১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আয়া সোফিয়ার মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে

আয়া সোফিয়া - ছবি : সংগৃহীত

গত ১০ জুলাই তুরস্কের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক আদালত ইস্তাম্বুলের ঐতিহাসিক ‘আয়া সোফিয়া’কে পুনরায় মসজিদ হিসেবে ব্যবহারের আদেশ দিয়েছেন। তুরস্কের বেশির ভাগ মানুষ এতে সন্তোষ প্রকাশ করলেও পশ্চিমা বিশ্বে তা সমালোচিত হয়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান এই আদেশ কার্যকর করা তুরস্কের সার্বভৌম অধিকার এবং এটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে জানিয়েছেন। ২৪ জুলাই জুমার নামাজ আদায়ের মাধ্যমে এই আদেশ কার্যকর হবে বলে তুরস্কের ধর্ম সম্পর্কিত পরিচালকের দফতর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল আগেই। গ্রিস, যুক্তরাজ্য, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ইত্যাদি দেশ তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে ‘মানবাধিকার ও ধর্মনিরপেক্ষতার অভিভাবক’ হিসেবে। সর্বোচ্চ ক্যাথলিক ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস দুঃখ প্রকাশ করে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তাদের এই প্রতিক্রিয়ার যৌক্তিক, নৈতিক ও আইনগত ভিত্তি ইতিহাসের আয়নায় আলোচনা করা দরকার।

গোড়ার কথা : বাইজেন্টাইন শাসক প্রথম কন্স্টানটাইন ৩২৫ সালে একটি পৌত্তলিক মন্দিরের ভিতের ওপর গির্জা নির্মাণের আদেশ দেন। পরে দ্বিতীয় কন্স্টানটাইন ৩৬০ সালে ‘আয়া সোফিয়া’ নামক অর্থোডক্স গির্জা উদ্বোধন করেন। এর মধ্যে অর্থোডক্স এবং ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হলে ৪০৪ সালে প্রথম ‘আয়া সোফিয়া’ ধ্বংস হয়। রাজা থিওডোসিয়াস-২ দ্বিতীয় ‘আয়া সোফিয়া’ ৪০৫ সালে উদ্বোধন করেছিলেন। এটি ৫৩২ সালে পুনরায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হলে সম্রাট জাস্টিনিয়ান ২৬ ডিসেম্বর ৫৩৭ সালে তৃতীয় ‘আয়া সোফিয়া’ উদ্বোধন করেন। ১২০৪ সালে চতুর্থ ক্রুসেডের সময় ‘আয়া সোফিয়া’ লুটের শিকার হয়েছিল। ওই ক্রুসেডে খ্রিষ্টান ক্যাথলিকরা কন্স্টানটিনোপল জয় করে ‘আয়া সোফিয়া’কে ক্যাথলিক গির্জায় পরিণত করে। ১২৬১ সালে অর্থোডক্স খ্রিষ্টানরা ক্যাথলিকদের পরাজিত করে পুনরায় এটিকে অর্থোডক্স গির্জায় রূপান্তরিত করে।

মুসলমানদের গির্জা ক্রয় : অটোমান সুলতান মেহমেত-২ বা দ্বিতীয় মোহাম্মদ ১৪৫৩ সালে কন্স্টানটিনোপল জয় করেন যার বর্তমান নাম ইস্তাম্বুল। জয় করার পর তিনি যাজকদের কাছে আয়া সোফিয়া বিক্রি করার জন্য আবেদন জানান। যাজকরা রাজি হলে তিনি ব্যক্তিগত অর্থের বিনিময়ে গির্জাটি ক্রয় করে নেন। এরপর সুলতান মেহমেত আয়া সোফিয়ার কোনো ক্ষতি না করে এর সৌন্দর্য বহুগুণে বৃদ্ধি করেন এবং এতে মিনার ও মিম্বার সংযোজন করেন। তিনি এর ভেতরে অবস্থিত খ্রিষ্টানদের উপাসনার ছবিগুলো সম্মানে ঢেকে রাখেন, সেগুলো বর্তমানেও অক্ষত অবস্থায় রয়েছে। সেই সাথে গির্জাটিকে মসজিদে রূপান্তরিত করে এতে মহান আল্লাহর ইবাদত করার জন্য উন্মুক্ত করে দেন। পরে মহামতি সোলায়মান আয়া সোফিয়াতে ঝর্ণা, ক্যালিগ্রাফিক রাউন্ডেলস, পাঠাগার ইত্যাদি স্থাপন করে এটিকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলেন। এভাবে প্রায় ৫০০ বছর মুসলমানরা ‘আয়া সোফিয়া’কে সসম্মানে প্রার্থনার স্থান হিসেবে ব্যবহার করে আসছিলেন। কিন্তু ১৯৩৪ সালে তুরস্কের শাসক কামাল আতাতুর্ক উগ্র ধর্মনিরপেক্ষতার আবরণে এই মসজিদটিকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করেন। এভাবে প্রায় ৫০০ বছর ধরে চলে আসা একটি সম্মানিত স্থাপনাকে অসম্মানিত করা হয়েছিল। পরে ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো এটাকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ স্থাপনা বলে ঘোষণা দেয়। এমতাবস্থায় ২০০৫ সালে তুরস্কের একটি পরিবেশবাদী সংগঠন আতাতুর্কের জাদুঘর করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে। কারণ, সুলতান মেহমেত স্থাপনাটি ব্যক্তিগত অর্থে ক্রয় করে মসজিদের জন্য ওয়াকফ্ বা দান করেছিলেন। আদালত ২০০৮ সালে মামলাটি খারিজ করে দেন। বাদিপক্ষ পুনরায় আদালতের শরণাপন্ন হলে ২০২০ সালের ১০ জুলাই সর্বোচ্চ আদালত আলোচিত রায় ঘোষণা করেন।

