২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অপুষ্টিতে মাসে ১০ হাজার শিশু মৃত্যুর আশঙ্কা

-

করোনাভাইরাস মহামারী সঙ্কটে এমনিতেই না খেয়ে মারা যাওয়ার ঝুঁকিতে আছে হাজারো শিশু। তার ওপর এ বছর অপুষ্টিতে প্রতি মাসে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অতিরিক্ত ১০ হাজার শিশু মারা যেতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থার প্রধান তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস গত বুধবার জাতিসঙ্ঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) এক সম্মেলনে বলেছেন, মহামারীর কারণে তিনি এ বছর মারাত্মক অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর সংখ্যা ১৪ শতাংশ বা আরো ৬৭ লাখ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন। যাদের বেশির ভাগই হতে পারে সাব সাহারা আফ্রিকা এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে।
গেব্রিয়েসুস বলেন, ‘ধনীরা স্বাস্থ্যকর খাবার পাবে আর গরিবরা পাবে না, ধনীরা বাড়িতে থাকতে পারবে আর গরিবদের কাজের জন্য বাইরে বেরোতেই হবে এমন পৃথিবী আমরা মেনে নিতে পারি না।’ ‘মহামারীতে অর্থনীতি ধসে পড়ায় এখন বিভিন্ন দেশের সরকারকে টেকসই খাদ্যব্যবস্থার জন্য বেসরকারি খাত এবং নাগরিক সমাজের সাথে কাজ করতে হবে।’ ‘সেইসাথে অস্বাস্থ্যকর খাবার প্রস্তুতকারকদেরকে ভর্তুকি দেয়া বন্ধ করতে হবে।’ ‘বিশ্বের দেশগুলো শিশু খাদ্য কর্মসূচি সম্প্রসারণ করাসহ অস্বাস্থ্যকর খাবারের বাজার কমিয়ে ভোক্তাদের মধ্যে ভালো খাবারের প্রতি আগ্রহ তৈরির নীতি নিলে লাখ লাখ জীবন বাঁচানো যেতে পারে।’ তিনি আরো বলেন, ‘কোভিড-১৯ আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যে জীবন নশ্বর, স্বাস্থ্য খুবই মূল্যবান। আর স্বাস্থ্যকর খাবার কেবল ধনীদের একচেটিয়া নয়, এটি সবার অধিকার।’ ‘মহামারী টিকাদান কর্মসূচি থেকে শুরু করে শিশু পুষ্টি, পরিবার পরিকল্পনা, মানসিক স্বাস্থ্যসহ আরো অনেক জরুরি সেবা কর্মসূচিতে বিঘœ ঘটিয়েছে।’
মহামারীতে পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় অনেক জায়গায় খাবার ঠিকমত পৌঁছাচ্ছে না। ঠিকমতো খেতে না পেয়ে শিশুদের হাত-পা সরু হয়ে যাচ্ছে। মহামারীতে স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গরিব শিশুরা স্কুলে যে খবার পেত তাও আর পাচ্ছে না। এই খাবার সঙ্কটের কারণে শিশুমৃত্যু নিয়েও ডব্লিউএইচও প্রধান গেব্রিয়েসুস এর আগে সতর্ক করেছেন। গত মাসে তিনি বলেছিলেন, মহামারীর কারণে অনাহারে প্রতি মাসে প্রায় ১০ হাজার শিশুর মৃত্যু হতে পারে।
আক্রান্ত তিন কোটি ৮৭ লাখ ছাড়িয়েছে : বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা তিন কোটি ৮৭ লাখ ছাড়িয়েছে, আর মৃত্যুর সংখ্যা ১১ লাখ ছোঁয়ার পথে। গতকাল বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারস এ তথ্য জানিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারীতে এ পর্যন্ত বিশ্বের ২১৫টি দেশ ও অঞ্চল আক্রান্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা তিন কোটি ৮৭ লাখ ৩৪ হাজার ৬৯৪। এর মধ্যে ১০ লাখ ৯৬ হাজার ৮২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন দুই কোটি ৯১ লাখ ২২ হাজার ৮৯৭ জন।
শরীরে অ্যান্টিবডির ক্ষমতা মাত্র কয়েক মাস : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় বংশোদ্ভূত ড. দীপ্ত ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, একবার কোভিড-১৯ সংক্রমিত হলে শরীরে যে ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয় তা কয়েক মাস ধরে লড়াই করার ক্ষমতা রাখে। অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর দীপ্ত বলেন, ‘আমরা ৬ হাজার করোনারোগীকে পর্যবেক্ষণে রেখে দেখতে পাই ৫ থেকে ৭ মাস পর্যন্ত তাদের শরীরে করোনার অ্যান্টিবডি রয়েছে।’
তার মানে করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরে খুব বেশি দিন ভাইরাসটিকে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা থাকছে না মানব শরীরে। তিনি আরো বলেন, করোনা অ্যান্টিবডির ক্ষমতা মানবশরীরে কত দিন থাকে এই প্রশ্নের উত্তর পেতেই আমরা মূল গবেষণা শুরু করেছিলাম। তবে রিপোর্ট যা বলছে, তাতে অন্তত পাঁচ মাস ইমিউনিটি থাকছে বলে আমাদের ধারণা।
দ্বিতীয় টিকার অনুমোদন রাশিয়ার : করোনার দ্বিতীয় টিকার অনুমোদন দিয়েছে রাশিয়া। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়। গত বুধবার একটি সরকারি বৈঠকে এই সুখবর দেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। এ সময় তাকে বেশ উৎফুল্ল দেখা যায়। টিকাটি তৈরি করেছে সাইবেরিয়ার ভেক্টর ইনস্টিটিউট। তারা গত মাসে মানব শরীরে টিকাটির প্রাথমিক পর্যায়ের ট্রায়াল সম্পন্ন করেছে। কিন্তু সেই এই ট্রায়ালের ফলাফল এখন পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি। তা ছাড়া তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা নামে পরিচিত বড় আকারের ট্রায়ালও এখন পর্যন্ত শুরু করা হয়নি।
