১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পাখির জন্য হাইকোর্টের রুল

-

একটা অভাবনীয় ঘটনা। গত ৩০ অক্টোবর রুলটি জারি হয়েছে। জানা যায়, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সালিমুল আলম রুলটি দেন। জারি হয় শামুকখোল নামে এক পাখির জন্য। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো: মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ উল্লেখ করেন, রাজশাহীর যে আমবাগানে শামুকখোল পাখিরা বাসা বেঁধেছে, তা ‘অভয়ারণ্য’ হিসেবে ঘোষিত হোক। প্রজ্ঞা পারমিতা এটি হাইকোর্টের নোটিশে এনেছেন। তথ্যটি জনসমক্ষে আসে দৈনিক প্রথম আলোর বরাতে। বাগানের মালিক ওই সময় ১৫ দিনের মধ্যে বাসাগুলো ভাঙার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। বিষয়টি ৩১ সেপ্টেম্বর টিভি চ্যানেল আইয়ের খবরে আসে। এ জন্য চ্যানেল আইকে ধন্যবাদ। আরো ধন্যবাদ জানাই মুকিত মজুমদার বাবুকে পাখির জন্য মমত্ববোধের কারণে।

শামুকখোল বাংলাদেশের স্থায়ী পাখি। বর্তমানে এদের অস্তিত্ব বিলুপ্তির পথে। বাংলাদেশে এটি Critically Endangered বা মারাত্মকভাবে বিপন্ন পাখি। যথেষ্ট তৎপরতার সাথে এ পাখির জন্য যথাযথ করণীয় যা প্রয়োজন, তা না করা হলে এটি অচিরেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে, যেমন বিলুপ্ত হয়ে গেছে ১৫টিরও অধিক সংখ্যক পাখি বাংলাদেশ থেকে।

আদিকাল থেকে এ দেশে নির্বিচারে পাখি মারা, ধরা, খাওয়া চলছেই। শক্তিশালী আইন থাকলেও তার যথেষ্ট প্রয়োগের অভাবে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এ নিধনযজ্ঞ চলতেই থাকবে।

এরা যে শুধু পাখি ধরে, মারে, ব্যবসা ও পাচার করে তা নয়- এরা পাখির আবাস ধ্বংস করে, গাছ কাটে অবৈধ ব্যবসার জন্য, পাহাড় কেটে বন জঙ্গল উজাড় করে ঘর বানিয়ে ভাড়া দেয়, ক্ষতিকর তামাক চাষ করে, জলাশয় দখল ও ভরাট করে আবাসন ভাড়া দেয়। এসব যেন এদের জন্য অতি মামুলি বিষয়। শুধু কি তাই? এরা সাধারণ মানুষের বাড়িঘর, গাছপালাসহ জবরদখল করছে, স্কুলের খেলার মাঠ দখল করছে বাগানসহ। পার্কগুলো দখল করছে গাছপালাসমেত। এ খেকোদের দখলবাজি দেখার কেউ নেই, আছে মদদ জোগানদার। ছোট্ট এ দেশটি কবে এ সব দস্যুর কবল থেকে মুক্তি পাবে?

শামুকখোল প্রসঙ্গে আসি। এ পাখির দুটি প্রজাতির একটি এশিয়ায়, অন্যটি আফ্রিকায় রয়েছে। এদের ইংরেজি নাম Openbill storks. বৈজ্ঞানিক নাম যথাক্রমে- Anastomus ositans ও A, lamelligerus. এরা বড় আকারের Wading birds। এরা প্রধানত জলাশয়ের ধার ঘেঁষে বড় বড় গাছে বাসা বাঁধে ‘কলোনি’ আকারে অন্যান্য পাখি, বিশেষ বক ও পানকৌড়ির সাথে।

শামুকখোল প্রধানত শামুক খায়। এ জন্য এদের ‘শামুকখোল’ বলা হয়। মজার ব্যাপার হলো- এদের ঠোঁট মাঝ বরাবর ফাঁকা। মনে হয়, যেন বংশপরম্পরায় শামুকের খোল ভাঙতে ভাঙতে এমন আকার ধারণ করেছে। আসলে এরা ঠোঁটের আগা দিয়ে চাপ প্রয়োগ করে শামুকের খোলস খুলে ফেলে মাংসল অংশ বের করে খায়। এ পাখির জন্মের সময় ঠোঁটের মাঝখানের ফাঁকটা থাকে না। বয়সের সাথে সাথে ফাঁকা স্থানের আবির্ভাব ঘটে। দলে দলে খাদ্যের সন্ধানে বাসস্থান থেকে এক থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে যায়। শামুকই এদের প্রধান খাদ্য। তাছাড়া ঝিনুক, মাছ, বড় পোকা-মাকড়, ব্যাঙ, সাপ প্রভৃতিও খেয়ে থাকে।

শামুকখোল শামুক খেয়ে ধান ও অন্যান্য ফসল উৎপাদনে প্রভূত অবদান রাখে। ধানের শীষ নষ্ট করায় শামুকের জুড়ি নেই। তা বলা যায়, লাখ লাখ টাকার ধান রক্ষায় এ পাখি নীরবে নিভৃতে অবদান রেখে চলেছে। এর বিলুপ্তির ক্ষতির দিক অনেক। সুতরাং উল্লিখিত দুর্বৃত্তদের রুখতে দেশবাসী তথা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এগিয়ে আসবে আশা করি। গবেষণায় দেখেছি, শামুকখোল আগের তুলনায় এখন আর নেই বললেই চলে। এ দেশে সুন্দরবন, কাপ্তাই, নাটোরসহ মাত্র এক-দুই এলাকায় রয়েছে। সুন্দরবন ও নাটোরে প্রজনন করতে দেখা যায়নি এদের। জয়পুরহাট জেলার খেতলাল উপজেলার মহাব্বতপুর গ্রামে ২০০৮ সালে একটি ‘কলোনি’ দেখা গেছে এক জঙ্গলের ধার ঘেঁষে ডোবার ধারে। এটি জয়পুরহাট সদর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে। এতে প্রায় ৭০০ শামুকখোলের ৩৫১টি বাসা এবং প্রতি বাসায় দুই থেকে পাঁচটি ডিম দেখা গেছে। এরা যে গাছগুলোতে বাসা বেঁধেছে, তার মধ্যে কদম, বাঁশ, কড়ই, শিমুল, করচ, পীতরাজই বেশি। প্রায় ১০ প্রজাতির ৫৩টি গাছে বাসাগুলো বাঁধতে দেখা যায়। তবে সার্বিক সংখ্যক বাসা পরিলক্ষিত হয় কদম গাছে। মা-বাবা দু’জনেই ডিমে তা দেয় ২৮ থেকে ৩৫ দিন। এদের ডিমগুলো থেকে প্রায় ৮৬ শতাংশ বাচ্চা ফুটে বের হয়। ৩৩ থেকে ৩৫ দিনে বাচ্চা উড়তে শেখে। তবে ডিমের সংখ্যার তুলনায় ৪০ শতাংশের বেশি উড়ে যেতে সক্ষম হয়নি।

উল্লেখ্য, সার্বক্ষণিক নজরদারির জন্যই ওই সংখ্যক বাচ্চা উড়তে শেখা পর্যন্ত রক্ষা পায়। বাচ্চাগুলো উড়তে শেখার পরও বাবা-মার সাথে প্রায় দেড় মাস থেকে যায়। এরা এ সময়ে খাদ্যের খোঁজে মা-বাবার সাথে বের হয় এবং বাসায় ফিরে আসে। এ সময় ছানাগুলো বেশ বড়োসড়ো ও নাদুসনুদুস হয়ে ওঠে। এ সময় রাতের আঁধারে গাছে উঠে চোরেরা এদের ধরে নিয়ে নিজেরা খায়, বাজারে বিক্রিও করে দেয়। উল্লেখ্য, আমাদের গবেষণাকালে কোনো পাখিই গুলি করে মারা হয়নি, কিন্তু উড়ে চলে যাওয়া পর্যন্ত ছানা চুরি হয়েছিল অনেক।

অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাতে হয়, এসব পাখি শিকার করা হয় নির্বিচারে, বাচ্চাদের ধরে বাজারে বিক্রি করা হয়। ডিম চুরি করা হয় অগণিত। বাসাসহ গাছ কাটতেও দেখা যায়।

অবিলম্বে এসব পাখি রক্ষায় কর্তৃপক্ষ অবশ্যই তৎপর হবে বলে আশা করি। এ ব্যাপারে হাইকোর্টের রুল বারবার নিশ্চয়ই জারি হবে না। পাখি তথা বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতির প্রতি পর্যাপ্ত নজরদারি দেখতে চায় প্রত্যেক দেশপ্রেমীর।

লেখক : বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ, প্রফেসর ও সাবেক চেয়ারম্যান, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


আরো সংবাদ



premium cement
মাত্র ২ বলে শেষ পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড প্রথম টি-টোয়েন্টি জেলে কেজরিওয়ালকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ দলের ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিকসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা তোকে যদি এরপর হলে দেখি তাহলে খবর আছে, হুমকি ছাত্রলীগ নেতার বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা করা হয়নি : প্রধানমন্ত্রী দাওয়াতী ময়দানে সকল নেতাদের ভূমিকা রাখতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেল শ্রমিকদের মাঝে ইসলামের আদর্শের আহ্বান পৌঁছাতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে বিমানবন্দরের টার্মিনালে ঢুকে গেলো বাস, ইঞ্জিনিয়ার নিহত গোয়ালন্দে প্রবাসীর স্ত্রী-সন্তানকে মারধর, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

সকল