২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`
১৪ দফা সুপারিশ 

রাজউক ও দুর্নীতি এখন সমার্থক : টিআইবি

১৪ দফা সুপারিশ টিআইবির -

রাজউকের বিভিন্ন কার্যক্রমে এবং উন্নয়ন প্রকল্পসমূহে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হয়েছে। সংস্থাটির সেবার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি উভয় স্তরেই দুর্নীতি ও অনিয়ম রয়েছে। আর এসব দুর্নীতির ক্ষেত্রে রাজউক কর্মকর্তাদের একাংশ, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তির মধ্যে ত্রিপক্ষীয় আঁতাত স্পষ্ট। ফলে রাজউক কর্তৃক সার্বিক জবাবদিহি কাঠামো কার্যকর করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নসহ অন্যান্য দায়িত্ব পালন ব্যহত হচ্ছে। 

অন্যদিকে রাজউকে বর্তমানে উন্নয়নমূলক কাজে অধিক গুরুত্বারোপ করায়এবং আবাসন ও রিয়েল এস্টেট ব্যবসার মাধ্যমে মুনাফা অর্জনকে প্রাধান্য দেয়ায় পরিকল্পনা প্রণয়ন ও নিয়ন্ত্রণমূলক কার্যক্রমের মত অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজসবসময় উপেক্ষিত থাকছে।

আজ বুধবার ‘রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে টিআইবির ধানমন্ডিস্থ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এ সময় রাজউকের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে এবং সমস্যা থেকে উত্তরণে চৌদ্দ দফা সুপারিশ প্রদান করে সংস্থাটি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টা নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান ও সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার আবু সাঈদ মো. জুয়েল মিয়া। গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন গবেষণা ও পলিসি বিভাগেরপ্রোগ্রাম ম্যানেজার ফারহানা রহমান এবং ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ফাতেমা আফরোজ।

রাজউকের সুশাসনের চ্যালেঞ্জসমূহ চিহ্নিত করে তা থেকে উত্তরণের জন্য সুপারিশ প্রস্তাব করার উদ্দেশ্যে ২০১৮ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পরিচালিত এই গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে।এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এ গবেষণায় রাজউকের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা, ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র ও নকশা অনুমোদন ও নিয়ন্ত্রণ, উন্নয়নমূলক কার্যক্রম/প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন পর্যায়, পরিকল্পনা প্রণয়ন (ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান-ড্যাপ) নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে আইন ও নীতি পর্যালোচনা করা হয়েছে।

এই গবেষণায় রাজউকের নানা আইনি সীমাবদ্ধতা ও প্রয়োগের চ্যালেঞ্জ; প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতা ও অনিয়ম; জবাবদিহিতা; তথ্য সরবরাহে স্বচ্ছতা; সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশগ্রহণ ও অন্তর্ভুক্তি ছাড়াও ছাড়পত্র ও নকশা অনুমোদন এবং প্রকল্প সংক্রান্ত অনিয়ম ও দুর্নীতির মত বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে, ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘এখন এমন একটা ধারণা করা হয় যে, রাজউক আর দুর্নীতি সমার্থক। রাজউক এতদিনেও জনবান্ধব প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে পারেনি। এমনকি রাজউক নারী ও প্রতিবন্ধীবান্ধব প্রতিষ্ঠানও নয়। রাজউকের ওপর নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার যে দায়িত্ব অর্পিত, তারা তা পালনে ব্যর্থ হয়েছে। তারা ড্যাপ ও ডিএমডিপি রক্ষায়ও ব্যর্থ হয়েছে। অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের মাধ্যমে রাজউক এখন তার মূল ভূমিকা থেকেই সরে গেছে। তাই রাজউকের দুর্নীতির বিষয়গুলো দুদকের গুরুত্ব সহকারে নেয়া উচিত।’

নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা বাদ দিয়ে রাজউক এখন মুনাফা অর্জনকারী ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন ‘উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের নামে মুনাফা অর্জন ও নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা আলাদা করতেই হবে। দীর্ঘদিনের চর্চার ফলে রাজউকের ব্যবসায়িক মানসিকতা যেহেতু আর বদলানো যাবে বলে মনে হয় না, তাই আইনের যথাযথ সংশোধন করে রাজউকের সার্বিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের জন্য সম্পূর্ণ পৃথক, নিরপেক্ষ ও পর্যাপ্ত ক্ষমতায়িত ও প্রভাবমুক্ত কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’

গবেষণায় দেখা যায়, রাজউকের কার্যক্রম পরিচালনায় বিভিন্ন ধরনের আইনি সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমন, নগর উন্নয়ন (টাউন ইম্প্রুভমেন্ট) আইন, ১৯৫৩ এ চেয়ারম্যান ও সদস্যদের যোগ্যতার মানদণ্ড নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি। ইমারত নির্মাণ আইন, ১৯৫২ এ দুর্ঘটনার ভয়াবহতার মাত্রা বিবেচনায় নকশা অনুমোদন ও বাস্তবায়নে আইনের ব্যত্যয়ের শাস্তি সীমিত হওয়ায় আইন লঙ্ঘনের প্রবণতা দেখা যায়। ইমারত নির্মাণ বিধিমালা, ২০০৮ এ বহুতল ভবনের সংজ্ঞায়নে দশতলা বা ৩৩ মিটারের ঊর্ধ্বে নির্মিত ভবনকে বহুতল ভবন হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হলেও বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড, ২০০৬ অনুযায়ী ২০ মিটার বা তার ঊর্ধ্বে নির্মিত ভবনকে, ন্যাশনাল ফায়ার প্রটেকশন অ্যাসোসিয়েশন অনুযায়ী ২৩ মিটার বা তার ঊর্ধ্বে নির্মিত ভবনকে এবং অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন, ২০০৩ অনুযায়ী সাত তলা বা তার ঊর্ধ্বে নির্মিত ভবনকে বহুতল ভবন হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। ফলে দশতলা পর্যন্ত, বিশেষ করে সাত থেকে দশ তলা উচ্চতার ভবন অগ্নি নিরাপত্তার বাইরে রয়েছে।

অন্যদিকে, ঢাকা উন্নয়ন ট্রাস্ট ( ভূমি বরাদ্দ) বিধিমালা, ১৯৬৯ এ কোনো প্রকল্প গ্রহণ করা হলে সেখানে বিভিন্ন গোষ্ঠীর জন্য নির্ধারিত কোটা সম্পর্কিত কোনো নির্দেশনা নেই, প্লটের জন্য আবেদনকারী হিসেবে ‘জাতীয় পর্যায়ে অবদান রেখেছেন এমন ব্যক্তি’র মানদণ্ড স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি।

গবেষণার প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, রাজউকে অনুমোদিত পদের বিপরীতে পর্যাপ্ত জনবল নেই। অনুমোদিত ১৯৮০টি পদের মধ্যে ১১৮৭টি পদে জনবল কর্মরত রয়েছে।কর্মরত নারীদের হার মাত্র ৯.৭%। সার্বিকভাবে অনুমোদিত পদের মধ্যে ৪০.১% পদ শূন্য রয়েছে। নিয়োগ, পদায়ন, বদলি ও পদোন্নতিতেও অনিয়ম ও দুর্নীতি বিদ্যমান।

গবেষণাকালে রাজউকের আয় ও ব্যয়ের হিসাব বিশ্লেষণ করে দেখা যায় সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্বেও তা একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ২০১৪-২০১৫ অর্থবছর থেকে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ের হিসাব থেকে দেখা যায় প্রতি অর্থবছরে রাজউকের উদ্বৃত্ত আয় ২৫.৩% থেকে ৬০.১% পর্যন্ত থাকে। তবে বাজেট পরিকল্পনা যথাযথভাবে বাস্তবায়নে রাজউকের সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে। যে পরিমাণ বরাদ্দ দেয়া হয় তা খরচ করা হয় না।
গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যমতে, রাজউকে অবকাঠামোগত নানা সমস্যা বিদ্যমান। আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোর দু’টিতে নিজস্ব অফিস ভবন এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে কিছু বিভাগ বা শাখার কার্যক্রম নেই।

‘ম্যানুয়াল’ পদ্ধতিতে রাজউকে মৌজাভিত্তিক নকশা অনুমোদনের এবং প্লট ও ফ্ল্যাট সংক্রান্ত নথি সংরক্ষণ করা হয় যার ফলে সেবা পেতে দীর্ঘ সময় লাগে এবং অনেক সময় নথি হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। রাজউকের আওতাভুক্ত এলাকায় রাজউকের সাথে সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে সমন্বয়ের ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগের ক্ষেত্রে ঘাটতি লক্ষ্যণীয়। সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯ অনুসারে রাজউকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাৎসরিক আয়-ব্যয়ের তথ্য জমা দেয়া কিংবা প্রকাশ করা হয় না। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে রাজউক বোর্ডের কার্যক্রম কার্যকরভাবে তদারকি করা হয় না এবং বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ প্রেষণে নিযুক্ত হওয়ায় অধস্তন পর্যায়ের প্রেষণে নিযুক্ত কর্মকর্তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে পারেন না এমন অভিযোগ রয়েছে। মহাপরিদর্শক ও নিরীক্ষকের কার্যালয়ের পক্ষ থেকে রাজউকের নিরীক্ষা কার্যক্রমের সময় রাজউকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নিয়ম বহির্ভূত অর্থ প্রদান করে ও রাজউক আপ্যায়নের ব্যবস্থা করে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে।

গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী দেখা যায়, ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) বা বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা তৈরি ও বাস্তবায়ন জনস্বার্থে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার জন্য জনগণ এমনকি সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদেরকেও সর্বশেষ ড্যাপ রিভিউয়ের কাজে কার্যকরভাবে সম্পৃক্ত না করার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ড্যাপ পর্যালোচনায় রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলোর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব এবং ড্যাপ রিভিউয়ের কাজ রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠানকে দেয়ার মাধ্যমে স্বার্থের সংঘাত ও দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে। ২০১০ সালে ড্যাপ অনুমোদিত হওয়ার পর থেকে ২০১৮ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত সময়ে মোট ১৫৮ বার সংশোধিত হয়েছে। ড্যাপ সংশোধনের মাধ্যমে ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ত্রিপক্ষীয় আঁতাতের মাধ্যমে ডেভেলপার, রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও অন্যান্য প্রভাবশালী ব্যক্তিদের স্বার্থ রক্ষার অভিযোগ রয়েছে।

গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যে, রাজউকের ছাড়পত্র ও নকশা অনুমোদনে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি রয়েছে। যেমন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাজউক কর্মকর্তা, দালাল ও সেবাগ্রহীতার মধ্যে ত্রিপক্ষীয় আঁতাতের মাধ্যমে চুক্তি করে সুনির্দিষ্ট হারে নিয়ম বহির্ভূত অর্থ নেয়া হয়। জরিপের সময়ও চুক্তিভিত্তিক নিয়ম বহির্ভূত অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। ব্যক্তি ও রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার পর্যায়ে এর পরিমাণ দুই হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত। ছাড়পত্র অনুমোদনে ব্যক্তি পর্যায়ে ১৫ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত এবং রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার পর্যায়ে এক লাখ থেকে দশ লাখ টাকা পর্যন্ত দিতে হয়। সেবাগ্রহীতারা ইমারত নকশা অনুমোদনের সেবা গ্রহণেও নির্ধারিত ফি-এর অতিরিক্ত অর্থ দিতে বাধ্য হন। ব্যক্তি পর্যায়ে দশ তলা পর্যন্ত ইমারতের নকশা অনুমোদনে ফি-এর অতিরিক্ত ৫০ হাজার থেকে চার লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত এবং রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার পর্যায়ে দুই লাখ থেকে দশ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়। আবার দশ তলার ঊর্ধ্বের ইমারতের নকশা অনুমোদনে রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার পর্যায়ে ফি-এর অতিরিক্ত ১৫ লাখ থেকে ৪০ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়। বৃহদায়তন বা বিশেষ প্রকল্পের ক্ষেত্রে রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার পর্যায়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের পরিমাণ ১৫ লাখ থেকে দুই কোটি টাকা পর্যন্ত। নাগরিক সনদ ও বিধিমালা অনুয়ায়ী নকশা অনুমোদনের নির্ধারিত সময় যথাক্রম ২০ দিন ও ৪৫ দিন হলেও সে অনুযায়ী অনুমোদন না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সাধারণত চার মাসে নকশা অনুমোদন হয়ে থাকে। ক্ষেত্রবিশেষে দুই থেকে তিন বছর পর্যন্ত সময় লেগেছে এমন অভিযোগও রয়েছে। তবে, অর্থের পরিমাণ বেশি হলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেও কাজ সম্পন্ন হয়।

গবেষণায় দেখা যায়, ভবন নির্মাণের আগে, নির্মাণের সময় এবং পরে পরিদর্শন করার নিয়ম। ইমারত বিধিমালা, ২০০৮ অনুসারে অনুমোদিত নকশা এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ বিষয়সমূহ কতদূর অনুসরণ করা হচ্ছে তা দেখার জন্য রাজউকের পক্ষ থেকে নির্মাণ কাজটি পরিদর্শন করার কথা। কিন্তু তার পরিবর্তে নির্মাণের সময় এবং পরে চুক্তিভিত্তিক নিয়ম-বহির্ভুত অর্থ আদায় করা হয়। সাধারণত এর পরিমাণ পাঁচ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। ইমারতের নকশা বাস্তবায়নেও আইন ও বিধির লঙ্ঘন দেখা যায়। বিগত পাঁচ বছরে অনুমোদিত মোট নকশার ৪১৮টিতে অকুপেন্সি সার্টিফিকেট গ্রহণ করা হয়েছে, যা ভবন নির্মাণের সংখ্যার তুলনায় নগণ্য।

গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যে, বিভিন্ন প্রকল্পে সেবাগ্রহীতাদের প্রতারণা ও হয়রানির অভিযোগ আছে। প্লট বরাদ্দ, প্লট হস্তান্তর, ফ্ল্যাটের চাবি হস্তান্তর, প্লটের মালিকের নথিভুক্তি ইত্যাদি বিভিন্ন পরিষেবা দেয়ার ক্ষেত্রে সেবার ধরণভেদে দুই হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়ম-বহির্ভুত অর্থ আদায় করা হয়। অর্থ না দিলে অযথা সময়ক্ষেপন করে গ্রাহককে হয়রানি করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের বিবেচনার জন্য আইন, প্রাতিষ্ঠনিক সক্ষমতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও শুদ্ধাচার সংক্রান্ত ১৪ দফা সুপারিশ পেশ করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো : আইন ও বিধিমালার সময়োপযোগী সংস্কার এবং প্রয়োজনীয় নীতিমালা ও নির্দেশিকা তৈরি করতে হবে। বিদ্যমান বিভিন্ন আইনের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে একটি যুগোপযোগী ও সমন্বিত আইন প্রণয়ন করতে হবে। এক্ষেত্রে অন্যতম হলো ইমারত নির্মাণ আইন, ১৯৫২ এর আওতায় নকশা অনুমোদন ও বাস্তবায়নে নিয়ম লঙ্ঘনের শাস্তি বৃদ্ধি করতে হবে এবং ইমারত ব্যবহারের পূর্বে অকুপেন্সি সাটিফিকেট না নেয়ার ক্ষেত্রে জরিমানা ধার্য করতে হবে; ইমারত নির্মাণ বিধিমালা, ২০০৮ এর আওতায় বহুতল ভবনের সংজ্ঞায়নে অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইনের সাথে সংগতিপূর্ণ করে ছয় তলার ঊর্ধ্বে নির্মিত ইমারতকে বহুতল ভবন হিসেবে বিবেচনা করতে হবে; ঢাকা উন্নয়ন ট্রাস্ট (ভূমি বরাদ্দ) বিধিমালা, ১৯৬৯ এর আওতায় প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্তরা যেন ন্যায্যভাবে প্লট বা ফ্ল্যাট বরাদ্দ পান সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রাখতে হবে; প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে রাজউকের সার্বিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের জন্য সম্পূর্ণ পৃথক, নিরপেক্ষ ও পর্যাপ্ত ক্ষমতায়িত ও প্রভাবমুক্ত কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করতে হবে; মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কমিটির ড্যাপ রিভিউ কার্যক্রম বন্ধ করে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সাথে পরামর্শক্রমে ডিএমডিপির সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রয়োজনীয় সংশোধন সাপেক্ষে অবিলম্বে ড্যাপ চূড়ান্ত করতে হবে; ইমারত নকশা অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় সকল নকশা (স্থাপত্য, নির্মাণ, কাঠামো ও সেবা সংক্রান্ত) সুনির্দিষ্ট মাপকাঠির ওপর ভিত্তি করে পরীক্ষাপূর্বক অনুমোদন করতে হবে। জবাবদিহিতা নিশ্চিতে রাজউকের সেবা কার্যক্রমে প্রাতিষ্ঠানিক তদারকি বৃদ্ধি করতে হবে এবং দালাল কর্তৃক হয়রানি বন্ধ করতে কার্যকর মনিটরিং ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে; গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি স্বার্থের দ্ব›দ্বমুক্তভাবেপুনর্গঠন করে রাজউকের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে কমিটিকে কার্যকর করতে হবে। শুদ্ধাচার নিশ্চিতে প্রাতিষ্ঠানিক শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। দুর্নীতির সাথে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে ইত্যাদি। 

প্রেস বিজ্ঞপ্তি


আরো সংবাদ



premium cement
জাতীয় দলে যোগ দিয়েছেন সাকিব, বললেন কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই কারওয়ান বাজার থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয় এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন : প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি আহসান উল্লাহ ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বিবৃতি আনোয়ারায় বর্তমান স্বামীর হাতে সাবেক স্বামী খুন, গ্রেফতার ৩ ফতুল্লা প্রেস ক্লাবের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত বদরের শিক্ষায় ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : সেলিম উদ্দিন ইসলামের বিজয়ই বদরের মূল চেতনা : ছাত্রশিবির পরিবেশ দূষণে বাংলাদেশে বছরে ২ লাখ ৭২ হাজার মানুষের মৃত্যু : বিশ্বব্যাংক নোয়াখালীতে ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

সকল