খোলা ঘরে ১২ বছর ধরে আরশাদ মিয়া (৩৫) নামে এক যুবককে শিকলবন্দি করে রাখা হয়েছে। কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ার নিজ বাড়িতে বছরের পর বছর বন্দিজীবন যাপন করছেন এ যুবক।
সরেজমিনে আরশাদ মিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, উত্তর পাশে দু’চালা একটি টিনের ঘর। ঘরটির চারপাশ খোলা। মাঝখানে একটি পাকা পিলার। পিলারের সঙ্গে আরশাদ মিয়ার ডান পা শিকল দিয়ে বাঁধা। কনকনে এ শীতের মধ্যে মেঝেতে কিছু খড় ও ছেঁড়া দু’টি কাঁথার বিছানায় তিনি বসে আছেন। খাওয়া-দাওয়া, পশ্রাব-পায়খানা, ঘুম সবই হয় এখানে।
জানা যায়, উপজেলায় নারান্দী ইউনিয়নের কামালপুর গ্রামের মৃত আবদুল খালেকের ছেলে আরশাদ মিয়া। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। আরশাদ মিয়া অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তিনি পেশায় ইলেকট্রিশিয়ান ছিলেন। তবে মাঝে মধ্যে পাগলামী করতেন। এ কারণে পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে বিয়ে করানো হয়। বিয়ের কয়েক বছর পর আরশাদ মিয়া সম্পূর্ণ ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। ফলে বউ তাকে ছেড়ে চলে যায়। অসুস্থতা চরম আকার ধারণ করলে তাকে ওই ঘরে শিকলবন্দি করে রাখা হয়।
আরশাদ মিয়ার বয়োবৃদ্ধ মা জাহেরা খাতুন জানান, পার্শ্ববর্তী দুলালপুর এলাকায় তাকে ১৫ দিন থেকে কবিরাজী চিকিৎসা দেয়ার পর কিছুদিন ভাল ছিল। পরে আবারও ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। এরপর কিশোরগঞ্জ নিয়ে একজন ডাক্তার দেখানো হয়েছে। কিন্তু ভালো হয়নি। সংসারের অভাব অনটনের কারণে উন্নত চিকিৎসা করানো যাচ্ছে না। ছেলের উন্নত চিকিৎসার জন্য এলাকার অনেক লোকের দ্বারে-দ্বারে ঘুরেছেন তিনি। কিন্তু কারও কোনো সহযোগিতা পাননি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ভাবি হামিদা খাতুন জানান, যে ঘরটিতে আরশাদ মিয়া আছেন সেই ঘরের সব বেড়া ও বাঁশের খুঁটি আরশাদ মিয়া ভেঙে ফেলেছে। পরে ওই পিলারে তাকে শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. রুহুল আমীন বলেন, মানসিক ভারসাম্যহীনদের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের কোনো ব্যবস্থা নেই। তবে আরশাদ মিয়ার যদি প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড না থাকে তাহলে আমরা ব্যবস্থা করে দিতে পারবো। তাছাড়া সমাজসেবা পরিচালিত রোগী কল্যাণ সমিতি থেকে তার জন্য বিনামূল্যে ওষুধের ব্যবস্থা করা যাবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাহিদ হাসান বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে তার খোঁজখবর নিতে সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) ওই বাড়িতে পাঠানো হয়েছিল। তিনি খোঁজখবর নিয়ে এসেছেন। তার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা