা: ইরান আমরা একটা পরাধীন জাতিতে পরিণত হয়েছি : মেজর হাফিজ তরুণীর লাশ উদ্ধারের পর প্রেমিকসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা ভিয়েনায় মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্রদূতদের ইফতারে ইসলামিক রিলিজিয়াস অথোরিটি আমন্ত্রিত এবার বাজারে এলো শাওমির তৈরি বৈদ্যুতিক গাড়ি সকল কাজের জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার অনুভূতি থাকতে হবে : মাওলানা হালিম বিএনপি জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি করে : ড. মঈন খান সাজেকে পাহাড়ি খাদে পড়ে মাহিন্দ্রচালক নিহত

সকল