কয়েকটি ঐতিহাসিক মসজিদের অবস্থা
ক. বায়তুল মুকাদ্দাস : বায়তুল মুকাদ্দাস মসজিদের অবস্থানের কারণে ১৯৪৭ সালে জাতিসঙ্ঘের সিদ্ধান্ত মোতাবেক জেরুসালেমকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মালিকানায় দিয়ে জাতিসঙ্ঘের প্রশাসনিক আওতাধীন রাখা হয়। কিন্তু ইহুদিবাদী ইসরাইল ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর থেকে জেরুসালেমে অবৈধ দখলদারিত্ব কায়েম করতে শুরু করে। ১৯৮০ সালে তারা আন্তর্জাতিক আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জেরুসালেমকে তাদের রাজধানী ঘোষণা করে। কিন্তু বায়তুল মুকাদ্দাস মুসলমানদের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান যেখানে হজরত মুহাম্মদ সা: সব নবীর নামাজে ইমামতি করেছেন এবং এই মসজিদ থেকেই তাঁর মিরাজের যাত্রা শুরু করেছিলেন। ১৯৬৭ সালে ইসরাইল জর্দানের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল, এই মসজিদের ভেতরটি মুসলমানদের নিয়ন্ত্রণাধীন থাকবে এবং বাইরের নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকবে ইসরাইলের। আর শুধু মুসলমানরাই এখানে নামাজ আদায় করতে পারবে। অন্য ধর্মাবলম্বীরা শুধু পরিদর্শনের উদ্দেশ্যে ভেতরে প্রবেশ করতে পারবে। কিন্তু বর্তমানে ইসরাইলিরা ফিলিস্তিনের মুসলমানদের ওপর বিভিন্ন ধরনের নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে এ মসজিদে প্রবেশ করতে বাধা সৃষ্টি করছে। একটি নির্দিষ্ট বয়সের বেশি বয়স্ক মুসলমানদেরকেই তারা শুক্রবারের নামাজ পড়ার অনুমতি দিচ্ছে। বাকিদের ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নামাজ পড়তে আসার জন্য অনুমতি নিতে হয়। ২০১৫ সালে একদল ইহুদি তাদের ‘জাতীয় ছুটি উদযাপনের জন্য’ মসজিদে প্রবেশের চেষ্টা চালায়। ২০১৬ সালে আরেক দল ইহুদি রমজানের শেষ ১০ দিন মুসলমানদের ইতেকাফকালে অবস্থায় মসজিদে প্রবেশ করে মুসলমানদের ইবাদত বন্দেগিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। এমনকি ইসরাইলি মন্ত্রীরা মসজিদের নিচের টানেলে পূর্ব জেরুসালেম দখলের অর্ধশত বছর উদযাপন এবং পুরো জেরুসালেম দখলের পরিকল্পনা করার জন্য সভার আয়োজন করেন। সবচেয়ে ভয়ানক হলো, ইহুদিরা চুক্তি ভঙ্গ করে মসজিদের ভেতর প্রার্থনা করার প্রয়াস পাচ্ছে। তারা তিন হাজারের বেশি নিরাপত্তা বাহিনীর সশস্ত্র সদস্যকে বায়তুল মুকাদ্দাস মসজিদের আশপাশে মোতায়েন করে রেখেছে।

খ. আল আহমার মসজিদ : অন্যদিকে উত্তর ফিলিস্তিনের ত্রয়োদশ শতাব্দীর আল আহমার মসজিদটিকে ইসরাইলের সাফাদ নগর কর্তৃপক্ষ পানশালা ও কমিউনিটি সেন্টারে পরিণত করেছে। ১৯৪৮ সালে ওই এলাকা দখল করার পর থেকে সেখানে মুসলমানদের নামাজ পড়া নিষিদ্ধ রয়েছে (নয়া দিগন্ত : ১৫ জুলাই ২০২০)।

গ. উইঘুর : সাম্প্রতিককালে উইঘুর মুসলমানদের ওপর চীন সরকারের নির্যাতনের খবর সবারই জানা। ১৩ মিলিয়ন জাতিগত উইঘুর মুসলমানের কমপক্ষে এক মিলিয়ন মানুষকে ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টারের নামে বন্দিশালায় আটক করে রাখা হয়েছে। ২০১৬ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের প্রতিটি শহর, বন্দর ও গ্রামের শতকরা ৪০ ভাগ ধর্মীয় স্থাপনা (মসজিদ, মাজার, পাঠাগার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান) পুরোপুরি ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। দ্য গার্ডিয়ান উইকলির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- গবেষকরা বিশ্বাস করেন, জিনজিয়াং প্রদেশে হাজার হাজার মসজিদ বুলডোজার দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। ২০১৭ সালে একজন প্রতিবেদক কুমুলের পূর্বাঞ্চল পরিদর্শন করে দেখতে পান, সেখানে ৮০০ মসজিদের মধ্যে ২০০টি ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে।

ঘ. বাবরি মসজিদ : ভারতবর্ষের সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্র্রষ্টা প্রথম মুঘল সম্রাট বাবর ১৫২৮ সালে উত্তর ভারতের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ নির্মাণ করেন। এরপর থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এই মসজিদে নামাজ আদায় করে আসছেন। ধর্মনিরপেক্ষতার নামে মূলত হিন্দু অধ্যুষিত দেশ হিসেবে ভারত জন্ম লাভের পর ১৯৪৯ সালেই এই মসজিদের অভ্যন্তরে হিন্দুরা দেবতা রামের মূর্তি স্থাপন ছাড়াও এই মসজিদ রামের জন্মস্থান ও রামমন্দিরের স্থানে নির্মাণ করা হয়েছিল বলে দাবি করে। পরে ১৯৮৬ সালে ভারত সরকার ওই মসজিদে মুসলমানদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সাধারণ হিন্দুদের প্রবেশের অনুমোদন দেয়। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর উগ্র হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ভারতীয় সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের অন্যতম ধারক, মসজিদটিকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে ফেলে। এতে দুই হাজারেরও বেশি মানুষ (প্রধানত মুসলমান) প্রাণ হারান। এটিকে কেন্দ্র করে বর্তমান ভারত সরকারের কার্যকলাপ আরো সাম্প্রদায়িক, আরো অমানবিক হয়ে ওঠে। গত ৯ নভেম্বর, ২০১৯ সালে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত চূড়ান্ত রায়ের মাধ্যমে বাবরি মসজিদের ধ্বংসাবশেষের ওপর রামমন্দির নির্মাণের আদেশ দেন। এই রায়ে মসজিদ ভাঙায় অংশগ্রহণকারীদের ব্যাপারে কোনো কিছু না বলে ধ্বংসাত্মক ওই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে আদালতের মাধ্যমে সমর্থন করা হয়েছে। বিচারকরা স্পষ্টত হিন্দু ধর্মবিশ্বাসের ওপর ভর করেই রায় দিয়েছেন বলে উচ্চারণ করেছেন। ওই বিতর্কিত বিশ্বাসের কাছে সাক্ষ্য-প্রমাণ পুরোপুরি আত্মসমর্পণ করেছে। বিচারকদের কাছে ওই স্থানটিতে রামের জন্মস্থান ও রামমন্দিরের অস্তিত্বে¡র কোনো প্রতœতাত্ত্বিক ও ইতিহাসভিত্তিক সত্যের প্রমাণ নেই। অতি সম্প্রতি নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেসি শর্মা ওলি দাবি করেছেন, রাম নেপালের রাজপুত্র ছিলেন এবং অযোধ্যা হলো নেপালের বীরগঞ্জের পশ্চিমের একটি গ্রাম। ওই গ্রামেই রাম জন্মেছিলেন। তার মতে, সীতা এবং রাম দু’জনেই ছিলেন নেপালি।

এরকম অসংখ্য উদাহরণ ইতিহাসের পাতায় রয়েছে যেখানে মুসলমানদের, তাদের মসজিদের ওপর ও অন্যান্য ধর্মীয় স্থাপনার ওপর ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। তখন আমরা বিশ্ব মোড়লদেরকে ‘ধর্মনিরপেক্ষতার ওপর আঘাত করা হচ্ছে’ বলে বিলাপ করতে দেখিনি। বরং মনে মনে তারা খুশিই হয়েছেন বলে মনে হয়েছে। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭৯৩ সালে লাখেরাজ সম্পত্তি জবরদখল করে একদিনে এক লাখ মাদরাসা বন্ধ করে দিয়েছিল এই উপমহাদেশে। ১৬১০ খ্রিষ্টাব্দে ফার্দিনান্দ রাজা ও রানী ইসাবেলা স্পেনের মুসলমানদের সাথে চুক্তি ভঙ্গ করে শত শত মসজিদকে গির্জায় পরিণত করেছিলেন। হাজারো মুসলমানকে মসজিদে আশ্রয় নিতে বাধ্য করে তাতে আগুন ধরিয়ে হত্যা করা হয়। সোভিয়েত রাশিয়ায় ৭০ বছরের সমাজতান্ত্রিক শাসনের নামে শত শত মসজিদ বন্ধ করে সেগুলোতে সিনেমা হল, থিয়েটার বা জাদুঘর স্থাপন করা হয়েছিল। নিকট অতীতে বসনিয়ায় মুসলিম জাতিগত নিধনের প্রক্রিয়া এখনো পাশ্চাত্যের দ্বারা মানবাধিকার ছিনতাই করার ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে রয়েছে। ১৯৯৫ সালের ১১ জুলাই বসনিয়ার সেব্রেনিকায় জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তাবলয়ের মধ্যে ডাচ ব্যাটালিয়নের সৈন্যদের তত্ত্বাবধানে সার্বীয় বাহিনী অবাধে গণহত্যা চালিয়ে ৮ হাজার ৩৭২ জন মুসলমানকে হত্যা করে মাটিচাপা দেয়।

ঙ. পশ্চিমা সভ্যতার দ্বিমুখীনীতি : এটা স্পষ্ট, পশ্চিমা দেশগুলোর সভ্যতার চরম শিখরে উঠেও তারা এখনো সভ্য হয়ে উঠতে পারেনি। মুসলমানদের বিষয়ে তাদের মানবাধিকার নীতির সংজ্ঞা আসলে অমানবিক। ফিলিস্তিনি বালক-বালিকাদের ইসরাইলি সেনারা গুলি করে হত্যা করলে তা হয় ইহুদিদের ‘আত্মরক্ষার অধিকার’। হঠাৎ ভারতের হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক সরকার সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে কাশ্মিরি মুসলমানদের কারাগারে আবদ্ধ করলে তা হয় ভারতের ‘অভ্যন্তরীণ’ বিষয়। ইরাক, আফগানিস্তান আর সিরিয়ায় হাজার হাজার মুসলমান নারী-শিশুকে পশ্চিমা সশস্ত্রবাহিনী হত্যা করলে তা হয় ‘সন্ত্রাস নির্মূল অভিযান’। অন্য দিকে তুরস্কের সার্বভৌম সরকার নিজেদের সম্পত্তি জাদুঘর থেকে মসজিদে রূপান্তরিত করলেও তা নাকি অমানবিক ও সাম্প্রদায়িক।

মানবিকভাবে বিবেচনা করলে বলতে হবে, ‘আয়া সোফিয়া’ আরো সম্মানিত হয়েছে। সুলতান মেহমেত-২ কন্স্টানটিনোপল জয় করে ফার্দিনান্দ ও ইসাবেলার মতো ধ্বংসযজ্ঞ চালাননি। বরং আয়া সোফিয়াকে নিজের অর্থের বিনিময়ে যাজকদের কাছ থেকে ক্রয় করেছেন। পরে আরো সৌন্দর্যমণ্ডিত করে একে ইবাদতখানা বা মসজিদ বানিয়েছেন। খ্রিষ্টানদের ব্যবহার করা ছবিগুলোরও তিনি কোনো ধরনের অবমাননা করেননি। সেগুলোকে তিনি যত্নের সাথে ঢেকে রেখে দিয়েছিলেন, যেহেতু ছবি নামাজ আদায়ে প্রতিবন্ধক। কামাল পাশা ধর্মনিরপেক্ষতার অজুহাতে ওয়াক্ফ করা সম্পত্তিকে অবৈধভাবে নিজের খুশি মতো এর মর্যাদা পরিবর্তন করেছেন। বর্তমান তুরস্ক সরকার আয়া সোফিয়ার মর্যাদা ফিরিয়ে দিয়েছেন। আদালতের রায়ের মাধ্যমে তা করা হয়েছে। এর পূর্ববর্তী জাদুঘরের মর্যাদাও বহাল রেখেছেন যেন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই তা পরিদর্শনের সুযোগ পান। অথচ ভারত সরকার আদালতকে পাশ কাটিয়ে সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে একটি জনগোষ্ঠীর মৌলিক অধিকারকে পদদলিত করলেও তা নাকি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। মুসলমানরা বিশ্ব মোড়লদের এই বিবেকহীন ও একদেশদর্শী আচরণের শিকার হলেও ‘আয়া সোফিয়ার’ বেলায় তারা সম্মানজনক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন।

লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং পিএইচডি গবেষক

E-mail: maksud2648@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement