- গণ-অভ্যুত্থানে চট্টগ্রামে ৯ জন শহীদ, আহত ৪৫৯ জন; সাবেক এমপি ফজলে করিমকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি
- ট্রাইব্যুনালের তদন্ত ও বিচার কার্যক্রম সঠিক পথে চলছে, অভিমত সাবেক সেনা কর্মকর্তার
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত আইসিসিতে নয়, জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার বাংলাদেশে হবে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টে ছাত্র আন্দোলনের সময় সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাগুলোর বিচার বাংলাদেশের এই ট্রাইব্যুনালেই করার সিদ্ধান্ত রয়েছে। আমরা কোনো অবস্থাতেই এই বিষয়টি আইসিসিতে প্রেরণ করতে চাই না। এটা আমাদের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত। আমরা চাই আইসিসি যদি আমাদের টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেয় নেব। এখানেই বিচার হবে। তবে তারা যদি আমাদের বিভিন্ন টেকিনিক্যাল সাপোর্ট দেন সেটি আমরা অবশ্যই গ্রহণ করব। যেমনটি আমরা জাতিসঙ্ঘের কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম। তারা আমাদের প্রসিকিউটর ও তদন্ত কর্মকর্তাদের বিভিন্ন ট্রেনিং দিয়ে সাহায্য করেছেন। যে তদন্ত তারা করেছেন সেই রিপোর্ট আমাদের দিয়েছেন। সুতরাং সেই ধরনের সহযোগিতা যদি আইসিসি থেকে আসে আমরা সেটি গ্রহণ করব; কিন্তু মামলাগুলো বিচারের জন্য আইসিসিতে প্রেরণ করা হবে না। এটাই এখন পর্যন্ত আমাদের রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত।
মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সামনে এক প্রশ্নের জবাবে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এ কথা বলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এই ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করতে সক্ষম। বাংলাদেশ এই অপরাধের বিচার করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং ইচ্ছুক। বাংলাদেশের সেই সামর্থ্য আছে। ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেছে। আসামিরা এই বাংলাদেশে বাস করে বা বাংলাদেশের আশপাশে আছে। সাক্ষীরা এখানকার। সুতরাং এই বিচার বাংলাদেশে করতে হবে, এটাই হচ্ছে স্বাভাবিক বিষয়। আইসসিসিতে তখনই যেতে হয়, যদি কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করতে সেই রাষ্ট্র সক্ষম না হয়। অথবা সেই রাষ্ট্র বিচার করতে ইচ্ছুক না হয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই দু’টির একটিও প্রযোজ্য নয়। সুতরাং বাংলাদেশ আইসিসির মেম্বার রাষ্ট্র হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে করতে সক্ষম।
গণ-অভ্যুত্থানে চট্টগ্রামে ৯ জন শহীদ ও আহত ৪৫৯ জন : সাবেক এমপি ফজলে করিমকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি
জুলাই-আগস্টের ছাত্র আন্দোলনের সময় চট্টগ্রামে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় চট্টগ্রাম-৬ রাউজান আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীকে এক দিন জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আগামী ১৬ এপ্রিল তাকে জিজ্ঞাসাবাদের দিন ধার্য করা হয়েছে।
এ দিকে অসুস্থ উল্লেখ করে ফজলে করিমের জামিন আবেদন করা হয়েছে। ২০ এপ্রিল তার জামিন আবেদনের শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বিচারপতি মো: গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো: শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো: মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন। ফজলে করিমের পক্ষে জামিন আবেদন করেন তার আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল কাইয়ুম লিটন।
এ দিকে চট্টগ্রামে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় যুবলীগ কর্মী মো: ফিরোজকে মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। পরে তাকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ট্রাইবু্যুনাল।
ট্রাব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম আদালতে বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় চট্টগ্রামে ৯ জন শহীদ এবং ৪৫৯ জন আহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এ মামলায় আরো অনেকের সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। সবাইকে চিহ্নিত করার তৎপরতা চলমান আছে। পেছনের যারা এই পুরো প্রক্রিয়ার সাথে ছিলেন তারা বিভিন্ন বাহিনীর লোকজন। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ সবাইকে চিহ্নিত করার জন্য যে তৎপরতা সেটিা চলমান আছে। সে কারণে এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আদালত আরো তিন মাস সময় আবেদন করেন। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে আগামী ৭ জুলাই এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন। তিনি বলেন, এই মামলায় আরেকজনকে গ্রেফতার করে আজ হাজির করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে সরাসরি মিছিলে গুলি করার অভিযোগ রয়েছে।
আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর মামলায় ৩ পুলিশ সদস্যকে হাজিরের নির্দেশ : জুলাই-আগস্টের ছাত্র আন্দোলনের সময় সাভারের আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর মামলায় আরো তিন পুলিশ সদস্যকে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। তারা হলেন- ঢাকা জেলা পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো: শাহিদুল ইসলাম, বরখাস্ত ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী ও ঢাকা উত্তর ডিবির সাবেক পরিদর্শক মো: আরাফাত হোসেন।
এই তিন আসামি অন্য মামলায় ইতোমধ্যে গ্রেফতাার আছেন উল্লেখ করে তাদেরকে এই মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। আগামী ১৫ এপ্রিল তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, আশুলিয়ার মামলায় তিনজন আসামিকে হাজির করতে বলা হয়েছে। তারা ট্রাইব্যুনালে অন্য মামলায় গ্রেফতার আছে। এ মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর হয়েছে। তিনি বলেন, এ মামলার তদন্ত রিপোর্ট কয়েকদিনের মধ্যে চূড়ান্তভাবে এসে যাবে।
ট্রাইব্যুনালের তদন্ত ও বিচার কার্যক্রম সঠিক পথে চলছে : সাবেক সেনা কর্মকর্তা
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দায়ের করা মামলার তদন্ত ও বিচার কার্যক্রম সঠিক পথে চলছে বলে জানিয়েছেন সাবেক তিনজন সেনা কর্মকর্তা। তারা হলেন, সাবেক সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) হাসান নাসির, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব:) হাসিনুর রহমান ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব:) মো: ফেরদৌস আজিজ। মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সামনে সাবেক এই তিন সেনা কর্মকর্তা বলেন, তারা সন্তুষ্ট যে, ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রম দ্রুত গতিতে চলছে।
এ সময় লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব:) হাসিনুর রহমান বলেন, আমি ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে খুবই সচেতন ছিলাম; আমার মামলার কাজ, অগ্রগতি ঠিকমত চলছে কি না। মাঝে মধ্যে ট্রাইব্যুনালে এসেছি। কথা বলেছি। আমি সন্তুষ্ট কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। তিনি বলেন, খুবই বৈরী পরিবেশে ট্রাইব্যুনালকে যেতে হচ্ছে। আমি মনে করি, এখন একটি পরিবেশ হয়েছে। সবাই বুঝতে পারছে অপরাধীকে শাস্তি দিতে হবে। উদহারণ সৃষ্টি করতে হবে যে, আগামীতে যেন ফ্যাসিস্ট তৈরি না হয়। আমি আশাবাদী ন্যায়ের পক্ষের শক্তির বিজয় হবে। জনগণ ন্যায় বিচার পাবে। তিনি আরো বলেন, দু-একটি মামলার কার্যক্রম শুরু হলে আতঙ্কের জায়গা পার হবে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) হাসান নাসির বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রমের শুরু থেকেই ইনভলব। চিফ প্রসিকিউটর ও অন্যান্য প্রসিকিউটরের সাথে মামলার বিষয় নিয়ে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে তারা তদন্ত করে মামলা বিচারের আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করছেন। তারপরেও তাদের বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা লক্ষ করছি কারা এটা করছে। তারাই করছে যারা এই মামলায় আসামি হয়েছেন বা হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সেটির মধ্যে শুধু রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ নন সরকারি সংস্থাসহ যাদের কাছে ব্যাপক অবৈধ অস্ত্র আছে, যাদেরকে এখনো বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি বা গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, আমরা মামলার তদন্ত কার্যক্রমে সন্তুষ্ট।



