২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মিরসরাই জেবি স্কুলে হিজাব নিষিদ্ধ!

-

চট্টগ্রামের মিরসরাই জোরারগঞ্জ বৌদ্ধ উচ্চ বিদ্যালয়ে (জেবি) হিজাব নিষিদ্ধ করেছেন প্রধান শিক্ষক তুষার কান্তি বড়–য়া। হিজাব পরিধান করে গতকাল মঙ্গলবার এক ছাত্রী স্কুলে গেলে তাকে হেনস্থা ও বেত্রাঘাত করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিনকার মতো গতকাল সকালে হিজাব পরে বিদ্যালয়ে আসে অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী লামিয়া বিনতিহাসহ তিন শিক্ষার্থী। সকাল ১১টার দিকে অ্যাসেম্বলি শেষে ক্লাস শুরুর আগে প্রধান শিক্ষক তুষার কান্তি বড়–য়া তাদের ডেকে হিজাব খুলে ফেলতে বাধ্য করার চেষ্টা করে। এ সময় বিনতিহা হিজাব খুলতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে বেত্রাঘাত করে প্রধান শিক্ষক। এরপর মুহূর্তেই ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও বিনতিহার অভিভাবকরা স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে নালিশ করেন। এতে কোনো প্রতিকার না পেয়ে পরবর্তীতে বিনতিহা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে লামিয়া বিনতিহার চাচা মোহাম্মদ মহিব বিল্লাহ বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক তুষার কান্তি বড়য়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি আমাদের প্রথম বলেন, ‘স্কুলের ভেতর হিজাব পরা যাবে না।’ পরে আমার ভাতিজিকে ওই স্কুল থেকে অন্য স্কুলে নিয়ে যেতে উনার (প্রধান শিক্ষক) কাছে ট্রান্সফার সার্টিফিকেট চাই। এ সময় তিনি কিছুটা নমনীয় হয়ে বলেন, ‘আচ্ছা বিনতিহা চলতি শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত হিজাব পরলে অসুবিধে নেই। তবে আগামী বর্ষে আর পারবে না।’
এ সময় শিক্ষার্থী লামিয়া বিনতিহা এ প্রতিবেদকের কাছে বলেন, ‘ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে সে জেবি স্কুলে পড়াশুনা করছে। প্রায়শ প্রধান শিক্ষক হিজাব পরে স্কুলে এলে নানান ঝামেলা করতেন। গতকাল তিনি কিছুতেই আমাকে হিজাব পরতে দিবে না। এর আগেও আমি এবং আমার কয়েকজন সহপাঠীকে হিজাব না পরতে বাধ্য করে। এটা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না।’
অবশ্য হিজাবের জন্য শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাতের কথা অস্বীকার করে প্রধান শিক্ষক তুষার কান্তি বড়–য়া বলেন, ‘আমি মেয়েদের হিজাব নিষিদ্ধ করিনি। তারা বাড়ি থেকে স্কুল পর্যন্ত হিজাব পরিধান করতে পারবে তবে স্কুলে ঢুকলে হিজাব খুলে ক্লাস করতে হবে।’ এ সময় তিনি দাবি করেন, ‘হিজাবের জন্য আমি কোনো শিক্ষার্থীকে মারধর করিনি। তবে তাদের আমি বলেছি, ‘তোমরা স্কুলের ড্রেসকোড ফলো করবে। বাড়ি থেকে হিজাব পরে এলেও স্কুলে স্কার্ট পরবে।’
লামিয়া বিনতিহার আরেক চাচা মোহাম্মদ তুষার বলেন, নারীর পর্দা করা ইসলামে ফরজ। শিক্ষার্থীরা যদি হিজাব পরে বিদ্যালয়ে আসেন এটা তাদের স্বাধীনতা। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত মুসলিম শিক্ষার্থীদের হিজাব পরা এবং ফুল হাতা ড্রেস পরার স্বাধীনতা দেয়া। আমার ভাতিজিসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী হিজাব পরায় প্রধান শিক্ষক তাদের বেত্রাঘাত ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন। এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে আমরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’
এ বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির খান বলেন, হিজাব পরতে বাধা দেয়ার বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ছাত্রীরা যদি হিজাব পরতে চায় তাহলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ ক্ষেত্রে বাধা দেয়ার সুযোগ নেই। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো: মিনহাজুর রহমান বলেন, হিজাব পরতে বাধা দেয়ার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের ড্রেস নির্ধারণ করে দিতে পারবে কিন্তু কেউ হিজাব পরলে তাতে বাধা দিতে পারেন না। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’


আরো সংবাদ



premium cement