ফ্রান্সে রাতে কারফিউ জারি : ফ্রান্সে দ্রুত করোনার বিস্তার ঠেকাতে প্যারিসসহ আট শহরে রাতে কারফিউ জারি করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রো। টেলিভিশনে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, শনিবার থেকে এ নিয়ম চালু হবে। রাত ৯টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি থাকবে। টানা চার সপ্তাহ এ নিয়ম জারি থাকবে। ফ্রান্সে জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে জরুরি অবস্থাও ঘোষণা করা হয়েছে। করোনার বিস্তার ঠেকাতে ফ্রান্সের মতোই সতর্ক ব্যবস্থা নিয়েছে জার্মানি। দেশটির পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে পানশালা ও রেস্তোরাঁ দ্রুত বন্ধ করতে হবে।
ট্রাম্পের ছেলেরও করোনা হয়েছিল : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছেলে ব্যারনেরও (১৪) করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল। মার্কিন ফার্স্টলেডি মেলানিয়া ট্রাম্প বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ব্যারন যখন কোভিড-১৯ পজিটিভ হলো তখন ভয়টাই সত্যি হলো। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। মেলানিয়া বলেন, ‘ব্যারন শক্তিশালী কিশোর আর ওর কোনো উপসর্গও দেখা যায়নি।’ এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মেলানিয়া করোনা পজিটিভ হয়েছিলেন।
পাকিস্তানে সংক্রমণ বাড়ছে : ৫০ দিনের মধ্যে গত বুধবার থেকে পাকিস্তানের করোনাভাইরাসে সংক্রমণের হার বেড়েছে। আর চলতি সপ্তাহের প্রথম ৪ দিনে ৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে কোভিড-১৯ এ। গত আগস্ট মাসের পর করোনায় মৃত্যুর হারে এ সংখ্যাটি সর্বোচ্চ। চলতি সপ্তাহের সংক্রমণের এ হারের কারণে পাকিস্তানে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ বলে মনে করা হচ্ছে। ডনের খবরে বলা হয়েছে, পাকিস্তানে এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ২০ হাজার ৭০৪ জন করোনা পজিটিভ হয়েছেন। এর মধ্য ৬ হাজার ৬০৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর দেশটিতে সুস্থ হয়েছেন ৩ লাখ ৫ হাজার ৮০ জন মানুষ।
স্কুল খুলে দেয়ার আহ্বান ট্রাম্পের : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশটিতে মহামারীর কারণে বন্ধ সব স্কুল যত দ্রুত সম্ভব খুলে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এ সময় তিনে কিছুদিন আগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া ছেলে ব্যারনের উদাহরণ টেনেছেন। বুধবার আইওয়ার ডে মইনে বিমানবন্দরে রিপাবলিকান শিবিরের নির্বাচনী প্রচার সমাবেশে তিনি এ উদাহরণ টানেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
‘এমনকি আমার মনেই হয় না যে সে জানত সে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত, এর কারণ তারা অল্প বয়সী এবং তাদের শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা লড়াই করে সেটিকে থামিয়ে দিয়েছে। ৯৯ দশমিক ৯ শতাংশ (জীবাণুমুক্ত হয়েছে) এবং ব্যারন এখন চমৎকার আছে। সে মুক্ত,’ বলেন ট্রাম্প। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে তার প্রশাসনের ব্যর্থতায় ব্যাপক চাপের মুখে থাকা রিপাবলিকান এ প্রেসিডেন্ট দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যকে বন্ধ স্কুলগুলো খুলে দিতে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে রাজি করানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
উচ্চ সতর্কতা জারি হচ্ছে লন্ডনে : নোভেল করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ধাক্কা সামলাতে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে ব্রিটেন। এর মধ্যে রাজধানী লন্ডনে উচ্চ সতর্কতা জারি করা হচ্ছে বলে এক খবরে বিবিসি জানিয়েছে। লন্ডনের মেয়র সাদিক খান জানান, ‘হাই অ্যালার্টের’ দ্বারপ্রান্তে আছে রাজধানী। তিনি বলেন, খুব শিগগিরই সম্ভবত এ সপ্তাহেই এই সিদ্ধান্ত আসছে।
তিনি জানান, উচ্চ সতর্কতা জারি হলে পারিবারিকভাবে মেলামেশাতেও কড়াকড়ি আরোপ হবে। আবার বিধিনিষেধ আরোপ হলে ব্যবসা-বাণিজ্য সচল রাখতে আর্থিক সহায়তা চেয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের কাছে চিঠি লিখেছেন লন্ডনের মেয়র।


আরো সংবাদ



premium cement