২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

নির্বাচন নির্বাচন খেলা

- ছবি : নয়া দিগন্ত

নির্বাচন হচ্ছে জনগণের সম্মতি জ্ঞাপনের একটি পদ্ধতি। আগেকার দিনে রাজা-বাদশারা শক্তির দ্বারা শাসন করতেন। তারা সম্মতির ধার ধারতেন না। শাসক ছিল, গোটা রাজ্য বা রাষ্ট্রের ধারক-বাহক ও মালিক-মোখতার। রাজার বিন্দুমাত্র বিরোধিতার অর্থ ছিল মৃত্যদ-। অনেক সময় রাজা-বাদশারা তাদের খেয়াল খুশিমতো মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতেন। ফরাসি সম্রাট লুই দ্য ফরটিনথ বলতেন, ‘আমিই রাষ্ট্র’। বস্তুত শাসকদের ইচ্ছেই ছিল আইন। ইসলামী দুনিয়ায় এ ধরনের শাসকরা নিজেদের মনে করতেন, ‘জিল্লুল্লাহ বা খোদার ছায়া’। সুতরাং যা ইচ্ছে তা করার নিরঙ্কুশ অধিকার তারা ভোগ করতেন। সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে জনগণের অধিকার ক্রমশ সম্প্রসারিত হয়। প্রতিষ্ঠিত হয় গণতন্ত্র-জনগণের তন্ত্র। প্রাচীন গ্রিক নগর রাষ্ট্রে নাগরিক ছিল অনেক কম। সুতরাং প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র বা জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা করা ছিল সহজ। এখন রাষ্ট্র যেমন বহুদূর বিস্তৃত, তেমনি জনসংখ্যাও লাখ লাখ, কোটি কোটি। এ অবস্থায় কিভাবে জনগণের শাসন বা তন্ত্র কায়েম করা যায় তা নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা চিন্তা-ভাবনা করলেন।

জন স্টুয়ার্ড মিল তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘রিপ্রেজেন্টেটিভ গভর্নমেন্ট’ এর মাধ্যমের প্রতিনিধিত্বের ধারণা ও পদ্ধতি বাতলে দিলেন। কিন্তু এই প্রতিনিধি কিভাবে জনগণের আস্থা বা সম্মতি জ্ঞাপন করবেন? অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে, বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করে অবশেষে প্রতিষ্ঠিত হলো সর্বজনগ্রাহ্য পদ্ধতি-নির্বাচন। এই নির্বাচনের মাধ্যমে নাগরিক সাধারণ তাদের ইচ্ছেমতো রাষ্ট্র চালানোর দায়িত্ব একদল বা এক গোষ্ঠীকে প্রদান করে। আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় আমরা একেই বলি রাজনৈতিক দল। রাজনৈতিক দল সময়ান্তরে গণতন্ত্রের প্রতিভূ হয়ে দাঁড়াল। আজকের একবিংশ শতাব্দীর এই পর্যায়ে দাঁড়িয়ে আমরা প্রত্যক্ষ করছি, গণপ্রতিনিধিত্বের বিভিন্ন ব্যবস্থা। নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত পৃথিবীর রাষ্ট্রগুলোর তিন ভাগের দুই ভাগ গণতন্ত্র দ্বারা শাসিত হয়েছে। তার মানে গণতন্ত্রই যে সবচেয়ে জনপ্রিয় শাসন পদ্ধতি- সে তত্ত্ব চূড়ান্ত হয়েছে। আর সব রাষ্ট্রের মতো বাংলাদেশের জনগণ গণতন্ত্রকে তাদের ‘জীবনপদ্ধতি’ হিসেবে গ্রহণ করেছে।

