০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫
`


দেশের সাথে আমারো ৫০ পূর্ণ হলো : আগুন

-

আগুনের পুরো নাম খান আসিফুর রহমান। ১৯৯৩ সালে চলচ্চিত্রের গান ‘বাবা বলে ছেলে নাম করবে’ এবং ‘ও আমার বন্ধু গো...’ দিয়ে তিনি ছড়িয়ে পড়েছিলেন বাংলাদেশের সবখানে। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা খান আতাউর রহমান ও কণ্ঠশিল্পী নিলুফার ইয়াসমীনের সন্তান তিনি। তবে আগুন সঙ্গীতাঙ্গনে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের কারণে। আজ তার জন্মদিন। এ উপলক্ষে কথা বলেছেন নয়া দিগন্তের সাথে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলমগীর কবির

স্বাধীনতার বছর ৯ ফেব্রুয়ারি আপনার জন্ম। সে হিসাবে বয়স ৫০ পূর্ণ হচ্ছে আজ। দেশের বয়স আর আপনার বয়স সমান উপলব্দিটা বলুন?
উপলব্দিটা স্বাধীনতার মতোই। তবে এই দিনটাতে সবচেয়ে বেশি মিস করি আব্বা-আম্মাকে। বয়স এত হয়ে গেছে সেটা আসলে কখনোই ভাবিনি। এখনো মাঝে মাঝে আমার নিজেকে সেই ছোট্ট আগুনটিই মনে হয়। চেষ্টা করেছি বাবার আদর্শে নিজেকে গড়ে তুলতে। আমার বড় ছেলে মিছিলও এখন একজন গায়ক, আমার বিশ^াস ও আমার চেয়েও অনেক ভালো করবে। কারণ গানের প্রতি তার রয়েছে প্রবল ভালোবাসা। ভীষণ ভালো লাগছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হচ্ছে। আমারও বয়স ৫০ পূর্ণ হলো। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ আর আমি কেমন যেন সৃষ্টির শুরু থেকেই একটা অন্যরকম সম্পর্কে সম্পৃক্ত। তাই হয়তো দেশের প্রতি আমার এত এত ভালোবাসা। এমন সোনার বাংলাদেশ ছেড়ে আমি কোথাও যাবো না, কখনো না। আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি, সত্যিই এই বাংলাদেশকে আমি খুব ভালোবাসি। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।’
আপনি সঙ্গীত পরিবারের সন্তান। এটা ব্যক্তি আগুনকে শিল্পী বানাতে কতটা সহযোগিতা করেছে?
আমার চিন্তার মাঝে আমার পরিবার কখনো বাধা হয়নি। এটাই বোধ হয় পরিবার থেকে পাওয়া সবচেয়ে বড় সহযোগিতা।
আসলে আমাদের পাঁচ ভাই-বোনের কাউকেই আব্বা-আম্মা জোর করে কিছুই করাননি। আমি ছোটবেলা থেকে সারা দিনই বাসায় দেখতাম আম্মা সঙ্গীতচর্চা করছেন এবং বিকেলে আব্বা চলচ্চিত্রবিষয়ক মিটিং করছেন। সবসময় সাংস্কৃতিক আবহে বেড়ে উঠাটাই আমার অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। এমন একটি পরিবেশে বেড়ে উঠেছি বলেই হয়তো শিল্পী না হয়ে কিংবা সাংস্কৃতিক অঙ্গনে না এসে কোনো উপায় ছিল না। আমার শুরুটা ব্যান্ডসঙ্গীত দিয়ে। ১৯৮৮ সালে আমরা সাডেন নামে একটি ব্যান্ড দল করি। আমাদের দলে পাঁচজন সদস্য ছিল। আমরা ওই ব্যান্ড থেকে ১৯৯০ সালে প্রথম অ্যালবাম বের করি। অ্যালবামটির নাম ছিল অচেনা। তখন শ্রোতাদের কাছে এটি খুব হিট হয়েছিল। এভাবেই আমার শুরু, তারপর থেকে তো চলছেই।
কিন্তু আপনার পরিচিতিটা এসেছে প্লে-ব্যাক দিয়ে। এই যাত্রাটা সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন?
আমার প্লে-ব্যাকের শুরু ১৯৯২ সালে। আমার গাওয়া গান নিয়ে প্রথম রিলিজ্ড সিনেমা ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’। একদিন সুরকার আলম খান আমাকে ডেকে বললেন, ‘গান গাইতে হইবো!’ আমি ছবির নাম জানতে চাইলে চাচা বললেন, ছবির নাম ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’। তিনি আরো বললেন, আমার সঙ্গে গান গাইবেন রুনা লায়লা। রুনা লায়লার সঙ্গে এটিই আমার প্রথম গান গাওয়া। একই সঙ্গে ৪টি গানের রেকর্ড করা হয়। ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর ভীষণ হিট করেছিল। ছবির গানগুলোও শ্রোতারা খুব পছন্দ করেছিল। অনেকে বলেন, ছবিটি ভারতীয় ছবির নকল। আসলে কথাটি সত্য নয়। ছবিটির কপিরাইট কিনে নেয়া হয়েছিল।
আপনার অনেক জনপ্রিয় গান থাকলেও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার নামের পাশে নেই। এই বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখেন?
Ñ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অনেক বড় বিষয়। এই পুরস্কারটা পাওয়ার মতো অনেকগুলো গান আমি গেয়ে ছিলাম। কিন্তু পুরস্কারটা আমার কাছে আসেনি। এটা নিয়ে আমার কোনো আক্ষেপ বা অভিযোগ নেই। সঙ্গীতজীবন তথা শিল্পজীবন মানুষকে ব্যাপক সমৃদ্ধ করতে পারে; যার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আমি নিজেই। আমি মানুষের কাছ থেকে যে ভালোবাসা পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। মানুষের এই ভালোবাসা নিয়েই বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে চাই।
মানুষের ভালোবাসার কথা বলছেন। এটি নিয়ে কোনো আনন্দের স্মৃতি আছে?
Ñ সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে একটা শো করতে গিয়েছিলাম। সালটা মনে নেই। তবে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ মাত্র রিলিজ হয়েছে। বছরখানেক হবে হয়তো। আমি সিরাজগঞ্জ শহরের ভেতর মাত্র ঢুকেছি। তখন মুখে মুখে প্রচার হয়ে গেছে অমুক গাড়িতে করে আগুন ভাই আসছে। তো সেই শহরে পা দেয়ার পর আগুন আসছে আগুন আসছে রব উঠে গেছে। চারদিকে আগুন আগুন শব্দ আর মানুষের ছোটাছুটি। পরে ফায়ার সার্ভিস চলে এসেছে এবং শুধু এটিই নয়Ñ বেশ কয়েকটি জায়গায় এমন হয়েছে যে আমি গেছি আর আগুন আগুন বলায় এলাকা ফাঁকা হয়ে গেল। আমি আরামে স্টেজে উঠেছি। আমার নামটা আগুন হওয়ায় কত মহাযন্ত্রণা থেকে বেঁচে গেছি।
সঙ্গীতচর্চার পাশাপাশি পত্রিকায় আপনার লেখা পাওয়া যেত। সেই অভ্যাসটা কি এখনও আছে?
Ñ আমি তো ব্যঙ্গাত্মক বিষয়ক লেখা লিখতাম। সামাজিক বিভিন্ন সমস্যাকে কেন্দ্র করে গল্পের আকারেই লেখাগুলো লিখেছি। যারা লেখাগুলো পড়েছেন, তারা বুঝতে পারতেন যে, সমাজের কোন বিষয়টিকে সেখানে আঘাত করা হয়েছে এবং তুলে আনা হয়েছে। পাশাপাশি পত্রিকায় কলাম লিখেছি। এখন লেখালেখি থেকে বেশ দূরে আছি। বর্তমানে অসংখ্য মানুষের মধ্যে মঞ্চে পারফর্ম করার সময় কথাচ্ছলে মেসেজ পৌঁছে দেয়াটাই আমার এই মুহূর্তে বেটার মনে হচ্ছে। যেহেতু শিক্ষিত ও ভালো পাঠক-শ্রোতা আমরা দিন দিন হারাচ্ছি, তাই সরাসরি শ্রোতা-দর্শকদের কাছে মেসেজ পৌঁছে দেয়াটাই বেশ উপযোগী বলে আমি মনে করি।
নতুনদের জন্য আপনার পরামর্শ?
নতুন প্রজন্ম সম্পর্কে আমি ভীষণভাবে আশাবাদী। কিন্তু নৈরাশ্য আমার মধ্যে কাজ করে যে, একটি মানুষের জ্ঞানভাণ্ডার পূর্ণ হওয়ার আগেই সে যদি অতিরিক্ত লাফালাফি করে এবং সোসাইটি তাকে নিয়ে যদি অতিরিক্ত লাফালাফি করে, তাহলে সে ছিটকে পড়তে বাধ্য। মানুষের ধারণক্ষমতাটা বুঝতে হবে। একজন যদি গান গাইতেই থাকে গাইতেই থাকে, তাহলে তার নতুন কী দেয়ার থাকে? ফলে শ্রোতারা মুখ ফিরিয়ে নেন। তার পরও কিছু কিছু মানুষ আছে সুপারম্যানের মতো। তবে আধুনিকতাকে ধারণ করে তারা কেন শেকড়ে ফিরে যাচ্ছে, সেটা আমার কাছে বড় বিস্ময়। গান নিয়ে আমার চিন্তা হলো আধুনিকতাও থাকবে, শেকড়টাও থাকবে।


আরো সংবাদ



premium cement