২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সংবাদ প্রকাশ করায় এক ডজন সাংবাদিককে ডিএমপিতে তলব

পুলিশ কমিশনারকে যুগ্ম কমিশনারের পার্সেন্টেজ গ্রহণের প্রস্তাব
-

পুলিশের আইজি বরাবর ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের পাঠানো একটি চিঠি নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে অন্তত এক ডজন সাংবাদিককে চিঠি দিয়ে তলব করেছে ডিএমপি।
ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) মো: শাহ আবিদ হোসেন স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বিভিন্ন সাংবাদিককে তারিখ উল্লেখ করে ডিএমপি সদর দফতরে উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে।
এ দিকে সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সাংবাদিক সমাজ। সাংবাদিক নেতারা বলছেন, সংবাদ প্রকাশের জেরে পুলিশ এভাবে কোনো সাংবাদিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকতে পারে না। যে দফতর থেকে চিঠিটি ফাঁস হয়েছে সেখানে জড়িতদের খুঁজে বের না করে উল্টো সাংবাদিকদের হয়রানি করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকরা জানান, সম্প্রতি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহা: শফিকুল ইসলাম আইজিপি বরাবর একটি চিঠি পাঠিয়েছেন, যেখানে তার কার্যালয়ের ইমাম হোসেন নামে একজন যুগ্ম কমিশনারকে তিনি দুর্নীতিবাজ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এমনকি ওই পুলিশ কর্মকর্তা কমিশনারকে পুলিশের জন্য কেনাকাটায় পার্সেন্টেজ গ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছেন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। এ কারণে ওই কর্মকর্তাকে ডিএমপি থেকে বদলি করার আহ্বান জানান কমিশনার।
ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে দেশের একাধিক প্রিন্ট ও অনলাইন পত্রিকা এবং টেলিভিশন চ্যানেলে সংবাদ প্রকাশিত হয়। বিষয়টি নিয়ে পুলিশের মধ্যেও ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলতে থাকে। এ কারণে ডিএমপি থেকে চিঠিটি কিভাবে ফাঁস হলো তা জানার জন্য একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির প্রধানের পক্ষ থেকে অন্তত এক ডজন সাংবাদিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে অনুসন্ধান কমিটির সদস্য ও ডিএমপির উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মো: ওয়ালিদ হোসেন বলেন, আমাদের ওপর অর্পিত যে দায়িত্ব তা যথাযথ পালন করতেই আমরা সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চিঠি দিয়েছি। আমরা সাংবাদিকদের আসার জন্য অনুরোধ করেছি। কাউকে বাধ্য করছি না।
চিঠি পাওয়া একাধিক সাংবাদিক জানিয়েছেন, ডিএমপি থেকে চিঠি দিয়ে তাদের ডাকার বিষয়টিকে তারা হয়রানি মনে করছেন। এটি ভীতিকর একটি পরিবেশ সৃষ্টি করে দিচ্ছে। যার কারণে ভবিষ্যতে স্বাধীন সাংবাদিকতাও বাধাগ্রস্ত হবে। সাংবাদিকদের সংবাদ পাওয়ার অন্যতম একটি উপায় হলো সোর্স মেইনটেইন করা। ফলে সোর্সের বিষয়ে তথ্য জানতে চাওয়ার কারণে সোর্সরাও নিজের পরিচয় প্রকাশ পেয়ে যাওয়ার ভয়ে থাকবেন। এতে সমাজে অন্যায়-অবিচার, ঘুষ-দুর্নীতি আরো বেড়ে যাবে, যা সার্বিকভাবে দেশের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
উল্লেখ্য, ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলামকে ‘পার্সেন্টেজ গ্রহণের প্রস্তাব’ দেয়ার ঘটনায় ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (লজিস্টিকস) মো: ইমাম হোসেনকে বদলির জন্য পুলিশ সদর দফতরে আইজিপি বরাবর একটি চিঠি দেন কমিশনার।
আইজিপির উদ্দেশে লেখা চিঠিতে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস) মো: ইমাম হোসেন একজন দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা। ডিএমপির বিভিন্ন কেনাকাটায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। তদুপরি তিনি ডিএমপির কেনাকাটায় স্বয়ং পুলিশ কমিশনারের কাছে পার্সেন্টেজ গ্রহণের প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন। ফলে ওই কর্মকর্তাকে ডিএমপিতে কর্মরত রাখা সমীচীন নয় মর্মে প্রতীয়মান হয়েছে। এমতাবস্থায় তাকে জরুরি ভিত্তিতে অন্যত্র বদলি করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো।
গত ৩০ মে ডিএমপি কমিশনারের পক্ষ থেকে পুলিশ সদর দফতরে চিঠি পাঠিয়ে বদলির সুপারিশ করার ১০ দিনের মাথায় ইমাম হোসেনকে বদলি করা হয়।
ইমাম হোসেন ২০১২ সালে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তী সময়ে ডিএমপির উপ-কমিশনার (ডিসি-অর্থ) ও ডিসি-লজিস্টিকস পদে দায়িত্ব পালন করেন।
ডিইউজের প্রতিবাদ
একজন পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তার অনৈতিক তৎপরতার অভিযোগের সংবাদ গণমাধ্যমে প্রচারের পর অন্তত ১০ জন সাংবাদিককে তদন্ত কমিটি তলব করায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ ও এ ধরনের পদক্ষেপের প্রতিবাদ জানিয়েছেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) একাংশের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু।
ডিইউজে নেতৃবৃন্দ গতকাল বুধবার এক বিবৃতিতে বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) দফতর থেকে কয়েক দিন আগে পাঠানো এক চিঠিতে ‘সুষ্ঠু অনুসন্ধানের নিমিত্তে’ নির্ধারিত সময়ে ১০ জন সাংবাদিককে হাজির হতে বলা হয়েছে। ডিইউজে নেতৃবৃন্দ মনে করেন, পুলিশি অপরাধ সংক্রান্ত পুলিশ বিভাগের তদন্তে সাংবাদিকদের তলব করা এবং জিজ্ঞাসাবাদের পদক্ষেপ স্পষ্টতই প্রচলিত আইন ও রেওয়াজের পরিপন্থী। এ ধরনের চিঠি এক ধরনের মনস্তাত্বিক চাপ তৈরি করছে, যা স্বাধীন সংবাদ প্রবাহের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ।
বিবৃতিতে ডিইউজে নেতৃবৃন্দ এই ধরনের হয়রানি ও মনস্তাত্বিক চাপমূলক উদ্দেশ্যপূর্ণ চিঠি অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, দেশের প্রচলিত আইনে সাংবাদিকদের কাছে তথ্যের সূত্র জানতে চাওয়ার কোনো অবকাশ নেই। কেননা, সূত্রের গোপনীয়তা রক্ষা করা একজন সাংবাদিকের মৌলিক ও পবিত্র দায়িত্বের অংশ হিসেবে স্বীকৃত। তা ছাড়া, সাংবাদিকদের কাজ হচ্ছে গোপনীয়তার বেড়াজাল ভেঙে সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্য জনগণকে অবহিত করা।
বিএবির সিদ্ধান্তে ডিইউজের উদ্বেগ
সংবাদপত্র, অনলাইন বার্তা সংস্থা ও টেলিভিশনে ব্যাংকের বিজ্ঞাপন প্রদান বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)। ব্যাংক মালিকদের এ ধরনের ঘোষণায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) একাংশের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু।
নেতৃবৃন্দ গতকাল বুধবার অপর এক বিবৃতিতে বলেন, গণমাধ্যমে ব্যাংকের বিজ্ঞাপন প্রদান বন্ধ রাখার ঘোষণা মূলত গণমাধ্যমের সম্প্রসারণ ও স্বাধীন মত প্রকাশের পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করার শামিল।
ডিইউজে নেতৃবৃন্দ বলেন, গণমাধ্যমের আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস্য প্রধানত বিজ্ঞাপন। করোনা দুর্যোগের এই কঠিন সময়ে কোনো সংগঠন বা সংস্থা থেকে বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা গণমাধ্যমের জন্য সুবিবেচনা প্রসূত আচরণ হবে না। দেশ ও জাতি গঠনে গণমাধ্যমের যে ভূমিকা রয়েছে, এই ঘোষণায় তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নেতৃবৃন্দ আরো মনে করেন, ঘোষণা দিয়ে বিজ্ঞাপন বন্ধ করা মিডিয়ার সাথে বৈরী আচরণের শামিল। যা খুবই হতাশা ও দুর্ভাগ্যজনক। এ ধরনের ঘোষণা থেকে বিএবিকে সরে আসার আহ্বান জানান ডিইউজে নেতৃবৃন্দ। বিজ্ঞপ্তি।

 


আরো সংবাদ



premium cement