০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সাবধানের মার নেই

-

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের তাণ্ডব শেষ না হতেই ‘ওমিক্রন’ নামক নতুন ভ্যারিয়েন্ট বা ধরন দেখা দিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় বতসোয়ানায় প্রথম শনাক্ত হলেও এ ভাইরাস বিশ্বের প্রায় ৬৫টি দেশে শনাক্ত হয়েছে। ফলে নতুন করে ওমিক্রন নিয়ে জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। সংক্রমণের ক্ষিপ্রতার দিক থেকে করোনার চেয়ে এ ভাইরাস অনেক গুণ এগিয়ে। সংক্রমণের ক্ষিপ্রতা ও ক্ষতির কথা ভেবে ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’ বিশ্বজুড়ে সাবধানবাণী উচ্চারণ করেছে। সতর্কতার কথা বলেছে। বিমান ও অন্যান্য মাধমে দেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। সুতরাং এ থেকে সহজে অনুমান করা যায় ওমিক্রনের ভয়াবহতা। তবে এ পর্যন্ত এই ধরনে আক্রান্ত হয়ে কারো মৃত্যু হয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে ওমিক্রনের প্রকোপে দক্ষিণ আফ্রিকায় মোট আক্রান্ত ৩০ লাখ ছাড়িয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিজ্ঞানীরা এক গবেষণায় জানিয়েছেন, ডেল্টা ও বেটা ধরনের তুলনায় ওমিক্রনের পুনরায় সংক্রমিত করার ক্ষমতা তিন গুণ বেশি। এমনকি করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে গড়ে ওঠা প্রতিরোধব্যবস্থা ভেঙে দেয়ার সক্ষমতাও ওমিক্রনের রয়েছে।

বিশ্বের দেশগুলোকে প্রাথমিক সাবধানতার প্রস্তুতির ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। কারণ, অত্যন্ত দ্রুততার সাথে ওমিক্রন দ্বারা আফ্রিকা, আমেরিকা, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ও আমাদের প্রতিবেশী ভারতেও সংক্রমণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। খবর অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত দেশটিতে ৩২ জনের দেহে ওমিক্রনের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। সবচেয়ে বেশি শনাক্ত হয়েছে মুম্বাইয়ে। এর প্রতিরোধে এ রাজ্য দুই দিনের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করেছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না। সুতরাং আগে থেকেই সতর্ক না হলে ওমিক্রন আগ্রাসী রূপ ধারণ করতে পারে। সতর্কতার অংশ হিসেবে গ্রেট ব্রিটেনের সব অফিস ও স্কুলে মাস্ক বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আফ্রিকা থেকে অন্যান্য দেশে বিমানে ও অন্যান্য মাধ্যমে ভ্রমণে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। করোনার কারণে বিধ্বস্ত অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখা এবং বিশ্ব অর্থনীতি যেন ওমিক্রনে ধ্বংসস্তূপে পরিণত না হয় সে জন্য এই ব্যবস্থা। ওমিক্রনের ভয়াবহতা নিয়ে গবেষক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান এখনো সঠিক তথ্য-উপাত্ত দিতে পারেননি। ওমিক্রন এখনো বিধ্বংসী রূপ নিয়ে আবির্ভূত হয়নি। কিন্তু ৫১ ভাগ পরিবর্তিত জিনোম সিকোয়েন্স নিয়ে যদি তা আঘাত হানে তা সইবার অবস্থা এখনো প্রশ্নবিদ্ধ!

ওমিক্রনের টিকা নিয়েও শুরু হয়েছে বিস্তর গবেষণা। হয়তো ওমিক্রনের টিকাও আবিষ্কার হবে। ওমিক্রনের ক্ষেত্রে কোভিড টিকা সার্বিক সুরক্ষা দিতে অপারগ। সম্প্রতি ওমিক্রন নিয়ে আলাদা দু’টি গবেষণা চালান ফাইজার-বায়োএনটেক ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিজ্ঞানীরা। দু’টি গবেষণাতেই দেখা গেছে, করোনার আগের ধরনগুলোর তুলনায় ওমিক্রনের বিরুদ্ধে টিকা কম সুরক্ষা দেয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা এমনটিই জানিয়েছেন। আর ভয় এখানেই। এখনো আমরা কোভিডের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের মরণছোবল থেকে বেরিয়ে আসতে পারিনি। এ ব্যাপারে ওমিক্রনের আঘাত মোকাবেলার জন্য আগাম সতর্কতা ছাড়া আর কোনো ব্যবস্থা এখনো দেখা যাচ্ছে না। কোভিড সম্পর্কিত জাতীয় পরামর্শক কমিটি সরকারকে কিছু পরামর্শ দিয়েছে। বাস্তবে তার প্রয়োগ অনুপস্থিত। অফিস-আদালত, হাট-বাজার, দোকানপাট, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সর্বত্র কোভিড-পূর্ববর্তী অবস্থা বিরাজমান। কেউ কোনো স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। সীমিত সম্পদ এবং সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ওমিক্রনের আগ্রাসনকে ঠেকাতে হলে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির বিকল্প নেই। কেবল সরকারি উদ্যোগের জন্য বসে থাকলে চলবে না। কোভিড মোকাবেলার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ওমিক্রন যুদ্ধে সবাইকে অংশগ্রহণ করতে হবে। আমাদের মনে রাখা দরকার, সাবধানের মার নেই।

লেখক : অধ্যাপক ও চক্ষুরোগ রিশেষজ্ঞ
Email- shah.b.islam@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement