১৭ মে ২০২৪, ০৩ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলকদ ১৪৪৫
`


এসআই আকবরকে ধরতে সকল ইমিগ্রেশনে পিবিআই’র চিঠি

এসআই আকবরকে ধরতে সকল ইমিগ্রেশনে পিবিআই’র চিঠি - সংগৃহীত

সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশি নির্যাতনে নিহত রায়হান আহমদের দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত শেষে আবারো তার লাশ দাফন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে তার দাফন সম্পন্ন হয়। এর আগে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) একটি দল আখালিয়াস্থ এলাকার নবাবী মসজিদের পঞ্চায়েতি গোরস্থান থেকে রায়হানের লাশ ওঠানোর কাজ শুরু করেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর সকাল ১১টার দিকে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সজিব আহমেদ ও মেজবাহ উদ্দিনের উপস্থিতিতে লাশ ওঠানোর পর পুলিশ পাহারায় পুনরায় ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মেডিক্যাল বোর্ড গঠনের পর দ্বিতীয়বার লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়। নিহত রায়হান সিলেট নগরীর আখালিয়ার নেহারিপাড়ার রফিকুল ইসলামের ছেলে। তার তিন মাস বয়সী এক মেয়ে রয়েছে। নগরীর রিকাবিবাজার স্টেডিয়াম মার্কেটে এক চিকিৎসকের চেম্বারে কাজ করতেন তিনি।

হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে সড়ক অবরোধ
নগরীর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনের ফলে নিহত যুবক রায়হান আহমদের হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে বৃহস্পতিবার বিকেলে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করেন স্থানীয়রা। এসময় সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার পুলিশ তাদের রাস্তা থেকে সরাতে গেলে পুলিশের দিকে ধাওয়া করেন উত্তেজিত জনতা।

জানা যায়, রায়হানের পরিবারের সদস্য, স্বজন ও স্থানীয়রা সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের আখালিয়া এলাকায় রায়হানের বাড়ির সামনে বিকেলে রাস্তা অবরোধ করেন এবং টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এসময় রস্তার দু’পাশে শত শত গাড়ি আটকা পড়ে। খবর পেয়ে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে কোতোয়ালি থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষোভকারীদের রাস্তা থেকে সরাতে চেষ্টা করে। এসময় উত্তেজিত জনতা পুলিশের দিকে ধাওয়া ও জুতা নিক্ষেপ করেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত স্থানীয় জনতা রস্তায় গাড়ি আটকে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন এবং হত্যাকারীদের গ্রেফতারের আশ্বাস দিয়ে পুলিশ তাদের রাস্তা থেকে সরাতে চেষ্টা করছে। তবে বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন, অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত তারা রাস্তা ছাড়বেন না।

এসআই আকবরকে ধরতে সকল ইমিগ্রেশনে পিবিআই’র চিঠি
সিলেট কোতোয়ালি থানার বন্দরবাজার ফাঁড়িতে রায়হান আহমদের (৩০) মৃত্যুর ঘটনার তদন্তের স্বার্থে ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে প্রয়োজন বলে জানিয়েছে ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার। তিনি বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত পিবিআই’র প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন।
ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, আকবর যেন কোনোভাবেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে না পারে সে তথ্য সব ইমিগ্রেশনে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও সীমান্তের বিভিন্ন ইমিগ্রেশন সেন্টারে জানানো হয়েছে। তাকে ধরার জন্য আমরা টিম রেডি করেছি, তাকে আমাদের খুবই প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ‘সিলেটের ঘটনার ডকেট (নথিপত্র) আমরা গত পরশুদিন রাতে পেয়েছি। ঘটনাস্থলে সিলেটের পিবিআই টিম তিন থেকে চার ঘণ্টা ছিল বৃহস্পতিবার। আমরা তদন্ত শুরু করে দিয়েছি, তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে মনে হয়েছে, সাময়িক বরখাস্ত হওয়া উপ-পরিদর্শক আকবরকে আমাদের প্রয়োজন।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের আইজিপি স্যার সব সময় বলেন, করোনার মধ্যে তোমরা যে সুনাম কামিয়েছো, এ সুনাম নষ্ট করো না। আকবর যেহেতু এই অপকর্ম করে বাহিনীর সুনাম নষ্ট করেছে এবং আমাদের কথা চিন্তা করেনি। সুতরাং তার বিষয়ে আমাদেরও চিন্তা করার সুযোগ নেই।’

১০ হাজার টাকার কারণেই কী এ ঘটনা ঘটেছে এমন প্রশ্নের জবাবে ডিআইজি বলেন, ‘আমরা বিষয়গুলো তদন্ত করে দেখছি। একদিনে তো সব কিছু বলা যাবে না।’

উল্লেখ্য, গত রোববার সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রায়হান উদ্দিন (৩০) নামের এক যুবককে গুরুতর আহতাবস্থায় ভর্তি করেন বন্দরবাজার ফাঁড়ির এএসআই আশেক এলাহী। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭টা ৫০ মিনিটে রায়হান হাসপাতালে মারা যান। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। হাতের নখও উপড়ানো ছিল। রায়হানের মৃত্যুর পর পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, তিনি ছিনতাইকারী ছিলেন। নগরীর কাস্টঘর এলাকায় ছিনতাই করতে গিয়ে গণপিটুনিতে তার মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু তার পরিবার পুলিশের অভিযোগ অস্বীকার করে ফাঁড়িতে আটকে রেখে নির্যাতনে হত্যার অভিযোগ তুলেন। এরপর পুলিশের পক্ষ থেকে আগের অবস্থান থেকে সরে এসে ঘটনাটি সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাস দেয়া হয়। এ ঘটনায় রোববার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে সিলেটের কোতোয়ালি থানায় আসামিদের অজ্ঞাত রেখে মামলা করেন নিহতের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি। পরদিন রায়হানের মৃত্যুর ঘটনায় সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (উত্তর) শাহরিয়ার আল মামুনকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে এসএমপি। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ হেফাজতে রায়হান উদ্দিনের মৃত্যু ও নির্যাতনের প্রাথমিক সত্যতাও পায় তদন্ত কমিটি। পরে সোমবার বিকেলে ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূইয়াসহ চার পুলিশকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিন পুলিশকে প্রত্যাহার করা হয়।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মানববন্ধন
সিলেটে পুলিশী নির্যাতনে র্নির্মমভাবে নিহত রায়হান হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিসহ দেশব্যাপী দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, ধর্ষণ, গুম ও খুনের প্রতিবাদে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ সিলেট মহানগরের উদ্যোগে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, রায়হান হত্যাকারীদের গ্রেফতার নিয়ে প্রশাসনের লুকোচুরি সিলেটের জনগণ মেনে নেবে না। সিলেটের মানুষ সবসময় সত্য, সুন্দর ও ন্যায়ের প্রত্যাশী। তাই শুধু রায়হান হত্যা নয়, এমসি কলেজের গণধর্ষণ মামলার সকল আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি সমগ্র সিলেটবাসীর প্রাণের দাবি।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও সিলেট মহানগরীর সভাপতি মাওলানা আব্দুল মালিক চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও মহানগরীর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক সরকারের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ সিলেট জেলা সভাপতি শায়খুল হাদীস আল্লামা আব্দুল মতিন ধনপুরী, মহানগর সিনিয়র সহ-সভাপতি প্রিন্সিপাল মাওলানা মাহমুদুল হাসান, সিলেট জেলা জমিয়তের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুস সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মুতাহির আলী, মহানগর যুগ্ম সম্পাদক মাওলানা খায়রুজ্জামান, যুব জমিয়তের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি হাফিজ মাহমুদুল হাসান, মহানগর যুব জমিয়তের আহবায়ক মুফতি জাকারিয়া মাহমুদ প্রমুখ।


আরো সংবাদ



premium cement