০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`


উত্তরা থেকে আগারগাঁও মেট্রোরেল চালু ডিসেম্বরে

উত্তরা থেকে আগারগাঁও মেট্রোরেল চালু হচ্ছে ডিসেম্বরে - ছবি : নয়া দিগন্ত

চলতি বছরই বাংলাদেশের বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী। আর এই শুভক্ষণে আগামী ১৬ ডিসেম্বর প্রথম সেকশন উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল পরীক্ষামূলকভাবে চালু করার পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। আর আগামী ২৩ এপ্রিলে জাপান থেকে মেট্রো ট্রেনের সেটের প্রথম শিপমেন্ট রওয়ানা দেবে। ২৩ এপ্রিল বাংলাদেশে এসে পৌঁছবে।

গত জানুয়ারি পর্যন্ত কাজের সার্বিক গড় অগ্রগতি ৫৬.৯৪ শতাংশ। ১১.৫৮ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে। ২২ হাজার কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের লাইন-৬ অংশটি আগামী ২০২৪ সালে সমাপ্ত হবার কথা। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০.১০ কিলোমিটার যেতে সময় লাগবে সব মিলিয়ে ৩৮ মিনিট বলে মেট্রোরেলের সাথে সংশ্লিষ্টরা জানান।

বুধবার উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকাস্থ মেট্রোরেল মিউজিয়ামের উদ্বোধন এবং ডিপো ও প্রথম স্টেশন পরিদর্শন শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এবং ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।

বাস্তবায়নকারী সংস্থা জানায়, এমআরটি লাইন-৬ এর কাজ মোট ৮টি প্যাকেজে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ে নির্মাণের জন্য নির্ধারিত উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের পূর্ত কাজের অগ্রগতি ৮০.২১ শতাংশ। দ্বিতীয় পর্যায়ে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশের পূর্ত কাজের অগ্রগতি ৫১.২৬ শতাংশ। ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল সিস্টেম এবং রোলিং স্টক (রেল কোচ) ও ডিপো যন্ত্রপাতি সংগ্রহ কাজের সমন্বিত অগ্রগতি ৪৬.৩৩ শতাংশ। তবে প্রধানমন্ত্রীর নিদের্শনা অনুযায়ী মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত এই লাইন বর্ধিত করা হবে। এর জন্য হাউজহোল্ড সার্ভে চলছে। বেসিক ডিজাইনের কাজও শেষ। ডিটেইল ডিজাইনের কাজ ধরা হবে। এই অংশের দৈর্ঘ্য ১.১৬ কিলোমিটার।

উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য হবে সাড়ে ২১ কিলোমিটার। এতে উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১৭টি স্টেশন থাকবে। এর মধ্যে উত্তরা সেন্টার, বিজয় সরণী ও মতিঝিল স্টেশন হবে আইকনিক স্টেশন। বাকিগুলো সাধারণ স্টেশন থাকবে।
জাপানের সহযোগিতায় বাস্তবায়ন হচ্ছে ঢাকার প্রথম মেট্রোরেল। এই রুটে ২৪ সেট ট্রেন চলাচল করবে। প্রত্যেকটি ট্রেনে থাকবে ছয়টি করে কার। যাত্রী নিয়ে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে ছুটবে এ ট্রেন। উভয় দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী বহনের সক্ষমতা থাকবে মেট্রোরেলের।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে আগারগাঁও থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত মেট্রোরেলের অবকাঠামো নির্মাণ শুরু হয়। বর্তমানে এ অংশের পরিসেবা স্থানান্তর, চেক বোরিং, ট্রায়াল ট্রেঞ্চ, টেস্ট পাইল ও স্থায়ী বোর্ড পাইল সম্পন্ন হয়েছে। ১০৬টি পিয়ার কলামের মধ্যে ১০৫টি পিয়ার কলাম সম্পন্ন হয়েছে। ২০৩টি পাইল ক্যাপের মধ্যে ১২৮টি সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে ফার্মগেট স্টেশনের উপ-কাঠামো নির্মাণকাজ চলছে।

আর রেল কোচ ও ডিপো ইকুইপমেন্ট সংগ্রহের কাজ ২০১৭ সালে শুরু হয়। বগি নির্মাণের কাজ ২০১৯ সালের ১৬ এপ্রিল জাপানে শুরু হয়। যাত্রীবাহী কোচ (কার বডি) নির্মাণের কাজ জাপানে শুরু হয়েছে। মেট্রো ট্রেনের মকআপ গত ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯ সালে উত্তরা ডিপোতে এসে পৌঁছেছে। এই ডিপোতে ৩০টি কোচ রাখা যাবে বলে দিয়াবাড়ি ডিপো সংশ্লিষ্টরা জানান।

দ্বিতীয় মেট্রোরেল সেট শিপমেন্ট সম্ভাব্য তারিখ ১৫ এপ্রিল। মোংলা বন্দর হয়ে উত্তরাতে এসে পৌঁছাবে ১৩ জুন। তৃতীয় শিপমেন্ট ১৩ জুন এবং ঢাকায় পৌঁছাবে ১৩ আগস্ট। মেট্রোটেন সেট বাংলাদেশে আসার পর পর্যায়ক্রমে ইন্টেগ্রেটেড টেস্ট শুরু করা হবে। সেটার পরই হবে ট্রায়াল রান।

পরিদর্শন শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আমরা আশা করছি মহান বিজয় দিবসে বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তীতে উত্তরা থেকে আগারগাঁও রুটে মেট্রোরেল চালু করতে পারবো। আমাদের দেশীয় ও বিদেশি এক্সপার্টরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। করোনার মধ্যেও সবাই কাজ করে যাচ্ছেন।

এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, করোনার কারণে কাজের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে। তবে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে আমরা আবার গতি ফিরে পাবো। আমাদের ইচ্ছা ও পরিকল্পনা আছে ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তীতে এই লাইনের উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ট্রায়াল রান শুরু করতে পারবো। আমাদের মেট্রোরেলের ট্রেন (কোচ) জাপান থেকে আগামী ২৩ এপ্রিল দেশে এসে পৌঁছুবে। তবে যেহেতু জাহাজে আসবে তাই সাগর পরিস্থিতির উপর এর পৌঁছানোর সময়টা নির্ভর করছে। এটি হবে আমাদের প্রথম শিপমেন্ট।


আরো সংবাদ



premium cement