১৯ মে ২০২৪, ০৫ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলকদ ১৪৪৫
`


মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কী, কেন : মানতে কারা বাধ্য

-

গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশের পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাব ও এর কয়েকজন বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রকে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার নজির আছে। অন্যান্য দেশও এমন নিষেধাজ্ঞা দেয়।
কেন এই নিষেধাজ্ঞা : কেন এমন নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনো দেশ? সাধারণত কোন দেশ আরেকটি দেশকে বা নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে শাস্তি দেয়ার জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এমন দেশ এ রকম নিষেধাজ্ঞা জারি করে, যেসব দেশে ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের যাতায়াত, বিনিয়োগ বা স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় রয়েছে। আবার নিষেধাজ্ঞা অনেক সময় এক দেশ আরেক দেশের ওপর প্রতিশোধ হিসেবে আরোপ করে। যেমনটা রাশিয়া ২০১৪ সালে ইইউ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে করেছিল।
ইউনিভার্সিটি অব স্যালফোর্ডের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মরটিজ পিয়েপার বলেন, আপনি একটি দেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারেন, কারণ আপনি ওই দেশটির আচরণে পরিবর্তন দেখতে চান। তার মতে বিষয়টি হলো, এর ফলে ওই দেশের নাগরিক তার নিজ দেশের সরকারের ওপর রাগান্বিত হবে এবং দাবি জানাবে আরোপিত নিষেধাজ্ঞার ভিত্তিতে সরকার যাতে শোধরায়।
কারা যুক্তরাষ্ট্রের এ নিষেধাজ্ঞা মেনে চলতে বাধ্য?
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বা অর্থ দফতরের ওয়েবসাইটে বলা আছে, সব মার্কিন নাগরিক বা স্থায়ী বসবাসের অনুমতি রয়েছে, এমন সব ব্যক্তি, যেখানেই থাকুন না কেন, অফিস অব ফরেন অ্যাসেটস কন্ট্রোল (ওএফএসি) নির্দেশনা মেনে চলতে বাধ্য। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র যখন নিষেধাজ্ঞা জারি করে, সেইসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা দেশের সাথে মার্কিন কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনো রকম লেনদেন বা সম্পর্ক রক্ষা করতে পারবে না। সেই সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে, এমন কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানও তা করতে পারে না। আবার যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকবে, তারা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবেন না।
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির যে নির্বাহী আদেশে এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সব অর্থসম্পদ এবং মার্কিন কোনো ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণে থাকা সম্পদ জব্দ থাকবে। এগুলো হস্তান্তর, প্রদান বা লেনদেন করা যাবে না। সেই সাথে যেসব প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধিত, তাদের বিদেশী শাখাকেও এই নির্দেশনা মানতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র ভর্তুকি বা অনুদান দিয়ে থাকে, অথবা যুক্তরাষ্ট্র পরিচালনা করে, তাদের জন্যও এই নির্দেশনা কার্যকর হবে। যদি কেউ সেটা লঙ্ঘন করে, তাহলে বিভিন্ন অঙ্কের জরিমানার মুখোমুখি হতে হবে।
মার্কিন এই নিষেধাজ্ঞা বন্ধুদেশগুলো মানতে বাধ্য নয়। কিন্তু কানাডা, যুক্তরাজ্য, জার্মানি বা অস্ট্রেলিয়ার মতো যেসব দেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা অনুসরণ করে থাকে।
র্যাব কর্মকর্তাদের ওপর এই নিষেধাজ্ঞার কী প্রভাব হবে?
বাংলাদেশের পুলিশের প্রধান বেনজীর আহমেদ, র্যাব এবং এর ছয়জন বর্তমান ও সাবেক র্যাব কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্র যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, সেটা অর্থনৈতিক। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বা অর্থ দফতরের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, তাদের সাথে মার্কিন কোনো প্রতিষ্ঠান লেনদেন করতে পারবে না। সেই সাথে যুক্তরাষ্ট্রে যদি তাদের কোনো অর্থসম্পদ থেকে থাকে, তাও ফ্রোজেন বা সাময়িক জব্দ হয়ে থাকবে।
এ অবস্থায় তাদের বাংলাদেশে থাকা ব্যাংকিং বা আর্থিক লেনদেনে কি কোনো প্রভাব পড়বেÑ এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো যেহেতু বাংলাদেশ ব্যাংকের গাইডলাইনে পরিচালিত হয়, সুতরাং সেখান থেকে কোনো নির্দেশনা বা সার্কুলার না এলে বা আদালতের নিষেধাজ্ঞা না থাকলে ইমিডিয়েটলি তাদের আর্থিক লেনদেনে কোনো প্রভাব পড়বে না।
তিনি জানান, ‘যখন এরকম নিষেধাজ্ঞার ব্যাপার আসে, তখন হয়তো দেশের ব্যাংকগুলো তাকে কোনো রকম বাধা বা বিধিনিষেধ দিতে পারে না, তবে তাদের লেনদেনের ব্যাপারে একটু বেশি নজরদারি করে থাকে।
কয়েকটি আলোচিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা : বিভিন্ন সময় ইরান, উত্তর কোরিয়া, রাশিয়া, কিউবা, সিরিয়া, ভেনিজুয়েলার বিভিন্ন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে দেশভেদে এসব নিষেধাজ্ঞার প্রকৃতি আলাদা।
ইরান, উত্তর কোরিয়া, কিউবা, ভেনিজুয়েলা ও সিরিয়ার ওপর ব্যাপক আকারে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ফলে এসব দেশের সরকার বা কর্তৃপক্ষের সাথে কোনো মার্কিন প্রতিষ্ঠান কোনো রকম লেনদেন বা বাণিজ্য করে না। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে, এমন কোনো দেশও ইরান থেকে তেল কিনতে পারে না। এ ছাড়া সন্ত্রাসবিরোধী ও মাদকবিরোধী নিষেধাজ্ঞার আওতায় বিভিন্ন দেশের একাধিক ব্যক্তির ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বা সহযোগী দেশগুলোয় থাকা সম্পদ জব্দ করার পাশাপাশি তারা যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করতে পারে না।


আরো সংবাদ



premium cement