১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সিদ্ধান্তে অনড় থাকতে পারে না ঢাবি প্রশাসন

সিদ্ধান্তে অনড় থাকতে পারে না ঢাবি প্রশাসন - নয়া দিগন্ত

স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় হলেও নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকতে পারে না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষ। বারবার পরিবর্তন হয় তাদের সিদ্ধান্ত। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর সেশনজট নিরসনে অনার্স শেষবর্ষ ও মাস্টার্স পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। অনেক শিক্ষার্থী সে অনুযায়ী প্রস্তুতিও নেন; কিন্তু শেষ পর্যন্ত পরীক্ষাটা আর হয়নি। এরপর গত ৩১ জানুয়ারি একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় ১৩ মার্চ পরীক্ষার্থীদের জন্য হল খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; কিন্তু ১৭ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল এবং ২৪ মে ক্লাস শুরুর ঘোষণার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গত মঙ্গলবার জরুরি একাডেমিক সভা ডাকলেও শেষ পর্যন্ত সরকারি সিদ্ধান্তই বহাল থাকে।

এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবিÑ কাগজে-কলমে স্বায়ত্তশাসিত হলেও প্রায় সব ক্ষেত্রেই সরকার ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। আলাদা কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা নেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের।

কামরুল হাসান স্বাধীন নামের মাস্টার্সের এক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পিএসসি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। পিএসসি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঘোষণার বিপরীতে সাথে সাথে তাদের মতামত এবং সিদ্ধান্ত জানাতে পারলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক মিটিং ডেকে মন্ত্রণালয়ের সাথে সুর মেলায়। ইউজিসির আন্ডারে থেকেও যেখানে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্লাস-পরীক্ষা নিতে পারে, বুটেক্স হল খুলতে পারে, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হল খোলা রাখতে পারে, মেডিক্যাল কলেজের হল খোলা থাকতে পারে, মাদরাসা খোলা থাকতে পারে; সেখানে আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন কী দেখে এত ভয় পায়, নিজেরা একটা সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতাও কি রাখে না!

আবু বকর সিদ্দিক নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, হল খোলার তীব্র আন্দোলনের ডাক দিতে হবে। আমরা প্রস্তুত। আন্দোলন ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু হয় না। ঢাবি প্রশাসন স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। অথচ সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করে এই প্রশাসন। মনে রাখতে হবে, শিক্ষার্থীদের জন্যই এই প্রতিষ্ঠান। শুধু শিক্ষার্থীরা নয়, ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষকরাও। এ বিষয়ে ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ম ম আরিফ বিল্লাহ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু অনার্স ফাইনাল এবং মাস্টার্স ফাইনাল ছাত্রছাত্রীদের জন্য হল খুলে পরীক্ষা নেয়ার কথা ছিল। সেভাবেই আমরা শিক্ষকরা পরীক্ষা গ্রহণের সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলাম।

এমতাবস্থায় কী এমন ঘটে গেল যে, আকস্মিকভাবে দেশের সব পরীক্ষা বন্ধ করে দেয়া হলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত আমাদেরকে আরো বিস্মিত করেছে। কারণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা এবং হল খোলার বিষয়টি তো সীমিত পরিসরে শুধু দু’টি সেমিস্টারের পরীক্ষা নেয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট ছিল। এই সিদ্ধান্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে আমি মনে করি।

তবে ভিসি অধ্যাপক ড. মো: আখতারুজ্জামান এটি মানতে নারাজ। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসিত হলেও জাতীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়া সম্ভব নয়। বিশেষ করে মহামারীর সময় জাতীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আর না হলে ঝুঁকি বাড়বে।


আরো সংবাদ



premium cement