২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মার্কিন জিএসপি প্রত্যাহারে বড় ধরনের চাপের মুখে ভারত

- ছবি : সংগৃহীত

জিএসপি সুবিধার আওতায় এক হাজার ৯০০টি ভারতীয় পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতো কোনো ধরনের শুল্ক ছাড়াই। এর ফলে ভারত ৫৬০ কোটি ডলারের বাণিজ্যে কোনো চিন্তা করতে হয়নি ভারতকে। কিন্তু সোমবার ভারতের এ সুবিধা প্রত্যাহারের ঘোষণা আসে ট্রাম্পের পক্ষ থেকে। ফলে ধারণা করা হচ্ছে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বদ ধরনের চাপের মুখে পড়তে যাচ্ছে ভারত।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন কংগ্রেসকে পাঠানো এক চিঠিতে লিখেছেন, ‘ভারত এত দিন জেনারালাইসজড সিস্টেম অফ প্রেফারেন্স (জিএসপি)-এর আওতায় ছিল। এ বার সেই বাণিজ্যিক সুবিধা প্রত্যাহার করে নেয়া হচ্ছে।’ এর কারণ হিসেবে ট্রাম্প বলেন, ভারতে ঢোকা মার্কিন পণ্যগুলোর ওপর থেকে শুল্কের বোঝা কমানো হয়নি। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মার্কিন সংস্থাগুলোকে। সেই কারণেই ভারতের ওপর থেকে এ বিশেষ সুবিধা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের এ সিদ্ধান্তে রফতানিনির্ভর ভারতীয় সংস্থাগুলোর একটি বড় অংশ সমস্যায় পড়ে যাবে। মার্কিন জিএসপি প্রোগ্রামে বিশ্বের দরিদ্র, পিছিয়ে পড়া ও উন্নয়নশীল দেশগুলিকে তাদের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এই সব সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়।

এর আগে বেশ কয়েকমাস ধরে ডোনাল্ড ট্রাম্প কানাডা, মেক্সিকো, চীনের সাথে বাণিজ্য সুবিধা ইস্যুতে বিবাদে জড়ান। বিশেষ করে চীনের সাথে বেশ বড় আকারে বাণিজ্য বিবাদে লিপ্ত হন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সাথে করা অনেক দেশের বাণিজ্য সুবিধা রহিত করে দিয়েছেন। কিছু দেশের সাথে করা বাণিজ্য চুক্তি বিলুপ্ত করে দিয়ে নতুন চুক্তিতে আসেন। এমনকি বেশ কিছু বহুপাক্ষিক বাণিজ্যিক চুক্তি থেকেও বের হয়ে আসেন।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টরা দ্বিপাক্ষিক বা বহুপাক্ষিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে উদারতা দেখালেও ট্রাম্প এক্ষেত্রে একেবারেই ব্যতিক্রম। তিনি কোনো দেশকেই অতিরিক্ত সুবিধা প্রদান করতে রাজি নন।

এদিকে কাশ্মিরের পুলওলামার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি কোনো পক্ষ না নিলেও যেসব বক্তব্য দিয়েছে, তাতে ভারত একে নিজের পক্ষেই ধরে নিয়েছিল। কিন্তু তার পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যে ঘোষণা এসেছে তাতে হতভম্ব হয়ে পড়েছে দিল্লি। কারণ এ সিদ্ধান্তে ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়ে দিয়েছেন, ব্যবসার স্বার্থে যত মিত্রই হোক না কেন, কাউকেই ছাড় দিতে নারাজ তিনি।

মার্কিন কংগ্রেসকে পাঠানো চিঠিতে ট্রাম্প লিখেন, ‘ভারত সরকার ও রাষ্ট্রপুঞ্জের বিভিন্ন পদক্ষেপের উপর নজর রেখেই আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বুঝতে পেরেছি, ভারত তাদের দেশের বাজারে ব্যবসার ক্ষেত্রে এ ধরনের (মার্কিন পণ্যকে) সুবিধা দেবে না।’

যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে ভারতকে এত দিন যে সুবিধা দেয়া হত, তার নাম- ‘জেনারালাইজ্ড সিস্টেম অব প্রেফারেন্সেস’ (জিএসপি)’। ভারত যুক্তরাষ্ট্রে যত রকমের পণ্য রফতানি করে, তার মধ্যে ৫৬০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্যের ওপর এত দিন কোনো শুল্ক চাপানো হত না। ফলে, সেই ভারতীয় পণ্যগুলো সেখানেসুলভ ও সহজলভ্য ছিল।

ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশনের ডিরেক্টর জেনারেল অজয় সহায় বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের এই জিএসপি প্রোগ্রাম থেকে এখনো পর্যন্ত বিশ্বে সবচেয়ে বেশি উপকৃত দেশগুলোর অন্যতম ভারত। সেই সুবিধা প্রত্যাহার করে নেয়া অবশ্যই দিল্লির কাছে একটি বড় ধাক্কা। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের কৃষি, সামুদ্রিক সম্পদনির্ভর পণ্যাদি ও হস্তশিল্পজাত পণ্যের দাম অনেক বেড়ে যাবে। তাদের বাজার ধরে রাখতে অসুবিধা হবে।’ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ভারতের বিরুদ্ধে এত বড় পদক্ষেপ এ প্রথম।

তবে জিএসপি প্রত্যাহারে ভারতের অসুবিধায় পড়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় বাণিজ্য সচিব অনুপ ভাদবন। তিনি বলেছেন, ‘এর ফলে মার্কিন মুলুকে ভারতীয় পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে খুব একটা প্রভাব পড়বে বলে আমাদের মনে হয় না। তবে আমরা (ভারত) কোনো পাল্টা ব্যবস্থা নেয়ার পথে হাঁটব না। ভারতে ঢোকা মার্কিন পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক চাপানো হবে না।’

সোমবার ট্রাম্প এ সিদ্ধান্ত জানালেও তা বাস্তবায়িত হতে দেরি হবে। কংগ্রেসে তা পাস হতে আরো দু’মাস সময় লাগবে। ফলে, ভারত কিছুটা সময় পাবে। মার্কিন ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভস অফিসের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়। সূত্র : ডন, টাইমস অব ইন্ডিয়া


আরো সংবাদ



premium cement