পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ

সাতকানিয়ায় ডাকাতির গুজব রটিয়ে দুই জামায়াত কর্মীকে গুলি ও পিটিয়ে হত্যা

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় মসজিদের মাইকে ডাকাতির গুজব ছড়িয়ে পরিকল্পিতভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে দুই জামায়াত কর্মীকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় নিহতরা হলেন, কাঞ্চনা ইউনিয়নের মধ্যম কাঞ্চনা জোট পুকুরিয়া পোস্ট অফিস এলাকার মাহমুদুল হকের ছেলে জামায়াত কর্মী মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন (৪৫), একই ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড গুরগুরি এলাকার আব্দুর রহমান মেকারের ছেলে ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সামনের সারিতে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী জামায়াত কর্মী মোহাম্মদ সালেক (৩৫)।

Printed Edition
সাতকানিয়ায় ডাকাতির গুজব রটিয়ে দুই জামায়াত কর্মীকে গুলি ও পিটিয়ে হত্যা
সাতকানিয়ায় ডাকাতির গুজব রটিয়ে দুই জামায়াত কর্মীকে গুলি ও পিটিয়ে হত্যা

সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় মসজিদের মাইকে ডাকাতির গুজব ছড়িয়ে পরিকল্পিতভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে দুই জামায়াত কর্মীকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় নিহতরা হলেন, কাঞ্চনা ইউনিয়নের মধ্যম কাঞ্চনা জোট পুকুরিয়া পোস্ট অফিস এলাকার মাহমুদুল হকের ছেলে জামায়াত কর্মী মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন (৪৫), একই ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড গুরগুরি এলাকার আব্দুর রহমান মেকারের ছেলে ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সামনের সারিতে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী জামায়াত কর্মী মোহাম্মদ সালেক (৩৫)। এ সময় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের গুলিতে আরো পাঁচজন স্থানীয় গ্রামবাসী আহত হয়েছেন। আহতদের চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গত সোমবার রাত ১০টার দিকে উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা পশ্চিমপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, আটটি গুলির খোসা ও একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা জব্দ করেছে পুলিশ। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সাইফুল ইসলাম সান্তু, সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন বিশ্বাস, জেলা ডিবি পুলিশের একটি দলসহ সাতকানিয়া থানা পুলিশের সদস্যরা। তবে এটিকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড দাবি করে এওচিয়া ইউনিয়নে সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নজরুল ইসলাম মানিক ও তার সহযোগীদের দায়ী করছেন স্থানীয়রা।

জানা যায়, গত সোমবার রাত আনুমানিক ১০টার দিকে কয়েকটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে একদল যুবক এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা পশ্চিমপাড়া এলাকায় যান। এ সময় স্থানীয় মসজিদের মাইকে ডাকাত এসেছে বলে মিথ্যা প্রচার চালিয়ে গ্রামবাসীকে জড়ো করে অটোরিকশায় করে যাওয়া যুবকদের ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার করে ধাওয়া দিলে অন্যরা পালিয়ে গেলেও দু’জনকে আটক করে গণপিটুনি দেয়া হয়। এতে ঘটনাস্থলেই জামায়াত কর্মী মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন ও মোহাম্মদ সালেক নিহত হন। ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল ও কিছু গুলির খোসা উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের গুলিতে স্থানীয় গ্রামবাসী আব্বাস উদ্দিন (৩০), মোহাম্মদ মামুন (৪৪), ওবাইদুর রহমান (১৮), আবু সাঈদ (২৩) ও মোহাম্মদ নাছির (৪১) আহত হন। আহতদের চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

নিহতের পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, এওচিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলাম মানিক ও তার সহযোগীরা এলাকায় অবস্থান করছেন সেখানে একটি বিচার সালিস হবে এমন সংবাদের ভিত্তিতে জামায়াত কর্মীদের সেখানে ডাকা হয়। এ সময় নজরুল ইসলাম মানিকের সহযোগীরা পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে মসজিদের মাইকে ঘোষণা করে এলাকায় ডাকাত এসেছে। মাইকের ষোষণা শুনে এলাকাবাসী উত্তেজিত হয়ে জামায়াত কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় বেশকিছু জামায়াত কর্মী পালিয়ে রক্ষা পেলেও নেজাম ও সালেককে আটক করে প্রথমে গুলি এবং পরে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। স্থানীয়দের দাবি মসজিদের মাইকে ডাকাতের ঘটনা প্রচারকারী ও হেলমেট পরে চাইনিজ দা দিয়ে জামায়াত কর্মীদের ওপর হামলা চালানো ব্যক্তিরা তৃতীয় পক্ষের কোনো লোকজন হতে পারে। তারা সহজ সরল গ্রামবাসীকে ব্যবহার করে তাদের মিশন সম্পন্ন করেছে। মসজিদের মাইকে ডাকাত আসার কথা প্রচারকারী ও হেলমেট পরে হামলা চালানো ব্যক্তিকে শনাক্ত করা গেলে হত্যাকাণ্ডের আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে। অন্য দিকে নিহত জামায়াত কর্মী মোহাম্মদ সালেক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রাজপথে সামনের সারিতে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী এক সাহসী যুবক। ব্যক্তিগত জীবনে তারা দুইজনই বিবাহিত। জামায়াত কর্মী নেজাম উদ্দিন এক সন্তানের এবং মোহাম্মদ সালেক দুই সন্তানের জনক। সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: জাহেদুল ইসলাম জানান, মসজিদের মাইকে ডাকাত আসার কথা প্রচারণার পর স্থানীয়দের গণপিটুনিতে দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ সময় আরো বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল ও কিছু গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। তবে হঠাৎ কি কারণে এমন হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সংঘটিত হলো তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ব্যাপারে হত্যা মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

জামায়াতের প্রতিবাদ, সাতকানিয়ার হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত, প্রচার হচ্ছে বিভ্রান্তিকর সংবাদ

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার চনখোলা গ্রামের দু’জনকে হত্যার ঘটনায় বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে বলে এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে সাতকানিয়া জামায়াতে ইসলামী। গতকাল এক বিবৃতিতে সাতকানিয়া উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা কামাল উদ্দিন, সেক্রেটারি মুহাম্মদ তারেক হোছাইন, এওচিয়া আমির আবু বক্কর, সেক্রেটারি ফারুক হোসাইন, কাঞ্চনা আমির মাওলানা আবু তাহের ও সেক্রেটারি জায়েদ হোসেন যৌথ বিবৃতিতে বলেন, গত পরশু রাতের হত্যাটি একটি পরিকল্পিত নৃশংস হত্যাকা-। এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা গ্রাম বহু আগে থেকেই সন্ত্রাসকবল এলাকা। এওচিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও সন্ত্রাসী নজরুল ইসলাম মানিক ছনখোলা গ্রামের পাহাড়, পাহাড়ি গাছ ও ইটভাটা নিয়ন্ত্রণে নিতে একাধিকবার সন্ত্রাসী হামলা ও হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অসংখ্য মামলা দিয়ে গ্রামের অনেক সাধারণ মানুষের পাহাড়, ভূমি জবর দখল করেছিল। এলাকার মানুষ তার অত্যাচার নিপীড়নে অতিষ্ঠ হয়ে তাকে বয়কট করে। তৎকালীন আওয়ামী সরকার ও প্রশাসনের সহযোগিতার কারণে তার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করতে পারেনি। বিগত ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী হাসিনার পতনের পর সে এলাকা ছেড়ে আত্মগোপন করলেও তার বাহিনী ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। মানিকের ভাই হারুন ও মমতাজের প্রত্য তত্ত্বাবধানে এই সন্ত্রাসীরা এখনো নানা অপকর্মে জড়িত। গত পরশু রাতে পরিকল্পিত ভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে আওয়ামী দুঃশাসনে নির্যাতিত, মজলুম ব্যবসায়ী নেজাম উদ্দিন ও আবু ছালেককে বিচারের কথা বলে ডেকে এনে মাইকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ডাকাত আখ্যা দিয়ে মূলত গণপিটুনির নামে চেয়ারম্যান মানিকের নির্দেশে তার ভাই মমতাজ ও হারুনের পরিকল্পনায় কুপিয়ে দু’জনকে জঘন্যতম কায়দায় হত্যা করেছে, যা মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

তারা বলেন, একইভাবে বিগত ২০১৬ সালে মানিক চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে জামায়াতের কর্মী কাঞ্চনা বশরকে নির্মমভাবে ছনখোলাতে হত্যা করা হয়েছিল।

বিবৃতিতে নেতারা অবিলম্বে চিহ্নিত খুনিদের গ্রেফতার, ঘটনার গডফাদারদের বিরুদ্ধে মামলা ও বিচারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত না করে আসল হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানান তারা।

শাহজাদপুরে হোটেলে অগ্নিকাণ্ডে নিহতের ঘটনায় শোক : গত ৩ মার্চ দুপুরে রাজধানী শাহজাদপুরে সৌদিয়া আবাসিক হোটেলে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড চারজনের প্রাণহানিসহ জানমালের ব্যাপক য়তিতে গভীর উদ্বেগ ও শোক প্রকাশ করে নিহত এবং তিগ্রস্তদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দানের আহবান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম। এক যৌথ বিবৃতিতে মহানগরী নেতৃদ্বয় বলেন, দেশে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। অপরিকল্পিত নগরায়ন এর অন্যতম কারণ। সর্বোপরি অগ্নিনির্বাপণে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির অভাবেও প্রতি বছর অগ্নিকাণ্ডে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। আবার কোনো কোনো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেশ রহস্যজনক। সে ধারাবাহিকতায় গত ৩ মার্চ ঢাকা নগরীর শাহজাদপুরে সৌদিয়া আবাসিক হোটেলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ব্যাপকভাবে জানমালের য়তির ঘটনা ঘটেছে। যা অনাকাক্সিক্ষত, অনভিপ্রেত, শোকাবহ ও বেদনাদায়ক। মহানগরী নেতৃদ্বয় অগ্নিকাণ্ডের কারণ তদন্তে এবং ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত বা নাশকতামূলক কি না তা খতিয়ে দেখতে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করে দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনার আহবান জানান। একই সাথে ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে ভবিষ্যৎ করণীয় ও সুপারিশমালা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়ন এবং অগ্নিনির্বাপণে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি করেন।