২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পরিকল্পিত আহরণের অভাবে নষ্ট হচ্ছে সাগরতলের সম্পদ

-

পরিকল্পিত আহরণের অভাবে দেশের সমুদ্র উপকূল ও সাগরতলে থাকা বহু অমূল্য সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মাছ ছাড়াও বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূল ও সাগরতলে বহু মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। যা যথাযথ পরিকল্পনার অভাবে সম্পদের পরিমাণ নির্ণয়, আহরণ ও এর ব্যবহার নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। ফলে তা সাগরতলেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এসব সম্পদ কোথায়, কী পরিমাণে আছে এবং এগুলোর ব্যবহারই বা কিভাবে হবে, সে লক্ষ্যে গবেষণার পরামর্শ দিয়ে তারা এই সম্পদ আহরণে পরিকল্পনা তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
তারা বলছেন, সমুদ্র সৈকতে চলাচলকারী জলযানগুলোর অসচেতনতা আর পর্যটকদের উদাসীনতায় নষ্ট হচ্ছে সাগরের নিচের সৌন্দর্য। সমুদ্রের নিচের সৌন্দর্য যেভাবে বিনষ্ট হচ্ছে, তা এখনই ঠেকাতে না পারলে নীরবেই হারিয়ে যাবে অমূল্য সম্পদ। বিশ্ব সমুদ্র দিবস উপলক্ষে আলোচনায় এসব মতামত তুলে ধরেছেন তারা। সেন্টমার্টিনের সৈকতে যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আছে, তার চেয়ে হাজারগুণ বেশি সৌন্দর্য রয়েছে সমুদ্রের তলদেশে। এই সৌন্দর্য পর্যটকদের মাঝে তুলে ধরতে পারলে সারা বিশ্ব থেকে স্কুবা ডাইভিং করতে বাংলাদেশে ছুটে আসবে লাখো পর্যটক। যা দেশের পর্যটন শিল্পকে সমৃদ্ধ করতে জোরালো ভূমিকা রাখবে। কিন্তু এ শিল্পকে তুলে ধরতে সরকারি কিংবা বেসরকারিপর্যায়ে নেই কোনো পৃষ্ঠপোষকতা। সমুদ্রের তলদেশে ফটোগ্রাফি করা একজন ফটোগ্রাফার জানান, সমুদ্রের তলদেশে গিয়ে দেখেছি, কিভাবে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে পানির নিচের কোরাল প্রাচীরগুলো। ভ্রমণকারীদের ফেলা নোঙর, পর্যটকদের ফেলা ময়লা-আবর্জনা আর নৌকার লগি-বৈঠার আঘাতে নান্দনিক কোরাল প্রাচীরগুলো বিলীন হওয়ার পথে। তিনি বলেন, বিভিন্ন রঙের কোরাল, ঝিনুক আর রং-বেরঙের মাছের ঝাঁক দেখে কেবল ফটোগ্রাফাররাই মুগ্ধ হন না। মুগ্ধ হন পর্যটকরাও।
পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের জীববৈচিত্র্য বিভাগের সদস্য ও সেভ আওয়ার সি-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আনিসুজ্জামান খান জানান, এসডিজির ১৪ নম্বর লক্ষ্যতে সাগর ও সমুদ্র অর্থনীতির কথা বলা আছে। বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূল ও সাগরতলে বহু সম্পদ আছে। তবে পরিবেশের তোয়াক্কা না করেই এলএনজি টার্মিনাল, গভীর সমুদ্র বন্দর, বড় বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, চট্টগ্রামের শিল্পাঞ্চলের বর্জ্য, কক্সবাজার সৈকতের অপরিকল্পিত হোটেল মোটেল নির্মাণ করায় সমুদ্রের অভ্যন্তরণে ও সমুদ্র সংলগ্ন এলাকার জীববৈচিত্র্য আজ হুমকির মুখে। তিনি বলেন, সাগরের সাথে সহাবস্থান করেই আমাদের টিকে থাকতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন উদ্ভাবন। উপকূলে দ্বীপ সুরক্ষায় বাঁধ দেয়া কার্যকর কোনো সমাধান নয়। বরং ওই সব অঞ্চলে লবণাক্ততা সহিষ্ণু ধান, মাছ থেকে শুরু করে জীবন ধারণের অন্যান্য উপকরণ উদ্ভাবন করতে হবে। সমুদ্রকে ঠেকাতে বাঁধ তৈরিতে যত অর্থ ব্যয় হয়, তার চেয়ে অনেক কম অর্থ ব্যয় হবে এসব উদ্ভাবনে। আনিসুজ্জামান বলেন, এসডিজিতে লাইফ বিলোওয়াটারের কথা বলা হলেও আমরা জানি না সমুদ্রের নিচের পরিস্থিতি কী। এ জন্য দরকার প্রয়োজনীয় জাহাজ, সরঞ্জাম, গবেষণা, দক্ষ লোকবল ও ডুবরী। কারণ সমুদ্রতলের পরিবেশ কতটা ভালো তা নিশ্চিত করে প্রবাল। কিন্তু সেন্টমার্টিন ও আশপাশের এলাকার প্রবালের অবস্থা ভালো নেই। অতিরিক্ত পর্যটকদের চাপ, প্রতিদিন বড় বড় জাহাজ নোঙর করায় এখনকার পরিবেশ, প্রতিবেশের ক্ষতি হচ্ছে।
অপর দিকে বাংলাদেশ ওসানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (কক্সবাজার) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো: শরিফ মনে করেন, সমুদ্রে সম্পদ কোথায়, কী পরিমাণে আছে এবং এগুলোর ব্যবহারই বা কিভাবে হবে, সে লক্ষ্যে গবেষণার প্রয়োজন। তিনি মনে করেন, গবেষণা করতে পারলে সমুদ্র সম্পদ ব্যবহারের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা যাবে।
চট্টগ্রাম মৎস্য অফিসের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শরিফ উদ্দিন জানান, সরকার বিভিন্ন এলাকাকে পরিবেশগত সঙ্কটাপন্ন হিসেবে ঘোষণা করলেও এর দেখভাল হচ্ছে না। ২০২৫ সালের মধ্যে সাগর ও তৎসংলগ্ন ১০ শতাংশ এলাকাকে সংরক্ষিত অঞ্চল করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ১ শতাংশ করা হয়েছে। তবে মাছের ক্ষেত্রে ৩ শতাংশ এলাকা সংরক্ষণ করা হয়েছে। তবে সামুদ্রিক সম্পদ শুধু মাছ নয়, এর বাইরেও আরো অনেক সম্পদ আছে।
এ বিষয়ে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব:) ফোরকান আহমদ বলেন, সেন্টমার্টিনকে সুরক্ষায় পর্যটক যাওয়া পুরোপুরি নিষিদ্ধ করতে হবে। পরিবেশ সুরক্ষায় স্থানীয় অধিবাসীদের কাজে লাগাতে হবে। তিনি জানান, সেন্টমার্টিনসহ কক্সবাজারের উন্নয়নে ৬৯০ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে চিহ্নিত করে দিয়েছে সরকার। সাগরের কাছিম, লাল কাঁকড়া, সাগর লতা সংরক্ষণে চারটি জোন ভাগ করা হয়েছে। এসব জোনে বাঁশের বেড়া দেয়া হলেও সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় আমফানে তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া মেরিন ড্রাইভের পূর্বপাশ বরাবর এক লাখ গাছ রোপণের কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান জানান, সাগর তীরের হোটেল মোটেল থেকে এখন সরাসরি বর্জ্য সাগরে ফেলা হচ্ছে না। তবে বর্জ্য পরিশোধনের জন্য ব্যবস্থা নেয়ার কথা বললেও মালিকরা কথা শুনছে না। স্থানীয় প্রশাসনও খুব একটা সহায়তা করছে না বলে তার অভিযোগ। তিনি জানান, ২০১৬ সালের পর কক্সবাজারে নতুন কোনো হোটেল মোটেল নির্মাণের অনুমতি দেয়া হয়নি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. শিরিন আক্তার বলেন, অধিকহারে ও অপরিকল্পিত মাছ ধরার ফলে সমুদ্রের মৎস্য সম্পদ হারিয়ে যাচ্ছে। এটা রোধ করতে হবে। পাশাপাশি সমুদ্র তরঙ্গ ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন কৌশল রপ্ত করার উপর গুরুত্ব দেন তিনি। আলোচনায় পরিবেশ অধিদফতরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপপরিচালক এস কে নাজমুল হুদা জানান, সেন্টমার্টিনের ছেঁড়াদ্বীপের পরিবেশ সুরক্ষায় তাদের দফতর একটি জোন চিহ্নিত করে কাজ শুরু করেছে। পাহাড় কাটা বন্ধ ও চট্টগ্রামের শিল্পাঞ্চলের দূষণ বন্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। প্লাস্টিকের দূষণ রোধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা হচ্ছে। এ ছাড়া জাহাজগুলো থেকে দূষণ বন্ধে বড় অঙ্কের জরিমানা করা হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement
যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য না করলে এ বছরই রাশিয়ার কাছে হারতে পারে ইউক্রেন : সিআইএ প্রধান রাশিয়ার সামরিক শিল্পক্ষেত্রে প্রধান যোগানদার চীন : ব্লিংকন ইরাকে সামরিক ঘাঁটিতে 'বিকট বিস্ফোরণ' শেখ হাসিনা সব প্রতিবন্ধকতা উপড়ে ফেলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা বন্ধে বিশ্ববাসীকে সোচ্চার সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তির মৃত্যু নীলফামারীতে তিন হাজার ১৭০ চাষির মাঝে বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ বিতরণ কারাগারে কয়েদির মৃত্যু উজ্জ্বল হত্যার বিচার দাবিতে সরিষাবাড়ীতে মানববন্ধন পাবনায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ১ আহত ২১ খাবারের সন্ধানে বসতবাড়িতে হরিণ, মহামায়ায় অবমুক্ত

সকল