২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

করোনা সংক্রমণে অর্থনীতি সচল রাখতে দেশকে তিন অঞ্চলে ভাগ করতে হবে

-

করোনাভাইরাসের এ সময়ে সংক্রমণের ধরন অনুযায়ী দেশকে তিনটি অঞ্চলে ভাগ করে অর্থনীতিকে সচল রাখার পরামর্শ দিয়েছেন জনস্বাস্থ্যবিদ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা: মোজাহেরুল হক। তিনি বলেন, আমাদের মতো দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউন চলতে পারে না। তা হলে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এমনিতেই বিশ্বব্যাপী মন্দা দেখা দিয়েছে। সামনের দিনগুলোতে বৈশ্বিক মন্দা প্রবল আকার ধারণ করতে পারে। এ অবস্থায় বাইরে থেকে কোনো সহায়তা পাওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই কম। ফলে আমাদের নিজেদের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে নিজেদের পরিকল্পনাতেই এগিয়ে যেতে হবে।
অধ্যাপক মোজাহেরুল হক আরো বলেন, সংক্রমণের হার অনুযায়ী, অর্থনীতির চাকা সচল রাখার পাশাপাশি এটা (তিন অঞ্চলে বিভক্ত করা) মানুষকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করবে। অধ্যাপক মোজাহেরুল হক বলেন, নির্বিচারে সারা দেশকে লকডাউন করে রাখা উচিত নয়। প্রথমেই সারা দেশে একটি সমীক্ষা চালিয়ে দেখে নেয়া দরকার কোন অঞ্চলে কী পরিমাণে সংক্রমণ হয়েছে। পরে সংক্রমণের হার ও ধরন অনুযায়ী দেশকে সবুজ, হলুদ ও লাল অঞ্চলে বিভক্ত করতে হবে। তিনি বলেন, যেসব জেলায় করোনাভাইরাসে সংক্রমণের সংখ্যা ১০ অথবা এর চেয়ে কম সে অঞ্চলকে সবুজ অঞ্চল (গ্রিন জোন) হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। এ সবুজ অঞ্চলে সব ধরনের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম ও মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে নির্বিঘœ করতে সব কিছু সচল থাকবে। তিনি জানান, যেসব জেলায় ১০ থেকে ১০০ জন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগী পাওয়া যাবে সেসব জেলাকে হলুদ অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। এ জেলার সিভিল সার্জন জেলাকে আংশিক লকডাউন ঘোষণা করবেন। এ হলুদ অঞ্চলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ও ব্যবসা-বাণিজ্য আংশিকভাবে করতে দেয়ার অনুমতি দেয়া যেতে পারে। এ জেলায় যেখানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী থাকবে সে এলাকা পুরোপুরি লকডাউন করে রাখতে হবে রোগী সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে। এ ব্যাপারে পুরোপুরি সিদ্ধান্ত নেবেন সিভিল সার্জন।
এর বাইরে লাল অঞ্চলে স্বাভাবিক জীবন, ব্যবসা-বাণিজ্য সবই চলবে আবার লকডাউনও চলবে। এ অঞ্চলের মধ্যেও সংক্রমণের সংখ্যা ও ধরন অনুযায়ী কোথাও পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা দিতে হবে। আবার কোথাও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চলবে। তবে এর সবই হবে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে। লাল অঞ্চলে লকডাউন পুরোপুরি চলছে কি না এর তত্ত্বাবধান করবেন সংশ্লিষ্ট জেলার সিভিল সার্জন। একই সাথে সিভিল সার্জন নির্ধারণ করবেন লাল অঞ্চলে লকডাউন কত দিন ধরে চলবে। জেলা প্রশাসক এবং পুলিশের এসপি সিভিল সার্জনকে সহায়তা করবেন লকডাউন সফল করতে।
উল্লেখ্য, গত ২৬ মার্চ থেকে দেশব্যাপী শাটডাউন অবস্থা চলছে। এরপর কয়েক বার তা বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ ৩০ মে পর্যন্ত শাটডাউন অবস্থা বাড়ানো হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। শাটডাউন ঘোষণা দেয়ার পর থেকে দেশের প্রায় সব ধরনের সরকারি ও বেসরকারি অফিস বন্ধ ছিল। একই সাথে সব ধরনের কল-কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্যিক অফিসও বন্ধ ছিল। শাটডাউনের সুবিধা হয়তো বাংলাদেশ পেয়েছে ব্যাপকভিত্তিক সংক্রমণ ছড়িয়ে না পড়ায়। কিন্তু এতে করে নি¤œ আয়ের মানুষের বেঁচে থাকাটাই দুরূহ হয়ে পড়ে। ফলে সরকারকে বাধ্য হতে হয় নি¤œ আয়ের মানুষের জন্য ওএমএস, ১০ টাকা কেজি চাল এবং সর্বশেষ নি¤œ আয়ের প্রতি পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা করে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement