১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’

কিংবদন্তী কণ্ঠশিল্পী শাহনাজ রাহমতুল্লাহ - নয়া দিগন্ত

বাংলার গান বলতে গেলে অবধারিত ভাবেই চলে আসে; গ্রাম, নদী আর পাখিদের কলকুঞ্জন। যেখানে খুঁজে পাওয়া যায় ব্যক্তি জীবনের ভালো-মন্দ সব কিছু। এরকম একটা জীবনে ফিরে যাওয়ার আকুতি গানের সুরে জানিয়ে ছিলেন কিংবদন্তী কণ্ঠশিল্পী শাহনাজ রাহমতুল্লাহ। তার গাওয়া ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গায়’গানটি বাংলাভাষী মানুষের কাছে এক অমূল্য সম্পদ। এই একটি গানই ব্যক্তির মাঝে পুরো বাংলার রূপ এঁকে দিতে পারে। যেখান থেকে স্পষ্টভাবে বুঝা যায় গানের সুর কেন এতো পবিত্র। দরদ মাখা এই গান শ্রোতাদের মনে এমনভাবে জায়গা পেয়েছে যে, দেশকে সম্মান জানানোর ক্ষেত্রে সবার আগে আসে এই গান। ২৩ মার্চ দিবাগত রাতে না ফেরার দেশে চলে গেছেন এই কিংবদন্তী শিল্পী। দাফন শেষে শিল্পীর স্বামি মেজর (অব.) আবুল বাশার রহমত উল্লাহ বলেছেন, শাহনাজ রহমতউল্লাহর রক্তে ছিলো গান। গান গেয়ে মানুষকে কাঁদানোর ক্ষমতাও ছিলো শাহনাজের। এরকম ক্ষমতা খুব কম শিল্পীরই থাকে।’

শিল্পীর সবচেয়ে কাছের মানুষ যে বলেছেন, শিল্পীর রক্তে ছিল গান। এটাই বুঝিয়ে দেয় শাহনাজ রহমতউল্লাহ গানের প্রতি কতটা নিবেদিত ছিলেন। এটা ঠিক অনেক দিন ধরেই তিনি গানের মধ্যে ছিলেন না; কিন্তু গান তাকে ছাড়েনি। যে কোন জাতীয় উৎসব হলেই তার গানের সুর চলে আসতো কানে। অনেক সময় তার গানই মনে করিয়ে দিতো জাতীয় উৎসব সমাগত। যখন স্বাধিনতাকে স্মরণ করা হয়, অবধারিত ভাবে চলে আসে তার গাওয়া ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’গানটি। এই গান দিয়েই সূচনা হয়েছিলো স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান প্রতিষ্টিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির দলীয় সঙ্গীত ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’ গানটিও গেয়েছেন তিনি। এছাড়া বিবিসি সর্বকালের যে ২০টি বাংলা গান নির্বাচন করেছেন সেখানকারও চারটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন এই কিংবদন্তী শিল্পী।

স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের প্রতি সম্মান জানিয়ে তিনি গেয়েছেন, ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা’। এই গানে তিনি এতটাই দরদ মিশিয়ে কণ্ঠ দিয়েছেন যে, ৭১’র ভয়াবহতার আঙ্গিক খুব সহজেই চোখের সামনে ভাসিয়ে দেয়। এছাড়া তার জনপ্রিয় গানের তালিকায় রয়েছে, ‘একতারা তুই দেশের কথা বল রে এবার বল’, ‘আমায় যদি প্রশ্ন করে’, ‘কে যেন সোনার কাঠি’, ‘মানিক সে তো মানিক নয়’, ‘যদি চোখের দৃষ্টি’, ‘সাগরের তীর থেকে’, ‘খোলা জানালা’, ‘পারি না ভুলে যেতে’, ‘ফুলের কানে ভ্রমর এসে’, ‘আমি তো আমার গল্প বলেছি’, ‘আরও কিছু দাও না’ এবং ‘একটি কুসুম তুলে নিয়েছি’ এর মতো অসংখ্য জনপ্রিয় গান।

১৯৫৩ সালের ২ জানুয়ারি তিনি ঢাকায় জন্মগ্রহন করেন। তার বাবা এম ফজলুল হক, মা আসিয়া হক। মায়ের হাতেই ছোটবেলায় শাহনাজের গানের হাতেখড়ি। পরিবারের সবার কাছে তিনি ছিলেন আদরের শাহীন। ছোটবেলাতেই তিনি শিল্পী হিসেবে পরিচিতি পান। মাত্র ১১ বছর বয়সে ১৯৬৩ সালে ‘নতুন সুর’ চলচ্চিত্রে প্লে-ব্যাক করেন। সেই থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত নিয়মিত গান করেছেন। টেলিভিশনে গান গাইতে শুরু করেন ১৯৬৪ সাল থেকে। দেশের গান যেমন তার কন্ঠে হয়েছে জনপ্রিয় ঠিক তেমনি চলচ্চিত্রের গানও হয়েছে সমান জনপ্রিয়।

কিংবন্তী এই শিল্পীর চলে যাওয়ায় দেশের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ শোকে বিহ্বল। তাদের সকলের প্রশ্ন তার গানের লাইনকে উদৃত করেই, যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়, সে হারালো কোথায়?


আরো সংবাদ



premium cement