১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বদলে যাচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতির গতিধারা

চরম দরিদ্র হবে ১১২ কোটি মানুষ; সৌদি আরব-কাতারে ঝুঁকিতে প্রবাসীরা; এশিয়ায় মৃত্যুতে শীর্ষে ভারত; চীনে ফের করোনার স্থানীয় সংক্রমণ
-

করোনাভাইরাস মহামারী ও লকডাউনের ফলে চরম ও মারাত্মক ধস নেমেছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। এতে নতুন করে চরম দরিদ্র হবে প্রায় ৪০ কোটি মানুষ। ফলে চরম দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ১১২ কোটিতে।
জাতিসঙ্ঘ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়ার্ল্ড ইনস্টিটিউট ফর ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিকস রিসার্চ (ডব্লিউআইডিইআর) এক গবেষণা প্রতিবেদনে শুক্রবার এই তথ্য তুলে ধরেছে। আন্তর্জাতিক এই গবেষকদলে রয়েছেন লন্ডনের কিংস কলেজ ও অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অর্থনীতিবিদরা।
দৈনিক ১ দশমিক ৯০ ডলার বা ১৬৩ টাকা বা তারও কম আয়ের মানুষকেই বলা হয় চরম দরিদ্র। করোনার প্রকোপে আগামী দিনে চরম দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়ে ১১২ কোটি পর্যন্ত হতে পারে। যাদের আয় দৈনিক ৫ দশমিক ৫০ ডলার বা ৪৮০ টাকা তাদের বলা হয় বেশি দরিদ্র। এমন বেশি দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়ে ৩৭০ কোটিরও বেশি হতে পারে; ফলে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাবে।
গবেষকরা তুলে ধরেছেন, এ চরম দারিদ্র্যেও এলাকাভেদে ‘বৈষম্য’ থাকবে। কোথাও তা সংখ্যায় কম হবে। কোথাও বেশি। সবচেয়ে করুণ অবস্থা হবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর। এর মধ্যে প্রথম দিকে রয়েছে ভারত। তার পরেই রয়েছে সাহারা মরুভূমি সংলগ্ন আফ্রিকার দেশগুলো; চরম দারিদ্র্যের শিকারদের এক-তৃতীয়াংশই এসব দেশের নাগরিক। ফলে দারিদ্র্য হ্রাসে জাতিসঙ্ঘের কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রার অগ্রগতি আরো ২০-৩০ বছর পিছিয়ে যেতে পারে।
সামগ্রিক মাথাপিছু বার্ষিক আয় বা ভোগে ২০ শতাংশ সঙ্কোচন হলে সে পরিস্থিতিকে সবচেয়ে খারাপ বিবেচনা করা হয়েছে। গবেষকদলের অন্যতম সদস্য অ্যান্ডি সামনার বলেন, বিভিন্ন দেশে লকডাউনের ফলে প্রতিদিন গরিবদের আয় যেভাবে কমে যাচ্ছে, তা পূরণ করার লক্ষ্যে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে না পারে, তা হলে গোটা বিশ্বেই গরিবদের ভবিষ্যৎ বলে আর কিছুই থাকবে না।
খবর ফোর্বস, এপি, ইকোনমিস্ট, এএফপি, বিবিসি, ডেইলি মেইল, সিএনএন, ডন, রয়টার্স, আল জাজিরা, দ্য গার্ডিয়ান, এনডিটিভি, নিউ ইয়র্ক টাইমস, হিন্দুস্তান টাইমস, ইন্ডিয়া টাইমস, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, ইকোনমিক টাইমস, মিরর, সিনহুয়া, ব্লুমবার্গ, আনন্দবাজার পত্রিকা, নিউ স্কোপ, ওয়ান জিরো, পার্সটুডে, মিডলইস্ট মনিটর, গুড মর্নিং ব্রিটেন, দ্য স্কটসম্যান ও ওয়ার্ল্ডোমিটারসের।
বদলে যাচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতির গতিধারা : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই বিশ্ব অর্থব্যবস্থার গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করছে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র। বৈশ্বিক অর্থনীতির চার ভাগের এক ভাগই তাদের দখলে। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের হিসাব হয় মার্কিন ডলারে। বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থার ৮০ শতাংশেই ডলার ব্যবহৃত হয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ক্ষমতার বিশাল এক অংশ ধরা রয়েছে ওয়াশিংটনের হাতে। তবে করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে আসা বিপর্যয়ে বদলে যেতে পারে এ ব্যবস্থা। চীনের বর্তমান দাপট চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে বদলে যেতে পারে বিশ্বের অর্থনৈতিক গতিধারা। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি তাদের। ১০ বছর ধরেই চীনের ব্যাংক খাত এগিয়ে চলেছে স্থিরভাবে। তাদের সম্পদ এখন ইউরোপ-আমেরিকার ব্যাংকগুলোর চেয়েও বেশি। চীনের ব্যাংকগুলো বাইরের দেশেও কার্যক্রম বাড়াতে শুরু করেছে। করোনা মহামারীর কারণে চীনের অর্থনৈতিক প্রভাব আরো বাড়ছে।
করোনার বিরুদ্ধে লড়াই খুব কঠিন : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদ্রোস ঘেব্রেয়েসাস বলেছেন, পুরো দুনিয়া এখন বিভক্ত। আর এই বিভক্ত পৃথিবীতে করোনার মতো অত্যন্ত বিপজ্জনক একটি ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করা খুব কঠিন। ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন দেশ যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে সেগুলো বহু নাগরিকের জীবনকে ওলটপালট করে দিয়েছে। বৈশ্বিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর করোনার বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। তবে এর কিছু সামাজিক প্রভাব আরো গুরুতর রূপ নিয়েছে। খুদে একটি ভাইরাস ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে। লাখ লাখ মানুষ তাদের চাকরি হারিয়েছেন। আমরা জানি, অনেকে তাদের জীবিকা নির্বাহের উপায় হারিয়েছেন। এই সময়ে একটা বিনম্র পরিবেশ থাকা উচিত। শুক্রবার জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
চিকিৎসাকর্মীদের প্রশংসা করলেন পুতিন : করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে প্রায় দুই মাসের বেশি সময় ধরে জারি থাকা লকডাউনের পর এই প্রথম বৃহস্পতিবার প্রকাশ্যে এলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। পশ্চিম মস্কোতে একটি অনুষ্ঠানে দেয়া ভাষণে পুতিন করোনা মহামারীতে সাহসিকতা ও আত্মত্যাগ করার জন্য চিকিৎসাকর্মীদের প্রশংসা করেন। শুক্রবার পর্যন্ত রাশিয়ায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৫ লাখ ১০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে ৬ হাজার ৭০৫ জনের।
মায়ের দুধ থেকে করোনা ছড়ায় না : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রজনন-স্বাস্থ্য ও গবেষণার সিনিয়র উপদেষ্টা অংশু ব্যানার্জি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা করোনা আক্রান্ত কোনো মায়ের বুকের দুধে ভাইরাসের উপস্থিতি পাইনি।’ শুক্রবার ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির প্রধান ড. তেদ্রোস আধানম ঘেব্রিয়েসাস বলেন, ‘বাচ্চারা তুলনামূলকভাবে করোনাভাইরাসে কম আক্রান্ত হয়। মায়ের দুধে থাকা অ্যান্টিবডি শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও অন্যান্য সংক্রামক রোগ থেকেও শিশুকে রক্ষা করে। নিশ্চিত কোভিড-১৯ আক্রান্ত মায়েদের শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে আমাদের উৎসাহিত করা উচিত এবং মা খুব অসুস্থ না হওয়া পর্যন্ত শিশুকে তার থেকে আলাদা করা উচিত নয়।’
এশিয়ায় মৃত্যুতে শীর্ষে ভারত : ভারতে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা তিন লাখ ছাড়িয়েছে। শেষ একদিনে দেশটি নতুন রোগী বেড়েছে ১১ হাজার ৭৭৫ জন। দেশটিতে মোট করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৯ হাজার ৩৬০ জন। এ পর্যন্ত অন্তত ৮ হাজার ৮৮৬ জন করোনায় মারা গেছেন। বর্তমানে প্রতি ১৭.৪ দিনে দ্বিগুণ হচ্ছে আক্রান্তের সংখ্যা। কিছুদিন আগেও এটি ছিল ১৫.৪। মাস দুয়েক লকডাউন চলাকালে প্রতি ৩.৪ দিনে আক্রান্তের দ্বিগুণ হচ্ছিল। দেশটিতে করোনারোগীদের মধ্যে সুস্থতার হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯.৪৯ শতাংশ।
