২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় বিশ্ব ইজতেমা

ইজতেমায় মুসল্লি উপচেপড়া ট্রেনে আন্তর্জাতিক মিডিয়ার আকর্ষণ
ইজতেমায় মুসল্লি উপচেপড়া ট্রেনে আন্তর্জাতিক মিডিয়ার আকর্ষণ - ছবি : সংগৃহীত

বিশ্বের অসংখ্য মুসলিম যখন জালিমের অত্যাচারে নিমজ্জিত, তাদের রক্ত ঝরিয়ে বিধর্মী জালিমরা যখন উন্মত্ত, ঠিক তখন-ই বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের অদূরে জীর্ণ পরিবেশের একটি ময়দান থেকে শান্তির আহ্বান। মিসরের আরবি সংবাদমাধ্যম মিসরাবি বিগত সময়ের ইজতেমার একটি জুমার নামাজ প্রসঙ্গে এমনটাই বলছে। পত্রিকাটির ভাষায়- ‘গতকাল হাজার হাজার মুসলমান বাংলাদেশে তুরাগ তীরে একত্রে নামাজ আদায় করেছেন। আর নামাজ পরবর্তী দোয়ায় বিশ্বের শান্তি, সমৃদ্ধি এবং রক্তপাত বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে।’

সংবাদমাধ্যমটি এটিকে ‘বিশ্ব ইজতেমা’ আখ্যায়িত করেছে। তিন দিনব্যাপী ইজতেমার আখেরি মোনাজাত প্রসঙ্গে বলেছে, ‘ওই দোয়ায় অসংখ্য মুসল্লির চোখ অশ্রুসিক্ত ছিল। ইমামের সাথে সম্মিলিত দোয়ার আবেগপূর্ণ এ পরিস্থিতিতে মুসল্লিরা বিশ্বের কল্যাণের জন্য প্রার্থনা করেছেন। দোয়ায় তারা বলেছেন- হে আমাদের প্রতিপালক, আপনি বিশ্ব মুসলিম উম্মাহকে রক্ষা করুন, তাদের ওপর আপনার বরকত নাজিল করুন এবং শান্তির মাধ্যমে সমস্ত রক্তপাতের সমাপ্তি ঘটান- আপনার কাছে আমাদের এই কামনা।’

প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা বাংলাদেশের বিশ্ব ইজতেমাকে হজের পর মুসলনমাদের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ সম্মিলন আখ্যা দিয়েছে। ১৯৬৬ সাল থেকে টঙ্গী ময়দানে শুরু হওয়া বিশ্ব ইজতেমায় অন্তত ৩০ লাখ মুসল্লির সমাগত হতো উল্লেখ করে আলজাজিরা বলছে, মুসল্লিদের জায়গা সংকুলান না হওয়ায় ২০১১ সাল থেকে ইজতেমা দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

সংবাদমাধ্যমটি জানাচ্ছে- বিশ্ব ইজতেমার এই সিলসিলা প্রথম শুরু হয় ১৯৪৬ সালে, রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্র রমনায় অবস্থিত কাকরাইল মসজিদ থেকে। কিন্তু বিরাট সংখ্যক মানুষের এই সমাবেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত কোনো সহিংস ঘটনা ঘটেনি। বাংলাদেশ সরকার সবসময় এটিকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়। এজন্য ইজতেমার নিরাপত্তা ও উপস্থিত মুসল্লিদের সুরক্ষার জন্য কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে ইজতেমায় সমাগত বিদেশী মেহমানদের আতিথেয়তার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি বলা হয়েছে যে- বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে এখানে সমবেত মুসল্লিরা যেন সহজেই মূল মঞ্চের বয়ান বুঝতে পারেন, সেজন্য বেশ কয়েকটি ভাষায় বয়ানগুলো অনুবাদের ব্যবস্থাও রাখা হয়। পত্রিকাটিতে প্রকাশিত ২০১০ সালের একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়েছিল, টঙ্গীর ময়দানের এ ইজতেমায় অন্তত ৯০টি দেশের মুসল্লিরা অংশ নিয়েছেন। তবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো থেকে মুসলমানদের অংশগ্রহণ সবচেয়ে বেশি। বিশেষত, ভারত ও পাকিস্তান।

ইজতেমায় আসা-যাওয়ার সময় ট্রেনে ও তুরাগে ভাসমান নৌকায় মুসল্লিদের উপচেপড়া ভীড়ও বিশ্ব মিডিয়াকে আকর্ষণ করেছে বিশেষভাবে। আলজাজিরা পৃথক দু’টি প্রতিবেদন ছাপিয়েছে; একটিতে ব্যবহার করেছে উপচেপড়া ভীড়ের নৌকার ছবি, আরেকটিতে ট্রেনের। ইউরো নিউজ ইজতেমাকে নিয়ে একটি ভিডিও প্রতিবেদনেও মুসল্লিদের উপচেপড়া ভীড়ের একটি ট্রেনকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে- ‘বাংলাদেশের লাখ লাখ মুসলমান বিশ্বের শান্তি, মঙ্গল এবং রক্তপাত বন্ধের দোয়ায় অংশ নিয়েছিল।’

আল-কুদস আরবিও মুসল্লিতে উপচেপড়া একটি ট্রেনের ছবি দিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়- ‘করোনা মহামারীর কারণে দুই বছর বিশ্ব ইজতেমা স্থগিত ছিল। তাবলিগ জামাত আয়োজিত টঙ্গীর তুরাগ তীরের এই ইজতেমা দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিমদের সমবেত করে। এ অঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠী, যারা হজ করতে সৌদি আরব যেতে পারেন না, তাদের কাছে এটি ‘কাবার মতো’। (এটি সাধারণ মানুষের ধারণা। আলেম ও তাবলিগের মুরব্বিরা কখনো এটি বলেন না; বরং এর তীব্র বিরোধীতা করেন)।

মুসল্লি উপচেপড়া ট্রেনের ছবি দিয়ে প্রতিবেদন করেছে সৌদি সংবাদমাধ্যম আল-সাবাকও। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বরাতে আল-সাবাক বলছে, ‘আমরা বিপুর সংখ্যক মানুষকে দেখছি তারা উপচেপড়া ভীড়ের ট্রেনে করে টঙ্গী ইজতেমার উদ্দেশে আসছেন। এটি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ একটি ধর্মীয় জমায়েত।...এটি বছরে একবার তুরাগ-তীরে অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের মানুষের পাশাপাশি আশপাশের দেশগুলো থেকেও এখানে প্রচুর মুসল্লি আসেন। তাদের এখানে জমায়েত হওয়ার উদ্দেশ্য- নামাজ আদায়, দোয়া-প্রার্থনা ও দ্বীনি আলোচনা শোনা।’

মোটকথা, মুসলিমদের পার্থিব জীবন পরিচালনা, দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম ও সুন্নাতে নববীর অনুসরণ, আল্লাহর প্রতি বিনয়নম্রতা শেখাই বিশ্ব ইজতেমায় সমাবেশের মূল কারণ। আর এখানে প্রচলিত রাজনীতি নিয়ে কোনো আলোচনা হয় না বলেও সৌদি সংবাদমাধ্যম আল-সাবাক জানিয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement