২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

আরবি ভাষার বিশ্বনন্দিত বাংলাদেশী স্কলার

- ছবি : সংগৃহীত

চৌদ্দশ’ বছর আগে বাংলা ভূখণ্ডের সাথে আরবদের যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছিল। আরবের বণিক-কাফেলা বাণিজ্যসম্ভার নিয়ে সাগরপথে ভারতের মালাবার (কেরালা) হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসতেন এবং সেখান থেকে মিয়ানমার, মালয়, জাভা, সুমাত্রা অতিক্রম করে সুদূর চীন পর্যন্ত যেতেন। সম্প্রতি লালমনিরহাটে মাটির ঢিবি থেকে আবিষ্কৃত হিজরি প্রথম শতাব্দীতে নির্মিত মসজিদ এর প্রমাণ বহন করছে। ৬৯ হিজরিতে (৬৪৮ খ্রি:) বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবু ওয়াক্কাস রা: এই মসজিদ নির্মাণ করেন বলে ইতিহাসবিদদের অভিমত। হাবশা (ইথিওপিয়া) থেকে চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে তিনি চীন গমন করেন। সে দেশের গুয়াংজুতে বা ক্যান্টনে তার সমাধি রয়েছে। বাণিজ্য ও ধর্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে আরবরা বাংলায় আগমন করে অনেকে বিয়েশাদি করে এখানে স্থায়ী হয়ে যান। এখনো বাংলাদেশের জনগণের নামের আগে যে শেখ ও সাইয়েদ লেখা হয়, তাদের আরবদের বংশজাত মনে করা হয়। আরবদের উদার দৃষ্টিভঙ্গি ও চারিত্রিক উৎকর্ষে বাংলায় দলে দলে মানুষ ইসলাম গ্রহণ করতে থাকে। ধীরে ধীরে বাংলার মানুষের মধ্যে আরব সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও ভাষা প্রবিষ্ট ও বিকশিত হয়। গবেষকদের মতে, বাংলা ভাষায় ১০ হাজারের অধিক আরবি-ফারসি শব্দ বিদ্যমান। অভিধানের অন্তর্ভুক্ত বাংলায় শব্দসংখ্যা আড়াই লাখের মতো। মোট শব্দসংখ্যা আরো অনেক বেশি।

পরে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় প্রয়োজনে আরবি ভাষাচর্চা শুরু হয় এ দেশে এবং আরবি শেখার জন্য প্রচুর শিক্ষা কেন্দ্র গড়ে ওঠে, যা মাদরাসা নামে সমধিক পরিচিত। এর সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। এর মধ্যে আলিয়া ও কওমি ধারা অন্তর্ভুক্ত। এসব মাদরাসায় শিক্ষার্থী সংখ্যা ৫০ লাখেরও বেশি। ইসলাম ধর্ম ও আরবি ভাষা পরস্পর অবিচ্ছিন্ন। আরবি ভাষার সাথে মাদরাসায় পড়ুয়াদের একটি গভীর ও নিবিড় সংযোগ বিদ্যমান; কারণ পবিত্র কুরআন, হাদিস, ফিকহে ইসলামী, আকায়েদ, সিরাতে রাসূল সা:-এর মূল টেক্সট এবং এগুলোর ব্যাখ্যাগ্রন্থ সব আরবি ভাষায়। বিজ্ঞ আলিম হওয়ার জন্য আরবি ভাষায় পারঙ্গমতা অপরিহার্য পূর্বশর্ত। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বতন্ত্র আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ রয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আরবি ভাষা বিভাগ রয়েছে দু’টিতে। চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে আধুনিক আরবি ভাষার কোর্স চালু আছে। আলিয়া মাদরাসায় আরবি ভাষা ও সাহিত্যের ওপর দুই বছরের কামিল কোর্স চালু রয়েছে। বাংলাদেশের প্রায় সব কওমি মাদরাসায় এক বা দুই বছরব্যাপী রয়েছে উচ্চতর আরবি ভাষা ও সাহিত্য কোর্স। এর বাইরে কেবল আরবি ভাষা ও সাহিত্য শেখানোর জন্যও একাডেমি গড়ে উঠেছে। কওমি, আলিয়া, বিশ্ববিদ্যালয় ও আরবি ভাষা ইনস্টিটিউটগুলোতে প্রচুর এমন বিজ্ঞ শিক্ষক রয়েছেন যারা আরব দেশের বিশেষত মিসর, সৌদি আরব, কুয়েত, সুদান ও কাতার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি প্রাপ্ত। তারা নানা বিষয়ে অভিসন্দর্ভ রচনা করে থাকেন। দেশে ও দেশের বাইরে যারা আরবি ভাষায় থিসিস রচনা করেন, এগুলো ছাপার ব্যবস্থা করা গেলে জ্ঞান গবেষণার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতো।

বাংলাদেশে আলিম, ওলামা, মুহাদ্দিস, মুফতি, ইসলামিক স্কলারদের সৃজনশীল মেধা, দাওয়াতি ও শিক্ষা কার্যক্রম সম্পর্কে আরব বিশ্বের পণ্ডিতদের ধারণা নেই বললেই চলে। তারা যখন বাংলাদেশে আসেন এ দেশের মাদরাসা, মুসলমান, আলিম-ওলামার খিদমত দেখে অভিভূত হয়ে পড়েন। বাংলাভাষী আলিম স্কলারদের জীবনী নিয়ে আরবিতে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ রচিত না হওয়ায় এ ক্ষেত্রে একটি গ্যাপ সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ ও উপমহাদেশের আলিম, ওলামা ও মাশায়েখদের মেধা, জীবন, কর্ম, অবদান ও সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে পৃথিবীবাসীকে জ্ঞাত করার উদ্দেশ্যে ঢাকার জামিয়া রহমানিয়ার সিনিয়র মুহাদ্দিস ও প্রধান মুফতি আল্লামা হিফজুর রহমান (হাফি:) আরবি ভাষায় কলম ধরেছেন। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি আরবিচর্চা করে চলেছেন। করাচির নিউ টাউন মাদরাসায় তাখাসসুস কোর্স করার সময় আল্লামা রশিদ আহমদ নুমানির তত্ত¡াবধানে ইসলামী আইনগ্রন্থ ‘হেদায়া’-এর ভূমিকা লেখেন আরবি ভাষায় যা পরবর্তীতে ‘মা ইয়ামবাগি বিহিল ইনায়া, লিমান ইতালিউল হেদায়া’ নামে প্রকাশিত হয়। এরই মধ্যে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে বাংলা ও আরবিতে ৭০টি গ্রন্থ রচনা করেন। এর মধ্যে ১৯টি আরবি ভাষায়। ১০ বছর পরিশ্রম করে তিনি আরবি ভাষায় ২৩ খণ্ডের প্রামাণ্য জীবনী বিশ্বকোষ তৈরি করেছেন। কায়রোর ‘দারুস সালিহ’ প্রকাশনী থেকে ‘আল বুদুরুল মুজিয়্যাহ ফি তারাজিমিল হানাফিয়্যাহ’ নামে এটি প্রকাশ পেয়েছে। এই বিশ্বকোষ ইমাম আবু হানিফা রহ: থেকে একবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত হানাফি মাজহাবের ইমাম, মুজতাহিদ, ফকিহ ও মুহাদ্দিসগণের জীবন ও কর্মসাধনার নির্ভরযোগ্য দলিল। বাংলাদেশের বহু ওলামা-মাশায়েখের বর্ণাঢ্য জীবনসাধনা ও অবদান এতে স্থান পেয়েছে। মিসরে আন্তর্জাতিক গ্রন্থমেলায় এই বিশ্বকোষ পাঠকমহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে বিশেষত আরব রাষ্ট্রগুলোতে বাংলাভাষী ওলামায়ে কেরামের পরিচয় তুলে ধরার ক্ষেত্রে তার অবদান ও কৃতিত্ব অসামান্য। ফিকহি পরিভাষার ওপর তার চার খণ্ডের আরেকটি গবেষণাগ্রন্থ পাঠকসমাদৃত হয়েছে। প্রতি খণ্ডে রয়েছে প্রায় ৫০০ পৃষ্ঠা। যারা হাদিস ও ফিকহের ওপর বিশেষ কোর্স করে থাকেন, তাদের জন্য এটি একটি আকরগ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত।

