২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, ২০ মহররম ১৪৪৬
`

পরিবেশ ও কৃষিজমির ক্ষতি করে প্রকল্প গ্রহণ বন্ধ করতে হবে

জলবায়ু ন্যায্যতা সম্মেলনে ৩৩ দফা প্রস্তাবনা
-


পরিবেশ ও কৃষিজমির ক্ষতি করে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ বন্ধসহ ৩৩ দফা প্রস্তাবনা এসেছে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দুই দিনব্যাপী জলবায়ু ন্যায্যতা সম্মেলন থেকে। এতে বলা হয়, উন্নয়ন পরিকল্পনায় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিতে থাকা জনগণের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে হবে এবং তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করে নবায়ণযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার দ্রুত বৃদ্ধি করার প্রস্তাবনাসহ নানা দাবি তুলে ধরা হয়।

গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সমাবেশ মঞ্চে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রস্তাবনা ও দাবি তুলে ধরা হয়। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন ওয়াটারকিপার্স-বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল। সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক সাংবাদিক নিখিল চন্দ্র ভদ্রের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এশিয়ান পিপলস মুভমেন্ট অন ডেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এপিএমডিডি) সমন্বয়ক লিডি ন্যাকপিল, গ্লোবাল গ্যাস অ্যান্ড ওয়েল নেটওয়ার্কের স্টুয়ার্ট ম্যাক উইলিয়াম, জাপান থেকে আগত প্রতিনিধি মাকিকু আরিমা, ব্রতী সমাজকল্যাণ সংস্থার প্রধান নির্বাহী শারমিন মুরশিদ, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের বেসরকারি উপদেষ্টা এম এস সিদ্দিকী, বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরামের সভাপতি কাওসার রহমান, ইউনাইটেড ন্যাশনস ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের কর্মকর্তা আরাফাত জুবায়ের প্রমুখ।

প্রস্তাবনায় বলা হয়, স্থানীয় বাস্তুসংস্থান ও মানুষের ওপর জীবাশ্ম জ্বালানি ও উন্নয়ন প্রকল্পের নেতিবাচক প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কর্মসংস্থান হারানো ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীকে নতুন কর্মসংস্থান নয়, পূর্বের কর্মসংস্থানে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ধনী দেশগুলো থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ে অন্যান্য দেশগুলোর সাথে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়ন করতে হবে।
প্রস্তাবনায় আরো বলা হয়, সাফারি পার্কের নামে বনাঞ্চল ধ্বংস ও বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত বন্ধ করতে হবে। নদীগুলোকে ক্ষয়, বন্যা, সাইক্লোন ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষায় বিভিন্ন সমাধানমূলক প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসতি থেকে উচ্ছেদের প্রবণতা থেকে বেরিয়ে এসে পাহাড়ি ও সমতলের আদিবাসীদের বাসস্থান ও জীবনধারণের উপকরণের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। যথাযথ পরিবেশগত ও সামাজিক মূল্যায়ন ছাড়াই আগ্রাসী শিল্পায়ন এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন গ্রহণ বন্ধ করতে হবে।

প্রস্তাবনায় শরীফ জামিল বলেন, জলবায়ু সম্মেলন সামনে রেখে আয়োজিত সমাবেশে সারা দেশ থেকে আসা ভুক্তভোগী নানা শ্রেণিপেশার জনগণ সমস্যা ও সঙ্কট চিত্র তুলে ধরেছেন। ওই সব বিষয়ে দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞরা গুরুত্বপূর্ণ মতামত ও পরামর্শ দিয়েছেন। যার ভিত্তিতে প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রস্তাবনাগুলো আগামী জলবায়ু সম্মেলনে তুলে ধরা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে সুলতানা কামাল বলেন, জলবায়ু ন্যায্যতার অভাবে দেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই জলবায়ু ন্যায্যতার দাবি ও ক্ষতিপূরণের দাবি বিষয়টি কোনোভাবেই অনুদানের সাথে সম্পর্কিত কোনো ঐচ্ছিক বিষয় নয়। বরং এটি একটি ন্যায্যঅধিকার। যুগের পর যুগ ধরে ধনী দেশগুলোর অনিয়ন্ত্রিত কার্বন নিঃসরণ ও ভ্রান্ত উন্নয়ন নীতির কারণে আমরা বরাবরই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এ ছাড়াও দেশের ভেতরে পরিবেশ সঙ্কটাপন্ন জায়গাগুলোতে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ এবং দখল-দূষণের কারণে জলবায়ু ঝুঁকি বাড়ছে। এসব জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমস্যা ও সঙ্কট সমাধানে সম্মিলিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে এই সমাবেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এপিএমডিডির লিডি ন্যাকপিল বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বের হয়ে আসা বিষয়টির সাথে রাজনৈতিক সদিচ্ছা গুরুত্বপূর্ণ।
গ্লোবাল গ্যাস অ্যান্ড অয়েল নেটওয়ার্কের স্টুয়ার্ট ম্যাক উইলিয়াম বলেন, জলবায়ু সঙ্কট মূলত, জীবাশ্ম জ্বালানি সঙ্কট, যা মোট বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণের ৯১ ভাগ নিঃসরণের জন্য দায়ী।


আরো সংবাদ



premium cement