২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বিএনপির শুভার্থীদের দুইকালের পাঁচালি

-

এমন একটা সময় ছিল যখন টেলিভিশন খুললেই তাদের অনেকের দেখা মিলত এবং তাদের বচনামৃত শুনে অনেকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়তেন। তারা টেলিভিশনের টকশো, সভা-সমিতি, সেমিনারে যেরূপ গলা ফাটাতেন, তদ্রƒপ শহীদের রক্তের সাথে তুলনীয় বিদ্বানের কলমের কালির অপব্যবহার করে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় বুদ্ধিজীবী সেজে বড় বড় নিবন্ধ লিখতেন। তারা নিজেদের রাজনৈতিক পরিচয় আড়াল করে মহান বুদ্ধিজীবীর বেশ ধরে বিএনপি নামক রাজনৈতিক দলটিকে অনবরত নানা উপদেশ ও মর্মবাণীর কথা শুনিয়ে বিভ্রান্তির জাল বিস্তার করতেন এবং রাজনীতির বোধ ও বুদ্ধিকে বিপথে চালিত করতেন। তারা হাজারো যুক্তি উপস্থাপন করে প্রমাণ করার চেষ্টা করতেন যে, বিএনপির উচিত যেকোনো মূল্যে ভারতের কাছে নতজানু হয়ে তাদের আনুকূল্য লাভ করা।

বিএনপির সেই কথিত শুভার্থীরা সময়-সুযোগ পেলেই বিএনপির জন্য কুম্ভীরাশ্রু বর্ষণ করতেন। তারা মাছের মা সেজে বিএনপিকে পরামর্শ দিতেন। তারা জোরগলায় আপত্তি তুলে মহাশোরগোলের আহাজারি তুলে দশমুখে প্রচার করতেন যে, ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সাথে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দেখা না করে মস্ত বড় ভুল করেছেন। তার উচিত ছিল প্রণবজির সম্মানে হরতাল প্রত্যাহার করা এবং সদলবলে মান্যবরের দরবারে হাজির হওয়া। তারা এ কথাও বলতেন যে, বিএনপি নেত্রী যদি কৌশলগত কারণে হরতাল না-ও প্রত্যাহার করতেন, সে ক্ষেত্রে হেঁটে হলেও প্রবল প্রতাপশালী ভারতীয় রাষ্ট্রপতির সাথে তার হোটেল কক্ষে গিয়ে করুণাপ্রার্থী হতে পারতেন।

বিএনপির উল্লিখিত শুভার্থীদের দ্বারা যারা বিভ্রান্ত হয়ে দলের মধ্যে হইচই করতেন এবং নতজানু ভারত নীতির জন্য চাপ দিতেন, তারা একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর হতবিহ্বল হয়ে পড়েছেন। তারা বর্তমান প্রেক্ষাপটে খুব ভালো করে হদয়ঙ্গম করতে পেরেছেন যে, ভারতের ব্যাপারে বিএনপির আদি নীতি এবং বেগম জিয়ার সিদ্ধান্তই সঠিক ছিল। আগামী দিনের রাজনীতিতে ভারত প্রসঙ্গে এ দেশের গণমানুষ এবং জনমতে কতটা সুতীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে, তা বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা খুব ভালোভাবেই অনুধাবন করতে পেরেছেন। বিএনপির অস্থিরমতি কর্মী-সমর্থক এবং দোটানায় থাকা কিছু শীর্ষ নেতৃত্ব আর কোনো দিন ভারতকে বিশ্বাস করবেন কিংবা ভারতমুখী হবেন বলে আমার মনে হয় না। একাদশ সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বিএনপির আন্তর্জাতিক রাজনীতিকে বিরাট এক টার্নিং পয়েন্টে এনে দিয়েছে, যা তারা নিজেরা চেষ্টা করলে হয়তো কোনো কালেই দলকে একমুখী করে কোনো একটি বিষয়ে প্রবল ঘৃণা, অবিশ্বাস ও অনাস্থার প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ করতে পারতেন না।

বিগত দিনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী যখন বিএনপি চেয়ারপারসনকে টেলিফোন করে গণভবনে নিমন্ত্রণ জানানোর চেষ্টা করেছিলেন অথবা তিনি যে দিন আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর নাটকীয়ভাবে বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে হাজির হয়েছিলেন, তখন কেন তাকে সাদরে বরণ করা হয়নি তা নিয়ে এতকালব্যাপী যে বিতর্ক চলছিল, তা-ও একাদশ সংসদ নির্বাচনের ফলাফলের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। বিএনপির কোনো কর্মী-সমর্থক অথবা দেশের বিবেকবান শান্তিপ্রিয় সভ্য মানুষ ভুল করেও ওসব ব্যাপারে পুনরায় বিতর্ক করবেন না কিংবা বিভ্রান্তির ফাঁদে পা দেবেন না। উল্টো তারা এখন যেসব কথাবার্তা বলছেন এবং বিরূপ মন্তব্য ছুড়ে দিচ্ছেন, তা যদি ভুক্তভোগীরা শুনতেন, তবে বুঝতেন তারা মানুষের আস্থা, বিশ্বাস ও ভালোবাসায় আঘাত করে কতটা বিরক্তি-ঘৃণা ও বিদ্বেষের বিষ নিঃসরণ করেছেন।

বিএনপির তথাকথিত শুভার্থীরা বিগত পাঁচটি বছর ক্রমাগতভাবে দেশবাসীকে গণতন্ত্র শিখিয়ে আসছিলেন। তারা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের যৌক্তিকতা যেরূপ বুঝাতেন, তদ্রƒপ আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে বিশ্বাস ও ভালোবাসার মহাসাগরের সাথে তুলনা করে তাকে আস্থা ও নির্ভরতার হিমালয়তুল্য বলে প্রমাণ করে ছাড়তেন। এই স্থানে অবশ্য আমার নিজের ব্যক্তিগত দায়ও কম নয়। যখন আওয়ামী লীগ করতাম তখন অনেক দলীয় সিদ্ধান্ত অথবা দলীয় নেতাকর্মীদের অনেক কাজকর্মের ব্যাপারে সাধ্যমতো সমালোচনা করেছি। কিন্তু দলীয় সভানেত্রী এবং তার পরিবারের ব্যাপারে আমার আনুগত্য ছিল অন্ধ। এটা করতাম প্রবল ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাবোধের কারণে। কোনো ভয়ভীতি, লোভ-লালসা কিংবা স্বার্থসিদ্ধির জন্য কোনোকালে আমার তৎকালীন দলীয় প্রধানের প্রশংসা করিনি এবং কোনো দিন তার সামনে গিয়ে করুণাপ্রার্থী হইনি।

ব্যক্তিগতভাবে মনে করতাম, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বয়সের বিবেচনায় জীবনের এমন এক প্রান্তে পৌঁছে গেছেন, যেখানে বসে মানুষ কেবলই আখেরাতের কথা ভাবেন এবং বিগত দিনের ত্রুটি কাটিয়ে ওঠার জন্য চেষ্টা-তদবিরের পাশাপাশি অজাতশত্রু হওয়ার চেষ্টা করেন। তার জীবনের সফলতা ও প্রাপ্তির কথা মনে হলে আমার অন্তরে এ কথা বদ্ধমূল হতো যে, তিনি রাজনীতিতে এবং রাষ্ট্রক্ষমতা লাভের ক্ষেত্রে এক বিরল নেয়ামতের অধিকারী হয়েছেন। কারণ একই জীবনে আল্লাহ তার খুব অল্পসংখ্যক বান্দাকে ক্ষমতা প্রয়োগ ও প্রতিশোধ গ্রহণের যুগপৎ সুযোগ দান করেন। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী তার পিতৃহত্যার প্রতিশোধ এবং মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের বিচার সম্পন্ন ও দণ্ড কার্যকর করার মাধ্যমে যে রাজনৈতিক সুযোগ পেয়েছেন, তা ইতিহাসে সচরাচর ঘটে না। নিজের দলের ওপর একচ্ছত্র ক্ষমতা, রাষ্ট্রক্ষমতার নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব এবং অনেক ক্ষেত্রে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সফলতা লাভ করার কারণে তিনি হয়তো প্রকৃতির নিয়মে প্রশান্ত চিত্তের অধিকারী হয়েছেন।

আমি কোনো দিন আমার দলীয় সভানেত্রীর কর্মকাণ্ড একান্ত কাছ থেকে দেখার সুযোগ পাইনি। কেবল তার কথাবার্তা এবং ধর্মবোধের কাহিনীগুলো শুনে তার সম্পর্কে উল্লিখিত ধারণা পোষণ করতাম এবং তার পক্ষে ইতিবাচক প্রচারণায় অংশ নিতাম। আমার সেই প্রচারণার মধ্যে সততা, আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা ছিল। কারণ মনে-প্রাণে তাকে ভক্তিশ্রদ্ধা করতাম এবং একান্তে তার জন্য পরম প্রভুর কাছে দোয়া করতাম। নিয়তির টানে এবার যখন বিএনপিতে যোগ দিলাম এবং ধানের শীষের প্রার্থী হয়ে নির্বাচনী মাঠে গেলাম, তখন আমার পরিচিত দুনিয়া, বোধ, বুদ্ধি কেমন যেন নির্মম বাস্তবতার কবলে পড়ে এলোমেলো হয়ে গেল। আজ মনে হচ্ছে- বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ভোটে না দাঁড়ালে জীবন সম্পর্র্কে আমি একজন নির্বোধ শিশুই থেকে যেতাম এবং সে অবস্থায় মারা গেলে হয়তো চার-পাঁচ বছর বয়সী একজন শিশু হিসেবেই মরতাম।

আজকের নিবন্ধে অন্যের সমালোচনা করতে গিয়ে আমার মনে হলো- গত পাঁচ বছরে আমিও তো অনেক বিষয়ে বিএনপিকে পরামর্শ দিয়েছি আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে বিশ্বাস করার জন্য এবং তার প্রতি আস্থা রাখার জন্য। এ কারণে আলোচনার মধ্যখানে খানিকটা আত্মসমালোচনা করে দায়মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করলাম। এবার মূল প্রসঙ্গে আসি। গত পাঁচটি বছর আওয়ামী লীগ সর্বশক্তি নিয়োগ করে রাষ্ট্রশক্তির সহায়তায় মামলা-হামলা-গুম-হত্যা, জেল-জুলুম এবং আর্থিক ও সামাজিকভাবে বহুরূপী হয়রানির মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াত এবং তাদের সহযোগী শক্তিগুলোর রাজনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে। আওয়ামী লীগের সফল তৎপরতা বিএনপি-জামায়াতের কতটা ক্ষতি করেছে, তা হয়তো আওয়ামী লীগ এখনো টের পায়নি এবং তাদের দুর্দিন না আসা পর্যন্ত তারা তা টের পাবেন না। কারণ রাষ্ট্রযন্ত্রের সংশ্লিষ্ট আমলা-কামলা এবং বিদেশী চক্র নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য আওয়ামী লীগের মধ্যে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতভীতি জাগিয়ে রাখবে।

২০১৪ সালের পর থেকে বাংলাদেশে এমন কিছু ঘটছে এবং ঘটে চলেছে যার কার্যকারণ সম্পর্কে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ এবং সুবিধাপ্রাপ্ত পক্ষ কেউই আগাম ধারণা করতে পারেনি। ২০১৪ সালের নির্বাচন এবং ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের ফলাফল এবং নির্বাচন-পরবর্তী ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের মান নিচে নামতে নামতে এমন এক তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে, যেটাকে এখন আর ‘গণতন্ত্র’ বলে চেনা যাচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, রাজনীতির মাঠে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত, ঘৃণা-বিদ্বেষ ও অসম্মান প্রদর্শন এবং মর্যাদাহানির যে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছিল, তা ২০১৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে সব রেকর্ড ভেঙেচুড়ে খান খান হয়ে গেছে। এবারের নির্বচনের মাধ্যমে দুটো বিষয় প্রমাণ হয়েছে। প্রথমত, আওয়ামী লীগ তাদের নেতাকর্মীদের পরিবর্তে রাষ্ট্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীনির্ভর নির্বাচন করতে বাধ্য হয়েছে অথবা নিজেদের প্রতি আস্থার পরিবর্তে রাষ্ট্রীয় সংস্থার প্রতি আস্থাশীল হয়ে পড়েছে।

নির্বাচনের মাধ্যমে আরেকটি বিষয় প্রমাণিত যে, আওয়ামী লীগ সত্যিই বিএনপি-জামায়াতের সাংগঠনিক ভিত্তি দুর্বল করতে পেরেছে। কিন্তু এতে করে আওয়ামী বিরোধী মনোভাব বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বিএনপি-জামায়াতের কর্মী ও সমর্থক সংখ্যা বেড়েছে, যা কিনা আগামী দিনে বিরাট এক ঝুঁকি হিসেবে প্রতিপক্ষের জন্য মহাহুমকি হয়ে দাঁড়াবে। কারণ নেতৃত্ববিহীন বা দুর্বল নেতৃত্বের অধীন বিপুল সরকারবিরোধী জনসাধারণ সব সময় সরকারের জন্য মারণফাঁদ হিসেবে কাজ করে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সব সূত্র এবং অতীতের সব রাষ্ট্রনায়কের সম্মিলিত মতামত হলো- জনমতকে সব সময়ই সুশৃঙ্খল ও যোগ্য নেতৃত্বের অধীনস্থ থাকতে হয়। অতীতকালে যারা জনমতের ওপর থেকে যোগ্য নেতৃত্বকে ছলে-বলে-কৌশলে সরিয়ে দিয়েছিলেন তারা সবাই কিম্ভূতকিমাকার মারণফাঁদে পড়ে ভবলীলা সাঙ্গ করেছিলেন এবং নিজেরা সঙ্গীসাথীসহ ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন।

আওয়ামী লীগ বিগত পাঁচ বছরে দেশের সব প্রচারমাধ্যমের ওপর নিদারুণ এক প্রভাব সৃষ্টি করেছে। দলটির সুবিধাপ্রাপ্ত এবং সুবিধালোভীরা সদলবলে দশমুখে প্রচার-প্রপাগান্ডা চালিয়ে দেশের গণতন্ত্র, রাজনৈতিক পরিবেশ, নির্বাচনপদ্ধতি এবং জনগণের মন ও মানসকে নানাভাবে প্রভাবিত করেছে। ফলে মানুষ সব কিছু ভুলে আওয়ামী লীগকে নির্বিচারে অন্ধের মতো বিশ্বাস করেছিল। দেশের জ্ঞানী-গুণী, মুটে-মজুর, ধনী-দরিদ্র, হিন্দু-মুসলমান সবাই এককাতারে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগকে বিশ্বাস করেছে। আরো স্পষ্ট করে বললে বলতে হয়, দলটির নেত্রীকে বিশ্বাস করেছিল। সব রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে গণভবনে গিয়ে নির্বাচন নিয়ে তার সাথে একাধিক বৈঠক করেছেন এবং তার প্রতিশ্রুতির ওপর আস্থা রেখে হাসিমুখে নির্বাচনের মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। কিন্তু নির্বাচনের ফলাফল এবং নির্বাচনকালীন নানা ঘটনা মানুষকে বাকরুদ্ধ করে ফেলেছে। ফলে সারা বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ মন খারাপ হওয়া জনিত ক্লান্তি, বিষাদ এবং অকর্মণ্যতার কবলে পড়েছেন।

আপনি যদি এই মুহূর্তে দেশের পথে-প্রান্তরে, মাঠে-ঘাটে-হাট-বাজারে এবং অফিস আদালতে গিয়ে সাধারণ মানুষের খোঁজখবর নেন, দেখতে পাবেন, তারা বিষণœ মনে কেবলই অবিরতভাবে অভিশাপ দিয়ে চলেছে। তারা জীবনের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে এবং কর্মের উৎপাদনশীলতা ও সৃজনশীলতা ত্যাগ করে দারিদ্র্য ও অভাবের পানে ধেয়ে চলেছে।

সবার মুখেই একই কথা : ভাল্লাগছে না- জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে; আয় রোজগার-বেচা-কেনা নেই, কিভাবে চলব, কি হবে, কবে হবে, কোথায় যাবো- কী করব, কী খাবো ইত্যাদি। আপনি আরো দেখবেন, বেশির ভাগ মানুষের মন খারাপ। তারা খাওয়া-দাওয়া, উৎসব, সাজসজ্জা ইত্যাদির ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। অনেকে ধৈর্যহারা হয়ে ছোটখাটো বিষয় নিয়ে ঘরে-বাইরে সর্বত্র কলহবিবাদ শুরু করেছেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলে চুরি, ধর্ষণ, মারামারি প্রভৃতি অপরাধ বেড়েছে। গ্রাম্য হাট-বাজারগুলোতে বিক্রিবাট্টা অনেক কমে গেছে। অনেকে পত্রিকা পড়া বন্ধ করে দিয়েছেন- টেলিভিশনও মানুষ আর আগের মতো দেখছে না। এমনকি ফেসবুক, টুইটার, লিঙ্কড ইন প্রভৃতি সামাজিক মাধ্যমে মানুষের আনাগোনা আশঙ্কাজনক হ্রাস পেয়েছে।

মানুষ সারাক্ষণ গোমড়ামুখো হয়ে থাকছে। তারা ভয়ে প্রতিবাদ করছে না। কিন্তু নীরবে ও নিভৃতে তাদের অপছন্দের মানুষদের পরিহার করে চলছে। তারা নিজেদের মজলুম মনে করছে এবং সরকার বা রাষ্ট্রের কোনো সংস্থার প্রতি ভয়শূন্য চিত্তে নির্ভরশীল ও আস্থাশীল হতে পারছে না। তারা নিজেদের অর্থ-বিত্ত, মান-সম্মান, প্রেম-ভালোবাসা, গোপন ও ব্যক্তিগত আলাপচারিতা এবং সহায় সম্পত্তির নিরাপত্তার ব্যাপারে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠিত। মুক্ত স্বাভাবিক জীবনের কোনো নিশ্চয়তা দেখতে পাচ্ছে না। ফলে যার যার শক্তি সামর্থ্য অনুযায়ী তারা প্রয়াত আইয়ুব বাচ্চুর গানের কথামালার মতো- আকাশে উড়াল দেয়ার ইচ্ছা নিয়ে দিবা-নিশি অতিবাহিত করছে।
লেখক : সাবেক এমপি, কলামিস্ট


আরো সংবাদ



premium cement