যৌথভাবে ভ্যাকসিন উৎপাদন করবে ব্রাজিল-চীন : ব্রাজিলের শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসা গবেষণা কেন্দ্র ‘দ্য বাটান্টান ইনস্টিটিউট’ নোভেল করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য একটি ভ্যাকসিন উৎপাদনের জন্য চীনের সিনোভ্যাক বায়োটেক লিমিটেডের সাথে চুক্তি করেছে। বাটান্টানের প্রেসিডেন্ট দিমাস কোভাস এবং সাও পাওলোর গভর্নর জোয়াও দোরিয়া বলেছেন, চীনের পরীক্ষাগারে তৈরি করোনার সম্ভাব্য ওই ভ্যাকসিনটি ইতোমধ্যে ক্লিনিকাল ট্রায়ালের তৃতীয় পর্যায়ে প্রবেশ করছে এবং আগামী বছরের জুনের মধ্যে লাখ লাখ ব্রাজিলিয়ানকে টিকা দেয়ার জন্য তা প্রস্তুত হতে পারে।
সৌদি আরব-কাতারে ঝুঁকিতে প্রবাসীরা : সৌদি আরবে গত শুক্রবার নতুন করে তিন হাজার ৯২১ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল এক লাখ ১৯ হাজার ৯৪২ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছে ৩৬ জন। এর ফলে দেশটিতে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৮৯৩ জনের মৃত্যু হলো। এদের মধ্যে অধিকাংশই প্রবাসী। এদিকে, কাতারে একদিনে নতুন করে এক হাজার ৫১৭ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছেন। কাতারে এ পর্যন্ত ৭৬ হাজার ৫৮৮ জন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ৫৩ হাজার ২৯৬ জন। মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭০ জনে।
৪২ হাজার মানুষের দেহে পুশ হচ্ছে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন : ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি মহামারী করোনার সম্ভাব্য একটি ভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষার জন্য তাদের অংশীদার ব্রিটিশ-সুইডিশ ওষুধ কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ব্রাজিলে ৪২ হাজার স্বেচ্ছাসেবীর দেহে প্রয়োগ শুরু হতে যাচ্ছে। ভ্যাকসিনটির তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার জন্য যুক্তরাজ্যে ১০ হাজার মানুষের দেহে তা প্রয়োগ করবে অক্সফোর্ড। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ হাজার স্বেচ্ছাসেবীর দেহে এটি পুশ করবে তাদের অংশীদার অ্যাস্ট্রাজেনেকা। এ দিকে ব্রাজিলেও ২ হাজার স্বেচ্ছাসেবী নির্বাচন করা হয়েছে।
ভিসানীতিতে বড় পরিবর্তন আনছে যুক্তরাষ্ট্র : করোনা সংক্রমণের জেরে যুক্তরাষ্ট্রে চলছে কর্মীছাঁটাই। ইতোমধ্যেই সেখানে কর্মহীনের সংখ্যা রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই পরিস্থিতিতে চাকরির ক্ষেত্রে মার্কিনিরাই যেন অগ্রাধিকার পান সে কারণেই ভিসানীতিতে পরিবর্তন আনতে চাইছে ট্রাম্প প্রশাসন। নতুন নীতিতে স্থগিত করা হতে পারে এইচ-১বি এবং এল-১সহ চাকরিবিষয়ক বেশ কয়েকটি ভিসা। এতে ভারতীয়রাই সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এইচ-১বি ভিসা নিয়ে বর্তমানে যারা যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করছেন তাদের কোনও সমস্যা হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।
পোলিও টিকায় করোনা প্রতিরোধ : বিখ্যাত সায়েন্স ম্যাগাজিনে একদল বিশেষজ্ঞ করোনায় পোলিওর ভ্যাকসিনের সাময়িক সুরক্ষা নিয়ে বৃহস্পতিবার একটি নিবন্ধ লিখেছেন। এতে তারা বলেছেন, পোলিও ভ্যাকসিনের মতো বিদ্যমান টিকাগুলো শিশুদের বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয় এবং এগুলোর নোভেল করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার মতো সক্ষমতা রয়েছে। এ ব্যাপারে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। ওরাল পোলিও ভ্যাকসিন তুলনামূলক নিরাপদ, সস্তা, প্রয়োগ করা সহজ এবং ব্যাপক সহজলভ্য। বিশ্বের ১৪০টিরও বেশি দেশে বছরে এক শ’ কোটি ডোজ উৎপাদন এবং ব্যবহার করা হয়।
