২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

করোনা আতঙ্কে ঘরবন্দী ১৭০ কোটি মানুষ

ভুতুড়ে নগরী নিউ ইয়র্ক; ভারতজুড়ে লকডাউন; ১৯৫ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা; মিয়ানমারে প্রথম দুই রোগী শনাক্ত; আসছে আরো মহামারী; চীনে দ্বিতীয় দফা প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কা; বন্ধ হচ্ছে সংবাদপত্র
-

প্রায় তিন মাস আগে যখন করোনার সংক্রমণ শুরু হয়, তখন লকডাউন করে দেয়া হয়েছিল চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরটি। আর এখন বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ পুরোপুরি লকডাউন করে দেয়া হয়েছে, দেশজুড়ে কারফিউ জারি করা হয়েছে। এ ছাড়া আরো অনেক দেশের গুরুত্বপূর্ণ অনেক শহর ও অঞ্চল অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এর ফলে বিশ্বজুড়ে মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ বা ১৭০ কোটি মানুষ এখন করোনাভাইরাসের আশঙ্কায় লকডাউন অবস্থায় রয়েছে। অর্থাৎ বিশ্বের প্রতি পাঁচজন মানুষের মধ্যে একজনকেই নিজ বাড়িতে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে অথবা আহ্বান জানানো হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত এই ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত হয়েছে মোট তিন লাখ ৯৬ হাজার ৩৫ জন। আর মারা গেছে ১৭ হাজার ২৪৭ জন। তবে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার হারও নিতান্ত কম নয়। সুস্থ হয়ে স্বজনদের মাঝে ফিরতে পেরেছে এক লাখ তিন হাজার ৭৪৮ জন। খবর বিবিসি, গার্ডিয়ান, রয়টার্স, টেলিগ্রাফ, এএফপি ও ওয়ার্ল্ড ওমিটারসের।
ভুতুড়ে নগরী নিউ ইয়র্ক : যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নিউ ইয়র্কেই সবার আগে করোনার উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছিল। সেখানকার লোকজনের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে এত আতঙ্ক ছড়িয়েছে যে, নিউ ইয়র্কজুড়ে এখন ভুতুড়ে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য বলেছেন, তিনি শিগগিরই দেশের কয়েকটি অংশের লকডাউন শিথিলের আহ্বান জানাবেন। কিন্তু স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও রাজ্যগুলোর গভর্নররা জানান, এই কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরো অন্তত কিছুদিন বিদ্যমান থাকা দরকার বলে তারা মনে করছেন। যুক্তরাষ্ট্রে কোভিট-১৯-এ পর্যন্ত প্রায় ৬০০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং প্রায় ৪৭ হাজার মানুষ সেখানে এ বৈশ্বিক মহামারীতে আক্রান্ত। নিউ ইয়র্ক সিটিতে এখন ১২ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্তের খবর নিশ্চিত হয়েছে এবং এই মহামারীতে মৃত্যু হয়েছে শতাধিক মানুষের। নিউ ইয়র্কের মেয়র বিল ডি ব্লাসিও ‘মহামারী মোকাবেলায় নিউ ইয়র্ক কেবল শুরুর মুখোমুখি হয়েছে’ উল্লেখ করে বলেন, ন্যাশনাল গার্ডের সৈন্যরা একটি কনভেনশন সেন্টারে হাসপাতাল তৈরি করছে। আগামী সপ্তাহ আরো খারাপের দিকে গড়াচ্ছে, পরবর্তী সপ্তাহগুলোর পরিস্থিতি তার চেয়েও ভয়াবহ রূপ নেবে। তিনি বলেন, ট্রাম্পের উচিত হবে নিউ ইয়র্ক, ক্যালিফোর্নিয়ার মতোই পুরো দেশে লকডাউন জারি করা।