এই গণতন্ত্রের সবচেয়ে কার্যকর সম্মতি জ্ঞাপন পদ্ধতি হচ্ছে নির্বাচন। সামান্য সমিতি থেকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতা অধিকারীদের আমরা নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করি। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের বিপর্যয়ের ইতিহাস ও কারণ সবারই জানা। সে পুরনো কাসুন্দি আর না ঘাঁটি। আজকের কথা বলি। রাজধানী ঢাকা এখন নির্বাচন যুদ্ধে লিপ্ত। কমবেশি প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সব নাগরিক সাধারণ। যেহেতু সংবিধান অনুযায়ী মেয়রদের নির্বাচনী মেয়াদকাল শেষ হয়েছে- সুতরাং নির্বাচন আইনগতভাবে অনিবার্য হয়ে উঠেছে। যখন আইনের দোহাই দিয়ে নামকাওয়াস্তে লোক দেখানো নির্বাচন হচ্ছে আর সরকারি দল যখন চোখের পর্দা তুলে ফেলেছে তখন তারা এই নির্বাচন নির্বাচন খেলা নাও খেলতে পারত। তারা অধ্যাদেশ দিয়ে মেয়রের মেয়াদ চার থেকে আট বছর করে দিতে পারত। তাহলে নাগরিক সাধারণ এই প্রহসনের খেলা থেকে রেহাই পেত। বেঁচে যেত অঢেল সরকারি অর্থ। মানুষ বেঁচে যেত মারামারি-হানাহানি, খুন-জখম ও হামলা-মামলা থেকে। বিগত এক যুগ ধরে নির্বাচন নিয়ে যে ধরনের খেলাধুলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে তা আমাদের চোখের সামনেই ঘটেছে। অতীতে চোখের সামনে ঘটে যাওয়া নির্বাচনী প্রকারভেদ সম্পর্কে একটি মজার অভিজ্ঞতার কথা বলি। তখন এরশাদীয় শাসনকাল। ১৯৮৮ সালে নির্বাচন। প্রায় সব রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করেছে। এরশাদ সাহেব অনেক দল বানালেন। অনেক দল ভাঙলেন। অবশেষে নির্বাচন দিলেন। ভাগাভাগির নির্বাচন। আগে থেকেই নির্ধারিত কোন কোন আসন কোন কোন দল পাবে।

বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার কোনো একটি আসন আগে থেকেই নির্ধারিত মুক্তিযোদ্ধা দলকে দেয়া হবে। জাতীয় পার্টির প্রার্থী ওই মুক্তিযোদ্ধা দলের প্রার্থীর আপন ভাই। তিনি ভাইয়ের স্বার্থে আসনটি ছেড়ে দিতে সদয় সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। নির্বাচনের দিন দৃশ্যত এখনকার রাতের খেলার চেয়ে দিনের খেলা জমজমাট ছিল। সত্যিকার ‘ইলেকশন’ বা নির্বাচন তো আগেই পরিত্যক্ত হয়েছে। প্রার্থীর পক্ষে মাস্তানরা একরকম প্রকাশ্যেই ভোট পিটাপিটি করছে। তারা এটাকে বলেন, ‘ভোট কালেকশন’। সন্ধ্যায় ভোট কালেকশনের পর ডিসি অফিসে সমাবেত সবাই। কালেকশনের রেজাল্ট অনুযায়ী আগের সিদ্ধান্ত মোতাবেক মুক্তিযোদ্ধা দলের প্রার্থী কয়েক হাজার ভোটে এগিয়ে আছেন। কিন্তু ফলাফল ঘোষণা হচ্ছে না। জাতীয় পার্টির তৎকালীন সভাপতি, যিনি আমাকে গল্পটি বলেছেন তিনি অবশেষে প্রেসিডেন্ট এরশাদকে সরাসরি ফোন করলেন। তার হস্তক্ষেপ চাইলেন। এরশাদ বললেন, এম জে কে বলো। মেজর জেনারেল মোহাব্বতজান চৌধুরীকে এরশাদ আদর করে এম জে বলে ডাকতেন। এম জে ওই সংশ্লিষ্ট নেতাকে বললেন, সিদ্ধান্ত পরিবর্তিত হয়েছে। অমুককে আসনটি দিতে হবে। জাতীয় পার্টির নেতা বিস্ময় প্রকাশ করে বললেন, ‘স্যার, ভোট তো মুক্তিযোদ্ধা প্রার্থীর পক্ষে ‘কালেকশন’ হয়েছে। এম জে হেসে বললেন, ওই কালেকশনই ওমুক ব্যক্তির নামে ‘ডিকলারেন’ হবে। পাঠক সাধারণ তাহলে দেখলেন, ইলেকশন তিন প্রকার- ইলেকশন বাই ইলেকশন (সত্যিকার ভোট), ইলেকশন বাই কালেকশন (মাস্তানির মাধ্যমে সংগ্রহীত ভোট), এবং ইলেকশন বাই ডিকলারেশন। অর্থাৎ ফলাফল যা-ই থাকুক না কেন, সরকার যাকে খুশি নির্বাচিত ঘোষণা করবেন। বলাবাহুল্য, গল্পটি অনেক বছর আগের। ইতোমধ্যে পদ্মা-মেঘনা-যমুনায় অনেক পানি প্রবাহিত হয়েছে। এখন ইলেকশনের প্রকারভেদ বিশ্লেষণ করতে চাইলে, যে কাউকে কষ্টকর গবেষণা করতে হবে। সব প্রকারভেদ অতিক্রম করেছে এই সরকার।

সময় নাকি অগ্রগতির স্মারক। লোকজন বলে, যায় দিন ভালো। এরশাদীয় নির্বাচনী খেলার পর কারো মনে হয়নি যে, এরও পর আছে। কিন্তু বিগত ১২ বছর ধরে এদের নির্বাচনী খেলাধুলা এরশাদকে লজ্জা দিয়েছে। অবশ্য এই সর্বনাশের জন্য ‘নির্বোধ জনসাধারণ’ই দায়ী। ২০১৩ সালে একই সাথে পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তাও আবার ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে আগে। দুষ্টু জনগণ!

পাঁচটি নির্বাচনেই বিএনপিকে জিতিয়ে দেয়। বিএনপির লোকেরা ভাবল, ক্ষমতায় এসে গেছি। শীর্ষ নেতারা অতিমাত্রায় আস্থাশীল হয়ে উঠলেন। এদিকে আওয়ামী লীগ লাল কার্ড পেয়ে খেলার কৌশল পাল্টে দিলো। তারা বুঝতে পারল আগামীতে তাদের ভরাডুবি নিশ্চিত। সুতরাং নির্বোধ জনসাধারণকে ভোট দিতে দেয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান এবং আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের উপলব্ধি একরকম। আইয়ুব খান আসল গণতন্ত্র বোঝে না বলে জনগণের ওপর গোস্বা ছিল। আর এখানকার নেতৃত্বের দুঃখ ছিল, দেশটা গোল্লায় গেল। যেহেতু তারাই দেশপ্রেমের সোল এজেন্ট, সুতরাং তারা ক্ষমতায় না গেলে অভাগা দেশের হবে কী? কাজেই নির্বোধ জনসাধারণকে শায়েস্তা করতে হবে। সেজন্য আপনারা দেখেছেন ৩০০ আসনের ১৫২ আসনেই গায়েবি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তারা যথেষ্ট হিসেবী। এই আসনের পর আর একটি আসনও যদি আওয়ামী লীগ না পায় তাহলে ক্ষতি নেই। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জেরে তারাই সরকার গঠন করবে। মজার কথা, ওই ১৪৮ আসনেও কোনো যথার্থ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। প্রক্সি হয়েছে মাত্র। এরপরের অবস্থা আরো খারাপ। নিশীথ নির্বাচনের দগদগে ঘা এখনো শুকিয়ে যায়নি। এবার ঢাকা মেট্রোপলিটনের নির্বাচনের প্রসঙ্গে আসা যাক।

এমনিতেই স্থানীয় নির্বাচনের গুরুত্ব স্থানীয়ভাবেই। ধরুন বাংলাদেশের সব শহর-গ্রামে যদি আওয়ামী বিরোধীরা ক্ষমতায় আসে তাহলে কী ক্ষমতার পরিবর্তন হবে? কিন্তু শাসকদল সূচাগ্র মেদিনী ছাড়তেও রাজি না। উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিম সবই তাদের চাই। বিরোধী দল দাঁড়াতে পারে এমন মাটি ছাড়লে যদি ক্ষমতা হাতছাড়া হয়ে যায়?

তবে তারা কথা ও কাজ দুটোরই কাজী। ওবায়দুল কাদের ঢাকা সিটি নির্বাচনের প্রাক্কালে বলে রেখেছেন, ‘আওয়ামী লীগ সিটি নির্বাচনে হারলে আকাশ ভেঙে পড়বে না’। তার মানে তারা যদি পরাজিত হয়ও তাহলে তারা মেনে নেবে। বিরোধীদের নির্বাচনে আসার জন্য এটা এক সুড়সুড়ি। বিরোধী দলের নির্বাচন পাগল লোকেরাও আত্মপ্রসাদ লাভ করল- তাহলে আমরাও জিততে পারি। তাই মুলোর গন্ধে এসব প্রার্থীরা নাক উঁচু করে দৌড়ে চলেছেন। নির্বাচন যে ‘ফ্রি ফেয়ার’ হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই! তবে তা ক্ষমতাসীন দলের মানদণ্ডে। সার্বজনীন নির্বাচনী মানদণ্ডে নয়। বর্তমান নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন এবং সরকারি দলের মন্ত্রী-পাতিমন্ত্রীদের প্রতিশ্রুতির কোনো অভাব নেই। নিকট অতীতের জাতীয় নির্বাচনের আগ মুহূর্তে ড. কামালসহ জাতীয় নেতাদের সামনে সরকারি প্রকাশ্য প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করুন।

‘ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলেও ভয় পায়’! সত্যি সত্যি এরকম বিস্ময়কর ঘটনাও তো ঘটতে পারে যে, বিএনপি ও বিরোধী প্রার্থীরা সব আসনে জিতে যাবেন! সুতরাং সেদিন পর্যন্ত অপেক্ষা না করলে তো বোঝা যাবে না। সেজন্য প্রতিশ্রুতি : শেষপর্যন্ত মাঠে থাকব। আওয়ামী লীগ এভাবে নির্বাচনী সফলতা তথা লেজিটিমেসি দেখাতে পারবে।
ঢাকা সিটির গত নির্বাচনের বিস্ময়কর অভিজ্ঞতার কথা কি আপনাদের মনে নেই?

রাজনীতিবিদরা যখন ঢাকা শহরের এ নির্বাচন পরিচালনায় অক্ষম অথবা অনিচ্ছুক, তখন একজন শীর্ষ স্থানীয় বুদ্ধিজীবীর নেতৃত্বে একদল ভালো মানুষ এগিয়ে গেলেন নির্বাচনের আশাবাদ নিয়ে। অবশেষে তারা যে আশাহত হয়েছিলেন তা বলাইবাহুল্য। ছাত্রলীগের সোনার ছেলেরা ওই সময়ে আসল ভূমিকা পালন করেছে। আশাবাদী বুদ্ধিজীবীদের অপমান-অপদস্থ করতেও তারা ভুল করেনি। তখন একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ওই নির্বাচনকে বলেছিলেন, ‘অভিনব কারসাজির নির্বাচন’। ওপরে ফিটফাট ভেতরে সদরঘাট। বাইরে কেতাদুরস্ত পরিবেশ। ভোটকেন্দ্রে ‘সিল মারো ভাই সিল মারো’। শুধু তাই নয়, পরিকল্পিতভাবে তারা রাজার সাত দেউরির মতো পরপর সুশৃঙ্খল! নিরাপত্তা বলয় বা মাস্তান বেষ্টনী তৈরি করে বিজয় নিশ্চিত করেছিল। সে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী যখন বলেছিলেন, ওদের মাথায় বুদ্ধি গিজগিজ করে। একেক নির্বাচনে একেক রকম কৌশল-প্রকৌশল বের করে। সুতরাং বিরোধীরা যদি বুদ্ধি কৌশলের প্রতিযোগিতায় না-ই পারে, তাহলে এ নির্বাচন করে লাভ কি? ‘বৃথা এ সাধনা ধীমান’।

নির্বাচন এখনো অনেক দূরে। মানুষের যারা বোঝে তারা বলে ভোটাররা যদি ভয়শূন্যভাবে ভোট দিতে পারে তাহলে, গণতন্ত্রের বিজয়ের পথে কিছুটা অগ্রগতি সাধিত হতে পারে। কিন্তু তারা কি তা হতে দেবে? বশংবদ নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যেই ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকারি বিজয়ের পথ প্রশস্ত করেছে। প্রধান বিরোধী দলসহ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব পক্ষ ও ব্যক্তি ইভিএমের বিরোধিতা করা সত্ত্বেও কমিশন তাদের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে। কমিশন কি সকলের কথা শুনবে, নাকি সরকারি সিদ্ধান্তে চলবে? সরকারি দল ইভিএম চাচ্ছে। আর কেউই চাচ্ছে না। সংশয় বাড়ছে। ইতোমধ্যে জাতীয় নির্বাচনের কৌশলে বিরোধী শক্ত প্রার্থীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।

হুমকি দেয়া হচ্ছে। বিরোধী নেতা মওদুদ আহমেদ বলেছেন, এই নির্বাচন গণতন্ত্রের প্রহসন ছাড়া আর কিছুই নয়। নির্বাচনে অংশগ্রহণের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘আমরা জনগণের একটি রাজনৈতিক দল। আমরা মনে করি, যদি দেশের মানুষ ভোট দিতে পারে, এই সিটি নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থীরা বিপুল ভোটে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পরাজিত করবে। কিন্তু সেটা তারা করতে দেবে না, সেটা আমরা জানি।

গণতন্ত্রের যে মৃত্যু ঘটেছে এই দেশে, এই সরকার এই নির্বাচনের মাধ্যমে আবারো প্রমাণ করবে’। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ঢাকা উত্তরের মেয়র প্রার্থী হাফেজ মওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ ইভিএম নিয়ে নির্বাচন কমিশনের অতি উৎসাহে বিস্ময় প্রকাশ করেন। ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মওলানা আবদুর রাকিব বলেন, ‘রাতের বেলা নির্বাচন- ভোট দেয় প্রশাসন’। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন, ‘সব ঝুট হ্যায়’। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই তারা এসব কথা বলছে। ইতোমধ্যেই বিরোধী দলের প্রার্থীরা নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উত্থাপন করেছে। নির্বাচনী কর্মকর্তারা বিরোধীদের আশ^স্ত করেছেন, ব্যবস্থা নেবেন। ছেলেবেলায় আদর্শলিপিতে পড়েছিলাম, ‘খলের আশ্বাসবাক্য না করিবে বিশ্বাস’। আর কত কাল বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচনী খেলা দেখবে আর আশ্বাসবাক্যে প্রতারিত হবে?

লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Mal55ju@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement