২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বিধিনিষেধের জেরে ধস সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে

এক বছরের ব্যবধানে বিক্রি কমেছে ৭২%; সরকারের ঋণ নেয়া কমলো অর্ধেকের বেশি
-

কঠোর বিধিনিষেধের কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে ধস নেমেছে। এক বছরের ব্যবধানে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমেছে ৭২ শতাংশ। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ২৮ হাজার ৪৩০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় অধিদফতর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাওয়ার কারণে ৭ বছর পর এবারই প্রথমবারের মতো সংশোধিত বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার পরিমাণ সরকার অর্ধেকের বেশি কমিয়ে এনেছে। সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে জুলাই-মার্চ সময়ে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ১১ হাজার ৩০২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। কিন্তু এর আগের অর্থবছরে (২০১৮-১৯) একই সময়ে এ বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩৯ হাজার ৭৩৩ কোটি ২০ লাখ টাকা। শতকরা হারে বিক্রি কমেছে ৭২ শতাংশ। গত বছরের মার্চ মাসে যেখানে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল চার হাজার ১৩০ কোটি ৭১ লাখ টাকা। সেখানে চলতি বছরে সেই বিক্রি অর্ধেকেরও বেশি কমে হয়েছে এক হাজার ৫৩৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা।
গত কয়েক বছর সঞ্চয়পত্র অস্বাভাবিক বিক্রি বেড়ে যাওয়ার কারণে সরকার এ খাতের ওপর বেশ কয়েকটি বিধিনিষেধ আরোপ করে। যেমনÑ আগে সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য কোনো ক্রেতাকে কর শনাক্ত নম্বর বা ই-টিআইএন জমা দিতে হতো না। কিন্তু চলতি বছরের শুরুতে সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য টিআইএন জমা বাধ্যতামূলক করা হয়। একই সাথে পুরো বিক্রি কার্যক্রমটি এখন অনলাইনের মাধ্যমে মনিটর করা হচ্ছে। এখন কেউ আর ইচ্ছে করলে, সীমা অতিরিক্ত সঞ্চয়পত্র বা একই নামে বিভিন্ন জায়গা থেকে কিনতে পারবে না। আর এসব কারণেই বর্তমানে বিনিয়োগকারীরা সঞ্চয়পত্র কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন না বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেছেন, আমরা দেখেছি একজন বিনিয়োগকারী বিভিন্ন নামে এর আগে ১৬ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র ক্রয় করেছেন। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী তিনি একক নামে ৩৫ লাখ টাকার বেশি কিনতে পারেন না। এ বিষয়গুলোর কারণে আমরা সঞ্চয়পত্রের বিক্রির পুরো বিষয়টি অনলাইন করে ফেলেছি। এখন সীমার অতিরিক্ত সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করার কোনো সুযোগ নেই।
এ দিকে, সাত বছর পর সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার পরিমাণ কমেছে। শেষ ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। কিন্তু পরবর্তীতে তা সংশোধন করে এক হাজার ৯৭৩ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছিল। কিন্তু এর পরের অর্থবছর থেকে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার পরিমাণ ক্রমেই বাড়তে থাকে এবং তা প্রতি বছরই বাজেটে রক্ষিত লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে যায়। গত দু’বছর তো বাজেটে প্রক্ষেপিত লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুণ ঋণ সঞ্চয়পত্র থেকে নেয়া হয়েছিল।
কিন্তু এ বছর তার ব্যতিক্রম, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের মূল বাজেটে সঞ্চয়পত্র খাতে ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৭ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এটি কমিয়ে ১১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ ১৫ হাজার ৭৬ কোটি টাকা কাটছাঁট করা হয়েছে।
বাজেট উপাত্ত অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে মোট বাজেট ঘাটতির পরিমাণ হচ্ছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সঞ্চয়পত্র ছাড়া ব্যাংক খাত থেকে নিট ৪৭ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা ও অন্যান্য খাত থেকে নিট ৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার কথা রয়েছে। এর বিপরীতে ব্যাংক খাত থেকে এ পর্যন্ত ঋণ নেয়া হয়েছে ৮১ হাজার কোটি টাকা। ইতঃপূর্বে বাজেট ঘাটতি পূরণে ব্যাংকব্যবস্থার চেয়ে সঞ্চয়পত্রের ওপরই অধিক নির্ভরশীল ছিল সরকার। কিন্তু সঞ্চয়পত্রের সুদের হার তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়ায় সরকারের সুদব্যয় বেড়ে যাচ্ছিল। এ প্রেক্ষিতে সঞ্চয়পত্রের চেয়ে ব্যাংকব্যবস্থার ওপর অধিক ঝুঁকেছে সরকার।
উল্লেখ্য, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল মাত্র ৯ হাজার কেটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে ঋণ নেয়া হয় ২৮ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা। অন্যান্য বছরেই একই প্রবণতা লক্ষ করা গেছে।
বাজেট উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত কয়েক বছর ধরেই সঞ্চয়পত্র খাত থেকে লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত ঋণ নিচ্ছে সরকার। সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪৬ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা (লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০ হাজার ১৫০ কোটি টাকা), ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৫১ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা (লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৯ হাজার ৬১০ কোটি টাকা), ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২৮ হাজার কোটি টাকা (লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ হাজার কোটি টাকা) এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ২৮ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা (লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকা) ঋণ নেয়া হয়েছে। অন্য দিকে গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিল ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা। কিন্তু সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়ে যাওয়ার কারণে সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে করা হয় ৪৫ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু তারপরও বছর শেষে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়া হয়েছে ৪৯ হাজার কোটি টাকা।
গত ১১ জুন জাতীয় সংসদে আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র ২০ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে মূল বাজেটে যা ছিল ২৭ হাজার কোটি টাকা।


আরো সংবাদ



premium cement
দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা : আমিনুল লিবিয়ায় নিয়ে সালথার যুবককে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা, গ্রেফতার ১ মনুষ্য চামড়ায় তৈরি বইয়ের মলাট সরানো হলো হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আওয়ামী লীগকে বর্জন করতে হবে : ডা: ইরান আমরা একটা পরাধীন জাতিতে পরিণত হয়েছি : মেজর হাফিজ তরুণীর লাশ উদ্ধারের পর প্রেমিকসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা ভিয়েনায় মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্রদূতদের ইফতারে ইসলামিক রিলিজিয়াস অথোরিটি আমন্ত্রিত এবার বাজারে এলো শাওমির তৈরি বৈদ্যুতিক গাড়ি সকল কাজের জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার অনুভূতি থাকতে হবে : মাওলানা হালিম বিএনপি জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি করে : ড. মঈন খান সাজেকে পাহাড়ি খাদে পড়ে মাহিন্দ্রচালক নিহত

সকল