২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

৬০ কোটি আক্রান্ত ও ৩৭ লাখ মৃত্যুর শঙ্কা

তিন দিনে ছয় লাখের বেশি আক্রান্ত ; মেক্সিকোতে মৃত্যু ৩০ হাজার ছাড়াল; ব্রাজিলে এক দিনে আক্রান্ত ৩৮ হাজার; ভারতে ঘণ্টায় আক্রান্ত হাজারের বেশি
-

দিন দিন পরিস্থিতি খারাপই হচ্ছে। আর অদূর ভবিষ্যতে করোনাভাইরাস বিদায় নিচ্ছে না, বরং আক্রান্তের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াতে পারে ৬০ কোটিতে। আর মারা যেতে পারে ৩৭ লাখ মানুষ। যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী ম্যাগাজিন দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে এমন আশঙ্কার কথাই প্রকাশ করা হয়েছে।
চীন, তাইওয়ান, ভিয়েতনামের মতো কিছু দেশ মহামারী নিয়ন্ত্রণে এনেছে; লাতিন আমেরিকা, দক্ষিণ এশিয়ায় এখনো ভাইরাসের তাণ্ডব চলছে; যুক্তরাষ্ট্রের মতো আরো কিছু দেশ নিয়ন্ত্রণ হারানোর পথে রয়েছে; আফ্রিকার দেশগুলো রয়েছে মহামারীর প্রাথমিক পর্যায়ে; ইউরোপ আছে এগুলোর মাঝামাঝি কোনো অবস্থানে। সামনে আরো ভয়াবহ দিন আসছে।
ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি জানিয়েছে, প্রতিটি নতুন রোগী শনাক্তের বিপরীতে আক্রান্ত ১২ জন অশনাক্তই থেকে যাচ্ছেন। আর করোনায় প্রতি দুইটি মৃত্যুর বিপরীতে তৃতীয়টিকে অন্য রোগের ফলাফল বলে মনে করা হচ্ছে। উপযুক্ত চিকিৎসাপদ্ধতি না এলে ২০২১ সালের মাঝামাঝি করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াতে পারে ২০ থেকে ৬০ কোটিতে। আর মৃত্যু হতে পারে ১৪ থেকে ৩৭ লাখ মানুষের। এই সময়ের মধ্যে সারা বিশ্বের ৯০ শতাংশ মানুষই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে থাকবেন।
করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার হার নির্ভর করবে মূলত সামাজিক নিয়ন্ত্রণের ওপর। টেস্টিং, ট্রেসিং এবং আইসোলেশনÑ এই তিনটি ধাপে নিয়ন্ত্রণ করা যায় করোনাভাইরাস। এর মধ্যে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না হলে সে ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয় লকডাউন। খবর দ্য ইকোনমিস্ট, এএফপি, আল জাজিরা, রয়টার্স, বিবিসি, সিএনএন, ওয়ার্ল্ডোমিটারস, এনডিটিভি, আরব নিউজ, আনাদোলু এজেন্সি, কলকাতা ২৪, জি নিউজ, ওআরএফ, তাস ও ওয়াশিংটন পোস্টের।
দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরোধ গড়তে সক্ষম অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন : করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক হিসেবে অক্সফোর্ড বিজ্ঞানীদের তৈরি প্রতিষেধকটি শেষ পর্যায়ের ট্রায়ালে রয়েছে। এখনো সেই ট্রায়ালের ফলাফল না মিললেও এ সংক্রান্ত গবেষণার প্রধান বিজ্ঞানী ড. সারাহ গিলবার্ট বলেছেন, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হবে তাদের তৈরি ভ্যাকসিন। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর একজন ব্যক্তি সুস্থ হয়ে ওঠার মধ্য দিয়ে যে প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করে; তাদের ভ্যাকসিন ব্যবহার করলে এই প্রতিরোধ ক্ষমতা আরো বাড়বে। ভ্যাকসিন কয়েক বছর পর্যন্ত করোনা থেকে সুরক্ষা দেবে। সম্প্রতি হাউজ অব কমন্সে ব্রিটিশ এমপিদের এ ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছেন তিনি।
করোনা পরিস্থিতিকে উপেক্ষা করে ট্রাম্পের পার্টি : করোনা পরিস্থিতিকে কোনোরকম পাত্তা না দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে হোয়াইট হাউজে পার্টির আয়োজন করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওয়াশিংটন সিটি মেয়র স্বাস্থ্যঝুঁকির ব্যাপারে সতর্ক করলেও শনিবার হোয়াইট হাউজের সামনে শত শত মানুষকে ভিড় করতে দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রে শুক্রবার রেকর্ড সংখ্যক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এক দিনে ৫২ হাজার ৩ শ’ মানুষ আক্রান্ত হওয়ার তথ্য উঠে এলেও তা ট্রাম্পকে দমাতে পারেনি। পার্টিতে আমন্ত্রিতদের মধ্যে রয়েছেন সেইসব স্বাস্থ্যকর্মীও; যারা দীর্ঘ সময় ধরে করোনা মোকাবেলায় কাজ করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে ৩৯টিতেই করোনার সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী।
