১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলকদ ১৪৪৫
`


ঢাকা-না’গঞ্জ পুরনো সড়ক চলাচলের অনুপযোগী ১০ কিলোমিটারজুড়ে পদে পদে দুর্ভোগ

-

একসময় ঢাকার সাথে বাণিজ্যিক নগরী নারায়ণগঞ্জ জেলার যোগাযোগের একমাত্র সড়ক ছিল এটি। এ সড়ককে ঘিরে গড়ে তোলা হয় অনেক শিল্প কারখানা। দেশের বৃহৎ নিট শিল্পপণ্য এ সড়ক দিয়েই যাতায়াত করে ফতুল্লা বিসিক থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়।
এ ছাড়া সড়কের পাশেই রয়েছে যমুনা তেলের ডিপো, ইমারত নির্মাণসামগ্রীর বিক্রির দেশের বৃহৎ মার্কেট মুন্সিখোলা। যমুনা তেলের ডিপো থেকে ট্যাংক লরিতে করে এখনো দেশের বিভিন্ন জেলায় জ্বালানি তেল সরবরাহ হয়ে থাকে।
কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য যে সড়কের পাশে, সেই সড়কটি আজ চরম অবহেলিত। ১০ কিলোমিটার সড়কে পদে পদে পোহাতে হয় দুর্ভোগ। ভাঙাচোরা ও সরু রাস্তা এবং যানজট এখানের নিত্যদিনের চিত্র। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কের দুই পাশ দখল করে আছে অবৈধ দখলদাররা।
সূত্র জানায়, গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি ঢাকা-পাগলা-নারায়ণগঞ্জ সড়ক নামেই বেশি পরিচিত। নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া থেকে শুরু করে পোস্তগোলা পর্যন্ত সড়কটি দুই ভাগে নিয়ন্ত্রণ করে সওজ নারায়ণগঞ্জ এবং সওজ ঢাকা বিভাগ। তবে নারায়ণগঞ্জ জেলা সীমানা হলেও সড়কটি বেশির ভাগ নিয়ন্ত্রণ করে সওজ ঢাকা বিভাগ। এ সড়কের সাথে ফতুল্লা থানার পঞ্চবটি এলাকায় যুক্ত হয়েছে ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ সড়কটি।
ব্যস্ততম এ সড়কটির দুই পাশে অসংখ্য শিল্পপ্রতিষ্ঠান থাকলেও উন্নয়ন হয়নি বছরের পর বছর। খানাখন্দকে ভরা এ সড়কে যাতায়াতাকারীদের ভুগতে হয় দিনের পর দিন।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সাব-ডিভিশন-১ (ঢাকা) এর একজন উপসহকারী প্রকৌশলী বলেন, নারায়ণগঞ্জের অন্যান্য সড়কের জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগের আলাদা অংশ আছে। কিন্তু এ সড়কটি ঢাকা বিভাগেই রেখে দেয়া হয়েছে। আর্থিক স্বল্পতা সব বিভাগের মতো আমাদেরও আছে। ঢাকায় যে পরিমাণ সড়ক আছে সেগুলোতে কাজ করে তার পর এখানে আসতে হয়। তাই এ সড়কে কাজ করার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ পাওয়া যায় না। এ জন্য এ সড়কে বড় ধরনের কোনো সংস্কার করা সম্ভব হয় না।
সূত্র জানায়, চাষাঢ়া প্রান্ত থেকে পাগলা পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার সড়কের বেশির ভাগ এখন ভাঙা। রাস্তার পাথর, ইট, খোয়া উঠে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি তোলারাম কলেজ, সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, আদর্শ স্কুল, চাইল্ড ল্যাবরেটরি স্কুলসহ ১৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং কেয়ার জেনারেল হাসপাতাল, ১০টি ক্লিনিক এবং শতাধিক কোচিং সেন্টার রয়েছে এই সড়কের দুই পাশে।
এ ছাড়া প্রতিদিন কয়েক লাখ মানুষ এই পথে যাতায়াত করেন। শুষ্ক মৌসুমে ওড়ে ধুলা। নিত্যদিনের যাত্রীও পথচারীদের তাই পোহাতে হয় সীমাহীন দুর্ভোগ। রাস্তার দুই পাশে কোনো ফুটপাথ নেই। পথচারীদের রাস্তার পাশ দিয়েই চলাচল করতে হয়। যানবাহনের ধুলাবালুতে তাদের হতে হয় নাকাল। সড়কের উভয় পাশে অবস্থিত বিভিন্ন আবাসিক এলাকার বাসিন্দারাও চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
নারায়ণগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে ছাত্রী নুসরাত কামাল জানায়, বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার পথে ধুলার জ্বালায় তারা অতিষ্ঠ। এতে তাদের অনেক ছাত্রীই নানা অসুখে আক্রান্ত হচ্ছে।
সূত্র জানায়, ১৯৯৭ সালে আট কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া থেকে ঢাকার পোস্তগোলা পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার সড়কটি ছিল ঢাকার সাথে নারায়ণগঞ্জ শহরের যোগাযোগের প্রধান সড়ক। এটি এখন ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরনো সড়ক হিসেবে পরিচিত। শুধু ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ যোগাযোগই নয়, মুন্সীগঞ্জ শহর, মুক্তারপুর শিল্প এলাকা, ফতুল্লা পঞ্চবটির বিসিক শিল্পনগর, ফতুল্লা শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন কারখানার রফতানিমুখী পণ্য ও কাঁচামাল এই সড়ক দিয়েই চট্টগ্রাম বন্দরে আনা-নেয়া হয়। কাভার্ডভ্যান, কনটেইনার মুভারসহ ভারী যানবাহন থেকে শুরু করে রিকশা পর্যন্ত চলাচল করে এই সড়কে।
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-পোস্তগোলা (ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরনো সড়ক হিসেবে পরিচিত) সড়কের ফতুল্লা থেকে পোস্তগোলা পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার রাস্তা যানবাহনের জন্য মারণফাঁদে পরিণত হয়েছে। ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত সড়কটিকে মারণফাঁদে পরিণত করেছে।
বিশেষ করে বৃষ্টি হলে সড়কটির গর্তগুলো পানিতে ভরে গিয়ে যানবাহনের জন্য গোলকধাঁধা সৃষ্টি করে। ফলে ছোট যানবাহনগুলো এসব গর্তে পড়ে উল্টে যায়।
সড়কটির আলীগঞ্জ অংশের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। ওই অংশের গর্তগুলো এতটাই বড় যে সেগুলো বড় বড় যানবাহনের জন্যও ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। গর্তগুলোর ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় বাস, ট্রাক, ট্রেইলারগুলোকে বিপজ্জনকভাবে হেলেদুলে যেতে দেখা যায়।

আলীগঞ্জ এলাকায় রাস্তার পাশের চা দোকানি শামসুল আলী বলেন, যে কয়েক দিন গর্তগুলো পানিতে ভরা ছিল, ওই সময় প্রতিদিন কমপক্ষে ৪-৫টি ইজিবাইক উল্টে যাওয়ার ঘটনা ঘটত। ওই সব দুর্ঘটনায় অনেক ইজিবাইক যাত্রীর হাত-পা ভেঙেছে। অনেকে জখম হয়েছেন।
আলীগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম জানান, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরনো সড়কটি সব সময়েই অবহেলিত। কারণ রাস্তাটির বেশির ভাগ অংশ নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় অবস্থিত হলেও সেটি মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ঢাকা সড়ক বিভাগের; যে কারণে রাস্তাটি সব সময় উন্নয়নের ক্ষেত্রে অবহেলিত থাকে। কিন্তু এ সড়কটি বিভিন্ন কারণেই গুরুত্বপূর্ণ।
ফতুল্লা স্টেশন রোড এলাকার বাসিন্দা সামাদ মতিন জানান, সড়কটির পাশে পাগলায় দেশের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি রড-সিমেন্টের বাজার অবস্থিত। তা ছাড়া সড়কটির ফতুল্লার দাপা এলাকায় বালু, ইট, কয়লা, পাথরের ব্যবসাও রয়েছে। এসব পণ্য নদীপথের পাশাপাশি সড়কপথেও আনা-নেয়া করা হয়। এ ছাড়াও ফতুল্লার পঞ্চবটিতে রয়েছে বিসিক শিল্পনগরী। গুরুত্ব থাকলেও উন্নয়ন নেই।
প্রায়ই সড়কে যানজট লেগে থাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা পণ্যবাীহ গাড়ি সড়কে আটকে থাকে যানজটে। এতে এক দিকে নষ্ট হচ্ছে কর্মঘণ্টা অন্য দিকে লোকসান গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।
যমুন তেল ডিপোর ট্যাংকলরি চালক আনোয়ার হোসেন জানান, এ সড়কে যানজট প্রায় প্রতিদিনই হয়; এমনকি শুক্র ও শনিবারও হয়। ফলে রাস্তায় আমাদের আটকা থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
নারায়ণগঞ্জ সড়ক বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘ওই সড়কটির প্রায় পুরোটাই ঢাকা সড়ক বিভাগের অধীনে। আমাদের অধীনে যে যৎসামান্য রয়েছে ওই অংশটুকুর অবস্থা ভালো। তবে সরকার জেলার অধীনের সড়ক মেরামত ও দেখভালের দায়িত্ব নিজ নিজ জেলার সড়ক বিভাগের ওপর ন্যস্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেটি বাস্তবায়ন হলেই সড়কটির নারায়ণগঞ্জের অংশের কাজ আমরা করতে পারব।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল