২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

অনুমোদনহীন বিপুল টেস্ট কিট আমদানিতে কর্মকর্তারা বিস্মিত

-

করোনাভাইরাস শনাক্ত করার জন্য চীন থেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে আমদানি করা র্যাপিড টেস্ট কিট নিয়ে একধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। দেশের বেশ কয়েকটি জায়গায় ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতার উদ্যোগে এসব র্যাপিড টেস্ট কিট বিতরণও করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ‘করোনাভাইরাস শনাক্ত’ করার জন্য এসব কিট ব্যবহার করা হয়।
বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রোভিসি এবং ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, এসব র্যাপিড টেস্ট কিট ব্যবহারের কিছু বিপদ রয়েছে।
তিনি বলেন, এগুলোর মান সম্পর্কে শতভাগ নিশ্চিত হতে না পারলে পরীক্ষার ফলাফল ভুল হওয়ার ঝুঁকি থাকতে পারে। সে জন্য ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর দ্বারা এগুলোর মান নির্ণয় করা জরুরি। কিন্তু এসব র্যাপিড কিট আমদানির ক্ষেত্রে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের কোনো অনুমোদন নেয়া হয়নি। বাংলাদেশের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র করোনাভাইরাস শনাক্তকরণের জন্য সম্প্রতি র্যাপিড টেস্ট কিট উদ্ভাবনের দাবি করলেও সেটিকে অনুমোদন দেয়নি বাংলাদেশের ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর।
এ ছাড়া স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেছিলেন, গণস্বাস্থ্যের উদ্ভাবিত র্যাপিড টেস্ট কিটের মাধ্যমে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত ভুল ফলাফল আসতে পারে। এখানে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত ফলস নেগেটিভ ফলাফল আসে। অর্থাৎ একজনের দেহে করোনাভাইরাস থাকেলেও র্যাপিড টেস্ট কিটের মাধ্যমে সেটি না-ও আসতে পারে। এ ধরনের ভুল হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা ১৫ শতাংশ।
তিনি বলেন, এসব কিটের ক্ষেত্রে স্পেসিফিকেশন (রোগ নির্ণয়) প্রায় শতভাগ হওয়া প্রয়োজন। দেখা গেল কারো দেহে হয়তো করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব নেই, কিন্তু র্যাপিড টেস্টের মাধ্যমে ভুল হলে তাকে হয়তো পজিটিভ দেখানো হতে পারে। আবার যার দেহে করোনাভাইরাস আছে, তার ক্ষেত্রে যদি ফল নেগেটিভ হয়, তাহলে তো সে নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াবে এবং অন্যদের সংক্রমিত করবে। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের অনুমোদন ছাড়া এসব র্যাপিড টেস্ট কিট কিভাবে বাংলাদেশে আসছে সেটি নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন অধ্যাপক ইসলাম।
তিনি বলেন, সাধারণত যেসব করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরির সুবিধা নেই, সেসব এলাকায় র্যাপিড টেস্ট কিট ব্যবহার করা যেতে পারে। র্যাপিড টেস্ট কিটের ক্ষেত্রে মাণ নির্ণয় অত্যন্ত জরুরি।
এসব কিট আমদানি করছে কারা?
চীন থেকে র্যাপিড টেস্ট কিট আমদানির ক্ষেত্রে যার নাম সবার আগে আসছে তিনি হলেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম।
তিনি বলেন, এ পর্যন্ত তিনি ৫০ হাজার কিট আমদানি করেছেন। এ ছাড়া চীনে আরো এক লাখ কিট প্রস্তুত আছে। চাইলে সেগুলোও তিনি আনতে পারেন বলে দাবি করে বলেন, ‘বাংলাদেশে যেসব কিট আনছি সেগুলো আমি বিভিন্ন হাসপাতালে দিয়েছি। এ ছাড়া আমার স্টকে কিছু আছে’। র্যাপিড টেস্ট কিট আমদানি করতে তিনি ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের কোনো অনুমোদন নেননি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এগুলো বিপদের মোকাবেলার জন্য এনে রাখছি। আমদানির অনুমোদন নিতে সব মিলিয়ে ১৮০ দিন পর্যন্ত টাইম লাগে। এখন বিশ্বজুড়ে মহামারী অবস্থা। এত দিন সময় লাগলে মানুষ বাঁচবে?’
তিনি বলেন, ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী এসব কিট ব্যবহার করা হবে। মি. আলম দাবি করেন, তিনি র্যাপিড টেস্ট কিট ছাড়াও পার্সোনাল প্রোটেকশন ইকুইপমেন্ট (পিপিই) আমদানি করেছেন।
মি. আলম র্যাপিড টেস্ট কিট আমদানি করে অন্যান্য জেলায়ও দিয়েছেন। পাবনার বেড়া উপজেলায় এ ধরনের টেস্ট কিট দিয়েছেন তিনি।
পাবনার বেড়া পৌরসভার মেয়র আব্দুল বাতেন বিবিসি বাংলাকে বলেন, তার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বেড়া উপজেলার জন্য ২০০ র্যাপিড টেস্ট কিট দিয়েছেন।
এই র্যাপিড টেস্ট কিটের বিপদ সম্পর্কে তিনি অবগত আছেন কি না? এমন প্রশ্নে বেড়া পৌরসভার মেয়র বলেন, ‘আমি তো বিশেষজ্ঞ নই। এটা আমার জানা নেই। ডাক্তারদের বলেছি এগুলো বুঝে শুনে ব্যবহার করতে। দরকার হলে সিভিল সার্জনের সাথে কথা বলতে।’ একই ধরনের টেস্ট কিট গিয়েছে নাটোরের সিংড়া উপজেলায়। এখানে ২০০ কিট দেয়া হয়েছে।
নাটোরের সিভিল সার্জন কাজী মিজানুর রহমান বলেন, এসব কিট দিয়ে যাতে পরীক্ষা না করা হয় সে জন্য তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। আমাদের এখানে যদি সন্দেহজনক নমুনা সংগ্রহ করা হয়, তাহলে আমরা সেগুলো রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে পাঠিয়ে দিই। সেখানে পিসিআর মেশিনের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয়, বলছিলেন নাটোরের সিভিল সার্জন মিজানুর রহমান।
বাংলাদেশের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম আলমগীর বিবিসি বাংলাকে বলেন, র্যাপিড টেস্ট কিট বাংলাদেশে এখনো অনুমোদন দেয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। কেউ যদি সেটি আমদানি করে তাহলে নিয়মবহির্ভূতভাবে করেছে বলে তিনি উল্লেøখ করেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল