২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইসলাম প্রচারের পদ্ধতি

- ফাইল ছবি

ইসলামের দাওয়াত ইসলামী আদর্শ ও বিধানেরই এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। ইসলামী দাওয়াত হচ্ছে ইসলামের সংরক্ষণ এবং ইসলামী সমাজের রূপায়ণ ও অগ্রগতির পদ্ধতি। কুরআনে দ্বীনের দাওয়াতকে মুসলমানদের ওপর ফরজ করে দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন- ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি, বিশ্বমানবের কল্যাণের জন্য তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে, যেন তোমরা ন্যায় ও সৎকাজের নির্দেশ করো এবং মন্দকাজ থেকে নিষেধ করো, বিরত রাখো (সূরা আল-ইমরান, আয়াত ১১০)। তোমাদের মধ্যে এমন একদল লোক থাকা উচিত, যারা কল্যাণের দিকে আহ্বান জানাবে, সৎকাজের নির্দেশ দেবে ও অসৎকাজ থেকে বিরত রাখবে।’ (সূরা আল ইমরান, আয়াত-১০৪)। ‘তোমাদের বানিয়েছি এক মধ্যপন্থী জাতি, যেন তোমরা বিশ্বমানবের পথপ্রদর্শক হতে পারো।’ (সূরা বাকারা,আয়াত ১৪৩)।

ইসলামী দাওয়াতের লক্ষ্য হচ্ছে- প্রত্যেক মানুষকে ইসলামের অনুগত ব্যক্তি হিসেবে তৈরি করা এবং সুকৃতির প্রসার ও দুষ্কৃতির মূলোৎপাটন করা। যেখানে সম্ভব, সেখানে ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন করাও ইসলামী দাওয়াতের লক্ষ্য। কেননা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে গেছেন এবং রাসূলের সুন্নত হলো আমাদের আদর্শ। ইসলামী রাষ্ট্রের লক্ষ্য সম্পর্কে কুরআনে বলা হয়েছে, ‘যখন তাদের দুনিয়ার বুকে ক্ষমতা দেয়া হয়, তখন তারা নামাজ কায়েম করে, জাকাত আদায় করে, সুকৃতির প্রতিষ্ঠা করে ও দুষ্কৃতির মূলোৎপাটন করে।’ (সূরা হজ,আয়াত ৪১)।

ইসলামী দাওয়াতের চূড়ান্ত লক্ষ্য নিশ্চয়ই ইসলামী রাষ্ট্র গঠন করা। এমন রাষ্ট্র গঠন করা যা ইসলামী আইন-কানুনের অনুগত হবে, ইসলামের আলোকে সব সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করবে এবং অনৈসলামিক প্রভাব থেকে মুক্ত থাকবে। কিন্তু যদি কোনো সময়ে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যখন ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাস্তবে কাজ করা সম্ভব নয়, তাহলে ইসলামী সমাজ ও ব্যক্তি তৈরি করাই হবে দাওয়াতের লক্ষ্য। সাধ্যের অতিরিক্ত কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা ইসলামের দাবি বা শিক্ষা নয়। কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছেÑ ‘আল্লাহ কাউকে তার ক্ষমতার অতিরিক্ত দায়িত্ব দেন না।’ (সূরা বাকারা, আয়াত-২৬৮)।

এ থেকে প্রমাণিত, ইসলামী শিক্ষা হচ্ছে সাধ্য ক্ষমতানুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা। কাজেই ইসলামী দাওয়াতের লক্ষ্য হবে কোথাও ইসলামী রাষ্ট্র গঠন করা এবং কোথাও ইসলামী সমাজ ও ব্যক্তি তৈরি করা। আর তা নির্ভর করবে পরিস্থিতি ও পরিবেশের ওপর।

মুসলিম বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতিতে ইসলামী দাওয়াত ও মিশনের প্রসারের জন্য তামাদ্দুনিক (সাংস্কৃতিক) পদ্ধতির ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব আরোপ করা উচিত। কেননা বিরাজমান পরিস্থিতিতে এ পদ্ধতিই সবচেয়ে কার্যকর হওয়া সম্ভব। তামাদ্দুনিক পদ্ধতির লক্ষ্য হবে জনগণকে ইসলামী আদর্শ, বিধান, মূল্যবোধ ও ইতিহাস সম্পর্কে ব্যাপকভাবে শিক্ষিত করে তোলা, যেন ইসলামী বিধান ও আদর্শ জনগণের এক সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের বিশ্বাস, বিবেক ও চিন্তার অংশে পরিণত হয়। জনগণের চিন্তাকে এমনভাবে প্রভাবিত করতে হবে, যাতে যেকোনো সমস্যা ও বিষয়ে তাদের নজর সর্বপ্রথম স্বতঃস্ফূর্তভাবে ইসলাম এবং এর শিক্ষার দিকে নিবদ্ধ হয়।

তামাদ্দুনিক পদ্ধতি প্রকৃতপক্ষে একটি শিক্ষা আন্দোলন। যত দিন পর্যন্ত জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থাকে ইসলামী রূপ দেয়া না হবে, অর্থাৎ ইসলামী শিক্ষা জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থার সিলেবাসে যথাযোগ্য মর্যাদা না পাবে, তত দিন পর্যন্ত উন্নত ইসলামী সাহিত্যের মাধ্যমেই শিক্ষিত সমাজকে ইসলামী বিধান, মূল্যবোধ ও ইতিহাস সম্পর্কে অবহিত করার উদ্যোগ নিতে হবে। এ পথই আমাদের সবাইকে গ্রহণ করতে হবে। সৌভাগ্যক্রমে, মুসলিম বিশ্বে গত পঞ্চাশ বছরে এক নতুন ইসলামী সাহিত্য সৃষ্টি হয়েছে। এর ভাষা আধুনিক, এর পরিভাষা আধুনিক। সমাজবিজ্ঞানে বর্তমান সময়ের নানাবিধ সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে এ নতুন সাহিত্য রচিত হয়েছে।

এ সাহিত্য রচনায় যারা অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে উপমহাদেশের আল্লামা ইকবাল, সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী, মাওলানা আকরম খাঁ, কবি ফররুখ আহমদ প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। আরব বিশ্বের সাইয়েদ কুতুব, ইউসুফ কারযাভী, মোস্তফা আল জারকা, সাঈদ রামাদান, মুহাম্মদ আল গাজ্জালী এবং অন্যদের মধ্যে আলিজা ইজেতবেগভিচ, মুহাম্মদ আসাদ, মরিয়ম জামিলা, ড. জামাল আল বাদাবি, আব্দুল হামিদ আবু সুলেমান এবং টি বি আরভিংয়ের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ইসলামের প্রাথমিক যুগে রচিত সাহিত্যের পর এ নতুন সাহিত্য রচনার ফলে এক বিরাট শূন্যতার কিছুটা পূরণ হয়েছে। আমাদের মুসলিম বিশ্বের প্রতি কোণে এ বিরাট সাহিত্যভাণ্ডারকে পৌঁছাতে হবে; যাতে করে কোনো একটি ভাষায় সাহিত্যের যে অভাব রয়েছে অন্যান্য ভাষায় রচিত সাহিত্য অনুবাদ করে তা পূরণ করা যায়।

ইসলামের দাওয়াতের তামাদ্দুনিক পদ্ধতিকে সফল করার জন্য ইসলামী সংগঠনগুলোকে এ কাজে আত্মনিয়োগ করতে হবে। ইসলামী রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর উচিত তামাদ্দুনিক কাজকে যথাযথ গুরুত্ব দেয়া। অবশ্য কাজে আত্মনিয়োগ করার সাথে এসব প্রতিষ্ঠানে সামাজিক খেদমত, কর্মীদের চরিত্র গঠন এবং সংগঠনের শক্তি বৃদ্ধির জন্য অন্যান্য কর্মসূচিও গ্রহণ করতে হবে। কেননা চরিত্র গঠন ও সংগঠনের শক্তি বৃদ্ধি করা ছাড়া তামাদ্দুনিক কাজ এগিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না।

লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার


আরো সংবাদ



premium cement
মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরেও নেতাকর্মীরা আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে : সালাম নবায়নযোগ্য জ্বালানি ৪০ শতাংশে উন্নীত করতে কাজ করছে সরকার : পরিবেশ সচিব সৌরশক্তি খাতে আবার মাথা তুলে দাঁড়াতে চায় জার্মানি ‘সরকারের সদিচ্ছার অভাবেই বিচার প্রক্রিয়ার ধীর গতি’ মোদি কি হিন্দু-মুসলমান মেরুকরণের চেনা রাজনীতিতে ফিরছেন? টাঙ্গাইলে বৃষ্টির জন্য ইসতেসকার নামাজ ফুলগাজীতে ছাদ থেকে পড়ে স্কুলছাত্রের মৃত্যু দোয়ারাবাজারে শিশু হত্যা মামলার আসামিসহ গ্রেফতার ২ কাউখালীতে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু চুয়েট শিক্ষার্থীদের সড়কে অবস্থান অব্যাহত, ঘাতক বাসচালক গ্রেফতার তামাক পণ্যে সুনির্দিষ্ট করারোপের দাবিতে এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে ২৫ সংসদ সদস্যের চিঠি

সকল