২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বেলকুচিতে জুমার নামাজের মধ্যে দিয়ে উদ্বোধন দৃষ্টিনন্দন মসজিদের

বেলকুচিতে জুমার নামাজের মধ্যে দিয়ে উদ্বোধন দৃষ্টিনন্দন মসজিদের - নয়া দিগন্ত

সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন আল আমান বাহেলা খাতুন জামে মসজিদ শুক্রবার জুমার নামাজের মাধ্যমে উদ্বোধন করা হয়েছে। ঢাকা সার্কিট হাউজ জামে মসজিদের খতিব ড. আরিফ উদ্দিন মারুফ উদ্বোধনী নামাজে ইমামতি করেন।

এর আগে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী কুরআন-হাদিস থেকে আলোচনা করেন তিনি। নামাজ শেষে মসজিদটির প্রতিষ্ঠাতা মরহুম মোহাম্মদ আলী সরকারের রূহের ও বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা করে দোয়া ও মুনাজাত করা হয়।

দোয়া মাহফিলে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুল মমিন মণ্ডল।
জুমার নামাজে অন্য মুসল্লিদের সাথে উপস্থিত ছিলেন সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস, পূর্বাণী গ্রুপ ও ঢাকা ব্যাংকের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকার, টেক্সজেন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ আব্দুস ছালাম, প্রতিষ্ঠাতা মরহুম মোহাম্মদ আলী সরকারের দু’ছেলে আমান উল্লাহ সরকার ও আমির হামজা সরকার, দু’ভাই শিল্পপতি আলতাব হোসেন সরকার ও আক্তার হোসেন সরকার, বেলকুচি উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সাজেদুল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনিসুর রহমান, উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেওয়ান মওদুদ আহম্মেদ ও বেলকুচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা প্রমুখ।

সিরাজগঞ্জ-এনায়েতপুর সড়কের বেলকুচি পৌর সদরে অবস্থিত মসজিদ ভবনটি দৃষ্টিনন্দন। এর নির্মাণশৈলী শুধু মুসল্লি নয়, ওই সড়কে যাতায়াতকারী যেকারো দৃষ্টি কাড়বে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরের দিকে মুকুন্দগাতী গ্রামের কৃতি সন্তান শিল্পপতি মোহাম্মদ আলী সরকার বেলকুচি পৌর ভবনসংলগ্ন দক্ষিণে এক একর জায়াগার ওপর তার ছেলে আল আমান ও মা বাহেলা খাতুনের নামে ‘আল আমান বাহেলা খাতুন জামে মসজিদ’ কমপ্লেক্স নির্মাণকাজের ভিত্তি স্থাপন করেন। নয়নাভিরাম এ মসজিদটি নির্মাণ শুরু করেন তার নিজস্ব অর্থায়নে। এটি নির্মাণে নয় বছর সময় লেগেছে। শুরু থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪৫ জন শ্রমিক কাজ করেছেন। রহমত গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার এ মসজিদ কমপ্লেক্সসহ বাহেলা খাতুন চক্ষু হাসপাতাল নির্মাণ করে বিনামূল্যে এলাকার অসহায় দুস্থ রোগীদের সেবার ব্যবস্থা করেছেন।

মসজিদ নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার আগেই এই শিল্পপতি গত বছরের আগস্টে ইন্তেকাল করেন। এরপর তার পরিবারের পক্ষ থেকে মসজিদের নির্মাণকাজ অব্যাহত রাখা হয়। মার্চ মাসে নির্মাণকাজ শেষ হয়। এরপর উদ্বোধনের দিনক্ষণ ঠিক করা হয়েছিল ২ এপ্রিল।

মসজিদের ভেতরে সাত হাজার মুসল্লির নামাজ আদায়ের জায়গা থাকলেও এ দিন কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে বাইরে সমসংখ্যক মুসল্লি নামাজ আদায় করেছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

নিমাণশৈলী
এ মসজিদে ছাই রঙের বিশাল আকৃতির মনোরম একটি গম্বুজসহ ছোট ছোট আরো আটটি গম্বুজ রয়েছে। এ ছাড়া মেঝেতে সাদা রঙের ঝকঝকে টাইলস ও পিলারগুলোতে মার্বেল পাথর জড়ানো। তৃতীয় তলায় গম্বুজের সাথে লাগানো চায়না থেকে আনা একটিসহ অন্যান্য স্থানে বেশ কয়েকটি আলো ঝলমল ঝাড়বাতি লাগানো হয়েছে। দু’পাশে নির্মাণাধীন ১১ তলা সমতূুল্য (১১০ ফিট) উচ্চতার মিনার থেকে আজানের ধ্বনি ছড়িয়ে পড়ছে। বেশ দূর থেকেই মসজিদের গম্বুজ ও নির্মাণাধীন মিনার দু’টি সবার নজর কাড়ে। মসজিদের চারপাশে সাদা রঙের পিলার, সুউচ্চ জানালা, সাদাটে রঙের টাইলস। চত্বরে পরিকল্পিতভাবে লাগানো সবুজ ঘাস। চার পাশে রং-বেরঙের লাইটিংয়ে রাতে এক অন্যন্য আবহ সৃষ্টি হয়।

মসজিদ নির্মাণে মূল দায়িত্ব পালনকারী আলহাজ ওয়াজেদ আলী জানান, এখানে ইমাম ও মোয়াজ্জিনদের থাকার জন্য মসজিদের পাশে ১০ তলা ভবনে নিজস্ব কোয়ার্টার। পাঠাগার ও শৌচাগার রয়েছে। সেইসাথে মসজিদের প্রবেশ পথের দুই সিঁড়ির পাশে কাচে ঘেরা অটো ফিল্টার করা পানি দিয়ে ওজুর ব্যবস্থা আছে। এ ছাড়া ইতালি ও ভারত থেকে আনা উন্নতমানের মার্বেল পাথরসহ কাঠের কারুকাজে মসজিদের বিভিন্ন স্থানকে আকর্ষণীয় করতে নান্দনিক নকশার কাজ করা হয়েছে। বিশেষ করে মসজিদের সামনের উচ্চ দু’টি সিঁড়ি ও ব্যতিক্রমী প্রবেশ পথ ও প্রধান ফটক যে কারো দৃষ্টি কাড়ে। মসজিদটি নির্মাণের পর এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসুল্লিরাসহ সব ধর্মের মানুষ এখানে আসছেন এর নির্মাণশৈলী তথা সৌন্দর্য উপভোগ করতে।

এ বিষয়ে বেলকুচি উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সাজেদুল জানান, প্রথম দেখাতেই যে কারো দৃষ্টি কাড়ে এ মসজিদটি। এটা নিছক ধর্মীয় স্থান নয়। দেশী-বিদেশী পর্যটকের কাছে এই মসজিদের নির্মাণশৈলী বেশ আকর্ষণীয় ও মনোমুগ্ধকর হবে বলে আশা করছি। ব্যস্ত সড়কে যাতায়াতকারী যে কেউ প্রথম দেখাতেই থমকে দাঁড়ান। পৌর সদরে হওয়ায় ইতোমধ্যে মসজিদ কমপ্লেক্স ঘিরে পর্যটকদের আনাগোনা বেড়েছে বলেও জানান তিনি।

এ দিকে মসজিদ নির্মাণকারী মরহুম আলী সরকারের ভাগ্নে আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, আল্লাহর ঘর নির্মাণে আমরা কাজ করেছি। মানুষ শান্তিতে নামাজ পড়বে তাতেই আমার মামার রূহ শান্তি পাবে, আমরাও সাওয়াবের অধিকারী হবো। তবে মসজিদ নির্মাণের স্বপ্নদ্রষ্টা আমার মামা মৃত আলী সরকার বেঁচে থাকলে ও তিনি এখানে নামাজ পড়তে পারলে আরো বেশি ভালো লাগত। এটাই আমাদের অপূর্ণতা রয়ে গেলে। সবাই দোয়া করবেন আল্লাহ যেন তার সব প্রচেষ্টা কবুল করেন ও তাকে জান্নাতবাসী করেন।


আরো সংবাদ



premium cement