আল্লামা মুফতি হিফজুর রহমান বাংলাভাষী দুই হাজার কীর্তিমান মনীষীর জীবন, কর্ম, সাধনা ও অবদান নিয়ে জীবনীকোষ তৈরি করেন আরবি ভাষায়। ২০২০ সালে আট খণ্ডে এটি প্রকাশিত হয়। গ্রন্থটিতে স্থান পেয়েছে বাংলাভাষী ২১৮৩ জন মনীষীর অমূল্য জীবন কথা। প্রায় চার হাজার পৃষ্ঠার যুগান্তকারী এই গ্রন্থের নাম ‘আল ইয়াওয়াকিতু ওয়াল জাওয়াহের ফি তারাজিমি নুবালা-ই বাঙাল ওয়াল আকাবির’। সুদীর্ঘ ছয় বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমে রচিত হয় এ জীবনীকোষ। গ্রন্থটিতে অভিমত দিয়েছেন মিসরের বিশিষ্ট ফকিহ ও আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শায়খ মুহাম্মদ বিন জামালুদ্দিন আস-সুয়ূতি, দারুল উলুম দেওবন্দের বিশিষ্ট মুহাদ্দিস আল্লামা নেয়ামাতুল্লাহ আজমি ও আল্লামা হাবিবুর রহমান আজমি (মুহাম্মদ আল আমিন, আওয়ার ইসলাম, ঢাকা, ডিসেম্বর ০২, ২০২০)।

স্মর্তব্য, অন্যান্য বহুল প্রচলিত ভাষার মতোই আরবি একটি আন্তর্জাতিক ভাষা। পৃথিবীর প্রায় ৩০ কোটি মানুষ এই ভাষায় কথা বলে। মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার প্রায় ২৫টি দেশের রাষ্ট্রভাষা আরবি। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় ও আত্মার সম্পর্ক রয়েছে আরবি ভাষার সাথে। বহু আগে থেকেই বাংলাদেশী আলেমরা আরবি ভাষায় গ্রন্থ রচনা করে আসছেন। লেখকদের মধ্যে মুফতি দ্বীন মুহাম্মদ, ওলি আহমদ নিজামপুরী, আবদুল আওয়াল জৌনপুরী, আলাউদ্দিন আল-আজহারি, আবদুল ওয়াহিদ সালাফি, তাজাম্মুল হোসাইন, আবদুল্লাহিল কাফি প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। একবিংশ শতাব্দীতে যেসব বাংলাদেশী আলিম আরবি ভাষায় পাঠ্যপুস্তক, ভাষ্যগ্রন্থ ও সাহিত্য রচনা করে খ্যাতি অর্জন করেছেন তাদের মধ্যে আল্লামা সুলতান যওক নদভি, আল্লামা মাহমুদুল হাসান যাত্রাবাড়ী, আল্লামা আবদুল হালিম বোখারি, আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী, মাওলানা শহিদুল্লাহ ফজলুল বারি, মাওলানা নাসিম আরাফাত, ড. মুহাম্মদ ফজলুর রহমান, মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ, মাওলানা মুফতি আবদুল মালেক, মাওলানা ছফিউল্লাহ ফুয়াদ, মাওলানা আরিফুদ্দিন আল মারুফ, মাওলানা মুফতি হারুন উল্লেখযোগ্য।

চট্টগ্রাম দারুল মাআরিফের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক আল্লামা সুলতান যওক নদভি আরবি ভাষা ও সাহিত্যের এক প্রবাদ পুরুষ। তার লিখিত আরবি ব্যাকরণ, রচনালিখন ও সাহিত্যবিষয়ক বহু গ্রন্থ কওমি মাদরাসা বোর্ডে পাঠ্যতালিকাভুক্ত। তার ভাষা প্রাঞ্জল ও সাবলীল। ‘আস সুবহুল জাদিদ’ নামে একটি আরবি জার্নাল তার সম্পদনায় বের হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের সাবেক প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ফজলুর রহমান লিখিত আরবি-বাংলা-আরবি অভিধান, আরবি-বাংলা ব্যবহারিক অভিধান এবং দৈনন্দিন আরবি কথোপকথন গ্রন্থগুলো ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। রবীন্দ্রচর্চা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের প্রফেসর ড. জুবায়ের এহসান হকের একটি আরবি নিবন্ধ ইন্দোনেশিয়া থেকে প্রকাশিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আরশাদ আল হাসান কর্তৃক ‘হাজ্জাজ ইবন ইউসুফের অভিভাষণে আরবি সাহিত্যের উৎকর্ষ’ নিয়ে আরবিতে একটি গ্রন্থ ছাপা হয়েছে জার্মানি থেকে।

ফিকাহশাস্ত্রের সূত্রাবলি ও মূলনীতি সম্পর্কে চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদ সদস্য প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নিজামুদ্দিন নদভির ৩০৮ পৃষ্ঠার একটি অনবদ্য গবেষণাকর্ম ‘আল কাওয়ায়িদুল ফিকহিয়্যাহ ওয়াল উসুলিয়্যাহ ফি দুয়িল আহাদিসিন নাবাভিয়্যাহ’। গ্রন্থটির প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয় কুয়েত আওকাফ অ্যান্ড ইসলামিক অ্যাফেয়ার্স অধিদফতর থেকে। দ্বিতীয় সংস্করণে কুয়েত বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিয়াহ ফ্যাকাল্টির ডিন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবদুল গাফফার আশ-শরিফ, নদওয়াতুল উলামা লক্ষৌর আইন ও ফতোয়া বিভাগের চেয়ারম্যান আল্লামা মুফতি জহুর আহমদ নদভি, জামিয়া সাইয়েদ আহমদ শহীদের প্রধান পরিচালক আল্লামা সালমান হোসাইনি নদভি গ্রন্থটি সম্পর্কে চমৎকার অভিমত লিখেছেন (ড. মুহাম্মদ শফিউল্লাহ কুতুবি, সহকারী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়)।

আল্লামা সুলতান যওক নদভি ও হাসানুজ্জামান জালালুদ্দিন কর্তৃক জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবন ও কাব্যচর্চা নিয়ে লিখিত আরবি নিবন্ধ আরব দেশের জার্নালে ছাপা হয়েছে। চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের চেয়ারম্যান ড. নাজমুল হক নদভি কবি ফররুখ আহমদের কবিতায় ইসলামী জাগরণের উপজীব্য নিয়ে গবেষণা নিবন্ধ রচনা করেন। এটি প্রকাশিত হয় সৌদি আরবের গবেষণা পোর্টাল ‘আলুকাহ’-তে। বিশিষ্ট স্কলার মাওলানা ওবায়দুল্লাহ হামজার সম্পাদনায় পটিয়া জামিয়া ইসলামিয়া থেকে নিয়মিত বের হচ্ছে ত্রৈমাসিক সাহিত্য পত্রিকা ‘বালাগুশ শারক’। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের প্রফেসর ড. নুরুল আমিন নুরী কর্তৃক ‘হজরত আয়েশা রা:-এর তাফসির ও ফিকাহ গবেষণার পদ্ধতি’ বিষয়ে লিখিত আরবি অভিসন্দর্ভ বৈরুত থেকে প্রকাশিত হয়েছে গ্রন্থাকারে। সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা ড. সাদিক হোসেনের রচিত আটটি আরবি নিবন্ধ ভারতের নদওয়ার ‘আল বাআছুল ইসলামী’, রিয়াদের ‘রাবিতাতুল আদব’ ও মরক্কোর ‘আল-মিশকাত’ জার্নালে বেরিয়েছে। আয়েশা সিদ্দিকা আল আতিয়্যা নামের এক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী কাতার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘চাটগাঁইয়া বাক্যগঠনে আরবি শব্দের প্রয়োগ’ শিরোনামে আরবিতে থিসিস রচনা করে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন।

নবীনদের মধ্যে, লন্ডনে বসবাসকারি মাওলানা মাহফুজ আহমদ সিলেটির লিখিত মাহাসিনুল বালাগাহ, আল ফাওয়ায়িদুল মুনতাকা, রিসালাহ ফি তাহকিকিল হিদায়া, মুছান্নাফাত শায়খুল ইসলাম ইবন হাজার, আল-মাদখাল ইলা কিতাবিল হেদায়া নামক গ্রন্থগুলো জর্দান, মরক্কো ও লেবাননের বৈরুত থেকে প্রকাশিত হয়। লন্ডনে বসবাসকারী আরেক স্কলারের নাম ড. মাহমুদুল হাসান আল-আজহারি। তার লিখিত আরবিগ্রন্থগুলো বেশ সুখপাঠ্য। কুয়েত বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবেষণারত বাংলাদেশী শিক্ষার্থী হোসাইন মুহাম্মদ নাঈমুল হক কর্তৃক রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে রচিত একটি উপন্যাস ‘নাফ নদীর দুই তীরে’ বৈরুত থেকে প্রকাশিত হয়েছে। আরবি নাম ‘ফি দাফফতায় নাহার নাফ’। সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভি লিখিত বিখ্যাত গ্রন্থ ‘পা’জা সুরাগে জিন্দেগি’ উর্দু থেকে আরবিতে ভাষান্তরিত করেন তিনি। নাম দিয়েছেন ‘মাআলিমু ফি তরিকিল ইলম’। এটাও বৈরুত থেকে প্রকাশিত হয়। অর্থনৈতিক লেনদেনের ওপর তার আরেকটি গ্রন্থ কুয়েত ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশ পেতে যাচ্ছে। রিয়াদের কিং সউদ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত মিজান হারুনের লিখিত ইসলামী পণ্ডিতদের জীবনীবিষয়ক দু’টি গ্রন্থ বাংলাদেশ থেকে বেরিয়েছে। এগুলোর নাম ‘উলাইকা আবাউনা’ ও রিজালুন ছানাউত তারিখ’। কুয়েত বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত আবু তালেব লিখিত ‘জমজমের পানি’ ও ‘ফিলিস্তিন সঙ্কট’ নিয়ে দু’টি আরবি গ্রন্থ বেরিয়েছে বাংলাদেশ থেকে। চট্টগ্রাম মারকায আল আফনানের পরিচালক মাওলানা মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ লিখিত ‘মু’জাম আল আফআল আল মুতাআদ্দিয়া বিল হুরুফ ফিল কুরআন আল কারিম’ নামের একটি গ্রন্থের ছাপার কাজ চলছে। তার সম্পাদনায় ‘আন-নূর’ নামে একটি আরবি সাহিত্য সাময়িকী বিগত ছয় বছর ধরে প্রকাশিত হয়ে আসছে। মাওলানা মুহিউদ্দিন ফারুকি আধুনিক আরবি ভাষা শেখানোর জন্য ঢাকার মুহাম্মদপুরে প্রতিষ্ঠা করেন মারকাযুল লুগাতিল আরাবিয়া বাংলাদেশ। শিক্ষার্থীদের জন্য তিনটি আরবি পাঠ্যপুস্তক রচনা করেছেন তিনি।

ইসলামী চিন্তাধারার বাংলাভাষী কবি, লেখক ও সাহিত্যিকদের রচনাকর্মের দু-চারটি প্রবন্ধ পাওয়া গেলেও তাদের পূর্ণগ্রন্থ আরবিতে অনূদিত হয়নি। কবিদের মধ্যে বিশেষত নজরুল, ফররুখ, আল মাহমুদ, ইসমাইল হোসেন সিরাজি, বে-নজির আহমদ ও গোলাম মোস্তফার সাহিত্যকর্ম আরবিতে তরজমা হওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। অথচ তসলিমা নাসরিন নিয়ে আরবিতে গ্রন্থ বেরিয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ২০টির মতো উপন্যাস, ছোটগল্প ও কবিতাগ্রন্থ আরবিতে প্রকাশিত হয়েছে বৈরুত ও কায়রো থেকে।

‘গীতাঞ্জলি’ আরবিতে অনুবাদ করা হয়ে গেছে বহু আগে। নাম দেয়া হয়েছে ‘কুরবান আল-আঘানী’, রবি ঠাকুরের ‘শেষের চিঠি’র অনূদিত গ্রন্থের নাম ‘আল-কাছিদা আল-আখিরা’ এবং ‘রক্তকরবী’র আরবি গ্রন্থ ‘আল-জানাবিক আল-হুমর’। রবীন্দ্রনাথ নিয়ে বহু ওয়েবসাইট রয়েছে আরবিতে। ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জওয়াহের লাল নেহরুর Glimpses of World History আরবিতে ভাষান্তরিত হয়েছে ৫০ বছর আগে, যার নাম ‘লামহাতুন মিন তারিখিল আলম’। বাংলাদেশের আদর্শিক লেখকদের কীর্তিময় সাহিত্য, কবিতা, ছোটগল্প অনুবাদ করে আরব দেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। এই শূন্যতা পূরণ ও দায়িত্ব পালনে আরবি ভাষায় পারঙ্গম নবীন আলিমদের এগিয়ে আসতে হবে।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও গবেষক
drkhalid09@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement
লম্বা ঈদের ছুটিতে কতজন ঢাকা ছাড়তে চান, কতজন পারবেন? সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করলেন ভুটানের রাজা জাতীয় দলে যোগ দিয়েছেন সাকিব, বললেন কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই কারওয়ান বাজার থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয় এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন : প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি আহসান উল্লাহ ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বিবৃতি আনোয়ারায় বর্তমান স্বামীর হাতে সাবেক স্বামী খুন, গ্রেফতার ৩ ফতুল্লা প্রেস ক্লাবের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত বদরের শিক্ষায় ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : সেলিম উদ্দিন ইসলামের বিজয়ই বদরের মূল চেতনা : ছাত্রশিবির

সকল