২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
সাক্ষাৎকারে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী

ঢাকার জন্য ১০০ বছরের মাস্টার প্লান করবেন ইশরাক

ইশরাক হোসেন - ছবি : সংগৃহীত

সাদেক হোসেন খোকা। বীর মুক্তিযোদ্ধা, অবিভক্ত ঢাকার শেষ মেয়র। এবারের ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাচ্ছেন তারই সন্তান ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গোপীবাগে নিজ বাসায় ব্যক্তিজীবন, রাজনৈতিক দর্শন, ঢাকার সমস্যা-সম্ভাবনাসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন নয়া দিগন্তের সাথে। তিনি চান ঢাকাকে একটি বসবাসযোগ্য পরিচ্ছন্ন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তিনি জয় সুনিশ্চিত মনে করেন। ইশরাকের সাক্ষাৎকারটি এখানে তুলে ধরা হলো


নয়া দিগন্ত : আপনার ব্যক্তিজীবন সম্পর্কে কিছু জানতে চাই
ইশরাক : আমার জন্ম রাজধানীর গোপীবাগের সেকেন্ড লেনে। পড়াশোনা করেছি স্কলাশটিকা স্কুলে। সেখান থেকে ও লেভেল এবং এ লেভেল করার পর যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাই। সেখানে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে আন্ডার গ্রাজুয়েট ও মাস্টার্স শেষ করে দেশে ফিরে আসি।

নয়া দিগন্ত : রাজনীতিতে আসার কারণ?
ইশরাক : প্রশ্নটা অনেকেই করে। আমি বলব রাজনীতিতে আসিনি। আমি রাজনীতিতেই ছিলাম। আমার জন্ম একটি রাজনৈতিক পরিবারে। জন্মের পর থেকেই বাবার রাজনীতি খুব কাছ থেকে দেখেছি। তিনি ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা। পরে জননেতায় পরিণত হন। তিনি একজন সফল রাজনীতিবিদ ছিলেন। একদিকে যেমন একজন সংসদ সদস্য ছিলেন, পাশাপাশি মন্ত্রী ও অবিভক্ত ঢাকার মেয়র হিসেবেও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। দেখেছি আমার বাবা সবসময় জনগণের রাজনীতিতে বিশ্বাস করতেন। তিনি সবসময় জনগণের পাশে ছিলেন। আমি ছোটবেলা থেকে তার আদর্শ দেখে বড় হয়েছি, আজীবন তার আদর্শ ধারণ করে বাঁচতে চাই।

নয়া দিগন্ত : মেয়র নির্বাচিত হলে ঢাকা দক্ষিণ সিটিকে কী রকম দেখতে চান?
ইশরাক : প্রথমত একটি বাসযোগ্য নগরী দেখতে চাই। আপনারা জানেন কিছুদিন আগেও পৃথিবীর সবচেয়ে বসবাসের অনুপযোগী শহরের তালিকায় আমরা শীর্ষে ছিলাম। এক থেকে পাঁচের মধ্যেই আমাদের এ অবস্থান উঠা-নামা করে। আমাদের অবস্থান এখন যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার মতো। সেখান থেকে উত্তীর্ণ হয়ে একটি বাসযোগ্য নগরী হিসেবে ঢাকাকে গড়ে তুলতে চাই। আরেকটি বিষয়, কিছুদিন আগে বায়ুদূষণের জন্য এ শহর এক নম্বর হয়েছে, সেখান থেকে আমরা উত্তরণ চাই। সর্বোপরি আমার লক্ষ্য হবে একটি বাসযোগ্য নগর গড়া।

নয়া দিগন্ত : ঢাকা সিটির অন্যতম সমস্যা যানজট। এই যানজট নিরসনে আপনার ভূমিকা কী হবে?
ইশরাক : আমি মনে করি ঢাকা সিটির সবচেয়ে বড় সমস্যা যানজট। এই যানজটের কারণে প্রতিদিন আমাদের বহু কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে, বছরে প্রায় এক লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে। ঢাকার ওপর চাপ কমানোর জন্য বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। ঢাকার যে মূল নকশা সে অনুযায়ী গড়ে ওঠেনি এবং আমাদের কোনো মাস্টার প্ল্যান ছিল না। তাই আমি ১০০ বছরের মাস্টারপ্ল্যান করতে চাই।

নয়া দিগন্ত : আপনার বাবা অবিভক্ত ঢাকার মেয়র ছিলেন। তার কোনো অসম্পূর্ণ কাজ আপনাকে করার দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন?
ইশরাক : উনি যে মূল সমস্যাটার মুখোমুখি হতেন সেটা হলো- সমন্বয়হীনতা। এখানে একাধিক সেবা দানকারী সংস্থা রয়েছে। প্রায় ৩২টি সেবাদানকারী সংস্থা স্বাধীনভাবে কাজ করছে। উনি মেট্রোপলিটন গভর্নমেন্টের পক্ষে ছিলেন এবং এর পক্ষে জনমত গড়ে তুলেছিলেন। তাই আমি চাই একটি নগর সরকার বা মেট্রোপলিটন গভর্নমেন্ট গড়ে তুলতে।

নয়া দিগন্ত : আপনার বাবার কোন বিষয়গুলো আপনাকে বেশি অনুপ্রাণিত করে?
ইশরাক : বাবার মৃত্যুর পরে মানুষ বলতেন, ‘উনি তাদের সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে, দিন-রাত যেকোনো সময় পাশে দাঁড়াতেন। সেই জিনিসটাই আমাকে বেশি অনুপ্রাণিত করে। আমিও তার ওই আদর্শ অনুসরণ করি।

নয়া দিগন্ত : তরুণ রাজনীতিবিদ হিসেবে কী রকম রাজনীতি চান?
ইশরাক : আমি ইনক্লুসিভ পলিটিক্স দেখতে চাই। আমাদের এখন যেটা হয়েছে, রাজনীতি রাজনীতিবিদদের হাতে আছে কি না একটি বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। দ্বিতীয়ত, আমরা একটি একদলীয় সরকারব্যবস্থার মধ্যে বসবাস করছি। সেখানে ক্ষমতার ভারসাম্য নেই। ফলে যারা ক্ষমতায় আছেন তারা প্রতিনিয়ত ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন, দুর্নীতি থেকে শুরু করে বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছেন। আমি চাই একটি ইনক্লুসিভ সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হোক। যে কারণে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল সেটা হলো ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে নির্বাচিত হলেও তৎকালীন পাকিস্তান সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি। সেই আন্দোলনের ফসল হিসেবে পরে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ হয় এবং আমরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পাই। কিন্তু আজকে স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে এসে দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে, আমাদের এখানে গণতন্ত্র বলতে কিছু নেই। আমি গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চাই, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই।

নয়া দিগন্ত : সিটি নির্বাচনে ঢাকাবাসীর প্রতি আপনার আহ্বান কী থাকবে?
ইশরাক : ঢাকাবাসীর প্রতি আমার আহ্বান থাকবে, এখন যারা দায়িত্বে আছেন তারা কেউ নির্বাচিত নন। যার ফলে তাদের জবাবদিহিতা নেই। তাই জনগণের অধিকার ও নগরবাসীর যে সুযোগ-সুবিধা সে বিষয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। তাই আমি নগরবাসীকে আহ্ববান জানাব ৩০ জানুয়ারি আপনারা অবশ্যই ভোট দিতে ভোটকেন্দ্রে যাবেন।

নয়া দিগন্ত : সিটি নির্বাচনে কী কী প্রতিবন্ধকতা দেখছেন?
ইশরাক : নির্বাচনের পূর্ব শর্ত হলো- অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়া। বাংলাদেশের ইতিহাস ঘাটলে দেখবেন দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের উদাহরণ তেমন একটি নেই। দু’একটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়ে থাকলেও থাকতে পারে, সেটিও সরকারের ইচ্ছায় হয়েছে। বর্তমান যে নির্বাচন কমিশন এটা আজ্ঞাবহ। সরকারের ইশারায় তারা কাজ করছে, এর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ তাদের নেই, চাইলেও যেতে পারবে না। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন কমিশনকে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। এই নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই এটিই মূল প্রতিবন্ধকতা।

নয়া দিগন্ত : কেমন নির্বাচন চান, নির্বাচন কমিশন ও সরকারের প্রতি আপনার কী আহ্বান?
ইশরাক : অবশ্যই একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। সরকারের প্রতি আহ্বান থাকবে গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে তারা যে পথে হেঁটেছে এবং জাতির সাথে যে তামাশা করেছে, আমি আশা করব তারা সেই পথ থেকে সরে এসে একটি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেবে। গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ইসি যে ভুলটি করেছে সেটি শুধরানোর জন্য হলেও একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন দেয়ার জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি। সাংবিধানিকভাবে তাদের ওই ক্ষমতা আছে।

নয়া দিগন্ত : ৩০ জানুয়ারির সিটি নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আপনি কতটুকু আশাবাদী?
ইশরাক : যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তবে আমি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। জনগণ এখন পরিবর্তন চায়। গত ১৩ বছর ধরে তাদের ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে। ফলে আমি মনে করি, যারাই ধানের শীষের প্রতীকে লড়াই করবেন তারা বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement