২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

এক দশক ধরে জিডিপিতে কৃষি ও সেবা খাতের অবদান কমছে

কাঠামোগত পরিবর্তনকে চিহ্নিত করল অর্থ মন্ত্রণালয়
-

ধারাবাহিকভাবে জিডিপিতে সেবা ও কৃষি খাতের অবদান কমে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি গত একদশক ধরে বিদ্যমান। যেমনÑ ২০১০-২০১১ অর্থবছরে জিডিপিতে (মোট দেশজ উৎপাদন) কৃষি খাতের অবদান ছিল ১৮ ভাগ। সেখানে সদ্যসমাপ্ত ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে তা কমে হয়েছে ১৫ দশমিক ৪৪ ভাগ। একই কথা প্রযোজ্য সেবা খাতের ক্ষেত্রেও। ২০১০-২০১১ অর্থবছরে জিডিপিতে এ খাতে অবদান ছিল ৫৪ দশমিক ৬১ ভাগ। সেখানে গত অর্থবছরে তা কমে হয়েছে ৫০ দশমিক ৬৪ ভাগ। তবে জিডিপিতে এই দুই খাতের অবদান কমলেও শিল্প খাতের অবদান কিন্তু বেড়ে গেছে। যেমনÑ ২০১০-২০১১ অর্থবছরে জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ছিল মাত্র ২৭ দশমিক ৩৮ ভাগ। সেখানে গত অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৩৫ দশমিক ১২ ভাগ।
জিডিপিতে সেবা ও কৃষি খাতের অবদান কমে যাওয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ‘কাঠামোগত পরিবর্তনকে’ কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ধারাবাহিকভাবে কাঠামোগত পরিবর্তন ঘটেছে। জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান হ্রাস পাচ্ছে এবং শিল্প খাতের অবদান বৃদ্ধি পাচ্ছে। জিডিপিতে সেবা খাতের অবদান সর্বোচ্চ, তবে গত এক দশক ধরে এ হার ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে।’
সরকারের ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি ২০২০-২১ হতে ২০২২-২০২৩’ এ বিষয়টি উঠে এসেছে। জিডিপিতে সেবা ও কৃষি খাতে অবদানের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, জিডিপিতে সেবা খাতের অবদান ২০১১-১২, ২০১২-১৩, ২০১৩-১৪, ২০১৪-১৫, ২০১৫-১৬, ২০১৬-১৭, এবং ২০১৭-১৮ এবং ২০১৮-১৯ ছিল যথাক্রমে ৫৪.৪৪, ৫৪.২২, ৫৩.৯৫, ৫৩.৫৮, ৫৩.১২, ৫২.৮৫, ৫২.১১ এবং ৫১.৩৩ ভাগ। একই সময়ে জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ছিল যথাক্রমেÑ ১৭.৩৮, ১৬.৭৮, ১৬.৫, ১৬, ১৫.৫৫, ১৪.৭৪, ১৪.২৩ এবং ১৩.৬৫ ভাগ।
জিডিপিতে সেবা ও কৃষি খাতের অবদান ধারাবাহিকভাবে কমলেও জিডিপির খাত সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার ফলে প্রবৃদ্ধি অর্জনে এই দু’টি খাতের উত্থান-পতন লক্ষ করা গেছে। যেমনÑ ২০১৩-১৪ অর্থবছরে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৪.৪ ভাগ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তা কমে হয়েছে ৩.৯ ভাগ। অন্য দিকে, একই সময়ে সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে যথাক্রমে ৫.৬ ও ৬.৮ ভাগ।
এ বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেছেন, জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ধারাবাহিকভাবে যে কমছে, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ আমরা অনেক দিন ধরেই কৃষিনির্ভর দেশ থেকে একটি শিল্পনির্ভর দেশে রূপান্তরিত হচ্ছি। এতে এক দিকে যেমন দেশে কর্মসংস্থান হচ্ছে, অন্য দিকে, দারিদ্র্যবিমোচনেও শিল্প খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
এ দিকে, কৃষি ও সেবা খাতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেলেও সরকারের পক্ষ থেকে আগামী তিন অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৮ শতাংশ নেয়ার এক উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। সরকারের প্রক্ষেপণ অনুযায়ী আগামী ২০২০-২০২১ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে আট দশমিক ২০ শতাংশ এবং পরবর্তী দুই ২০২১-২০২২ এবং ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে এই প্রবৃদ্ধি প্রক্ষেপণ করা হয়েছে যথাক্রমে আট দশমিক ৩০ এবং আট দশমিক ৪০ শতাংশ।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও মধ্যমেয়াদি দৃশ্যকল্প’ এ চিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এর আগে জিডিপি প্রবৃদ্ধির বিষয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র তুলে ধরে ছিল। যেমনÑ বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি আরো কমে ১ শতাংশে আসতে পারে। একই সাথে তারপরের অর্থবছরে (২০২১-২০২২) এই প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়ে ২ দশমিক ৮ থেকে ৩ দশমিক ৯ শতংশ হতে পারে। আইএমএফের পক্ষ থেকেও প্রায় একই ধরনের প্রক্ষেপণ করা হয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement