২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

জলাবদ্ধতা নিরসনের টাকায় অঢেল সম্পদের মালিক ঢাকা ওয়াসা কর্মকর্তা

বদলির জেরে হামলা চালিয়ে ছিলেন ওয়াসা ভবনে
- সংগৃহীত

একটু বৃষ্টি হলেই পানিতে তলিয়ে যায় ঢাকার অধিকাংশ এলাকা। জলাবদ্ধতায় মানুষের দুর্ভোগ যখন চরমে তখনই অভিযোগের আঙ্গুল তোলা হয় সরকারের দিকে। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ দেয়া হয়ে থাকে। সেই অর্থ খরচও দেখানো হয়। তবুও থেকে যায় জলাবদ্ধতা আর মানুষের দুর্ভোগ। অভিযোগ রয়েছে ঢাকা ওয়াসার ড্রেনেজ (আরঅ্যান্ডডি) বিভাগে কর্মরত কিছু অসাধু কর্মকর্তার দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে দূর হচ্ছে না জলাবদ্ধতা। তারা ঠিকাদারদের সাথে হাত মিলিয়ে অয়িনম-দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক বনে যাচ্ছেন। তেমন একজন কর্মকর্তা ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী মোজাম্মেল হক।

অভিযোগ রয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ এই পদে থেকে ঘুষ দুর্নীতির মাধ্যমে কামিয়েছেন বিপুল অর্থ। ঢাকার কলাবাগান ও শেরেবাংলা নগরে কিনেছেন অভিজাত ফ্ল্যাট। কেরানীগঞ্জে জমি। এ ছাড়া স্ত্রী ও সন্তানদের নামে রয়েছে তার অঢেল সম্পদক। শুধু ঘুষ-বাণিজ্য বা দুর্নীতি নয়, তার বিরুদ্ধে রয়েছে ক্ষমতার দাপটেরও অভিযোগ। নানা অনিয়মের কারণে শাস্তিস্বরূপ তাকে নারায়ণগঞ্জে বদলি করা হলে তিনি বহিরাগতদের দিয়ে ওয়াসা ভবনে হামলা চালান। এরপর তৎকালীন চেয়ারম্যানকে অবরুদ্ধ করে সেই বদলি ঠেকিয়ে স্বপদে বহাল থাকেন। তিনটি বিভাগীয় মামলা থাকার পরও মোজাম্মেল হক দাপটের সাথে অধিপত্য বিস্তার করে রেখেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

ঢাকা ওয়াসার বিভাগীয় মামলা ও বিভিন্ন তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, অনিয়মন, দুর্নীতি দায়িত্বে অবহেলা, অসদাচরণ এবং নাশকতামূলক কমর্কাণ্ডে সম্পৃক্ততা থাকার অভিযোগে ঢাকা ওয়াসা তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে। তার বিরুদ্ধে চলমান রয়েছে ৩টি বিভাগীয় মামলা। তিন মামলা ও সাময়িক বরখাস্ত থাকার পরও তার বেপরোয়া ও সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ড থামছে না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকার জলাবদ্ধতা দূর ড্রেনেজ সমস্যার সমাধান করতে একজন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, দু’জন নির্বাহী প্রকৌশলীসহ ৫০ জন দক্ষ জনবল নিয়ে ড্রেনেজ সার্কেল গঠন করা হয়েছে। মোজাম্মেল হক ড্রেনেজ সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী ছিলেন। ঢাকা দফায় দফায় ডুবলেও তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি। শুধু ওয়াসায় বসে কাল্পনিক প্রকল্প তৈরি করে সরকারি অর্থের অপচয় করতেন। টেন্ডার করে ঠিকাদারের যোগসাজশে ওইসব আত্মসাৎ করতেন। এক-এগারোর পর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদেরকে দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার ইঙ্গিত করে লিফলেট ছেড়ে ছিলেন ঢাকা ওয়াসার প্রকৌশলী মোজাম্মেল হক। ওই সময় লিফলেটে তিনি নিজেকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি পরিচয় দেন। সেই সংস্কারপন্থী মোজাম্মেল হক এখন বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল লীগ ঢাকা ওয়াসা শাখার নেতা। গত ৪ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ সাঈদ-উর-রহমান স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে বলা হয়, তার বিষয়ে ৩টি বিভাগীয় মামলা চলমান রয়েছে। গত বছরের ২১ অক্টোবর বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়।

ওই মামলায় অভিযোগ করা হয়, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ওয়াসা ভবন পরিদর্শনে গেলে তার নেতৃত্বে বহিরাগত ও ওয়াসার কিছু শ্রমিক-কর্মচারী মন্ত্রীকে স্বাগত না জানিয়ে উল্টো বিক্ষোভ করেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে অফিসে প্রবেশের নিয়ম লঙ্ঘন, দায়িত্ব পালনে অবহেলা, অসদাচরণ ও কর্তৃপক্ষ বা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নাশকতামূলক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

ওয়াসার প্রতিবেদনে মোজাম্মেল হকের অতীত কর্মকাণ্ডের বিবরণ ও বিভিন্ন শাস্তির বিবরণ তুলে ধরা হয়। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা (মামলা নম্বর ৩৩/২০১৯) তদন্তে গত ৩ মার্চ অফিস আদেশ জারি করে ওয়াসা। এতে দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্পের পরিচালক মো. মোহসেন আলী মিয়াকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়। ২০ কার্যদিবসের মধ্যে তাকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। কিন্তু তিনি এখনো তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেননি বলে জানা গেছে।

তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া দূরে থাক একটু অভিযোগও দেয়া যেতো না। ২০০৯ সালের মার্চ মাসে শাস্তিস্বরূপ মোজাম্মেল হককে নারায়ণগঞ্জে বদলি করা হলে তিনি বহিরাগত ক্যাডার নিয়ে ওয়াসা ভবনে হামলা করেন। এ সময় তারা ওয়াসা পরিচালনা বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফাকে অবরুদ্ধ করেন এবং তাকে লাঞ্ছিত করে বদলি স্থগিত করে। পানি বিভাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে বসে তিনি নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। হাজারীবাগ কালুনগর এলাকায় ওয়াসার ইউ চ্যানেল তৈরির কাজে ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশ করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেন। ওয়াসার মাস্টার প্লানে থাকা ইউ চ্যানেলের কাজ নিয়ে অনিয়ম করায় সিটি করপোরশনের সঙ্গে ওয়াসার বিরোধ দেখা দেয়। এ ব্যাপারে জানার জন্য মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।


আরো সংবাদ



premium cement