২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

এখন তওবার গুরুত্ব বেশি

-

রমজানুল মোবারকের আজ শনিবার ২৫ তারিখ। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানের শেষভাগকে জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য বলে ঘোষণা করেছেন। পাপরাশির ক্ষমা ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তওবা শিক্ষা দিয়েছেন এবং তওবার বদৌলতে গুরুতর পাপ থেকেও মুক্তির সুসংবাদ দিয়েছেন। কুরআন মজিদেও আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ না হওয়ার কথা বলা হয়েছে। শিরক ও কুফর ছাড়া সব ধরনের পাপ আল্লাহ মাফ করে দিতে পারেন। তবে এ জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা ও তওবা করতে হবে।

বিশ্ব মানবতার প্রতি ইসলামের অন্যতম অবদান এই যে, মানুষকে হতাশা থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। শত পাপ করেও কেউ অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চাইলে তাকে ক্ষমা করা হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালার বিশেষ হুকুম রমজানের সিয়াম সাধনা পালন করে মুমিন বান্দার মধ্যে এমন পরিশুদ্ধি অর্জিত হয় যে, তার পাপরাশি ক্ষমা হয়ে যায়। কেননা দীর্ঘ সময়ব্যাপী কষ্টকর ইবাদতটি করার কারণে তার নিজের অন্যায় সম্পর্কে অনুভূতি জেগে ওঠে। সে তখন অনুশোচনা বোধ করে। এটাই তওবা। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, অনুশোচনাই তওবা এবং তওবাকারী সেই ব্যক্তির মতো যার কোনো পাপ নেই।

আম্বিয়ায়ে কেরাম ছাড়া সব মানুষই কম বেশি ভুল করে। তবে অন্যায় বা ভুল করার পর যারা অনুতপ্ত হয়, ভুলের জন্য ক্ষমা চায়, আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন এবং ক্ষমা করে দেন। পক্ষান্তরে যারা অন্যায় স্বীকার করে না, অন্যায় হয়ে গেছে বুঝতে পেরেও তওবা করে না, আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন না। তাই ইসলামের শিক্ষা হলো, যখনই কোনো অন্যায় হয়ে যায়, তখন অবিলম্বে তওবা করতে হবে। এ প্রসঙ্গে কুরআন মজিদে ইরশাদ করা হয়েছে- আল্লাহ তাদেরই তওবা কবুল করেন যারা না জেনে মন্দ কাজ করে, তারপর অচিরেই তওবা করে। এদেরই তওবা আল্লাহ কবুল করেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী প্রজ্ঞাময় (সূরা নিসা, আয়াত ১৭)।

অতএব সজ্ঞানে অন্যায় করা গুরুতর। আবার অন্যায় করে ফেলার পর তওবা না করা আরো অন্যায়। তেমনি অন্যায় করে যেতে থাকাও গুরুতর। এ প্রসঙ্গে কুরআন মজিদে ইরশাদ হয়েছে- তওবা তাদের জন্য নয়, যারা মন্দ কাজ করতে থাকে। এভাবে যখন তাদের কারো মৃত্যু এসে যায়, তখন বলে আমি এখন তওবা করছি। তেমনি তাদের জন্যও নয়, যারা কাফের অবস্থায় মারা যায়। তাদের জন্য আমি প্রস্তুত রেখেছি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ( সূরা নিসা, আয়াত ১৮)।

এখানে গুনাহ মাফের জন্য দুটি শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে- পাপ কাজটি অব্যাহত না রাখা এবং মুসলমান অবস্থায় মারা যাওয়া। আল্লাহর প্রতি যার বিশ্বাস নেই, রাব্বুল আলামীনের কাছে জবাবদিহিতায় যার বিশ্বাস নেই, সে কিভাবে আল্লাহর কাছে ক্ষমার আশা করবে? আর অন্যায় কাজ অব্যাহত রাখা ঔদ্ধত্য। অন্যায়কে প্রথমে অন্যায় মনে করতে হবে। বিনয়ী না হওয়ার অর্থ দাঁড়ায় নিজের ভুল স্বীকার না করা। সুতরাং এমন ব্যক্তি তওবা করতে পারে না। রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আদম সন্তানরা সবাই পাপী। আর পাপীদের তারাই ভালো যারা তওবা করে।

এসব আয়াত ও হাদিসের আলোকে তওবা কবুল হওয়ার তিনটি শর্ত জানা যায়। প্রথমত, ওই পাপ কাজটি ছাড়তে হবে। কেননা অন্যায়ে লিপ্ত থাকা অবস্থায় তা ক্ষমা চাওয়ার অর্থ হয় না। দ্বিতীয়ত, অন্যায়ের জন্য অনুতপ্ত হওয়া। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, অনুশোচনাই তওবা। অন্যায়ের জন্য লজ্জা বোধ করা, পাপকে ঘৃণা করা, নিজেকে অপরাধী মনে করা ঈমানেরই আলামত। তৃতীয় শর্ত ভবিষ্যতে কাজটির পুনরাবৃত্তি না করার প্রতিজ্ঞা। এই তিনটি শর্ত আল্লাহর হকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যদি বান্দার হক নষ্ট করা হয়ে থাকে, তাহলে আরো একটি শর্ত রয়েছে, যা সবার আগে পূরণ করতে হবে। তা হলো, যার ক্ষতি করা হয়েছে তার সাথে সুরাহা করার পরেই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। কেননা বান্দার হকের মাফ আল্লাহ তায়ালা করবেন না।

বান্দার হক প্রধানত তিনটি: জীবন, সম্পদ ও সম্মান। অতএব কারো দেহে আঘাত করা হলে, কারো সম্পদের ক্ষতি করলে কিংবা কারো সম্মান নষ্ট করলে প্রথমে তার পাওনা পরিশোধ করতে হবে কিংবা তার কাছ থেকে দায়মুক্ত হতে হবে। তারপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। তাই আমাদের উচিত শর্তাবলি পালনের সাথে তওবা করা, যাতে পবিত্র মাসের কল্যাণে আমরা অতীতের পাপরাশি ক্ষমা ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করতে পারি।


আরো সংবাদ



premium cement