২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

উচ্চাভিলাষী রাজস্ব লক্ষ্য

৫,৬৮,০০০ কোটি টাকার বাজেট আজ
-

উচ্চাভিলাষী না বলে অনেকটা অবাস্তবায়নযোগ্য একটি রাজস্ব আয়ের স্বপ্ন নিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আজ বৃহস্পতিবার পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার একটি বিশাল বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন। বাজেটে রাজস্ব প্রাপ্তির আশা করা হয়েছে তিন লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৫০ শতাংশের উপরে। ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, এর আগে সর্ব্বোচ্চ রাজস্ব প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৫ শতাংশ। আর সব সময় প্রবৃদ্ধি ১৮ থেকে ২০ শতাংশের ঘরে ছিল। এখন চলছে করোনাকাল, এই কাল কবে শেষ হবে তা কেউ এখন বলতে পারে না। আর এ সময়ে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পুরো চালু হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আপাতত দেখা যাচ্ছে না। ফলে আগামী অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের যে টার্গেট ধরা হয়েছে তা ‘কস্মিনকালেও’ অর্জন করা সম্ভব না। এ কথাটি সম্প্রতি এক চিঠিতে অর্থ সচিবকে জানিয়েও দিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান। তবুও ‘আশার ছলনে ভুলি!’
ওদিকে, অর্থমন্ত্রী গতকাল বুধবার সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, আগামী বাজেটের লক্ষ্য মানুষের আহার জোগানো এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। এ জন্য গ্রাম-গঞ্জে তিনি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশ ঘটিয়ে কর্মসংস্থানের কথাও বলেছেন। দেখা যাক, আগামী এক বছরে তিনি কতটা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারেন। কারণ সময়টা অর্থমন্ত্রীর জন্য মোটেও অনুকূল নয়। তার পিছু পিছু নাকি সামনে চলছে করোনা। আর এই করোনার কারণে দেশে এখন কোটি কোটি মানুষ বেকার। অর্থনীতি সমিতি বলেছে, এই বেকারের সংখ্যা এখন সাড়ে তিন কোটি। অন্যদিকে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট বলেছে, করোনার কারণে দেড় কোটি মানুষ বেকার হওয়ার উপক্রম। এই লোকগুলোকে কিভাবে অর্থমন্ত্রী চাকরি দেবেন তা কিন্তু এফসিএ অর্থমন্ত্রীর জন্য একটি মোটা দাগের চ্যালেঞ্জ!
এবারের বাজেট একটি অস্বাভাবিক অবস্থায় ঘোষণা করা হচ্ছে। চারদিকে একটি ভীতির পরিবেশ। কখন আবার করোনা ধরে। এর ছাপ পাওয়া যাবে বাজেট ঘোষণা থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রে। করোনার কারণে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সবচেয়ে কমসংখ্যক সংসদ সদস্যের উপস্থিতিতে দেশের ৪৯তম বাজেট ঘোষণা করা হবে। যারা উপস্থিত থাকবেন তাদের মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে একটি করে আসন ফাঁকা রেখে আসন বিন্যাস করা হয়েছে। যারা শারীরিকভাবে অসুস্থ তাদের সংসদে আসতে বারণ করা হয়েছে। বাজেট অধিবেশনে উপস্থিত থাকবে না কোনো সাংবাদিক কিংবা বিশিষ্টজন; যা কখনো ভাবাই যায়নি।
এদিকে আজ দুপুরে মন্ত্রিসভার এক বিশেষ বৈঠকে নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন করিয়ে নেয়া হবে। সংসদ নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে সীমিতসংখ্যক মন্ত্রী অংশ নেবেন। প্রতিবারের মতো এবারো হবে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলন। তবে এবার এ সংবাদ সম্মেলন অনলাইনে করা হবে। অর্থমন্ত্রী তার পরিকল্পনা কমিশনের অফিস থেকে জুম অনলাইনের মাধ্যমে বাজেট সম্পর্কিত বক্তব্য তুলে ধরবেন এবং সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেবেন।
অর্থমন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, এবারের বাজেটে সঙ্গত কারণেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে স্বাস্থ্য খাতে। পাশাপাশি কৃষি খাত, খাদ্য উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনা এবং কর্মসংস্থানকে অধিক গুরুত্ব পাচ্ছে। আগামী অর্থবছরে নানা ধরনের কৃষি ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা সম্প্রসারণ, ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্য পুনরুদ্ধার করাসহ কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বাজেটে বিভিন্ন প্রস্তাবনা থাকছে।
আয় ও ব্যয় : আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজেটের আকার ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। সে হিসাবে আগামী অর্থবছরে বাজেটের আকার ৪৪ হাজার ৮১০ কোটি টাকা বাড়ছে।
ব্যয়ের বিপরীতে আগামী বাজেটে অনুদান ব্যতীত মোট রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর অনুদান ব্যতীত রাজস্ব আয় তিন লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। সে হিসাবে রাজস্ব আয় বাড়ছে ১৯০ কোটি টাকা। মোট রাজস্ব আয়ের মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্য দেয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে তিন লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। সে হিসাবে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা বেড়েছে চার হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া আগামী অর্থবছরের বাজেটে করবহির্ভূত রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। আর কর ব্যতীত প্রাপ্তির পরিমাণ ধরা হয়েছে ৩৩ হাজার তিন কোটি টাকা। আগামী বছরে বৈদেশিক অনুদান পাওয়ার পরিমাণ ধরা হয়েছে চার হাজার ১৩ কোটি টাকা।
এডিপি : আগামী বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ দেয়া হয়েছে দুই লাখ পাঁচ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। আর এডিপিবহির্ভূত বিশেষ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে চার হাজার ৭২২ কোটি টাকা। কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচিতে ব্যয় করা হবে দুই হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা। এডিপি এরই মধ্যে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
ঘাটতি : উন্নয়নশীল দেশগুলো সাধারণত ঘাটতি বাজেট দিয়ে থাকে। বাংলাদেশও প্রতি অর্থবছর ঘাটতি বাজেট দেয়। করোনার কারণে এ ঘাটতি এবার সব সীমা অতিক্রম করছে। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ঘাটতি ৬ শতাংশ স্পর্শ করছে। অবশ্য প্রতিবেশী দেশগুলো ৬-৭ শতাংশ ঘাটতি ধরে বাজেট দিয়ে থাকে।
আগামী অর্থবছরের বাজেটে অনুদান ব্যতীত ঘাটতির পরিমাণ এক লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সামগ্রিক ঘাটতি (অনুদান ব্যতীত) এক লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ শতাংশ। সে হিসাবে আগামী অর্থবছরে অনুদান ব্যতীত ঘাটতি ৪৪ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা বাড়ছে।
আগামী অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ৯ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ খাতের মধ্যে ব্যাংকিং খাত থেকে সরকার ঋণ নেবে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ও অন্যান্য ঋণ নেয়া হবে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে বিদেশী উৎস থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৬ হাজার চার কোটি টাকা।
প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি : আগামী অর্থবছরের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। আর মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৪ শতাংশ।

 


আরো সংবাদ



premium cement