২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অপহরণের পর বিবস্ত্র করে ছবি তোলায় স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা

অভিযুক্ত প্রসূনজিৎ ও নিহত নূপুর - ছবি: সংগৃহীত

প্রেমের সম্পর্ক ছিন্ন করার জেরে নবম শ্রেণির ছাত্রী নূপুর আক্তারকে (১৫) অপহরণ করার পর বিবস্ত্র অবস্থায় মোবাইলে ছবি তোলে প্রেমিক প্রসূনজিৎ সরকার (১৬) ও তার বন্ধুরা। এই অপমান সইতে না পেরে নিজঘরে ফাঁস দিয়ে নূপুর আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।

আজ বৃহস্পতিবার পুলিশ নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।

ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার মাওহা ইউনিয়নের বিষমপুর গ্রামে বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে এ হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে। গৌরীপুর থানার পুলিশ ওইদিন রাত ১১টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে নূপুরের লাশ উদ্ধার করে।

পুলিশ জানায়, নিহত স্কুলছাত্রী নূপুর বিষমপুর গ্রামের বাচ্চু মিয়ার মেয়ে। সে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা মিজাজ খান টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড বিএম কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। প্রসূনজিৎ একই ইউনিয়নের পার্শ্ববর্তী কিল্লাতাজপুর গ্রামের স্বর্ণ ব্যবসায়ী বরুন সরকারের ছেলে ও একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১০ম শ্রেণির ছাত্র।

নূপুরের মামা শফিকুল ইসলাম (৩২) জানান, স্কুলে লেখাপড়ার সুবাধে সম্প্রতি প্রসূনজিতের সাথে পরিচয় হয় তার ভাগনি নূপুরের। এসময় প্রসূনজিৎ হিন্দু পরিবারের ছেলে পরিচয় গোপন করে নূপুরের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে। কিছুদিন পর সে জানতে পারে প্রসূনজিৎ হিন্দু পরিবারের ছেলে। এরপর নূপুর তার সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিন্ন করে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। সম্পর্ক ছিন্ন করার ক্ষোভে প্রসূনজিৎ বিভিন্ন সময়ে তার ভাগনিকে নানান ধরনের হুমকি দিয়ে আসছিল।

শফিকুল ইসলাম তার নিহত ভাগনির বরাত দিয়ে জানান, সোমবার (২৪ জুন) নূপুর একই ইউনিয়নের বীরআহাম্মদপুর গ্রামে তার বড় বোন তাছলিমার বাড়িতে বেড়াতে যায়। বুধবার বিকেলে বোনের বাড়ি থেকে নিজ বাড়ি ফেরার সময় রাস্তা থেকে প্রসূনজিৎ ও তার বন্ধুরা নূপুরকে জোরপূর্বক অটোরিকশায় উঠিয়ে নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রামপুরে জল্লী গ্রামে নিঝুম পার্কে নিয়ে যায়। সেখানে জোরপূর্বক বিবস্ত্র করে নূপুরের ছবি তুলে প্রসূনজিৎ ও তার বন্ধুরা। নূপুর যদি প্রেমের সম্পর্ক ধরে না রাখে তাহলে বিবস্ত্র করা ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকী দেয় প্রসূনজিৎ।

এসময় এ ঘটনা টের পেয়ে পার্কের কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় লোকজন তাদেরকে আটক করে প্রসূজিতের পরিবারের লোকজনকে মোবাইল ফোনে খবর দেন। খবর পেয়ে প্রসূনজিতের বাবা বরুন সরকার ও স্থানীয় আরো কয়েকজন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে জল্লী গ্রামের লোকজন নূপুরকে তাদের হাতে হস্তান্তর করেন। পরে ওই দিনগত রাত ভোর ৪টার দিকে প্রসূনজিৎ ও তার সহযোগীরা নূপুরকে বিষমপুর গ্রামে তার নিজ বাড়িতে রেখে চলে যায়। পরে বাড়িতে এসে এ ঘটনা তার বাবা মাকে জানায়। কিন্তু বিবস্ত্র করে মোবাইলে ছবি তুলার অপমান সইতে না পেরে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে গলায় ওড়না পেছিয়ে নিজ ঘরে বাঁশের দর্নায় আত্মহত্যা করে।

নূপুরের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবার, স্কুলের সহপাঠী ও শিক্ষক এবং এলাকাবাসীর মাঝে শোকের ছায়া বিরাজ করছে।

নিহত নূপুরের মামা শফিকুল ইসলাম জানান, এই ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তার পরিবার।

স্থানীয় লোকজন জানান, ঘটনার পর থেকে প্রসূনজিৎ ও তার পরিবারের লোকজন আত্মগোপনে রয়েছেন।

গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামরুল ইসলাম মিয়া জানান, নিহত নূপুরের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।


আরো সংবাদ



premium cement