২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

করোনায় আটকে আছে শ্রমিকদলের কাউন্সিল

করোনায় আটকে আছে শ্রমিকদলের কাউন্সিল - ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির অন্যতম সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদল একসময় মূলদলের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল কিন্তু নানা অনিয়ম ও দীর্ঘ সময়ে নিয়মিত কাউন্সিল না হওয়ায় সংগঠনের বেশির ভাগ জেলা ও মহানগর কমিটির কার্যক্রম এখন নিষ্ক্রিয়প্রায়। গত কয়েক বছরে কয়েক ধাপে কাউন্সিল হওয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন কারণে তা হয়ে ওঠেনি। বিশেষ করে সর্বশেষ গত এপ্রিলে কাউন্সিল হওয়ার কথা থাকলেও করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে তা হয়নি।

সংগঠনটির তৃণমূলের নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা দ্রুত শ্রমিকদলের কাউন্সিল চায়। কাউন্সিলের জন্য শ্রমিকদলের সাংগঠনিক অভিভাবক ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনাও প্রত্যাশা করেন তারা। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, সংগঠনটির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম খান নাসিম গত ৩-৪ বছর রাজপথে কোনো কর্মসূচিতে আসেননি। শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির ৩৫ কর্মকর্তার মধ্যে দু’জন মারা গেছে ও একজন আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। বাকিদের মধ্যে সভাপতি আনোয়ার হোসাইনসহ ৫-৬ জন রাজপথে দলীয় কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশগ্রহণ করেন। তবে কমিটির অন্য নেতাদের বিগত সময়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিএনপি ঘোষিত কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে দেখা যায়নি বলেও অভিযোগ করেন তারা।
তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আরো মনে করেন, শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয়, মহানগর ও জেলা কমিটির সিংহভাগ নেতা সরকারি চাকরি করেন। ফলে তারা চাকরি হারানো ও বদলি হওয়ার ভয়ে রাজপথের কর্মসূচিতে অংশ নেন না। এক কথায় শ্রমিকদল ট্রেড ইউনিয়ন নির্ভরশীল হওয়ায় সংগঠনগুলোতে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এমনকি চলতি বছরের ২৪ নভেম্বর শ্রমিকদলের কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়নি সংগঠনটির অনেক ইউনিটকে। এ মুহূর্তে শ্রমিকদলের আগের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হলে শ্রমিকদল কমিটিকে ট্রেড ইউনিয়ন নির্ভরতা কমাতে হবে।

শ্রমিকদল সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের শুরু থেকে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল পুনর্গঠন নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়েছিল। ওই বছরের সেপ্টেম্বরেই শ্রমিকদলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ১৯-২০ এপ্রিল সপ্তম কাউন্সিলে আনোয়ার হোসাইনকে সভাপতি ও নুরুল ইসলাম খান নাসিমকে সাধারণ সম্পাদক করে ৩৪ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটির নাম শ্রম অধিদফতরে জমা দেয়া হয়। কিন্তু পরে আবুল হোসেনকে সভাপতি ও আবুল খায়ের খাজাকে সাধারণ সম্পাদক করে পাল্টা একটি কমিটি জমা হলে বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা হয়। এরপর জমা দেয়া দু’টি কমিটির একটি কমিটিকেও অনুমোদন দেয়নি শ্রম অধিদফতর। পরে শ্রমিক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মরহুম জাফরুল হাসানের মধ্যস্থতায় দ্রুত কাউন্সিল হবে সেই শর্তে মামলা তুলে নেন আবুল খায়ের খাজা।
এরপর দ্রুত কাউন্সিল করার লক্ষ্যে শ্রমিকদল সভাপতি আনোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে গত ২০১৯ সালের ৩০ মার্চ দলের সভা করে ওই বছরের সেপ্টেম্বরে কাউন্সিল করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। যদিও সেপ্টেম্বরে কাউন্সিল কী কারণে হয়নি সেটা এখন পর্যন্ত জানা যায়নি।

পরে আবার এই বছরের জানুয়ারি মাসের ১১ তারিখে শ্রমিকদলের প্রধান উপদেষ্টা ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে শ্রমিকদল কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা পরিষদ ও বিএনপির শ্রম ও সহ-শ্রমবিষয়ক সম্পাদকদের নিয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় নজরুল ইসলাম খানকে আহ্বায়ক ও মরহুম জাফরুল হাসানকে সদস্য সচিব করে ৯ সদস্যবিশিষ্ট স্ট্যান্ডিং অর্ডার্স কমিটি গঠন করা হয়। সেখানে বর্তমান সভাপতি আনোয়ার হোসাইন ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম খান নাসিমকে ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করার নির্দেশ দেয়া হয় এবং চলতি বছরের ২১ মার্চ আবার কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। ওই তারিখে হল খালি না পাওয়ায় এপ্রিলের ১১ তারিখ আবার কাউন্সিলের সময় নির্ধারণ করা হয়। এরপর করোনা মহামারীর শুরুর দিকে সংগঠনটির উপদেষ্টা ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাফরুল হাসানের মৃত্যুতে আবারো অনিশ্চয়তায় পড়ে শ্রমিকদলের কাউন্সিল। পরে সারা দেশে লকডাউন ঘোষণা করা হলে মূল দলসহ তাদের সহযোগী সংগঠনগুলোর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থগিত ঘোষণা করে বিএনপি। ফলে এখনো কাউন্সিল হয়ে উঠেনি শ্রমিকদলের।

তারপরও শ্রমিকদলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা, শ্রমিকদলকে গতিশীল করার লক্ষ্যে খুব দ্রুতই একটি সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি ঘোষণা করে একটি সফল কাউন্সিল সম্পন্ন করা হবে। তারা মনে করেন, দেশের রাজনীতিতে এখন সার্বিকভাবে চলছে ক্রান্তিকাল। এ অবস্থায় বিএনপির রাজনীতিতে শ্রমিকদলের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। আর সে জন্য শ্রমিকদলকে করতে হবে আরো শক্তিশালী ও গতিশীল। মূলত এসব দিক সামনে রেখেই দ্রুত এ উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার বলে মনে করছেন শ্রমিকদলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা।

শ্রমিকদলের কাউন্সিল সম্পর্কে জানতে চাইলে সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান নয়া দিগন্তকে বলেন, শ্রমিকদলের কাউন্সিল করার জন্য আরো অনেক আগেই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে কাউন্সিল বিলম্বিত হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে কাউন্সিল করা হবে।

শ্রমিকদলের উপদেষ্টা ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সারোয়ার নয়া দিগন্তকে বলেন, সংগঠনকে গতিশীল করার জন্য কমিটি পুনর্গঠন করা জরুরি এবং সেটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। সেই লক্ষ্যে এ বছরের শুরুর দিকে শ্রমিকদলের কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। এ লক্ষ্যে একটা কমিটি করা হয়েছিল। ওই কমিটিতে আমি ও আব্দুল্লাহ আল নোমান ভাই ছিলেন। কিন্তু শ্রমিকদলের অন্যতম উপদেষ্টা জাফরুল হাসানের মৃত্যু ও করোনা মহামারীর কারণে কাউন্সিল করা সম্ভব হয়নি। আমি মনে করি, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর কাউন্সিলের মাধ্যমে শ্রমিকদল তাদের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করবে।

শ্রমিকদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আনোয়ার হোসাইন নয়া দিগন্তকে বলেন, আমাদের কাউন্সিলটি আরো অনেক আগে হওয়ার কথা থাকলেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিভিন্ন কারণে সেটা হয়ে উঠেনি। বিশেষ করে করোনা মহামারীর কারণে আমাদের কাউন্সিল বিলম্ব হয়েছে। আমি মনে করি, সংগঠনকে গতিশীল করার লক্ষ্যে কাউন্সিল খুব দ্রুত হওয়া প্রয়োজন। আমরা যত দ্রুত সম্ভব কাউন্সিল করার চেষ্টা করছি। এ সময় শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম খান নাসিম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে তিনি সব দিক দিয়ে ফিট। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে কেন বিভিন্ন কর্মসূচি এড়িয়ে চলছেন সেটা তিনি ভালো বলতে পারবেন।

শ্রমিকদলের কার্যকরী সভাপতি সালাউদ্দিন সরকার নয়া দিগন্তকে বলেন, করোনা মহামারীর কারণে কাউন্সিল বিলম্বিত হয়েছে। এখন আবার কবে কাউন্সিল হবে সেটা ঠিক করবে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা এবং শ্রমিকদলের সাংগঠনিক অভিভাবক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তবে আমার ব্যক্তিগত ধারণা ২০২১ সালের মার্চের আগে কাউন্সিল হচ্ছে না।

শ্রমিকদলের উপদেষ্টা ও বিএনপির সহ-শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান নয়া দিগন্তকে বলেন, কাউন্সিলের জন্য যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত তাদের তেমন কোনো কার্যক্রম লক্ষ করছি না। সারা দেশে ছাত্রদল, যুবদলের কাউন্সিলের জন্য বিভাগে বিভাগে কমিটি পুনর্গঠনের জন্য টিম করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু শ্রমিকদল যেখানে ছিল ঠিক সেই জায়গায় আছে। শ্রমিকদলে একটির পর একটি শুধু অজুহাত থাকে। এ নিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ।

শ্রমিকদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল খায়ের খাজা বলেন, ‘আমার কাছে মনে হচ্ছে করোনা মহামারীর কারণে সরকার এই মুহূর্তে কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের অনুমতি দেবে না। যদিও সেটা আমরা চেষ্টা করিনি। তবে আমরা বড় হলগুলোতে মিলাদ মাহফিল করতে চেয়েছিলাম। সেখানে আমাদের অনুমতি দেয়া হয়নি।
শ্রমিকদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক মিঞা মিজানুর রহমান বলেন, আমরা তো চেয়েছিলাম কাউন্সিলটা তাড়াতাড়ি হোক। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে মনে হচ্ছে না মার্চের আগে কাউন্সিল হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শ্রমিকদলের সভাপতি কাজী আমির খসরু বলেন, শ্রমিক দলের কাউন্সিল হওয়াটা খুব জরুরি। কারণ বর্তমান কমিটির অনেকে মারা গেছেন, কেউ অবসরে গেছেন আবার অনেকে আছেন ইনঅ্যাক্টিভ। তাই কাউন্সিলে মাধ্যমে কমিটি আপডেট করা দরকার। তবে করোনাভাইরাসের কারণে শিগগিরই সেটা করা সম্ভব হবে বলে মনে করি না।


আরো সংবাদ



premium cement
ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মিজানুরের ইন্তেকাল থাইল্যান্ডের রাজা-রাণীর সাথেপ্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ গ্যাস বিতরণে সিস্টেম লস ২২ শতাংশ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশে নেমে এসেছে : নসরুল হামিদ গণকবরে প্রিয়জনদের খোঁজ কক্সবাজারে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু, স্বজনদের হাসপাতাল ঘেরাও বঙ্গোপসাগরে ১২ নাবিকসহ কার্গো জাহাজডুবি ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশকে ‘নেট সিকিউরিটি প্রোভাইডার’ হিসেবে দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র রাজশাহীতে তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি রাজশাহীতে টানা তাপদাহ থেকে বাঁচতে বৃষ্টির জন্য কাঁদলেন মুসল্লিরা শরীয়তপুরে তৃষ্ণার্ত মানুষের মাঝে পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ জামায়াতের এক শ্রেণিতে ৫৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী নয় : শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী

সকল