ব্রাজিলে এক দিনেই আক্রান্ত প্রায় ৩৮ হাজার : ব্রাজিলে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। দেশটিতে এর মধ্যেই নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন আরো প্রায় ৩৮ হাজার মানুষ। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৭ হাজার ৯২৩ জন। অপর দিকে এক দিনেই মারা গেছেন ১ হাজার ৯১ জন। ব্রাজিলে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে মারা গেছে ৬৪ হাজার ২৬৫ জন। ব্রাজিলে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ লাখ ৭৮ হাজার ৩৭৬। এর মধ্যে মারা গেছে ৬৪ হাজার ৩৬৫ জন। দেশটিতে ইতোমধ্যেই সুস্থ হয়ে উঠেছে ৯ লাখ ৭৮ হাজার ৬১৫ জন। সেখানে বর্তমানে করোনার অ্যাকটিভ কেস ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৩৯৬। এ ছাড়া আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন ৮ হাজার ৩১৮ জন।
সৌদিতে করোনায় এক দিনে মৃত্যুর রেকর্ড : সৌদি আরবে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। এ নিয়ে দেশটিতে করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১ হাজার ৮৫৮ জনে। একই সময়ে নতুন শনাক্ত হয়েছেন আরো ৪ হাজার ১২৮ জন। মার্চের ২ তারিখ থেকে সৌদি আরবে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকে এক দিনে দেশটিতে অর্ধশতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেনি। সৌদি আরবে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ৫ হাজার ৯২৯ জন। নতুন করে আক্রান্তের তালিকায় রিয়াদে ৩৬০, দাম্মামে ৩১৫, হুফফে ২১৭ এবং কাতিফের ২১৪ জনের নাম রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনামুক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৬৪২ জন। এ নিয়ে দেশটিতে মোট ১ লাখ ৪৩ হাজার ২৫৬ জন কোভিড-১৯ রোগী সুস্থ হলেন।
রাশিয়ায় মৃত্যু ১০ হাজার ছাড়াল : চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে মহামারী সৃষ্টি করা করোনাভাইরাস সংক্রমণে রাশিয়ায় মৃত্যুর সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। শনিবার সকাল থেকে পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় আরো ১৬৮ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে রাশিয়ায় মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ২৭ জনে দাঁড়িয়েছে বলে দেশটির অ্যান্টি-করোনাভাইরাস ক্রাইসিস সেন্টার জানিয়েছে। একই সময়ে নতুন করে আরো ছয় হাজার ৬৩২ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছেন, এতে দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬ লাখ ৭৪ হাজার ৫১৫ জনে দাঁড়িয়েছে। এই নিয়ে টানা ৯ দিন ধরে রাশিয়ায় দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা সাত হাজারের নিচে আছে বলে অ্যান্টি-করোনাভাইরাস ক্রাইসিস সেন্টার জানিয়েছে।
ভারতে ঘণ্টায় আক্রান্ত হাজারের বেশি : ভারতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মহামারী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। আক্রান্তের সংখ্যা নতুন রেকর্ড গড়েছে ভারতে। শনিবার সকাল ৮টা থেকে শুরু করে ২৪ ঘণ্টায় ২৪ হাজার ৮৫০ জনের মধ্যে নতুন সংক্রমণ ঘটেছে। অর্থাৎ প্রতি ঘণ্টায় এক হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। আর মোট করোনা সংক্রমণের সংখ্যা এখন ৬ লাখ ৭৩ হাজার ৯০৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে করোনা রোগে মৃত্যু হয়েছে ৬১৩ জনের এবং মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১৯ হাজার ২৭৯ জন। আর সেরে যাওয়া রোগীদের সংখ্যা ৪ লাখ ৯ হাজার ৮৩ জন। এ নিয়ে টানা নবম দিন ভারতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ১৮ হাজারের বেশি বেড়েছে প্রতিদিন। রোববার ত্রিপুরা রাজ্যজুড়ে ২৪ ঘণ্টার জন্য লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে এবং এর রাজধানী কলকাতায় করোনা সংক্রমণের হার বাড়ছে। সেই সাথে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। ভারতের অন্য ছয়টি শহরের সাথে কলকাতার বিমান চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়।
করোনা ক্ষতিই করতে পারছে না দাবি ট্রাম্পের : স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণের অনুরোধ আবারো উপেক্ষা করেই ৪ জুলাই শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের ২৪৪তম স্বাধীনতা দিবসের বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান করলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মাস্ক ব্যবহার দূরের কথা, সোস্যাল ডিসটেন্সিংও বজায় রাখেননি হোয়াইট হাউজের এ অনুষ্ঠানের কোনো অতিথিই। অধিকন্তু ট্রাম্প তার ভাষণে বলেছেন যে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৯৯ শতাংশেরই কিছু হচ্ছে না। সেটি কোনো ক্ষতিই করতে পারছে না আমেরিকায়। হোয়াইট হাউজ থেকে পূর্বাহ্নে জানানো হয় যে, অনুষ্ঠানে আগত সবাই মাস্ক পরবেন, সে জন্যে ৩ লাখ মাস্ক বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যবস্থা হবে। বাস্তবে তার কোনোই প্রতিফলন ঘটেনি। এমনকি, প্রশাসন থেকেও সে ধরনের নির্দেশ প্রতিপালনে সবাইকে বাধ্য করার কোনো তৎপরতাও পরিলক্ষিত হয়নি।
হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের ব্যবহার বন্ধ রাখার পরামর্শ : একটি প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে ২৫ মে করোনা চিকিৎসায় হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের পরীক্ষামূলক ব্যবহার বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ৩ জুন সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় ওষুধ দুটি ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। শনিবার এক বিবৃতিতে আবারো ওষুধটির ব্যবহার বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছে ডব্লিউএইচও। হাসপাতালে ভর্তি কোভিড-১৯ রোগীদের হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন প্রয়োগে মৃত্যুঝুঁকি না কমার কথা জানিয়ে এর ব্যবহার বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন ট্রায়ালে এই ওষুধগুলো প্রয়োগে রোগীর মৃত্যুঝুঁকি কমার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কোনো প্রভাব থাকলেও তা খুবই সামান্য।
সেলফ আইসোলেশনে ঘানার প্রেসিডেন্ট : করোনা নেগেটিভ হয়েও ১৪ দিনের সেলফ আইসোলেশনে রয়েছেন পশ্চিম আফ্রিকার দেশ ঘানার প্রেসিডেন্ট নানা আকুফো-আদ্দো। সম্প্রতি ঘানার প্রেসিডেন্ট এমন একজনের সংস্পর্শে এসেছিলেন যার শরীরে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। ঘানায় এখন পর্যন্ত ১৯ হাজার ৩৮৮ জন প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তের সংখ্যা বিবেচনায় সাব-সাহারান আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষ অবস্থানটি তাদের। ঘানায় এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১১৭ জন। ইতোমধ্যেই সুস্থ হয়ে উঠেছে ১৪ হাজার ৩৩০ জন। বর্তমানে সেখানে করোনার অ্যাকটিভ কেস ৪ হাজার ৯৪১টি।
মেক্সিকোতে মৃত্যু ৩০ হাজার ছাড়াল : করোনাভাইরাস মহামারীর নতুন উপকেন্দ্র হয়ে ওঠা লাতিন আমেরিকার দেশ মেক্সিকোয় মৃত্যুর সংখ্যা ৩০ হাজার ৩৬৬। শনিবার দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নতুন এই করোনাভাইরাসে আরো ৫২৩ জনের মৃত্যুর খবর জানায়। তাতে মেক্সিকোতে মৃতের মোট সংখ্যা ৩০ হাজার ৩৬৬ জনে দাঁড়িয়েছে। এ দিন আরো ছয় হাজার ৯১৪ জন নতুন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হওয়ায় দেশটিতে সরকারি হিসাবে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৫২ হাজার ১৬৫ জনে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসপাতালে ভর্তি : পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশিকে শনিবার রাওয়ালপিন্ডির সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শুক্রবারেই তার করোনা ধরা পড়ে। প্রথমে বাড়িতে আইসোলোশনে থাকার সিদ্ধান্ত নিলেও স্বাস্থ্যের অবনতি হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শুক্রবার শাহ মাহমুদ কুরেশি ঘোষণা করেছিলেন, দুপুরে হালকা জ্বর আসায় কোভিড টেস্ট করতে দিয়েছেন। সন্ধ্যায় জানতে পারেন রিপোর্ট পজিটিভ। রিপোর্ট আসার আগেই দুপুর থেকে তিনি হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন বলে জানিয়েছিলেন। সেই সাথে ঘরে বসে যাবতীয় কাজ সামলাবেন বলেও জানিয়েছিলেন।
