১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ জিলকদ ১৪৪৫
`


২৪০ কোটি ডলার ব্যয়ে রেলের দু’টি মাল্টিমোডাল হাব নির্মাণ হচ্ছে

-

যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধি না করেই রেলের অবকাঠামো উন্নয়নে একের পর এক প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে এবার ২৪০ কোটি ডলার ব্যয়ে দু’টি রেলওয়ে স্টেশনে ‘মাল্টিমোডাল হাব’ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর একটি নির্মাণ করা হবে রাজধানীর কমলাপুরে এবং অপরটি হবে বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে। জি-টু-জি ভিত্তিতে জাপান সরকারের সহযোগিতায় জাপানের বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের মাধ্যমে ‘পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ’ (পিপিপি)-এর আওতায় প্রকল্প দু’টি বাস্তবায়িত হবে। মাল্টিমোডাল হাব নির্মাণে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ব্যয় হবে ৯০ কোটি ডলার ও বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে ব্যয় হবে ১৫০ কোটি ডলার। অতি সম্প্রতি হাব দু’টি নির্মাণে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে ‘অর্থনেতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’। এর আগেও রেলের অবকাঠামো উন্নয়নে বেশ কয়েকটি ব্যয়বহুল প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে।
রেলওয়ে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, জাপান সরকারের সহযোগিতায় জি-টু-জির আওতায় প্রকল্প দু’টি বাস্তবায়নে এরই মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই করা হয়েছে। জাপানের সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের সমন্বয়ে গঠিত এ-সংক্রান্ত একটি সাব-ওয়ার্কিং গ্রুপের কারিগরি কমিটি প্রয়োজনীয় প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি করছে। তবে এখনো প্রকল্পটির প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই ও বিস্তারিত সমীক্ষা হয়নি। প্রকল্পটি পিপিপির আওতায় বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পিপিপির প্রকল্প স্ক্রিনিং কমিটির মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয়েছে এবং জাপান সরকারের সহযোগিতায় পিপিপির মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে মনোনীত হয়েছে।
জানা গেছে, মাল্টিমোডাল হাবে নতুন যেসব অবকাঠামোগত সুবিধা যুক্ত করা হবে সেগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ নতুন স্টেশন ভবন নির্মাণ, কার পার্কিং জোন স্থাপন, বাস বা কার সার্ভিস এরিয়া স্থাপন, বাণিজ্যিক অবকাঠামো নির্মাণ যেমনÑ হোটেল, প্লে জোন, জিমনেসিয়াম, শপিং জোন, এন্টারটেইনমেন্ট জোন ও আইসিটি পয়েন্ট স্থাপন।
এই মাল্টিমোডাল হাব নির্মাণে নতুন কোনো ভূমির প্রয়োজন হবে কি নাÑ এ প্রশ্নের জবাবে রেলের এক কর্মকর্তা জানান, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে মাল্টিমোডাল হাব নির্মাণে নতুন করে কোনো ভূমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হবে না। বর্তমানে রেলওয়ের অধীনে কমলাপুরে ১৫৬ একর ভূমি রয়েছে। এর মধ্যে স্টেশন ভবনের আয়তন ১ দশমিক ২২ একর, প্লাটফর্ম ৮ দশমিক ৯২ একর, আইসিডি ৪৯ দশমিক ৬১ একর, অফিসার্স ও স্টাফ কোয়ার্টার ২৭ দশমিক ৫৪ একর, ইয়ার্ড ১৫ একর ও ল্যান্ড স্কেপিংয়ের জন্য ৫৪ দশমিক ৩২ একর ভূমি রয়েছে।
অন্য দিকে ঢাকা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে মাল্টিমোডাল হাব নির্মাণ প্রসঙ্গে রেলওয়ে সূত্র জানায়, কসাইবাড়ি লেভেল ক্রসিং গেট থেকে বিমানবন্দর ও ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশন সেকশনের মধ্যবর্তী কাউলা লেভেল ক্রসিং গেট এলাকায় রেলওয়ের ২০ একর ভূমি রয়েছে। রেলভূমিসংলগ্ন জমির মধ্যে রয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের প্রশস্ত রাস্তা এবং বেসরকারি বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষের আওতাধীন ও ব্যক্তিমালিকানাধীন ভূমি। প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারি এসব ভূমি ব্যবহার এবং প্রয়োজনে ব্যক্তিমালিকানাধীন ভূমি অধিগ্রহণ করা হতে পারে।
প্রকল্পের পটভূমি হিসেবে প্রস্তাবের সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে প্রতিদিন সব মিলিয়ে (আন্তঃনগর, মেইল-এক্সপ্রেস ও লোকাল) ৬৫ জোড়া ট্রেন দেশের বিভিন্ন স্থানে ও স্থান থেকে যাতায়াত করে। এর মধ্যে ঢাকা-টঙ্গী-গাজীপুর রুটে প্রতিদিন দেড় লক্ষাধিক যাত্রী ও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে লক্ষাধিক যাত্রী যাতায়াত করে থাকে। এ সংখ্যা প্রতি বছরই বাড়ছে। অন্য দিকে বিমানবন্দর স্টেশনে ‘মৈত্রী এক্সপ্রেস’সহ প্রতিদিন সব মিলিয়ে ৫৩ জোড়া ট্রেন চলাচল করে এবং যাত্রীসংখ্যা প্রতিদিন গড়ে প্রায় দেড় লাখ। এ অবস্থায় যাত্রীদেরকে তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর লক্ষ্যে যথাযথ অবকাঠামোগত সুবিধা দিতে ঢাকার কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনকে ‘মাল্টিমোডাল ট্রানজিট হাব’ হিসেবে গড়ে তোলার প্রকল্প দু’টি গ্রহণ করা হয়েছে।
রেলখাত বিশ্লেষকেরা বলেন, রেলের অবকাঠামো উন্নয়নের প্রয়োজন রয়েছে। একই সাথে প্রয়োজন রয়েছে যাত্রীসেবার মান উন্নয়নের। কিন্তু কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে অবকাঠামো উন্নয়নে একের পর এক প্রকল্প হাতে নেয়া হলেও যাত্রীসেবার মান উন্নয়নে তেমন কিছুই করা হচ্ছে না। বরং আগের চেয়ে যাত্রীসেবার মান আরো কমেছে। এ বিষয়ে রেল কর্তৃপক্ষের মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন।

 


আরো সংবাদ



premium cement