২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`
করোনাভাইরাস

ছুটি বাড়লেও ঘরে বসে ঈদ করতে হবে

- ছবি : সংগৃহীত

দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিস্তার ঠেকাতে সরকার সাধারণ ছুটি ৩০ মে পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়ে ঈদের আগে সারাদেশে যাত্রীবাহী সব পরিবহন চলাচলের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সরকারের জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, ঈদে মানুষ যেন ঢাকা থেকে অন্যান্য জেলায় বা এক জেলা থেকে আরেক জেলায় না যায়, সেজন্যই পরিবহনের ওপর এ নিষেধাজ্ঞা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে।

তবে দফায় দফায় সাধারণ ছুটির মেয়াদ বাড়লেও গার্মেন্টস কারখানা এবং অনেক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান চালু করায় মানুষের ভিড়ে সামাজিক দূরত্বসহ স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করতে না পারার অভিযোগ উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে লকডাউন ভেঙে পড়ায় সাধারণ ছুটির মেয়াদ বাড়িয়ে কোন লাভ হচ্ছে কি না-এই প্রশ্নও অনেকে তুলেছেন।

সরকার বলছে, তারা পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করছে। এছাড়া ঈদের সময় মানুষের যানবাহন চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার কথাও সরকার তুলে ধরছে।

দেশে ঈদে সাধারণত মানুষ ঘরমুখো হয়। দেশের মহাসড়কগুলোতে নামে মানুষের ঢল। ঢাকাসহ বড় শহরগুলো থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ গ্রামে ছুটে যান এবং আত্মীয়স্বজনের সাথে সময়টা কাটান।

যুগ যুগ ধরে এই সংস্কৃতি চলে আসছে। কিন্তু এবার তাতে আঘাত হেনেছে করোনাভাইরাস মহামারি।

এখন ১৬ মে পর্যন্ত ছুটি ছিল। সেই সাধারণ ছুটির মেয়াদ ঈদের পরে ৩০ মে পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হলো। একইসাথে ঈদের আগে এবং পরে সাত দিন সারাদেশে সড়ক এবং নৌপথে যাত্রীবাহী সব ধরণের যানবাহন চলাচলের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকছে।

এমনকি ঈদের সময় ব্যক্তিগত যানবাহনও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার কথা বলা হয়েছে। যারা যে শহরে বা জেলায় আছেন, তারা ঈদের সময় অন্য জেলায় বা গ্রামের বাড়িতে যেতে পারবেন না। সেটাই সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, "মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন যে, ৩০ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি বর্ধিত হবে। এবং ঈদ চলাকালীন সময়ে বিশেষ করে ঈদের আগের চারদিন এবং ঈদের পর দুই নিয়ে মোট সাত দিন কাভার্ডভ্যান বা পণ্যবাহী যান এবং জরুরি সেবা ছাড়া মানুষ চলাচলের সব যাবাহন ওপর কঠোরতা অবলম্বন করা হবে। যে যেখানে আছে, সেখানে থেকেই ঈদ উদযাপন করবে।"

"আমরা দেখতে পাচ্ছি, প্রাইভেট কার বা অনেক ব্যক্তিগত গাড়ি রাস্তায় বের হচ্ছে, শহরগুলোতে এগুলোও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে।"

গত ২৬ মার্চ প্রথম সাধারণ ছুটি দেয়া হয়েছিল। কয়েক দফায় এর মেয়াদ বাড়ানোর ফলে এখন ৩০ মে পর্যন্ত দুই মাস ছুটি হচ্ছে। তবে এর আগেই সাধারণ ছুটি অনেক ক্ষেত্রে শিথিল করে গার্মেন্টস কারখানা এবং দোকানসহ নানা ধরণের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান চালু করা হয়েছে।

ঢাকাসহ সারাদেশেই দোকান বা মার্কেটে মানুষের ভিড় বাড়ছে। এই কর্মকান্ডে স্বাস্থ্যবিধি মানা কতটা সম্ভব হচ্ছে-তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

ঢাকায় দোকান মালিকদের সমিতির পক্ষ থেকেই বলা হয়েছে, সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করা এবং স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মানা সম্ভব হচ্ছে না।

অর্থনীতি নিয়ে কাজ করে, এমন গবেষণা সংস্থাগুলো বলেছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকির সাথে একইভাবে নিম্নআয়ের ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবিকা বা পেটের তাগিদকে বিবেচনা করতে হবে।

বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, নিম্ন আয়ের বা দরিদ্র মানুষের বসবাসের জায়গায় এবং এমনকি বস্তিগুলোতে ঘরের উপরে ঘরে ঘিঞ্জি পরিবেশ, ফলে তাদের থাকার জায়গাতেই সামাজিক দূরত্ব মানা সম্ভব হয় না। তারা করোনাভাইরাসের ঝুঁকির মধ্যেই আছেন। এরপর তাদের অনাহারে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া ঠিক হবে না। এমন যুক্তি দিয়ে বিশ্লেষকদের অনেকে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সীমিত পরিসরে চালু রাখার পক্ষে অবস্থান তুলে ধরেন।

এমন বক্তব্যে সাথে সরকারের নীতিনির্ধারকদেরও কেউ কেউ একমত পোষণ করেন।

অবশ্য বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, সামাজিক দূরত্ব সহ স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয় নিশ্চিত করার পরই পরিকল্পনা করে ধাপে ধাপে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু করা উচিত ছিল।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে, কিন্তু দরিদ্র মানুষকে বাঁচাতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সীমিত পরিসরে অব্যাহত রাখা ছাড়া বিকল্প নেই।

সিনিয়র মন্ত্রী ড: আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, "দারিদ্রসীমার নিচে এখনও ২০ ভাগ মানুষ। অতি দরিদ্র প্রায় নয় ভাগ মানুষ। এই পরিপ্রেক্ষিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ একদিকে বাড়ছে এবং মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হযে পড়েছে। অন্যদিকে বিপুল সংখ্যক মানুষের জীবিকার প্রশ্ন। সরকারের জন্য উভয় সংকট। কতদিন আর এভাবে চালিয়ে নেয়া যাবে।"

তিনি আরও বলেছেন, "সার্বিক দিক বিবেচনা করে ন্যূনতম পর্যায়ে মানুষের কর্মকাণ্ডকে চলমান রাখা হচ্ছে। এভাবেই সরকার চালানোর চেষ্টা করবে। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে তাতে কড়াকড়ি করা হবে।"

একইসাথে তিনি জানিয়েছেন, পরিস্থিতি এবং সংক্রমণের গতি নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বিশ্লেষণ করছেন এবং সেই বিশ্লেষণের ভিত্তিতে প্রয়োজন হলে লকডাউন আবারো কঠোর করার চিন্তাও সরকারের রয়েছে।

এদিকে, সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড: এস এম আলমগীর বলেছেন, "গত তিন চার দিনে করোনাভাইরাস সংক্রমণ হাজার ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এটা বাড়ছেই। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সংক্রমণ কিন্তু বাড়বেই। এনিয়ে বিশ্লেষণ এবং আমাদের উদ্বেগ আমরা নিয়মিত সরকারের কাছে তুলে ধরছি।" বিবিসি।


আরো সংবাদ



premium cement
‘প্রত্যেককে কোরআনের অনুশাসন যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে’ মতলব উত্তরে পানিতে ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের শেষ ধাপের পরীক্ষা শুক্রবার লম্বা ঈদের ছুটিতে কতজন ঢাকা ছাড়তে চান, কতজন পারবেন? সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করলেন ভুটানের রাজা জাতীয় দলে যোগ দিয়েছেন সাকিব, বললেন কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই কারওয়ান বাজার থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয় এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন : প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি আহসান উল্লাহ ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বিবৃতি আনোয়ারায় বর্তমান স্বামীর হাতে সাবেক স্বামী খুন, গ্রেফতার ৩

সকল