তিন দিনে ছয় লাখের বেশি আক্রান্ত : মহামারী করোনাভাইরাসের লাগাম তো টানা যাচ্ছেই না বরং এর সংক্রমণ বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। বৃহস্পতিবারের পর টানা তৃতীয় দিনের মতো গোটা বিশ্বে দুই লাখেরও বেশি কোভিড-১৯ পজিটিভ রোগী শনাক্ত হয়েছেন। শনিবার অর্থাৎ গত ২৪ ঘণ্টায় এই সংখ্যাটা ছিল ২ লাখ ১২ হাজার ৩২৬ জন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা শনিবার এই তথ্য জানিয়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবেলায় দেশগুলোকে আরো সতর্ক ও কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিশ্বে মোট ২ লাখ ৮ হাজার ৮৮৪ জন শনাক্ত হয়। এরপর গত শুক্রবার এই সংখ্যাটা ছিল ২ লাখ ৯ হাজার ২৮ জন।
মাস্ক না পরলে রাষ্ট্রীয় সেবা নয় ইরানে : করোনাভাইরাসের প্রকোপ আবারো বাড়তে শুরু করায় ইরানে নতুন করে বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। শনিবার দেশটির প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছেন, দেশের যে নাগরিকরা মাস্ক পরবেন না তারা রাষ্ট্রীয় সেবা থেকে বঞ্চিত হবেন। একই সাথে কোনো প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে ব্যর্থ হলে তা এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ করে দেয়া হবে। করোনাভাইরাসে ইরানে শনিবার পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ছাড়িয়েছে ২ লাখ ৩৭ হাজার। গত ২৪ ঘণ্টায় ইরানে আরো ১৪৮ জনের প্রাণ কেড়েছে করোনা। এ নিয়ে দেশটিতে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৪০৮ জনে। দেশটির পাঁচটি প্রদেশের বিভিন্ন শহরে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে লকডাউন শিথিল করার পর আবারো প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে রোববার থেকে এসব শহরে কঠোর বিধিনিষেধের পাশাপাশি উন্মুক্ত স্থানে জনসাধারণের জন্য মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
কাতালোনিয়ায় ফের দুই লক্ষাধিক মানুষ লকডাউনে : দ্বিতীয় দফায় দ্রুত করোনার সংক্রমণ বিস্তার লাভ করায় স্পেনের কাতালোনিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক সরকার দুই লাখেরও বেশি বাসিন্দার একটি এলাকা ফের লকডাউন করে দিয়েছে। একসময় প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্র থাকলেও করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা স্পেনে এ ঘটনা ফের উদ্বেগ তৈরি করেছে। প্রেসিডেন্ট কুইম তোরা বলছেন, সেগরিয়া থেকে কেউ বের হতে পারবে না এবং বাইরে থেকেও কেউ সেখানে প্রবেশ করতে পারবে না। মন্ত্রিসভার সদস্য এবং সিভিল ডিফেন্স সার্ভিসের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকের পর প্রেসিডেন্ট তোরা ফের লকডাউন নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বলেন, ‘আমরা নিজেদের সুরক্ষা এবং মহামারীটিকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্যই ফের এমন পদক্ষেপ নিচ্ছি।’ শনিবার থেকেই ওই এলাকায় লকডাউন সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা বলবৎ হয়েছে।
অস্ট্রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে : অস্ট্রিয়ায় নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত দুই দিন ২৪ ঘণ্টায় ১০০ জনের বেশি করে আক্রান্ত হয়েছেন; যা পূর্বের তুলনায় অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী নতুন আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ১১৯, যা গত শুক্রবার ছিল ৯২। বর্তমানে অস্ট্রিয়ায় সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ৭৮৫। এর মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৬০ জন এবং আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ৮ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ভিয়েনায় সর্বোচ্চ ৫৬ জন।
কার্যকর ওষুধ জানা যাবে ২ সপ্তাহের মধ্যেই : কোডিভ-১৯ সংক্রমণের চিকিৎসায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানা ওষুধ ব্যবহার করলেও, প্রকৃতপক্ষে কোন ওষুধটি কার্যকর, তা আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই জানা যাবে বলে আশা প্রকাশ করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংস্থাটির মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বলেছেন, করোনায় সংক্রমিত হয়ে চিকিৎসাধীন ৩৯টি দেশের প্রায় সাড়ে ৫ হাজার রোগী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরীক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন। আমরা আশা করছি, পরীক্ষাধীন সম্ভাব্য ওষুধগুলোর কার্যকারিতা দুই সপ্তাহের মধ্যে জানা যাবে।
জাপানে করোনায় মৃত্যুর হার কমের কারণ : জাপানে নোভেল করোনাভাইরাসজনিত কোভিড-১৯ রোগে মৃত্যুর সংখ্যা এত কম কেন? এর পেছনে রয়েছে জাপানিদের মন-মানসিকতা, তাদের সংস্কৃতি; আবার কারো মত হলো জাপানিদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অসাধারণ। সরকার জাতীয় পর্যায়ে মানুষকে সচেতন করতে প্রচারণা চালায় এবং বলে তিনটি ব্যাপার যেন তারা এড়িয়ে চলেÑ এক. বদ্ধ জায়গা যেখানে বাতাস চলাচল ভালো নয়, দুই. জনবহুল স্থান এবং তিন. খোলা নয় এমন জায়গায় মুখোমুখি বসে গল্প করা। জাপান সরকার জনগণকে বলেছে, নিজের যতœ নিন, ভিড় পরিহার করুন, মাস্ক পরুন, হাত ধোন। জাপানের জনগণ অক্ষরে অক্ষরে সবগুলো পরামর্শ নিজেদের স্বার্থেই মেনে চলেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন ২০০ গবেষক : বাতাসে করোনাভাইরাস ছড়ানোর বিষয়টি নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আনুষ্ঠানিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন ২০০ জনের বেশি গবেষক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউএস সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের পক্ষ থেকে করোনাভাইরাসের শুধু দুই ধরনের সংক্রমণ সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়ে থাকে। একটি হচ্ছে আশপাশের কোনো সংক্রমিত ব্যক্তির কাছ থেকে শ্বাস-প্রশ্বাসের ফোঁটা শ্বাসের মাধ্যমে ঢুকে গেলে সংক্রমণ ছড়ায়। আরেকটি হচ্ছে দূষিত পৃষ্ঠ স্পর্শ করার পর চোখ, নাক বা মুখ স্পর্শ করার মাধ্যমে করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়। তবে গবেষকরা বলছেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের ড্রপলেটের ক্ষুদ্র সংস্করণ বা অ্যারোসল কণা দীর্ঘ সময় বাতাসে ভেসে থাকতে পারে। এটি কয়েক মিটার পর্যন্ত ভেসে যেতে পারে। এটি যেসব ঘরে আলো-বাতাস কম বা বাসসহ অন্যান্য বন্ধ জায়গায় বেশি মারাত্মক হতে পারে। এমনকি এসব জায়গায় ১ দশমিক ৮ মিটার দূরত্ব রেখেও কোনো লাভ হয় না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে ব্যর্থ বলে অভিযুক্ত করে একটি খোলা চিঠিতে ৩২টি দেশের ২৩৯ জন গবেষক স্বাক্ষর করেছেন।
মাস্ক কখন স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে মাস্ক পরা যেমন জরুরি, তেমনই কিছু কিছু ক্ষেত্রে মাস্কের ব্যবহার বিপজ্জনক হতে পারে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা! সংস্থাটির মতে, মাস্ক পরে শরীরচর্চা, প্রাতঃভ্রমণ বা জগিং করলে শরীরে অক্সিজেন কমে গিয়ে উল্টো তা স্বাস্থ্যের পক্ষে বিপজ্জনক হতে পারে! তাই এই সময় মাস্ক না পরাটাই শ্রেয়। খুব ভারী ধরনের কাজ, খুব বেশি দৈহিক পরিশ্রম হয়, এমন কাজের সময় মাস্ক পরে থাকলে শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতির ফলে অস্বাভাবিক ক্লান্তি, শরীরের বিভিন্ন অংশের পেশিতে টান পড়া বা খিঁচুনি, বমি ভাব, মাথা ঘোরানো এমনকি ব্রেন স্ট্রোক পর্যন্ত হতে পারে। মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালনের স্বাভাবিক ছন্দ বিঘিœত হতে পারে। দেখা দিতে পারে একাধিক আকস্মিক স্বাস্থ্য সমস্যা। তাই খুব বেশি দৈহিক পরিশ্রম হয়, এমন কাজের সময় মাস্ক না পরে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে সংস্থাটির পক্ষ থেকে।


আরো সংবাদ



premium cement