২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ঈমানের গভীরতা অনুযায়ী সিয়ামের পুরস্কার

- ছবি : সংগৃহীত

রমজানুল মোবারকের আজ সপ্তম দিবস। রমজানের সিয়াম পালনের বিনিময়ে অসাধারণ পুরস্কারের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের প্রিয় হাবিব মুহাম্মাদূর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ পবিত্র মাসের অনন্যতা ও শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করেছেন বিভিন্নভাবে। হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত এক হাদিসে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে যে ব্যক্তি রোজা রাখবে, তার ইতঃপূর্বেকার সব পাপ ক্ষমা করে দেয়া হবে। 

যেকোনো ইবাদত ও নেক আমল কবুল হওয়া ও সওয়াবের উপযোগী হওয়ার জন্য ঈমান শর্ত। কুরআন মজিদ ও হাদিস শরিফে বিভিন্ন নেক আমলের প্রতিদান প্রসঙ্গে ঈমানের শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন সূরা নাহলের ৯৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ঈমানদার অবস্থায় যে কেউ নেক আমল করবে, সে পুরুষ হোক কিংবা নারী হোক, তাকে আমরা দান করব সুখময় জীবন এবং তাদেরকে দান করব তাদের কাজের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার।

ঈমানের আভিধানিক অর্থ যদিও বিশ্বাস, কিন্তু প্রকৃত ঈমানের মর্ম অনেক ব্যাপক ও গভীর। বিশ্ব জগতের স্রষ্টা ও নিয়ন্তা হিসেবে এক সত্তার অস্তিত্ব স্বীকার করাই এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়। তেমনি এতটুকু জানা যথেষ্ট নয় যে, আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর আগে আরব মরুর এক জীর্ণ কুটিরে জন্ম নিয়ে মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ নামের এক মহাপুরুষ জগতবাসীকে শান্তি ও সৌভ্রাতৃত্বের পথে আহ্বান জানিয়েছিলেন এবং তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে একটি অনগ্রসর জনগোষ্ঠী বিশ্বকে সভ্যতা ও সংস্কৃতির নতুন পথের সন্ধান দিয়েছিল। এটুকু জানা এবং এ জন্য তার প্রতি শ্রদ্ধাভাব পোষণ করাই যথেষ্ট নয়। কেননা এ ধরনের বিশ্বাস সমকালীন আরবের অনেকেরই ছিল।

হিজরতের পর মদিনায় শেষ নবীর প্রতি সবচেয়ে বেশি বিদ্বেষ পোষণ করত ইহুদি ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়। অথচ তারা শেষ নবীর বিষয়ে নিশ্চিত করে জানত। তাওরাত ও ইঞ্জিলে শেষ নবীর যে বিস্তারিত পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে, তা তাদের নখদর্পণে ছিল। প্রথম দর্শনেই তারা বুঝতে পেরেছিল ইনিই সেই নবী, যার সুসংবাদ দিয়ে গিয়েছেন আগের সব নবী ও রাসূল। এ প্রসঙ্গে কুরআন মজিদেও বলা হয়েছে যে, তারা তাঁকে (শেষ নবীকে) চেনে, যেমন চেনে নিজেদের সন্তানকে। এভাবে চিনতে পারার পরেও তারা মুমিন হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি।

কারণ ঈমানের গভীর মর্মের মধ্যে নিহিত রয়েছে আনুগত্য ও আত্মসমর্পণের অঙ্গীকার। ইহুদি, খ্রিষ্টান ও মক্কার কুরাইশদের মধ্যে অভাব ছিল এই বিষয়টির। জেনে বুঝেও আল্লাহর বিধান ও রাসূলের আদর্শের কাছে নিজের সত্তাকে সমর্পণে প্রস্তুত ছিল না তারা। কোনো ব্যক্তি যখন জগৎস্রষ্টা ও নিয়ন্তা একক সত্তার প্রতি নিজেকে সম্পূর্ণ সঁপে দেয় এবং তার বিধান ও নির্দেশের কাছে নিজের সবকিছু বিলীন করে দেয়ার অঙ্গীকার করে, তেমনি তার প্রেরিত পুরুষ বা রাসূলের প্রদর্শিত পথে জীবন পরিচালনার শপথ করে, তখনই সে প্রকৃত মুমিন বলে সাব্যস্ত হয়।

মোটকথা রমজানের সিয়াম সাধনা থেকে পূর্ণ মাত্রায় লাভবান হতে হলে প্রয়োজন মহামহিম রাব্বুল আলামিনের প্রতি আনুগত্য ও আত্মনিবেদনের অঙ্গীকার। নিজের চিন্তা, মনোভাব ও আচরণকে সাজাতে হয় মহান স্রষ্টার নির্দেশ ও কামনা অনুযায়ী। আর সে জন্য সহজ উপায় রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রদর্শিত রূপরেখা অনুসরণ। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি শ্রদ্ধা ও সমীহবোধ থাকার পাশাপাশি তাঁর আদর্শ ও পদাঙ্ক অনুসরণের দৃঢ়প্রতিজ্ঞাও ঈমানের অপরিহার্য অঙ্গ। আল্লাহর রাসূলকে যেমন জগৎবাসীর জন্য কল্যাণ ও মুক্তির দিশারি হিসেবে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতে হয়, তেমনি আল্লাহর নির্দেশাবলি ও ব্যবস্থা সম্পর্কে তাঁর বক্তব্যের প্রতিও আস্থা রাখতে হয়। পরকাল ও অদৃশ্য জগৎ সম্পর্কে তিনি যা কিছু বলে গেছেন, সেগুলোর সত্যতা সম্পর্কেও কোনো সন্দেহ পোষণ করা যায় না।

ঈমানের গভীরতা ও দৃঢ়তা যার যত বেশি, যেকোনো নেক কাজে তার সওয়াবের পরিমাণও তেমনি। আম্বিয়ায়ে কেরাম, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, তাবা তাবেয়ীন, আধ্যাত্মিক বুজুর্গানে দীনের সাথে সাধারণ মুমিনদের পার্থক্য এখানেই। আর এ কারণেই সবার মর্যাদা সমান নয়। তাই ইসলামের অন্যতম বুনিয়াদ মাহে রমজানের সিয়াম পালনের সার্থকতা ও সুফল প্রাপ্তির জন্য ঈমানের পরিপক্বতা ও দৃঢ়তা প্রয়োজন। আল্লাহর কিতাব পাঠ, অধ্যয়ন ও চর্চা এবং রাসূলে পাকের হাদিস অধ্যয়ন এ ব্যাপারে অত্যন্ত সহায়ক। এ পবিত্র মাসে আল্লাহর বিশেষ হুকুম পালনের সাথে সাথে এ দিকটিও বিবেচনায় রাখা আমাদের একান্ত কর্তব্য।


আরো সংবাদ



premium cement