যুক্তরাজ্যে তিন সপ্তাহের ‘লকডাউন’ : করোনাভাইরাস ঠেকাতে অন্য অনেক দেশের মতো যুক্তরাজ্যও জীবনযাত্রায় কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, নাগরিকদের সবাইকে যার যার বাসায় অবস্থান করতে বলা হয়েছে। ওই বিধিনিষেধে বলা হয়েছে, যারা জরুরি সেবায় জড়িত, তারা কর্মস্থলে যেতে পারবেন। খাবার, ওষুধের মতো জরুরি সামগ্রী কিনতে দোকানে বা চিকিৎসাকেন্দ্রে যাওয়া যাবে। জরুরি নিত্যপণ্যের বাইরে অন্য সব পণ্যের দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বাইরে একসাথে দুইজনের বেশি কোথাও চলাফেরা করতে নিষেধ করা হয়েছে। এসব নির্দেশনা কেউ না মানলে পুলিশকে বাধ্য করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে তাদের জরিমানাও করা যাবে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন সোমবার রাতে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তিন সপ্তাহের এই বিধিনিষেধ জারি করেন, যাকে ‘লকডাউন’ বলা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘পুরো দেশ আজ এক জরুরি পরিস্থিতির মুখোমুখি। এই সময়ে সবার স্বাস্থ্য সুরক্ষার স্বার্থেই যার যার বাসায় থাকা জরুরি।’
জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি সর্বশেষ যে হিসাব দিয়েছে, তাতে যুক্তরাজ্যে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৬ হাজার ৭০০ ছাড়িয়ে গেছে, মৃত্যু হয়েছে ৩৩৬ জনের।
ভারতজুড়ে তিন সপ্তাহের লকডাউন : দেশজুড়ে নোভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়েছে। তার জেরে এবার সারা দেশে আগামী তিন সপ্তাহের জন্য লকডাউন ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গতকাল মঙ্গলবার মধ্য রাত থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত এই লকডাউন জারি হয়। ওই সময়ে দেশের কোনো নাগরিকের বাড়ির বাইরে পা রাখা উচিত নয় বলে জানিয়েছেন তিনি। গতকাল মোদি তার ভাষণে বলেন, আপনাদের বাড়ির দরজার বাইরে লক্ষণরেখা টানা হলো। মনে রাখবেন, তার বাইরে পা রাখলেই করোনার মতো মহামারীকে বাড়িতে ডেকে আনবেন। এই ক’দিন বাইরের জীবন ভুলে যান। এটা না করলে দেশ আরো ২১ বছর পেছনে চলে যাবে। আগামী তিন সপ্তাহ এই লকডাউন জারি থাকবে। আপনাদের কাছে অনুরোধ, এই সময় যে যেখানে রয়েছেন, সেখানেই থাকুন। দেশের যা পরিস্থিতি, তাতে এই পদক্ষেপ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। দেশের প্রতিটি রাজ্য, জেলায় এই নির্দেশ কার্যকর হবে।
থাইল্যান্ডে জারি হচ্ছে ‘জরুরি আইন’ : করোনাভাইরাস মোকাবেলায় আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে থাইল্যান্ডে জারি হচ্ছে ‘জরুরি আইন’। এ ছাড়াও আরো কয়েকটি পদক্ষেপ নিচ্ছে দেশটির সরকার। গত মঙ্গলবার থাই প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান-ওচা এ ঘোষণা দেন। সরাসরি ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় নতুন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। বেশ কিছু জায়গা বন্ধ করে দেয়া হবে। যদি পরিস্থিতির উন্নতি না হয় তবে সম্পূর্ণ লকডাউন করা হবে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি হলে অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনা হবে।
১৯৫ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা : করোনাভাইরাস বিশ্বের ১৯৫টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ইতালিতে। ইউরোপের এই দেশটিতে মৃত্যুর মিছিল থামছেই না। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে ৬০১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে সেখানে মৃত্যু ছয় হাজার ৭৭। দেশটিতে নতুন করে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৪ হাজার ৭৮৯। ফলে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬৩ হাজার ৯২৭। এ ছাড়া চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৭ হাজার ৪৩২ জন।
উহান থেকে লকডাউন উঠছে : বিশ্বজুড়ে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রস্থল বলে বিবেচিত চীনের উহান শহর ৮ এপ্রিল অবরুদ্ধ দশা থেকে মুক্তি পাচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার চীনের হুবেই প্রদেশের স্বাস্থ্য কমিশন এক ঘোষণায় এ কথা জানায়। রাজধানী উহান ছাড়া থেকে হুবেই প্রদেশে প্রবেশ ও প্রদেশটি থেকে বের হওয়ার ওপর আরোপিত সব ধরনের বিধিনিষেধ আজ বুধবার তুলে নেয়া হবে বলেও জানিয়েছে তারা।
রাজধানী উহানসহ হুবেই গত দুই মাস ধরে লকডাউন অবস্থায় ছিল। উহানের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পর স্বাস্থ্য কোডের ওপর ভিত্তি করে লোকজন শহরটি ছাড়ার সুযোগ পাবে বলে জানিয়েছে কমিশন।
গত বছরের ডিসেম্বরের একেবারে শেষ দিকে এই উহান শহরেই প্রথম নতুন ধরনের এই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে। কিন্তু বর্তমানে প্রদেশটিতে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। গত ছয় দিনে প্রদেশটিতে মাত্র একজন আক্রান্ত হয়েছে বলে স্বাস্থ্য কমিশন জানিয়েছে।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরুতে চীনে মৃতের সংখ্যা হু হু করে বাড়তে থাকলেও মাস দুয়েকের মধ্যে তারা পরিস্থিতি অনেকটাই সামলে নিতে পেরেছে। চীনের পর প্রথমে দক্ষিণ কোরিয়ায় ও পরে ইতালিতে মৃতের সংখ্যা হু হু করে বাড়তে থাকে। দক্ষিণ কোরিয়া পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণ আনতে পারলেও ইতালিতে মৃতের সংখ্যা চীনের দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
মিয়ানমারে প্রথম দুই রোগী শনাক্ত : মিয়ানমারে প্রথমবারের মতো দুইজন করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত হয়েছে। তারা সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে ফিরেছে। এত দিন পর্যন্ত মিয়ানমারই ছিল বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল রাষ্ট্র, যারা বলে আসছিল, তাদের দেশে কোনো করোনাভাইরাস আক্রান্ত নেই। চীনের সাথে দীর্ঘ সীমান্ত থাকার পরও এমন দাবি করছিল তারা।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা ৩৬ বছর বয়সী এক ব্যক্তি ও যুক্তরাজ্য থেকে আসা ২৬ বছর বয়সী এক ব্যক্তি, উভয়েই মিয়ানমারের নাগরিক এবং পরীক্ষায় তাদের দেহে নভেল করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ দুই রোগীর সংস্পর্শে যারা এসেছিলেন তাদের শনাক্তে তদন্ত চলছে।
চার ওষুধ নিয়ে কাজ করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা : করোনাভাইরাস এখন প্রায় সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। এ ভাইরাসে সংক্রমণের পর থেকে এখনো পর্যন্ত চিকিৎসকরা বিভিন্ন ওষুধ দিয়ে রোগীকে বাঁচানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কখনো এইচআইভি, ইবোলা কিংবা ম্যালেরিয়ার ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি দেশ দাবি করছে রোগীরা এসব ওষুধে সুস্থ হয়ে উঠছেন। বিশ্বব্যাপী রোগীদের ওপর পরীক্ষা চালানো এমন চারটি ওষুধ নিয়ে কাজ করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, চারটি ওষুধ নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। এর মধ্যে দু’টি হলো ড্রাগ ককটেল। ইবোলার ওষুধ রেমডেসিভির, দু’টি এইচআইভি ড্রাগÑ লোপিনাভির ও রিটোনাভির সংমিশ্রণ; লোপিনাভির ও রিটোনাভির প্লাস ইন্টারফেরন বিটার আরেকটি ককটেল এবং অ্যান্টিম্যালেরিয়া ড্রাগ ক্লোরোকুইন। ডব্লিউএইচও বলছে, এসব ওষুধ রোগীদের ওপর ব্যবহার করার আগে ক্লিনিকাল ট্রায়ালের প্রয়োজন আছে।
যেকোনো রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের মধ্যে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি না দেখার জন্য প্রয়োজন ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের। আর এর জন্য প্রয়োজন সময়ের। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে কোন ওষুধ সমর্থ এটি নিয়েই চলছে গবেষণা ও প্রস্তুতি।
সারা বিশ্বে ৪ দিনে করোনায় আক্রান্ত ১ লাখ : সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনায় মৃতের সংখ্যা। বিশ্বের এ সঙ্কটকালীন মুহূর্তে গবেষকরাও হিমশিম খাচ্ছেন এর প্রতিষেধক আবিষ্কারে। চীনে প্রথম ব্যক্তি আক্রান্ত হওয়ার পর আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ হতে সময় লেগেছে ৬৭ দিন, পরবর্তী এক লাখ হতে সময় লেগেছে ১১ দিন এবং মাত্র চার দিনে তৃতীয় এক লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
করোনায় ইতালির ২৩ চিকিৎসকের মৃত্যু : নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ইতালিতে ২৩ চিকিৎসক মারা গেছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে ইতালিয়ান ফেডারেশন অব ডক্টরস। ওই বিবৃতিতে আরো জানানো হয়, এ সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে। এ ছাড়া প্রতিদিন সন্ধ্যায় আইসোলেশন সুপেরিয়র ডি সানিটা থেকে সংক্রমিত স্বাস্থ্যকর্মীদের তালিকা প্রকাশ করা হয়।
তুরস্কে কড়াকড়ি আরোপ : তুরস্কে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকায় দেশজুড়ে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৫২৯ এবং মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭ জনে। দেশজুড়ে করোনার প্রকোপ বাড়তে থাকায় নতুন করে কড়াকড়ি আরোপ করেছে স্থানীয় প্রশাসন। মুদিদোকান খোলার সময়, দোকানে ক্রেতার সংখ্যা এবং গণপরিবহনে যাত্রীর সংখ্যা নির্ধারণ করে দেয়াসহ বেশ কিছু বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করে দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই রাজধানী আঙ্কারায় সব স্কুল, ক্যাফে, বার ও মসজিদে একসাথে নামাজ আদায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। করোনার প্রকোপ যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য সব ধরনের বিমান চলাচল বাতিল করা হয়েছে।
করোনাভাইরাস কেবল শুরু, আসছে আরো মহামারী : মহামারী করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সবাইকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। এই ভাইরাস ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে বিশ্বের সব দেশ। ভয়ঙ্কর এই পরিস্থিতিতে আরেকটি সতর্কবার্তা দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, করোনাভাইরাস কেবল শুরু। সামনে আরো মারাত্মক মহামারী আসছে। তারা বলছেন, ওই সব মহামারীর জন্য সবাইকে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। পরিবেশবাদীদের মতে, বিশ্বজুড়ে বাড়ছে জনসংখ্যা। ফলে মানুষ বন্য প্রাণীর কাছাকাছি যাচ্ছে। এতে নতুন নতুন ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।
দ্য জিওগ্রাফিক ন্যাচার ফর ক্যাম্পেইন বলছে, করোনা ভাইরাসের মতো আরো ভাইরাস আসবে। বনায়ন ধ্বংস এবং বন্যপ্রাণীকে পোষা প্রাণী, খাবার ও ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করায় এসব ভাইরাস ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়বে।
