২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ধর্ষক শিক্ষক সাময়িক বরখাস্ত : ৩ লাখ টাকায় দফারফার চেষ্টা

প্রতীকী ছবি - নয়া দিগন্ত

নীলফামারীর সৈয়দপুরে ৫ম শ্রেণীর ছাত্রীকে ধর্ষণকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জাহিদুল ইসলামকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। ধর্ষণের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তার বিরুদ্ধে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। গত ১৫ জানুয়ারী মঙ্গলবার তাকে বরখাস্তের চিঠি প্রেরণ করা হয়।

এদিকে বরখাস্তকৃত সহকারী শিক্ষক জাহিদুল ইসলাম এলাকায় প্রভাবশালী পরিবারের সদস্য হওয়ায় ধর্ষণের শিকার শিশু শিক্ষার্থীর দরিদ্র মা ও বাবাকে বিভিন্ন রকম ভয়ভীতি প্রদর্শন করে ৩ লাখ টাকা দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তুলে নেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। যে কারণে এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় লিখিত কোনো অভিযোগ জমা দেয়া সম্ভব হয়নি বলে জানা গেছে।

পাশাপাশি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান এবং সভাপতি ও উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রুহুল আমিন ওই ধর্ষক শিক্ষককে বাঁচাতে তৎপর রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কারণ তারা প্রথম থেকেই ধর্ষণের ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে আসছে।

ধর্ষণের ঘটনাটি কাউকে না জানানো এবং মিমাংসা করার নামে ছাত্রীকে ও তার মাকে চাপ প্রয়োগ করে। একইসাথে সময়ক্ষেপণের মাধ্যমে ধর্ষণের আলামত নষ্টেরও অপচেষ্টা তারা চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে সহকারী শিক্ষক জাহিদুলের বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে বিভিন্ন অভিযোগ উঠলেও শিক্ষা অফিসার ও প্রধান শিক্ষক তার বিরুদ্ধে কোনো রকম ব্যবস্থা নেননি। বরং তাদের প্রশ্রয় পেয়েই জাহিদুল শিশু শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের মতো অপকর্ম করতে সাহস পেয়েছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।

এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, আমি সহকারী শিক্ষা অফিসারকে বৃহস্পতিবারই তাৎক্ষনিকভাবে বিষয়টি জানিয়েছি এবং তার পরামর্শেই বিষয়টি সুরাহার চেষ্টা করেছি।

সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রুহুল আমিন জানান, ঘটনাটি আমি শনিবার জানতে পেরেছি এবং সাথে সাথেই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে জানিয়েছি।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ওসমান গনী জানান, ধর্ষণের ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে সত্যতা পাওয়ায় শিক্ষক জাহিদুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ, গত ১২ জানুয়ারী বুধবার সৈয়দপুর উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের ডাঙ্গাবাড়ী গ্রামের শিশুমঙ্গল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জাহিদুল ইসলাম তার বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেনীর এক ছাত্রীকে টিফিনের সময় মাঠে খেলারত অবস্থা থেকে এককভাবে ক্লাস রুমে ডেকে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এসময় শিশুটি ঘটনাটি কাউকে না জানালেও বাড়ি গিয়ে মায়ের কাছে প্রকাশ করে।

পরের দিন ১৩ জানুয়ারী ছাত্রীটির মা বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমানের নিকট এ ব্যাপারে অভিযোগ করলে প্রধান শিক্ষক বিষয়টি দেখছেন বলে দিনাতিপাত করতে থাকে। শনিবার বিষয়টি সংবাদকর্মীরা জানতে পেরে বিদ্যালয়ে গেলে শিক্ষক জাহিদুল পালিয়ে যায়।

এরপর ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়ে এবং এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এনিয়ে সংবাদপত্রে সংবাদ প্রকাশ পাওয়ার পর সৈয়দপুর থানার এসআই জহুরুল ইসলাম শিক্ষক জাহিদুল ইসলামকে খুঁজতে তার বাড়িতে গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এদিকে ঘটনার পর থেকে শিক্ষক জাহিদুল স্কুলে উপস্থিত হয়নি এবং এখন পর্যন্ত পলাতক রয়েছে। শিক্ষক জাহিদুল ইতোপূর্বেও এধরণের ঘটনা ঘটিয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। সে ওই এলাকার ফকিরপাড়ার মৃত তফির উদ্দিনের ছেলে।


আরো সংবাদ



premium cement