যুবসমাজের বিচ্ছিন্নতার আরো গভীর বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন
নাগরিক প্ল্যাটফর্মের ভার্চুয়াল সংলাপ- অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
- ১২ আগস্ট ২০২১, ০০:৩৯
চলমান কোভিড-১৯ অতিমারীর অভিঘাত সব থেকে বেশি পড়েছে দেশের যুবসমাজের ওপরে। এই অভিঘাতের মাত্রাও ভিন্ন ভিন্ন। প্রান্তিক এবং পিছিয়ে পড়া যুবগোষ্ঠীর ওপরে যার মাত্রা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব এবং প্রযুক্তিগত বৈষম্য এই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সর্বোপরি একটি বিযুক্ত বা বিচ্ছিন্ন যুবসমাজে পরিণত করছে। যুবসমাজের এই বিচ্ছিন্নতাবোধ সমাজে নানা অসঙ্গতি তৈরি করছে। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটকে বিবেচনায় নিয়ে যুবসমাজের এই বিচ্ছিন্নতাকে আরো গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।
গতকাল এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ এবং ইউএনডিপি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ‘বাংলাদেশের বিযুক্ত যুবসমাজ : কে, কেন এবং কিভাবে?’ শীর্ষক একটি ভার্চুয়াল সংলাপে বক্তারা কথাগুলো বলেছেন।
সংলাপের শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, বিযুক্ত বা বিচ্ছিন্ন যুবসমাজ নিয়ে এই আলোচনায় চারটি বিষয়কে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করা হয়েছে। ১. ‘বিযুক্ত যুবসমাজ’ একটি অর্থবহ প্রত্যয় কি না? বিযুক্ত, বিচ্ছিন্ন বা অসংযোজিত এই যুবসমাজকে কিভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়; ২. বিযুক্ত বা বিচ্ছিন্ন যুবসমাজের অন্তর্ভুক্ত কারা এবং কেন? ৩. অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিক ব্যবস্থা থেকে তরুণদের বিযুক্ত বা বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণ পর্যালোচনা এবং ৪. গতনুগতিক যুবকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান ও নীতির পাশাপাশি এই বিযুক্ত বা বিচ্ছিন্ন যুবসমাজের জন্য অর্থবহ ও কার্যকর সমাধান অনুসন্ধান। ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরো বলেন, পিছিয়ে পড়া এবং বিযুক্ত যুবদের আলাদা করে দেখতে হবে।
ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি, সুদীপ্ত মুখার্জি সংলাপের প্রারম্ভিক বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, টেকসই খাদ্য উৎপাদন ও আহরণের ক্ষেত্রে যুবদের সামনে এগিয়ে আসতে হবে। করোনা বাস্তবতায় যুবদের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ তিনি তুলে ধরেন। বিশেষ করে তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে যুবদের যদি উন্নয়নের সাথে যুক্ত করতে হয় তাহলে ইন্টারনেটের আওতা আরো বৃদ্ধি করতে হবে। তথ্যের প্রবেশগম্যতার ওপর জোর দিয়ে তিনি মন্তব্য করেন যে, যুবদের কাছে দক্ষতা ও চাকরি সম্পর্কিত সঠিক তথ্য পৌঁছে দিতে হবে।
সংলাপে উন্নয়ন অর্থনীতিবিষয়ক গবেষক মাহা মির্জা বলেন, নীতি পরিকল্পনা ও আলোচনায় দেশের যুবসমাজের জন্য যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে তা মোকাবেলার উদ্যোগ নেই। সব যুবগোষ্ঠীকে সমান গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়নপ্রক্রিয়ায় দেখার আহ্বান জানান তিনি। ট্রান্সজেন্ডার অধিকারকর্মী এবং বৈশাখী টেলিভিশনের সংবাদপাঠিকা তাসনুভা আনান শিশিরও একইভাবে পিছিয়ে পড়া যুবদের বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার কথা বলেন। ট্রান্সজেন্ডার কমিউনিটির জন্য আইন, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য যে প্রয়োজন রয়েছে তার অভাবের কথা উল্লেখ করেন তিনি।
যোশীয় সাংমা চিবল, প্রতিবন্ধী অধিকারকর্মী, ফিজিক্যালি-চ্যালেঞ্জড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (পিডিএফ) বলেন, প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য এখনো সমাজে বিভিন্ন পর্যায়ে বৈষম্য রয়েছে। শিক্ষাব্যবস্থা ও কর্মসংস্থানে প্রতিবন্ধী মানুষদের জন্য বৈষম্য দূর করার জন্য বিশেষভাবে কাজ করতে হবে।
যুবদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে তাদের উন্নয়নের মূল ধারায় এনে অর্থনীতিতে অবদান রাখার সুযোগ দিতে হবে বলে মনে করেন শামীম আহমেদ, নির্বাহী পরিচালক, ইয়ুথ এনগেজমেন্ট ফর সাস্টেনিবিলিটি (ইয়েস), বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে তিনি নীতিগুলো শুধু শহরকেন্দ্রিক না রাখার সুপারিশ দেন। চা শ্রমিকদের প্রতি বৈষম্যের কথা বলে মোহন রবিদাস, চা শ্রমিক অধিকারকর্মী এবং সভাপতি, জাগরণ যুব ফোরাম বলেন, এই গোষ্ঠীর যুবদের শিক্ষা থেকে বিমুখ রাখা হয় এবং চা বাগানের বাইরের পৃথিবী থেকে তারা প্রায় বিযুক্ত তাই তারা নিজেদের কথা তুলে ধরতে পারেন না।
সংলাপ সঞ্চালনা করেন সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক পর্বে কবিতা আবৃত্তি করেন সিপিডির সংলাপ ও প্রচার যুগ্ম পরিচালক, অভ্র ভট্টাচার্য এবং গান পরিবেশন করেন টনি মাইকেল গোমেজ, পরিচালক, টেকনিক্যাল প্রোগ্রাম, অ্যাডভোকেসি ও যোগাযোগ, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ।