২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সংক্রমণের আতঙ্ক সত্ত্বেও অর্থনীতি চাঙ্গা করতে কাজে ফিরেছে ইরান

-

করোনাভাইরাস মহামারীতে ধসে পড়ার মুখে ইরানের অর্থনীতি। ইতোমধ্যে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার চাপে ন্যুব্জ হয়ে থাকা অর্থনীতি ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দেশজুড়ে জারি করা নানা বিধিনিষেধে আরো দুর্বল হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় সংক্রমণের আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও অর্থনীতি সচলে বিধিনিষেধ শিথিল করে নিয়েছে ইরানি সরকার। খুলে দেয়া হয়েছে আন্তঃশহর হাইওয়ে, শপিংমল ও বাজারগুলো। যদিও সন্ধ্যা ৬টার পর সব কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ জারি করা হয়েছে। অনেকে আশঙ্কা করছেন, দেশটি এখনো এসব কর্মকাণ্ড চালুর মতো অবস্থায় পৌঁছেনি। এই বিধিনিষেধ শিথিলের কারণে সেখানে দ্বিতীয় দফার করোনা সংক্রমণ শুরু হতে পারে।
ইরানে করোনা সংক্রমণ ও কাজে ফেরার সক্ষমতা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তা সত্ত্বেও সরকার বিধিনিষেধ শিথিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও বন্ধ থাকছে রেস্তোরাঁ, জিম ও অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান। সোমবার ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কিনৌশ জাহানপৌর জানান, দেশটিতে গত এক দিনে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন অন্তত ৯১ জন। এ নিয়ে সেখানে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা পাঁচ হাজার ২০০ ছাড়িয়েছে। এ ছাড়া মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৮৩ হাজার ৫০০ জনের বেশি। মধ্যপ্রাচ্যে করোনা সংক্রমণের কেন্দ্র ধরা হয় ইরানকে। দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সেখানে প্রকৃত আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা সরকারি হিসাবের চেয়ে অনেক বেশি। প্রাথমিক পর্যায়ে সরকার ভাইরাসটির ভয়াবহতা নিয়ে তথ্য ধামাচাপ দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন দেশটির একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা।
ভাইরাস নিয়ে যথাযথ কঠোর পদক্ষেপ না নেয়ার কারণ হিসেবে দুর্বল অর্থনৈতিক অবস্থার কথা তুলে ধরেছে সরকার। করোনা মহামারীর আগেই দেশটিতে তরুণদের মধ্যে ২০ শতাংশ বেকার ছিল। মুদ্রাস্ফীতির হার ছিল ৪০ শতাংশ। করোনা সংক্রমণের অন্যতম স্থান হিসেবে শনাক্ত হওয়ার পর ইরানে বন্ধ রয়েছে মসজিদ ও অন্যান্য ধর্মীয় স্থান। আর কয়েক দিন পরই শুরু হতে যাচ্ছে পবিত্র রমজান মাস। এই অবস্থায় ধর্মীয় স্থান ও উপাসনালয়ের গুরুত্ব বিবেচনায় সেগুলো উন্মুক্ত করে দেয়া হতে পারে। প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি জানিয়েছেন, আগামী ৪ মে থেকে খুলে দেয়া হতে পারে কিছু ধর্মীয় স্থান। তবে দেশটির সুপ্রিম লিডার আয়াতুল্লাহ খামেনি জানিয়েছেন, ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে পুরো রমজানজুড়েই বন্ধ থাকতে পারে বড় ধরনের জমায়েত।
ফের সাহায্যের প্রস্তাব ট্রাম্পের : এ দিকে রয়টার্স জানায়, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ইরানকে আবার সাহায্যের প্রস্তাব দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, ইরান চাইলে ভেন্টিলেটরের মতো কিছু চিকিৎসা সরঞ্জাম দিতে চান তিনি। এর আগে মার্চে বিশ্বে করোনাভাইরাস মহামারীর শুরুর দিকেও ট্রাম্প ইরানকে মানবিক সাহায্যের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ইরান তৎক্ষণাৎ তা প্রত্যাখ্যান করে বলেছিল, তারা কোনো অনুদান চায় না, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার চায়। নিষেধাজ্ঞা না উঠলে তারা কোনো সাহায্য নেবে না। এবার ট্রাম্প ফের ইরানকে সাহায্য করতে চাইলেও নিষেধাজ্ঞা তোলা নিয়ে কোনো কথা বলেননি, যে নিষেধাজ্ঞা তিনি চাপিয়েছিলেন ইরানের সাথে স্বাক্ষরিত ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে আসার পর।
গত রোববার হোয়াইট হাউজের এক ব্রিফিংয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘ইরান যদি সাহায্য চায়, তাহলে আমার কিছু করার ইচ্ছা আছে। যদি তারা অনুরোধ করে।’ ইরান করোনাভাইরাসের প্রকোপে ‘খুবই কাবু হয়ে পড়েছে’ বলে ট্রাম্প মন্তব্য করেন। ইরানের প্রকাশিত আক্রান্ত-মৃত্যুর সংখ্যা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই সংখ্যাগুলো সঠিক নয়।’ জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়া তথ্যানুযায়ী, ইরানে করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৮২ হাজার ২১১ জন এবং মারা গেছে পাঁচ হাজার ১১৮ জন।


আরো সংবাদ



premium cement