মাস্ক পরেন মাত্র ৪০ ভাগ মার্কিনি : ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য পরিমাপ ও মূল্যায়নবিষয়ক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ক্রিস্টোফার মুরে বলেন, করোনা-সংক্রমণ ঠেকাতে মাস্ক সত্যিই কাজ করে। মাস্ক করোনার সংক্রমণ থেকে ৫০ ভাগ সুরক্ষা দেয়। কিন্তু মাত্র ৪০ ভাগ মার্কিনি মাস্ক পরেন। মাস্কের সাথে করোনার সংক্রমণরোধে সামাজিক দূরত্বও দরকার। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ তাদের যোগাযোগ বাড়াতেই থাকবে। মানুষকে এসব বিষয় নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রে করোনার সংক্রমণ দীর্ঘ সময় ধরে রয়েছে। এপ্রিলে যখন মার্কিনিরা চলাফেরা শুরু করেছিলেন, তখন করোনার সংক্রমণ বেশি ছড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ১ অক্টোবরের মধ্যে করোনা-সংক্রমিত হয়ে এক লাখ ৬৯ হাজার ৮৯০ জন মারা যাবেন। জুন ও জুলাই মাসজুড়ে করোনায় দৈনিক মৃত্যুহার কমবে। তবে সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মৃত্যুর হার দ্রুত বাড়বে।
প্রাণঘাতী ইইই ভাইরাস ছড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে : যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে প্রাণঘাতী ইস্টার্ন ইকুইন ইনসেফালিটিস (ইইই) ভাইরাস ছড়িয়ে যাচ্ছে। সাধারণত মস্তিষ্কে সংক্রমণ তৈরি করে এই ভাইরাস। মশার কামড়ের মাধ্যমে এটি ছড়িয়ে যায়। তবে আশার খবর এই যে, সহজে এটি সংক্রমণ ঘটছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ভাইরাস থেকে সবচেয়ে নিরাপদে থাকা দরকার ঘোড়ার। যদিও এই রোগের জন্য ঘোড়ার চিকিৎসার ওষুধ রয়েছে। তবে মানুষের জন্য কোনো ওষুধ নেই। যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত এক শ’ জনেরও কম মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ইইই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে মৃত্যুর হার ৩৩ শতাংশ। যারা সেরে ওঠেন, তাদেরও মস্তিষ্কে কিছু সমস্যা থেকেই যায়।
চীনে ফের করোনার স্থানীয় সংক্রমণ : শনিবার নতুন করে ছয়জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য জানিয়ে বেইজিংয়ের একাংশকে লকডাউনের আওতায় নিয়েছে চীন। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কায় এমন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে ৫৬ দিন পর প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মিলে। নতুন সংক্রমিত হওয়া ব্যক্তির বয়স ৫২ বছর এবং তিনি স্থানীয় বাসিন্দা। রাজধানী কর্তৃপক্ষ ওই ব্যক্তি যেখানে থাকতেন সেই আবাসিক কমপ্লেক্স সিল করে দিয়েছে। গত ১৬ এপ্রিল থেকে ১০ জুন পর্যন্ত শহরটিতে নতুন করে আর কোনো করোনারোগী পাওয়া যায়নি।
এই প্রথম করোনারোগীর ফুসফুস প্রতিস্থাপন : প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর ফুসফুসের সফল অস্ত্রোপচার করেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন চিকিৎসক অঙ্কিত ভারত। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ২০ বছরের বয়সী এক করোনারোগীর ফুসফুস সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। শিকাগোর নর্থওয়েস্টার্ন মেডিসিন হাসপাতাল জানিয়েছে, করোনার কারণে ওই রোগীর ফুসফুস ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কিছুদিন তাকে ভেন্টিলেশনে রেখে কৃত্রিমভাবে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু এক পর্যায়ে তার শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করা বন্ধ হলে ফুসফুসে ইনফেকশন দেখা যায়। নিরুপায় হয়ে শেষ পর্যন্ত ফুসফুস প্রতিস্থাপনেরই সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। তা না হলে ওই রোগীকে বাঁচানো যেত না। থোরাসিস সার্জারির প্রধান ও নর্থ ওয়েস্টার্নের ফুসফুস প্রতিস্থাপন প্রোগ্রামের সার্জিক্যাল ডিরেক্টর অঙ্কিত ভারতের নেতৃত্বে ওই অস্ত্রোপচার করা হয়।
পেরুতে করোনায় ১৭০ পুলিশের মৃত্যু : পেরুতে করোনাভাইরাসে অন্তত ১৭০ পুলিশ কর্মকর্তা মারা গেছেন। সেইসাথে দেশটিতে এখন পর্যন্ত এই মহামারীতে আক্রান্ত প্রায় ১০ হয়েছেন হাজার পুলিশ। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেনারেল গ্যাস্টন রদ্রিগুয়েজ সাংবাদিকদের বলেন, করোনাভাইরাসে আমাদের ৯ হাজার ৯০০ পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হয়েছে এবং তাদের মধ্যে ১৭০ জন প্রাণ হারিয়েছে। বয়স ও স্বাস্থ্যজনিত কারণে ঝুঁকির মুখে থাকা আরো ৪ হাজার পুলিশ সদস্যকে বাধ্যতামূলকভাবে আলাদা রাখা হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে কমপক্ষে এক হাজার জনের করোনাভাইরাসের উপসর্গ রয়েছে। লকডাউন পদক্ষেপ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে প্রায় ৮০ হাজার পুলিশ সদস্য দেশের নিরাপত্তা প্রদানের দায়িত্ব পালন করছে।
পাঁচ দেশের হজযাত্রা স্থগিত : করোনা পরিস্থিতিতে হজের আয়োজন করা সৌদি সরকারের জন্য একটি কঠিন চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সৌদি আরবে ইতোমধ্যেই লক্ষাধিক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। জেদ্দায় নতুন করে আবার কারফিউ জারি করা হয়েছে, বন্ধ করা হয়েছে ৭১টি মসজিদের জামাত। এমতাবস্থায় সামগ্রিক পরিস্থিতি সামনে রেখে এখনো কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে একে একে চলতি বছরের হজযাত্রা বাতিল করছে বিভিন্ন দেশ। সবার আগে সিঙ্গাপুর ঘোষণা করেছে, এবার তার দেশের নাগরিকদের হজপালনে পাঠাবে না। ইন্দোনেশিয়া করোনা পরিস্থিতিতে হজ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। থাইল্যান্ডের মুসলমানদের জন্য এ বছর হজ স্থগিত করা হয়েছে। মালয়েশিয়াও তার নাগরিকদের হজে পাঠাবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ছাড়া হজযাত্রা বাতিল করেছে ব্রুনেই সরকারও। মরক্কো, পাকিস্তান ও নাইজেরিয়াসহ কয়েকটি দেশ জানিয়েছে, যদি আগামী কয়েক দিনের মধ্যে হজ বিষয়ে সৌদি সরকার তাদের সিদ্ধান্ত না জানায় তাহলে তারা হজে অংশ নেবেন না।
বিধিনিষেধ তুলে নেয়ায় বেশি সংক্রমণ অনিবার্য : যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি ফাউসি বলেন, বিধিনিষেধ তুলে নেয়ায় বেশি সংক্রমণ অনিবার্য। দেশজুড়ে আক্রান্ত কমছে কিন্তু বিভিন্ন রাজ্যে নতুন করে আক্রান্ত বেড়ে যাওয়া ‘উদ্বেগের’ বিষয়।’ দেশজুড়ে বিক্ষোভ ও অর্থনীতির জন্য আবার সবকিছু খুলে দেয়াতে করোনার ফের পুনরুত্থানের সুযোগের পথ তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন বিশেষজ্ঞরা। এ দিকে টেক্সাস, অ্যারিজোনাসহ দেশটির অর্ধ ডজন রাজ্যের হাসপাতালগুলোতে ক্রমবর্ধমান করোনারোগী দিয়ে ভর্তি। হাসপাতালগুলোতে আইসিইউর স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। ফের দেশটিতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এলে ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতি হতে পারে।
মশার থুতু থেকে তৈরি হচ্ছে ভ্যাক্সিন: ভবিষ্যতে অপেক্ষা করছে আরো অনেক মহামারী। সেসব মহামারী রুখতে এখনই কাজ শুরু করেছেন বিজ্ঞানীরা। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জির ‘ইনকেফশাস ডিজিজ’ সংক্রান্ত বিষয়ে গবেষক জেসিকা ম্যানিং বছর পাঁচেক আগে মশাবাহিত রোগ থেকে মুক্তি পেতে এক বিশেষ টিকার অনুসন্ধান শুরু করেন। সেই প্রতিষেধক তৈরি হবে মশার থুতু থেকে। ম্যানিং বিশ্বাস করেন মশার স্যালাইভা থেকে এমন এক ভ্যাক্সিন তৈরি করা সম্ভব যা একসাথে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, ওয়েস্ট নিল, মায়ারো ভাইরাসের মতো একাধিক রোগ থেকে মুক্তি দেবে।
করোনা চিকিৎসায় হালকা মাত্রার রেডিয়েশন : পরীক্ষামূলকভাবে হালকা মাত্রার রেডিয়েশন দেয়া হয়েছে করোনা রোগীদের। ইমোরি ইউনিভার্সিটি হসপিটালের গবেষকরা এ ব্যাপারে গবেষণা করছেন। ডা: মুহাম্মদ খানের নেতৃত্বে জর্জিয়ায় পাঁচজন করোনা রোগীকে ওই চিকিৎসা দেয়া হয়। গবেষকরা জানিয়েছেন, ১০ থেকে ১৫ মিনিট ধরে তাদের হালকা মাত্রার রেডিয়েশন দেয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তাদের অবস্থার উন্নতি ঘটেছে। আর রেডিয়েশন দেয়ার ১২ দিনের মধ্যে সবাইকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। এভাবে হালকা মাত্রার রেডিয়েশন দেয়া নিরাপদ।
সংবাদপত্রের মাধ্যমে ছড়ায় না করোনা : সংবাদপত্রের মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়ায় না বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানী এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। জীবাণু বিশেষজ্ঞ জর্জ লোমোনসোফ বলেন, ‘সংবাদপত্র যে প্রক্রিয়ায় মুদ্রণ হয় এবং পাঠকের কাছে আসে, তাতে এর মাধ্যমে করোনা ছড়ানোর কথা নয়।’ কোনো কিছুর ওপর কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে করোনাভাইরাস। তবে সেটা নির্ভর করে কোন পদার্থের ওপর করোনাভাইরাসটি পতিত হয়েছে, সেখানকার তাপমাত্রা কত এবং সেখানকার আর্দ্রতা কেমন, তার ওপর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, সন্দেহ হলে সেই জিনিসে জীবাণুনাশক ব্যবহার করতে হবে। কিংবা সেটা স্পর্শ করার পর সাবান কিংবা হ্যান্ডওয়াশ ব্যবহার করে ভালোভাবে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে। সেই সাথে নাক-মুখ ও চোখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
বিক্ষোভে বাড়বে করোনা সংক্রমণ : যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) মুখপাত্র ক্রিস্টেন নর্ডলান্ড বলেন, প্রতিবাদ ও বৃহত্তর সমাবেশগুলো আমাদের প্রস্তাবিত সামাজিক দূরত্বের নির্দেশিকাগুলো বজায় রাখতে অসুবিধা সৃষ্টি করে এবং এটা অন্যকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলের ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক উইলিয়াম শ্যাফনার বলেন, বিক্ষোভের মতো পরিস্থিতিতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সবরকম পরিবেশই থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ও হোয়াইট হাউজের করোনাভাইরাস টাস্ক ফোর্সে অন্যতম সদস্য অ্যান্থনি ফাউসি বলেছেন, টেলিভিশনে ছবি ও ভিডিও ক্লিপসে আমরা অনেক মানুষের সমাগম দেখছি। এটা আমার জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
করোনার বিস্তার কমে মাস্ক ব্যবহারে : সারা বিশ্বে মহামারী হয়ে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস প্রতিরোধে লকডাউনের চেয়েও সবচেয়ে কার্যকর পন্থা হলো মাস্ক ব্যবহার করা। কারণ করোনাভাইরাস মূলত বাতাসে ড্রপলেটস বা মুখ থেকে নিঃসৃত মিহি জলকণার মাধ্যমে ছড়ায়। আর মাস্ক ব্যবহার করলে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যায় বলে নতুন এক গবেষণায় বলা হয়েছে। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে করোনার বিস্তার প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো, ঘরের বাইরে মাস্ক ব্যবহার করা। ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত এর পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, কোয়ারেন্টিন ও কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং করে কোভিড-১৯-এর প্রতিরোধে কাজ করেই যেতে হবে। জার্মানির বন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব লেবার ইকোনমিকসের এক গবেষণা জানিয়েছে, নোভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে যদি সবার মুখ মাস্কে ঢাকা থাকে।


আরো সংবাদ



premium cement