বিজ্ঞানীদের হিসাব অনুযায়ী ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের জনসংখ্যা দুই বিলিয়ন বৃদ্ধি পাবে। এ কারণে বন্যপ্রাণীর আরো কাছাকাছি যাবে মানুষ। ফলে যে কোনো ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। অন্য পরিবেশবাদীরা বলছেন, করোনাভাইরাস কেবল মহামারীর শুরু। মানুষ যদি এখনই সচেতন না হয় এবং পরিবেশ রক্ষায় আন্দোলন শুরু না করে তাহলে করোনার চেয়ে আরো ভয়াবহ ভাইরাস আসবে। এ ধরনের ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যাবে বিশ্ববাসীর জন্য।
করোনায় ইতালিতে ছয় হাজার লোকের প্রাণহানি : মহামারী করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) বিশ্বব্যাপী সাড়ে ১৬ হাজারের অধিক লোকের প্রাণহানি ঘটেছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রাণঘাতী ভাইরাসটির থাবায় ইউরোপের দেশ ইতালিতে মৃতের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। একই সঙ্গে দেশটিতে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যাও।
ইতালির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্য মতে, মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে আরো ৬০১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এ নিয়ে ইউরোপের দেশটিতে মোট মৃতের সংখ্যা ছয় হাজার ৭৭ জনে দাঁড়িয়েছে। এখন পর্যন্ত এটাই যে কোনো দেশের জন্য সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড।
মৃত্যুপুরীতে পরিণত হওয়া ইতালি এরই মধ্যে সর্বোচ্চ মৃত্যুর তালিকায় করোনার উৎসস্থল চীনকেও ছাড়িয়ে গেছে। তা ছাড়া দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যাও ইতোমধ্যে ৬৩ হাজার ৯২৭ জনে দাঁড়িয়েছে।
চীনে দ্বিতীয় দফা করোনার প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কা : চীনে গতকাল মঙ্গলবার নতুন করে আরো ৭৮ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এতে দেশটিতে দ্বিতীয় দফা করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই বিদেশ থেকে এসেছে। এত দিন চীনের নাগরিকরাই ছিল করোনার বাহক। এখন ঘটছে উল্টো ঘটনা।
সম্প্রতি চীনে নতুন করে সংক্রমিতদের বেশির ভাগ বিদেশ থেকে এসেছে। বিদেশ থেকে আগত ব্যক্তিদের নিয়ে বেইজিং কর্তৃপক্ষ খুবই উদ্বিগ্ন। দেশটিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে-না-আনতেই বিদেশ থেকে আগত ব্যক্তিদের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। তাই বাইরে থেকে যারা নতুন এসেছে তাদের কোয়ারেন্টিনে রাখতে চীনের অনেক শহরে কড়া নিয়মকানুন জারি করা হয়েছে। বেইজিং ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সব ফ্লাইট অন্য শহরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখানে তাদের শরীরে ভাইরাস আছে কি না, তা পরীক্ষা করা হচ্ছে।
বন্ধ হচ্ছে সংবাদপত্র : করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে স্থবির হয়ে পড়ছে গোটা বিশ্ব। একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন খাতের ব্যবসা বা সেবা। এবার সে খাতে যুক্ত হচ্ছে সংবাদপত্র। এরই মধ্যে বন্ধ হতে শুরু করেছে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সংবাদপত্র। বন্ধ হয়ে যাওয়া কোনো কোনো পত্রিকা শতবর্ষী। এর মধ্যে অন্যতম অস্ট্রেলিয়ান ভিক্টোরিয়া অঙ্গরাজ্যের বিখ্যাত পত্রিকা দ্য সানরাইজা ডেইলি। গতকাল মঙ্গলবার থেকে বন্ধ হয়ে গেছে পত্রিকাটির মুদ্রণ। পরবর্তী নোটিশ দেয়া না পর্যন্ত বন্ধ থাকবে পত্রিকাটির প্রকাশ।
অস্ট্রেলিয়ার গিপসল্যান্ড অঞ্চলের দুইটি পত্রিকা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। বন্ধ হয়েছে সোয়ান হিলের গার্ডিয়ান নিউজপেপার ও গ্যানাওয়ারা টাইমস। ছাপা হচ্ছে না দ্য গ্রেট সাউদার্ন স্টার ও ইয়ারাম স্ট্যান্ডার্ডও। এর মধ্যে ইয়ারাম স্ট্যান্ডার্ডের বয়স ১৪০ বছর।


আরো সংবাদ



premium cement