- সাড়ে ৪ বছরের প্রকল্প এখন ৯ বছরে
 - পটপরিবর্তনে ব্যয় কমেছে ২৫৫ কোটি টাকা
 
কচ্ছপ গতিতে বাস্তবায়ন দেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর একটি বড় রোগ। গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যুৎ খাতের ঢাকা ও চট্টগ্রাম সঞ্চালন লাইনের সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রকল্পে। সেই কচ্ছপ গতির রোগে ধরেছে সাড়ে চার বছরে যে প্রকল্পটি সমাপ্ত করার কথা সেটি এখন ৯ বছরে বাস্তবায়ন চলছে। ৯ বছর পরে এসে প্রকল্পে ১১টি খাতে ১৭২ কোটি টাকা ব্যয় বেড়েছে এবং ১৭টি খাতে ৪২৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যয় কমেছে। ফলে পটপরিবর্তনে সার্বিকভাবে খরচ কমেছে ২৫৫ কোটি টাকা। মূল্যায়ন কমিটির সভায় প্রকল্পের ব্যয়ের সমন্বয়ের বিষয়টিসহ কিছু পরামর্শ দেয়া হয়েছে, যা সংশোধন করে আবার পিইসিতে পাঠাতে হবে বলে শিল্প ও শক্তি বিভাগ থেকে জানা গেছে। প্রকল্প পরিচালক জানান, প্রকল্পটি হোলে আর্টিজেন ও করোনার তিনটি ধাক্কার কারণে সময় বেশি লেগেছে। ওই দু’টি ঘটনায় বড় ধরনের সময় চলে গেছে। তবে পিজিসিবির সফল প্রকল্পগুলোর মধ্যে এটি একটি, যেখানে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থের সাশ্রয়ও হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পাঠানো প্রকল্পের সংশোধিত প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, মাতারবাড়ীতে নির্মাণাধীন ১২ শ’ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে ইভাক্যুয়েশনের জন্য বিদ্যমান ঢাকা ও চট্টগ্রাম সঞ্চালন লাইনের সক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য এ প্রকল্পটি নেয়া হয়। প্রকল্পটি জাইকার ঋণে মোট চার হাজার ৫৬৭ কোটি ৪৯ লাখ ৩৮ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে জুলাই ২০১৬ থেকে ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য ২০ জুন ২০১৭ তারিখে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। এখানে জিওবি এক হাজার ৩৪০ কোটি ৪০ লাখ ৬৯ হাজার টাকা, জাইকার ঋণ দুই হাজার ৭৬৭ কোটি ৫৫ লাখ ৫৮ হাজার টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব ৪৫৯ কোটি ৫৩ লাখ ১০ হাজার টাকা।
মূল কার্যক্রম ছিল মেঘনাঘাট-মদুনাঘাট ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ, মদুনাঘাটে নির্মাণাধীন ২৩০ কেভি উপকেন্দ্রের সাথে নির্মাণাধীন ৪০০/২৩০ কেভি উপকেন্দ্রের সংযোগ স্থাপনের জন্য ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ। হাটহাজারী-শিকলবাহা ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইন থকে ‘নতুন মদুনাঘাট উপকেন্দ্র’ পর্যন্ত ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইন-ইন ও লাইন-আউট নির্মাণ, মেঘনাঘাট ৪০০ কেভি এআইএস উপকেন্দ্র ও মদুনাঘাট ৪০০ কেডি জিআইএস উপকেন্দ্র নির্মাণ। মেঘনাঘাট ২৩০ কেভি এআইএস ও মদুনাঘাট ২৩০ কেভি জিআইএস সুইচিং স্টেশন নির্মাণ এবং বিদ্যমান মদুনাঘাট ১৩২ কেভি উপকেন্দ্রটিকে ২৩০ কেডি জিআইএস উপকেন্দ্রে উন্নীত করা।
ডিপিপির ব্যয়ের হিসাব থেকে জানা গেছে, আশানুরূপ অগ্রগতি না হওযায় প্রকল্পের মেয়াদ আড়াই বছর বাড়িয়ে জুন ২০২৩ পর্যন্ত নির্ধারণসহ প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। ফলে বাস্তবায়ন মেয়াদ সাত বছরে উন্নীত হয়। আর বাস্তবায়ন খরচ চার হাজার ৫৬৭ কোটি ৪৯ লাখ ৩৮ হাজার টাকায় অপরিবর্তিত থাকে। ২০২১ সালের ৩১ মে পরিকল্পনামন্ত্রী এই মেয়াদ বাড়ানো অনুমোদন দেন। আবার ২০২৩ সালের ২১ জুন ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই পরিকল্পনা কমিশন মেয়াদ আরো দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত অনুমোদন দেয়। ফলে প্রকল্পের মেয়াদ ৯ বছরে উন্নীত হয়। এখন কিছু খাতের ব্যয় বাড়িয়ে এবং কিছু খাতের ব্যয় কমিয়ে মোট চার হাজার ৩১২ কোটি ৮২ লাখ ৩৯ হাজার টাকায় অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয় পরিকল্পনা কমিশনে।
প্রকল্প প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, জানুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত প্রকল্পের ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় তিন হাজার ৭৪৯ কোটি ৩৮ লাখ ৯১ হাজার টাকা, যেখানে জিওবি ৮৪৩ কোটি ৩২ লাখ ২৯ হাজার টাকা, প্রকল্প ঋণ দুই হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব ৪১১ কোটি টাকা। এটি অনুমোদিত প্রকল্প ব্যয়ের প্রায় ৮২ শতাংশ এবং প্রস্তাবিত সংশোধিত ব্যয়ের প্রায় ৮৭ শতাংশ। ওই মাস পর্যন্ত অর্জিত ভৌত অগ্রগতি এক শ’ শতাংশ।
প্রকল্প পরিচালক (প্রধান প্রকৌশলী) অতিরিক্ত দায়িত্ব মো: মঞ্জুর আলমের সাথে গতকাল মুঠোফোনে প্রকল্পের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি দৈনিক নয়া দিগন্তকে বলেন, পিইসি সভা থেকে কিছু পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়েছে। সেগুলোর আলোকে আমরা ডিপিপি ঠিক করে আবার মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। তবে সার্বিকভাবে এটি একটা সফল প্রকল্প, সেখানে আমরা ব্যয় ২৫৮ কোটি টাকা কমিয়েছি।
পাঁচ বছর বাড়তি সময় লাগার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, হোলে আর্টিজেন ছিল। সেটার কারণে কাজ শুরু করতেই দেরি হয়। ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে প্রথম চুক্তি কার্যকর হয়। ওটার জন্য তিন বছর চলে যায়। এরপর করোনা কারণেও অনেক সময় চলে যায়। তিনি বলেন, একটা সাব-স্টেশন রিপ্লেস করতেও সময় লেগেছে। মদুনাঘাটে একটি সাব-স্টেশন ছিল, যা ১৯৬১ সালে তৈরি করা হয়। সেটি ১৩২ কেভি করা হয়।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত প্রায় ২১৭ কিলোমিটার লাইন। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় লাইন এটি। এছাড়া নদী, বন বিভাগ ক্রস করতে, শহর ক্রস করতে পাহাড় ক্রস করতে কাজটি বেশ জটিল ছিল।
 


