২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

করোনার ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে খুলনা অঞ্চল থেকে চিংড়ি রফতানি

- ফাইল ছবি

করোনাভাইরাস সংক্রমনের ফলে খুলনা অঞ্চল থেকে চিংড়ি রফতানিতে ফেব্রুয়ারি মাস থেকে সাময়িকভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল। জুন মাস থেকে সে অবস্থা কাটিয়ে রফতানি আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেছে। মৎস্য রফতানি সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতর এবং রফতানিকারকরা আগামীতে এ অবস্থা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছেন। কিন্তু চিংড়ি চাষ শুরুর সময়ে করোনার আঘাত বিঘœ সৃষ্টি করায় উৎপাদন কম হবার আশংকা রয়েছে। সেটা রফতানির পরিমাণ স্বাভাবিক রাখার ক্ষেত্রে একটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

খুলনাস্থ মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ অফিস সুত্রানুযায়ী, করোনায় বিদেশী ক্রেতাদের ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত থাকার পর ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে খুলনা অঞ্চল থেকে হিমায়িত মাছ রফতানি পূর্ণোদ্যমে শুরু হয়েছে। এ মাসে মাছ রফতনি হয় মোট ২ হাজার ৪৭৯ মেট্রিক টন। এ থেকে আয় হয় ২ কোটি ৪১ লাখ ১৪ হাজার মার্কিন ডলার। টাকার পরিমাণ ছিল ১৯৭ কোটি ৭৪ লক্ষ। এর মধ্যে চিংড়ির পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৪৫২ দশমিক ৬০ মেট্রিক টন এবং এর মূল্য ছিল ২ কোটি ৩৬ লাখ ৭৪ হাজার ৪০০ ডলার। খুলনা অঞ্চল থেকে রফতানিকৃত হিমায়িত মৎস্যে সবসময় চিংড়ির পরিমাণ ৯০ শতাংশের বেশি থাকে। বাকিটা থাকে সাদা মাছ, কাঁকড়া ইত্যাদি। ২০২০ সালের জুলাই মাসে হিমায়িত মাছ রফতানি হয় ২ হাজার ৯০৫ মেট্রিক টন এবং বৈদেশিক মুদ্রা পাওয়া গেছে ২০১ কোটি টাকার।

করোনার দুর্যোগ অবশ্য বার্ষিক রফতানিতে তেমন কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি। ২০১৯-২০ সালে হিমায়িত মৎস্য রফতানির পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৩৫৯ কোটি ৭৯ কোটি টাকা মূল্যের ২৯ হাজার ৫৪১ মেট্রিক টন। ২০১৮-১৯ সালে রফতানি হয় ২৯ হাজার ৭ মেট্রিক টন। আয় হয় ২ হাজার ২৯০ কোটি ২০ লাখ টাকা। ২০১৭-১৮ সালে রফতানির পরিমাণ ছিল ২৯ হাজার ২০১ মেট্রিক টন। আয় হয় ২ হাজার ৪৮৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এ থেকে অনুমিত হয় যে, করোনার কারণে গত বছর এ খাতে রফতানির আরো যে প্রবৃদ্ধির আশা করা হয়েছিল সেটা হতে পারেনি।

এ ব্যাপারে আলাপকালে মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ, খুলনার উপপরিচালক মোহা: মজিনুর রহমান বলেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণ শুরু হলে জানুয়ারি মাস থেকে ইউরোপ-আমেরিকার বায়ারদের সাথে আমাদের এক্সপোর্টারদের চুক্তি বাতিল অথবা স্থগিত হয়ে যায়। ফলে ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস সময়ে চিংড়ি রফতানি খুব কম হয়। পরে করোনার প্রভাব কমে গেলে জুন থেকে রফতানি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। চার মাস প্রায় বন্ধ থাকায় আমরা আড়াই থেকে ৩ হাজার টন চিংড়ি রফতানি করতে পারেনি। তবে আমরা এ বছর চিংড়ি রফতানি বাড়বে বলে আশাবাদী।

অপরদিকে এবার বাগদা চিংড়ির উৎপাদন কম হবে বলে চাষীদের ধারণা। পাইকগাছার প্রাকৃতিক পদ্ধতির বাগদা চিংড়ি চাষী মনিরুল ইসলাম কাগজী জানান, এবার সিজনের শুরুতে করোনার কারণে পোনার সাপ্লাই ঠিকভাবে পাওয়া যায়নি। যা পাওয়া গেছে সেগুলোর মানও ভাল ছিলনা। ফলে পোনার মরার হারও বেশি। ফলে উৎপাদন কম হবে।

কয়রার আধানিবিড় পদ্ধতিতে বাগদা চাষী এহতেশামুল হক শাওন জানান, আমরা পোনা ছাড়ার পরই করোনার কারণে বিদেশ থেকে ওষুধ আসা বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে আমাদের সমস্ত চিংড়ি মরে একদম সাফ হয়ে যায়। সিজনের শুরুর প্রথমে যারা পোনা ছেড়েছিলেন তাদের সবারই এক অবস্থা। অবশ্য ৮০ ভাগ আধা নিবিড় চাষীই এসময় পোনা ছাড়তে পারেননি।

এদিকে, দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ অফিসার এটিএম তওফিক মাহমুদ বলেন, উৎপাদনে তেমন হেরফের হবে বলে মনে হয় না। কারণ ফার্স্ট সাইকেলে যারা পোনা ছেড়েছিলেন তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সেকেন্ড সাইকেলে অসুবিধা হচ্ছে না।

বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদুল বাকী বলেন, করোনার কারণে আমাদের পিক সিজন মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত আমরা কোনো রফতানি করতে পারিনি। ফলে প্রচুর লোকসান দিতে হয়েছে। জুন মাস থেকে রফতানি শুরু হলেও বিশ্ব বাজারে দাম কম পাওয়া যাচ্ছে। তবু আমরা ঘুরে দাঁড়ানোর একটা সুযোগ পেয়েছি। যদিও এখন আমাদের লাভ হচ্ছে না। কিছু লস করেও ব্যবসায় টিকে থাকতে হচ্ছে। সামনে গলদার সিজন। সেসময় আমরা লাভ করতে পারব বলে আশা করছি। এখন আমরা চাষীদেরও ভালো দাম দিতে পারছি না। অভ্যন্তরীণ বাজারেও তারা ভালো দাম পান না। ফলে তারাও বিপদগ্রস্ত। আর এ বছর উৎপাদন কমের আশংকা জনাব বাকীও নাকচ করে দেন।


আরো সংবাদ



premium cement